সুন্দরবনে বারবার আগুন কেন?

পাভেল পার্থ

একক আয়তনে দুনিয়ার বৃহত্তম জোয়ার-ভাটার বনভূমি সুন্দরবন। ভৌগলিক ও প্রতিবেশগত কারণে এখানে প্রাকৃতিকভাবে বনে আগুন লাগার কোন কারণ নেই। এটি অসম্ভব। কিন্তু সুন্দরবনে তাই ঘটে চলেছে। বছরের পর বছর। প্রশ্নহীন কায়দায়। পশ্চিম সুন্দরবন বিভাগে আগুন লাগার কোনো ঘটনা না ঘটলেও পূর্ব সুন্দরবন বিভাগে এটি ঘটেই চলেছে। তাও আবার চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর এলাকাতেই বেশি। করোনা মহামারির ভেতর আবারও ২০২১ সনের ৩ মে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের দাসের ভাড়ানি টহল ফাঁড়ির ২৪ নং কম্পার্টমেন্টে আগুন লাগে, পুড়ে যায় প্রায় ২ একর বন। প্রতি বছরই এ সময়টাতে বনের ভেতর বিলের মাছ আহরণ করতে প্রভাবশালী দুর্বৃত্তরা বনে আগুন দিয়ে সুন্দরবনের বাস্তুসংস্থান ও খাদ্যশৃঙ্খল তছনছ করে দিচ্ছে। এ নিয়ে বনবিভাগ তদন্ত কমিটি করে কিন্তু রহস্যময় কারণে এসব তদন্ত প্রতিবেদন পাবলিক হয় না। ২০১৬ সনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বনবিভাগ ১৮ জনকে আসামি করে তিনটি মামলা করেছিল। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। আবারও ঝলসে গেছে সুন্দরবন।

পুড়েছে প্রায় ৭২ একর বন

সুন্দরবনের এই সাম্প্রতিক আগুন লাগার ঘটনাটিই নতুন নয়। বনজীবী, সুন্দরবন অঞ্চলের আশেপাশের স্থানীয় মানুষ, বনবিভাগ ও গণমাধ্যমসূত্র মিলিয়ে দেখা যায় গত ১৯ বছরে প্রায় ২২ বার আগুন লেগেছে সুন্দরবনে। ২২ মার্চ যখন বিশ্বব্যাপী পানি দিবসের আয়োজন চলছে ২০০২ সনের ঐদিন শরণখোলা রেঞ্জের কটকা অভয়ারণ্যে আগুন লাগে। নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় প্রায় এক একর বন। পাশাপাশি আগুন লাগে একই রেঞ্জের নাংলী ও মান্দারবাড়িয়ায় দুইবার। ২০০৪ সনের ২৫ মার্চ আগুনে পুড়ে যায় চাঁদপাই রেঞ্জের নাংলী ক্যাম্পের মাদরাসারছিলা অঞ্চলের ৩ একর বন। ২০০৪ সনের ২৭ ডিসেম্বর আড়–য়ারবেড় অঞ্চলে পুড়ে যায় ৯ শতক বন। ২০০৫ সনের ৮ এপ্রিল চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের কলমতেজী অঞ্চলে পুড়ে যায় আড়াই একর বন। একই সনের ১৩ এপ্রিল চাঁদপাই রেঞ্জের তুলাতলার পুড়ে চার একর বন। ২০০৬ সন থেকে লাগাতার বন পুড়তেই থাকে। ৯ মার্চ শরণখোলা রেঞ্জের তেরাবেকায় পুড়ে এক একর বন। একই সনের ১১ এপ্রিল চাঁদপাই রেঞ্জের আমুরবুনিয়া টহলফাঁড়ি অঞ্চলে পুড়ে ৫০ শতক বন। ১২ এপ্রিল কলমতেজি টহলফাঁড়ির খুটাবাড়িয়া এলাকায় পুড়ে দেড় একর। কলমতেজিতে এর আগের বছরেই পুড়েছিল আড়াই একর বন। একই সনের পহেলা মে একই রেঞ্জের নাংলী ফাঁড়ির পচাকুড়ালিয়া এলাকায় পড়ে ৫০ শতক বন এবং ৪ মে ধানসাগর স্টেশনসংলগ্ন এলাকায় পুড়ে আড়াই একর বন। ২০০৭ সনেও তিনবার আগুন লাগার ঘটনা জানা যায়। এই সনের ১৫ জানুয়ারি শরণখোলার ডুমুরিয়া ক্যাম্প এলাকায় ৫ একর, ১৯ মার্চ চাঁদপাই রেঞ্জের নাংলী এলাকায় ২ একর ও একই অঞ্চলে ২৮ মার্চ পুড়ে যায় ৮ একর বন। ২০১০ সনের ২০ মার্চ চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের গুলিশাখালী এলাকায় পুড়ে যায় ৫ একর বন। ২০১১ সনেও তিনবার আগুন লাগে। ১ মার্চ নাংলী অঞ্চলের ২৫ নং কম্পার্টমেন্টে পুড়ে প্রায় ২ একর এবং একই সনের ৮ মার্চ আড়–য়ারবেড় অঞ্চলে পুড়ে যায় ৩ একর বন। ২০১৪ সনে আবারও ২০০৪ সনের মতো কালরাত্রি নেমে আসে। ভোলা নদী থেকে প্রায় দুই কিমি ভেতরে চাঁদপাই রেঞ্জের গুলিশাখালীর পয়ষট্টিছিলা অঞ্চলে ২৫ মার্চ পুড়ে যায় ১০ একর বন। ২০১৬ সনের ২৭ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত ধানসাগর স্টেশনের এই নাংলী ক্যাম্পেরই পচাকোড়ালিয়া, টেংরা ও তুলাতুলী এলাকার ম্যানগ্রোভ বন আগুন দিয়ে ঝলসে দেয় দুর্বৃত্তরা। ২০১৭ সনের ২৬ মে চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের নাংলী ক্যাম্পের আবদুল্লাহর ছিলা এলাকার প্রায় পাঁচ একর বনভূমি আগুনে পুড়ে যায়। করোনা মহামারিকালে তীব্র তাপদাহের সময় ২০২১ সনের ৮ ফেব্রুয়ারি ধানসাগর স্টেশনে আগুন লাগে এবং সর্বশেষ ২০২১ সনের ৩ মে শরণখোলা রেঞ্জের দাসের ভাড়ানি এলাকায় আগুন লাগে। ২০০২ থেকে ২০২১ সনের ৩ মে পর্যন্ত দেখা যায় প্রায় ২০ বছরে সুন্দরবনের প্রায় ৭২ একর বনঅঞ্চল আগুনে পুড়েছে বা ঝলসে দেয়া হয়েছে। আমরা যখন সুন্দরবনের আয়তন হিসাব করি তখন এই আগুনে ঝলসানো বনভূমির লাশেরও হিসাব হয় কী?

বনবিভাগের কাঠ-মনস্তত্ত্ব

বনবিভাগের হিসাবে ২২ বারের অগ্নিকাণ্ডে সুন্দরবনের প্রায় ১৮ লাখ ৫৫ হাজার ৫৩৩ টাকা ক্ষতি হয়েছে। আগুনে বন পুড়ে গেলে খুব একপেশে কায়দায় এর ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করা হয়। মূলত কতটুকু জায়গা পুড়েছে এবং কত ঘনফুট কাঠ পুড়েছে। এবারো গণমাধ্যমে বনবিভাগের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্র্তা বলেছেন, ‘কোন সুন্দরী গাছ পুড়েনি’। যেন, শুধু সুন্দরী গাছ নিয়েই সুন্দরবন! সুন্দরবনের মতো এক জটিল বাস্তুতন্ত্র যখন ঝলসে যায় তখন এর ক্ষতির হিসাব করবার মতো কোনো দায় বা দায়িত্ব আমরা এখনও বনবিভাগে দেখিনি। একটি বন নিশ্চয়ই কাঠের বাগান নয় বা উদ্ভিদ উদ্যান কী চিড়িয়াখানা নয়। আগুন লাগার ঘটনায় বনবিভাগের নানা সময়ে গণমাধ্যমে দেয়া বক্তব্য হলো, মূলত বনজীবী ও স্থানীয় মানুষদের বিড়ির আগুনে এটি ঘটে। যদিও প্রতিবার আগুন নেভাতে জান নিয়ে সুন্দরবনকে আগলে দাঁড়িয়েছে বনজীবী ও স্থানীয় মানুষেরাই। তারপর ক্ষতির প্রসঙ্গে বনবিভাগের বক্তব্য হলো আগুনে মূলত লতাগুল্ম পুড়ে কোন কাঠের গাছ পুড়ে না বলে বনের তেমন কোনো ক্ষতি হয় না। বনবিভাগের ভাষ্য হলো, জোয়ারের সময় বনে পানি ওঠে না বলে জায়গাটি শুষ্ক থাকে এবং এসব অঞ্চলে লতাপাতা ও গুল্ম জাতীয় সিংড়া ও বলাগাছ বেশি জন্মে। বনবিভাগকে বাণিজ্যিক কাঠসর্বস্ব এই মনস্তত্ত্ব থেকে বাইরে আসতে হবে। সুন্দরবনকে দেখতে হবে এর অগণতি অণুজীব, উদ্ভিদ, প্রাণী ও বননির্ভর জীবনসংষ্কৃতির ঐতিহাসিক সংসার ও জটিল বাস্তুসংস্থান হিসেবে। এখানে বলা বা সিংড়া হোক, বাইন বা সুন্দরী হোক, বাঘ কি শামুক হোক, শ্যাওলা কি ছত্রাক হোক যে কোনো প্রাণের ক্ষতি হলেই মুষড়ে পড়বে সুন্দরবন। ঘটবে নানাবিধ স্বাস্থ্য বিপর্যয়।

নিহত বলা গাছ ও ঝলসানো বনতল

একটি বনের স্তরবিন্যাসের ধরন অনুযায়ী দেখা যায় সুন্দরবনে বারবার আগুন লেগে সবচে বেশি ক্ষতির ধকল সইতে হচ্ছে বনতলকে। এমনকি সুন্দরবনের নদী-খাল ও খাঁড়ি থেকে বনের ভেতরের দিকে প্রাণবৈচিত্র্যের যে বিন্যাস তা উল্টেপাল্টে গেছে। বিপর্যস্ত হয়েছে খাদ্যশৃঙ্খল এবং আঘাত লেগেছে সামগ্রিক খাদ্যজালে। কারণ আগুন লাগছে মূলত: বনপ্রান্তে এবং সেখানে হারগোজা, ধানচি, বাঘ-ফার্ণ, সিংড়া, বলা, কালিলতা, গোলপাতা, কেয়া, হেন্তাল, আঙ্গুরলতা, বাওয়ালিলতারই আধিক্য বেশি থাকে। এটিই সুন্দরবনের বৃক্ষসমাজের অবস্থান বৈশিষ্ট্য। সুন্দরবনের জন্য এই বনতল খুবই গুরুত্ববহ এবং এখানকার সব প্রাণসম্পদ পুরো বনের টিকে থাকা ও বিকাশের সঙ্গে সম্পর্কিত। বারবার আগুনে সবচে বেশি পুড়েছে বলা, সিংড়া ও লতাগুল্ম। বনের এই অংশটুকু নানা প্রাণীর আশ্রয়স্থল। বিশেষত কাঁকড়া, শামুক, গুঁইসাপ, ব্যাঙ, সাপ, পতঙ্গ ও নানা জলচর পাখিদের। সুন্দরবনের বনজীবী-বিজ্ঞানমতে, বলা গাছের ঝোপে বাটাং, ঘুঘু, বক ও কুকু পাখি বাসা বানায়। বলা গাছের ঝোপ এই পাখিদের আশ্রয়স্থল। মৌয়াল, বাওয়ালি ও জেলেরা বলা গাছের নানা ব্যবহার জানেন। এই গাছের ছাল সুন্দরবন অঞ্চলে দড়ি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। নানাকিছু বাঁধার কাজে এই দড়ি কাজে লাগে। সিংড়া গাছের কাণ্ড ঘরের খুঁটি হিসেবেও অনেকে ব্যবহার করেন। বনের আশেপাশের অনেকর কাছেই শুকনো বলা ও সিংড়া গাছ জ্বালানির উৎস। বলা ও সিংড়ার ঝোপে মৌমাছি চাক বানায়। এসব চাক ঘন ঝোপের আড়ালে থাকে বলে অনেক সময় নানা আকৃতির হয় এবং এসব ঝোঁপের মধু মিশ্র স্বাদের হয়। বলা ম্যানগ্রোভ অরণ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভিদ। মালভেসি পরিবারের এই গাছের উদ্ভিদতাত্বিক নাম Hibiscus tiliaceus। এশিয়া অঞ্চলে বিশেষত তাইওয়ানে বনসাই তৈরিতে এর বহুল ব্যবহার আছে, ইন্দোনেশিয়াতে এটি জাগ দেয়ার কাজে ব্যবহৃত হয়। অস্ট্র্রেলিয়ার গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ জে উদ্দিন, ডারেন গ্রেস ও এভেলিন টিরালংগো ২০০৮ সনে বাংলাদেশের ১২টি ঔষধি উদ্ভিদের সাইটোটক্সিক প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেন। এতে দেখা যায় বলা গাছের এই গুণ যথেষ্ট, যা ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে। বারবার চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর ও নাংলী অঞ্চলে আগুন লাগায় বনতল পুড়ে যাওয়ায় এর বৃক্ষবৈচিত্র্য ও বিন্যাসে এক পরিবর্তন তৈরি হচ্ছে। গত এক দশকে এই অঞ্চলের ঝোপে মৌচাকের সংখ্যা নিদারুণভাবে কমে এসেছে। এটি সুন্দরবনের প্রাকৃতিক পরাগায়ণ ও নতুন বন জন্ম এবং বিকাশের জন্য এক বিপদবার্তা। বনবিভাগকে অবশ্যই বনতলসহ সুন্দরবনের সব অংশকে গুরুত্ব দিয়েই এর যাবতীয় ক্ষয়ক্ষতি ও সুরক্ষার গণিত মজবুত রাখতে হবে। একতরফা করপোরেট উপনিবেশিক বাজারি মনস্তত্ত্ব দিয়ে বিবেচনা আর তদন্ত করলে সেটি বনের জটিল জীবনধারার সঙ্গে নিজের সম্পর্ককেই বারবার বিচ্ছিন্ন করে তুলবে।

কেন আগুন বারবার?

জার্মানির হোয়েনহেম বিশ্ববিদ্যালয়ের এস হারুন রশিদ, কানাডার লেকহেড বিশ্ববিদ্যালয়ের রেইনহার্ড বকার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এবিএম এনায়েত হোসেন ও আবু সালেহ খান ২০০৭ সনে সুন্দরবনের বনতলের উদ্ভিদবৈচিত্র্য এবং এর সঙ্গে লবণাক্ততার সম্পর্ক নিয়ে একটি যৌথ গবেষণায় দেখিয়েছেন, বনতলের লতাগুল্ম তীব্র জোয়ার ও উচ্চ লবণমাত্র সহ্য করতে পারে না। বনতলের উদ্ভিদবৈচিত্র্য দেখে সুন্দরবনের সুস্থতা বোঝা যায়। যদি উদ্ভিদের বৈচিত্র্য ও বিন্যাস বেশি থাকে তবে বোঝা যায় সুন্দরবনের স্বাস্থ্য ভালো এবং লবণের মাত্রা কম। আগুনে ঝলসানো সুন্দরবনের এ অংশের বনতল প্রমাণ করছে এখানে লবণের মাত্রা তুলনামূলকভাবে কম এবং এখানে বনতলের উদ্ভিবৈচিত্র্য বেশি। সুন্দরবনের ১৯ বছরের আগুন লাগার ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায় মূলত: পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জেই এই ঘটনা সবচে বেশি ঘটছে। তার ভেতর চাঁদপাই রেঞ্জেই এর মাত্রা বেশি। এটি তুলনামূলকভাবে উঁচু অঞ্চল এবং এখানকার নদীপ্রবাহগুলো উজানে আটকে আছে। যেসব অঞ্চল আগুন বেশি লাগছে সেখানে নদী, খাল ও পানিপ্রবাহ কম। কেউ কেউ এ সময়টাতে আগুন লাগিয়ে সুন্দরবনের খাঁড়ি ও খালগুলো থেকে একতরফাভাবে মাছের বাণিজ্য করেন। তবে অনেকে বলছেন সুন্দরবন নিয়ে নানা বিনাশী প্রকল্প, তেল-বিপর্যয় এবং বন্যপ্রাণী বাণিজ্যের মতো বিষয়কে আড়াল করতেই এ ঘটনা ঘটানো হচ্ছে।

লাউয়াছড়া থেকে শিক্ষা নিতে পারে সুন্দরবন

১৯ বছর ধরে বনবিভাগ সুন্দরবনের অগ্নিকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারেনি। এমনকি আগুন নেভানোর জন্য বনবিভাগকে দক্ষ ও প্রশিক্ষিতও করে তোলা হয়নি। বন আইন কী বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন ২০১২ অনুযায়ী সংরক্ষিত বনাঞ্চলে আগুন দেয়ার বিরুদ্ধে আইনি বিধান থাকলেও বিগত ১৯ বছর এসব আইনের পাতা কেউ ওল্টাচ্ছে না। সম্প্রতি ২০২১ সনের ২৪ এপ্রিল মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যায় প্রায় দুই একর বন। বনবিভাগ দ্রুত এই আগুন নেভাতে সচেষ্ট হয়, তদন্ত কমিটি গঠন করে তিন দিনের ভেতর তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে এবং দোষীদের বিচারের অঙ্গীকার করে। অগ্নিকাণ্ড রোধে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান যদি এমন সাহসী হতে পারে সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগ কেন পারবে না? সুন্দরবনে লাগাতার এই প্রশ্নহীন অগ্নিকাণ্ডের দ্রুত তদন্ত ও ন্যায়বিচার দাবি করছি আবারও।

[লেখক : প্রাণবৈচিত্র্য ও প্রতিবেশবিষয়ক গবেষক] animistbangla@gmail.com

বৃহস্পতিবার, ০৬ মে ২০২১ , ২৪ বৈশাখ ১৪২৮ ২৪ রমজান ১৪৪২

সুন্দরবনে বারবার আগুন কেন?

পাভেল পার্থ

image

একক আয়তনে দুনিয়ার বৃহত্তম জোয়ার-ভাটার বনভূমি সুন্দরবন। ভৌগলিক ও প্রতিবেশগত কারণে এখানে প্রাকৃতিকভাবে বনে আগুন লাগার কোন কারণ নেই। এটি অসম্ভব। কিন্তু সুন্দরবনে তাই ঘটে চলেছে। বছরের পর বছর। প্রশ্নহীন কায়দায়। পশ্চিম সুন্দরবন বিভাগে আগুন লাগার কোনো ঘটনা না ঘটলেও পূর্ব সুন্দরবন বিভাগে এটি ঘটেই চলেছে। তাও আবার চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর এলাকাতেই বেশি। করোনা মহামারির ভেতর আবারও ২০২১ সনের ৩ মে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের দাসের ভাড়ানি টহল ফাঁড়ির ২৪ নং কম্পার্টমেন্টে আগুন লাগে, পুড়ে যায় প্রায় ২ একর বন। প্রতি বছরই এ সময়টাতে বনের ভেতর বিলের মাছ আহরণ করতে প্রভাবশালী দুর্বৃত্তরা বনে আগুন দিয়ে সুন্দরবনের বাস্তুসংস্থান ও খাদ্যশৃঙ্খল তছনছ করে দিচ্ছে। এ নিয়ে বনবিভাগ তদন্ত কমিটি করে কিন্তু রহস্যময় কারণে এসব তদন্ত প্রতিবেদন পাবলিক হয় না। ২০১৬ সনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বনবিভাগ ১৮ জনকে আসামি করে তিনটি মামলা করেছিল। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। আবারও ঝলসে গেছে সুন্দরবন।

পুড়েছে প্রায় ৭২ একর বন

সুন্দরবনের এই সাম্প্রতিক আগুন লাগার ঘটনাটিই নতুন নয়। বনজীবী, সুন্দরবন অঞ্চলের আশেপাশের স্থানীয় মানুষ, বনবিভাগ ও গণমাধ্যমসূত্র মিলিয়ে দেখা যায় গত ১৯ বছরে প্রায় ২২ বার আগুন লেগেছে সুন্দরবনে। ২২ মার্চ যখন বিশ্বব্যাপী পানি দিবসের আয়োজন চলছে ২০০২ সনের ঐদিন শরণখোলা রেঞ্জের কটকা অভয়ারণ্যে আগুন লাগে। নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় প্রায় এক একর বন। পাশাপাশি আগুন লাগে একই রেঞ্জের নাংলী ও মান্দারবাড়িয়ায় দুইবার। ২০০৪ সনের ২৫ মার্চ আগুনে পুড়ে যায় চাঁদপাই রেঞ্জের নাংলী ক্যাম্পের মাদরাসারছিলা অঞ্চলের ৩ একর বন। ২০০৪ সনের ২৭ ডিসেম্বর আড়–য়ারবেড় অঞ্চলে পুড়ে যায় ৯ শতক বন। ২০০৫ সনের ৮ এপ্রিল চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের কলমতেজী অঞ্চলে পুড়ে যায় আড়াই একর বন। একই সনের ১৩ এপ্রিল চাঁদপাই রেঞ্জের তুলাতলার পুড়ে চার একর বন। ২০০৬ সন থেকে লাগাতার বন পুড়তেই থাকে। ৯ মার্চ শরণখোলা রেঞ্জের তেরাবেকায় পুড়ে এক একর বন। একই সনের ১১ এপ্রিল চাঁদপাই রেঞ্জের আমুরবুনিয়া টহলফাঁড়ি অঞ্চলে পুড়ে ৫০ শতক বন। ১২ এপ্রিল কলমতেজি টহলফাঁড়ির খুটাবাড়িয়া এলাকায় পুড়ে দেড় একর। কলমতেজিতে এর আগের বছরেই পুড়েছিল আড়াই একর বন। একই সনের পহেলা মে একই রেঞ্জের নাংলী ফাঁড়ির পচাকুড়ালিয়া এলাকায় পড়ে ৫০ শতক বন এবং ৪ মে ধানসাগর স্টেশনসংলগ্ন এলাকায় পুড়ে আড়াই একর বন। ২০০৭ সনেও তিনবার আগুন লাগার ঘটনা জানা যায়। এই সনের ১৫ জানুয়ারি শরণখোলার ডুমুরিয়া ক্যাম্প এলাকায় ৫ একর, ১৯ মার্চ চাঁদপাই রেঞ্জের নাংলী এলাকায় ২ একর ও একই অঞ্চলে ২৮ মার্চ পুড়ে যায় ৮ একর বন। ২০১০ সনের ২০ মার্চ চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের গুলিশাখালী এলাকায় পুড়ে যায় ৫ একর বন। ২০১১ সনেও তিনবার আগুন লাগে। ১ মার্চ নাংলী অঞ্চলের ২৫ নং কম্পার্টমেন্টে পুড়ে প্রায় ২ একর এবং একই সনের ৮ মার্চ আড়–য়ারবেড় অঞ্চলে পুড়ে যায় ৩ একর বন। ২০১৪ সনে আবারও ২০০৪ সনের মতো কালরাত্রি নেমে আসে। ভোলা নদী থেকে প্রায় দুই কিমি ভেতরে চাঁদপাই রেঞ্জের গুলিশাখালীর পয়ষট্টিছিলা অঞ্চলে ২৫ মার্চ পুড়ে যায় ১০ একর বন। ২০১৬ সনের ২৭ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত ধানসাগর স্টেশনের এই নাংলী ক্যাম্পেরই পচাকোড়ালিয়া, টেংরা ও তুলাতুলী এলাকার ম্যানগ্রোভ বন আগুন দিয়ে ঝলসে দেয় দুর্বৃত্তরা। ২০১৭ সনের ২৬ মে চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের নাংলী ক্যাম্পের আবদুল্লাহর ছিলা এলাকার প্রায় পাঁচ একর বনভূমি আগুনে পুড়ে যায়। করোনা মহামারিকালে তীব্র তাপদাহের সময় ২০২১ সনের ৮ ফেব্রুয়ারি ধানসাগর স্টেশনে আগুন লাগে এবং সর্বশেষ ২০২১ সনের ৩ মে শরণখোলা রেঞ্জের দাসের ভাড়ানি এলাকায় আগুন লাগে। ২০০২ থেকে ২০২১ সনের ৩ মে পর্যন্ত দেখা যায় প্রায় ২০ বছরে সুন্দরবনের প্রায় ৭২ একর বনঅঞ্চল আগুনে পুড়েছে বা ঝলসে দেয়া হয়েছে। আমরা যখন সুন্দরবনের আয়তন হিসাব করি তখন এই আগুনে ঝলসানো বনভূমির লাশেরও হিসাব হয় কী?

বনবিভাগের কাঠ-মনস্তত্ত্ব

বনবিভাগের হিসাবে ২২ বারের অগ্নিকাণ্ডে সুন্দরবনের প্রায় ১৮ লাখ ৫৫ হাজার ৫৩৩ টাকা ক্ষতি হয়েছে। আগুনে বন পুড়ে গেলে খুব একপেশে কায়দায় এর ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করা হয়। মূলত কতটুকু জায়গা পুড়েছে এবং কত ঘনফুট কাঠ পুড়েছে। এবারো গণমাধ্যমে বনবিভাগের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্র্তা বলেছেন, ‘কোন সুন্দরী গাছ পুড়েনি’। যেন, শুধু সুন্দরী গাছ নিয়েই সুন্দরবন! সুন্দরবনের মতো এক জটিল বাস্তুতন্ত্র যখন ঝলসে যায় তখন এর ক্ষতির হিসাব করবার মতো কোনো দায় বা দায়িত্ব আমরা এখনও বনবিভাগে দেখিনি। একটি বন নিশ্চয়ই কাঠের বাগান নয় বা উদ্ভিদ উদ্যান কী চিড়িয়াখানা নয়। আগুন লাগার ঘটনায় বনবিভাগের নানা সময়ে গণমাধ্যমে দেয়া বক্তব্য হলো, মূলত বনজীবী ও স্থানীয় মানুষদের বিড়ির আগুনে এটি ঘটে। যদিও প্রতিবার আগুন নেভাতে জান নিয়ে সুন্দরবনকে আগলে দাঁড়িয়েছে বনজীবী ও স্থানীয় মানুষেরাই। তারপর ক্ষতির প্রসঙ্গে বনবিভাগের বক্তব্য হলো আগুনে মূলত লতাগুল্ম পুড়ে কোন কাঠের গাছ পুড়ে না বলে বনের তেমন কোনো ক্ষতি হয় না। বনবিভাগের ভাষ্য হলো, জোয়ারের সময় বনে পানি ওঠে না বলে জায়গাটি শুষ্ক থাকে এবং এসব অঞ্চলে লতাপাতা ও গুল্ম জাতীয় সিংড়া ও বলাগাছ বেশি জন্মে। বনবিভাগকে বাণিজ্যিক কাঠসর্বস্ব এই মনস্তত্ত্ব থেকে বাইরে আসতে হবে। সুন্দরবনকে দেখতে হবে এর অগণতি অণুজীব, উদ্ভিদ, প্রাণী ও বননির্ভর জীবনসংষ্কৃতির ঐতিহাসিক সংসার ও জটিল বাস্তুসংস্থান হিসেবে। এখানে বলা বা সিংড়া হোক, বাইন বা সুন্দরী হোক, বাঘ কি শামুক হোক, শ্যাওলা কি ছত্রাক হোক যে কোনো প্রাণের ক্ষতি হলেই মুষড়ে পড়বে সুন্দরবন। ঘটবে নানাবিধ স্বাস্থ্য বিপর্যয়।

নিহত বলা গাছ ও ঝলসানো বনতল

একটি বনের স্তরবিন্যাসের ধরন অনুযায়ী দেখা যায় সুন্দরবনে বারবার আগুন লেগে সবচে বেশি ক্ষতির ধকল সইতে হচ্ছে বনতলকে। এমনকি সুন্দরবনের নদী-খাল ও খাঁড়ি থেকে বনের ভেতরের দিকে প্রাণবৈচিত্র্যের যে বিন্যাস তা উল্টেপাল্টে গেছে। বিপর্যস্ত হয়েছে খাদ্যশৃঙ্খল এবং আঘাত লেগেছে সামগ্রিক খাদ্যজালে। কারণ আগুন লাগছে মূলত: বনপ্রান্তে এবং সেখানে হারগোজা, ধানচি, বাঘ-ফার্ণ, সিংড়া, বলা, কালিলতা, গোলপাতা, কেয়া, হেন্তাল, আঙ্গুরলতা, বাওয়ালিলতারই আধিক্য বেশি থাকে। এটিই সুন্দরবনের বৃক্ষসমাজের অবস্থান বৈশিষ্ট্য। সুন্দরবনের জন্য এই বনতল খুবই গুরুত্ববহ এবং এখানকার সব প্রাণসম্পদ পুরো বনের টিকে থাকা ও বিকাশের সঙ্গে সম্পর্কিত। বারবার আগুনে সবচে বেশি পুড়েছে বলা, সিংড়া ও লতাগুল্ম। বনের এই অংশটুকু নানা প্রাণীর আশ্রয়স্থল। বিশেষত কাঁকড়া, শামুক, গুঁইসাপ, ব্যাঙ, সাপ, পতঙ্গ ও নানা জলচর পাখিদের। সুন্দরবনের বনজীবী-বিজ্ঞানমতে, বলা গাছের ঝোপে বাটাং, ঘুঘু, বক ও কুকু পাখি বাসা বানায়। বলা গাছের ঝোপ এই পাখিদের আশ্রয়স্থল। মৌয়াল, বাওয়ালি ও জেলেরা বলা গাছের নানা ব্যবহার জানেন। এই গাছের ছাল সুন্দরবন অঞ্চলে দড়ি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। নানাকিছু বাঁধার কাজে এই দড়ি কাজে লাগে। সিংড়া গাছের কাণ্ড ঘরের খুঁটি হিসেবেও অনেকে ব্যবহার করেন। বনের আশেপাশের অনেকর কাছেই শুকনো বলা ও সিংড়া গাছ জ্বালানির উৎস। বলা ও সিংড়ার ঝোপে মৌমাছি চাক বানায়। এসব চাক ঘন ঝোপের আড়ালে থাকে বলে অনেক সময় নানা আকৃতির হয় এবং এসব ঝোঁপের মধু মিশ্র স্বাদের হয়। বলা ম্যানগ্রোভ অরণ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভিদ। মালভেসি পরিবারের এই গাছের উদ্ভিদতাত্বিক নাম Hibiscus tiliaceus। এশিয়া অঞ্চলে বিশেষত তাইওয়ানে বনসাই তৈরিতে এর বহুল ব্যবহার আছে, ইন্দোনেশিয়াতে এটি জাগ দেয়ার কাজে ব্যবহৃত হয়। অস্ট্র্রেলিয়ার গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ জে উদ্দিন, ডারেন গ্রেস ও এভেলিন টিরালংগো ২০০৮ সনে বাংলাদেশের ১২টি ঔষধি উদ্ভিদের সাইটোটক্সিক প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেন। এতে দেখা যায় বলা গাছের এই গুণ যথেষ্ট, যা ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে। বারবার চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর ও নাংলী অঞ্চলে আগুন লাগায় বনতল পুড়ে যাওয়ায় এর বৃক্ষবৈচিত্র্য ও বিন্যাসে এক পরিবর্তন তৈরি হচ্ছে। গত এক দশকে এই অঞ্চলের ঝোপে মৌচাকের সংখ্যা নিদারুণভাবে কমে এসেছে। এটি সুন্দরবনের প্রাকৃতিক পরাগায়ণ ও নতুন বন জন্ম এবং বিকাশের জন্য এক বিপদবার্তা। বনবিভাগকে অবশ্যই বনতলসহ সুন্দরবনের সব অংশকে গুরুত্ব দিয়েই এর যাবতীয় ক্ষয়ক্ষতি ও সুরক্ষার গণিত মজবুত রাখতে হবে। একতরফা করপোরেট উপনিবেশিক বাজারি মনস্তত্ত্ব দিয়ে বিবেচনা আর তদন্ত করলে সেটি বনের জটিল জীবনধারার সঙ্গে নিজের সম্পর্ককেই বারবার বিচ্ছিন্ন করে তুলবে।

কেন আগুন বারবার?

জার্মানির হোয়েনহেম বিশ্ববিদ্যালয়ের এস হারুন রশিদ, কানাডার লেকহেড বিশ্ববিদ্যালয়ের রেইনহার্ড বকার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এবিএম এনায়েত হোসেন ও আবু সালেহ খান ২০০৭ সনে সুন্দরবনের বনতলের উদ্ভিদবৈচিত্র্য এবং এর সঙ্গে লবণাক্ততার সম্পর্ক নিয়ে একটি যৌথ গবেষণায় দেখিয়েছেন, বনতলের লতাগুল্ম তীব্র জোয়ার ও উচ্চ লবণমাত্র সহ্য করতে পারে না। বনতলের উদ্ভিদবৈচিত্র্য দেখে সুন্দরবনের সুস্থতা বোঝা যায়। যদি উদ্ভিদের বৈচিত্র্য ও বিন্যাস বেশি থাকে তবে বোঝা যায় সুন্দরবনের স্বাস্থ্য ভালো এবং লবণের মাত্রা কম। আগুনে ঝলসানো সুন্দরবনের এ অংশের বনতল প্রমাণ করছে এখানে লবণের মাত্রা তুলনামূলকভাবে কম এবং এখানে বনতলের উদ্ভিবৈচিত্র্য বেশি। সুন্দরবনের ১৯ বছরের আগুন লাগার ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায় মূলত: পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জেই এই ঘটনা সবচে বেশি ঘটছে। তার ভেতর চাঁদপাই রেঞ্জেই এর মাত্রা বেশি। এটি তুলনামূলকভাবে উঁচু অঞ্চল এবং এখানকার নদীপ্রবাহগুলো উজানে আটকে আছে। যেসব অঞ্চল আগুন বেশি লাগছে সেখানে নদী, খাল ও পানিপ্রবাহ কম। কেউ কেউ এ সময়টাতে আগুন লাগিয়ে সুন্দরবনের খাঁড়ি ও খালগুলো থেকে একতরফাভাবে মাছের বাণিজ্য করেন। তবে অনেকে বলছেন সুন্দরবন নিয়ে নানা বিনাশী প্রকল্প, তেল-বিপর্যয় এবং বন্যপ্রাণী বাণিজ্যের মতো বিষয়কে আড়াল করতেই এ ঘটনা ঘটানো হচ্ছে।

লাউয়াছড়া থেকে শিক্ষা নিতে পারে সুন্দরবন

১৯ বছর ধরে বনবিভাগ সুন্দরবনের অগ্নিকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারেনি। এমনকি আগুন নেভানোর জন্য বনবিভাগকে দক্ষ ও প্রশিক্ষিতও করে তোলা হয়নি। বন আইন কী বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন ২০১২ অনুযায়ী সংরক্ষিত বনাঞ্চলে আগুন দেয়ার বিরুদ্ধে আইনি বিধান থাকলেও বিগত ১৯ বছর এসব আইনের পাতা কেউ ওল্টাচ্ছে না। সম্প্রতি ২০২১ সনের ২৪ এপ্রিল মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যায় প্রায় দুই একর বন। বনবিভাগ দ্রুত এই আগুন নেভাতে সচেষ্ট হয়, তদন্ত কমিটি গঠন করে তিন দিনের ভেতর তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে এবং দোষীদের বিচারের অঙ্গীকার করে। অগ্নিকাণ্ড রোধে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান যদি এমন সাহসী হতে পারে সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগ কেন পারবে না? সুন্দরবনে লাগাতার এই প্রশ্নহীন অগ্নিকাণ্ডের দ্রুত তদন্ত ও ন্যায়বিচার দাবি করছি আবারও।

[লেখক : প্রাণবৈচিত্র্য ও প্রতিবেশবিষয়ক গবেষক] animistbangla@gmail.com