বীমা খাত উন্নয়নে ছয় দাবি বিআইএ’র

আগামী অর্থবছরের বাজেট উপলক্ষে দেশে ব্যবসা করা বীমা কোম্পানিগুলোর পক্ষে পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ)। গতকাল ভার্চুয়ালি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি শেখ কবির হোসেন এসব দাবি তুলে ধরেন। বিআইএ’র দাবির মধ্যে রয়েছে- পুনঃবীমার বিপরীতে উৎস কর প্রত্যাহার, জীবন বীমা পলিসিহোল্ডারদর মুনার ওপর গেইন ট্যাক্স প্রত্যাহার, এজেন্ট কমিশনের অগ্রিম কর দুই বছরের জন্য প্রত্যাহার, স্বাস্থ্য বীমার ওপর থেকে ট্যাক্স কর্তন রহিতকরণ এবং কর্পোরেট ট্যাক্স হার কমানো।

বীমা মালিকদের এই সমিতিতে শেখ কবির হোসেন প্রায় এক যুগ ধরে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ২০১১ সালে তিনি প্রথম সংগঠনটির সভাপতি নির্বাচিত হন।

দুই বছরের জন্য এজেন্ট কমিশনের অগ্রিম কর প্রত্যাহার করার দাবির পক্ষে বলা হয়, এজেন্ট কমিশনের ওপর ৫ শতাংশ অগ্রিম কর পরিশোধের বিধান রয়েছে। কিন্তু বর্তমান আগ্রাসী করোনাভাইরাসে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, যা বৈশ্বিকভাবে মহামারী আকারে আবির্ভূত হয়েছে। করোনার কারণে বিগত তিন মাস সব মাঠকর্মী গৃহবন্দি থাকায় তারা কোন কাজ করতে পারছে না। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার স্বার্থে তারা জনগণের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে প্রিমিয়াম সংগ্রহ করতে পারছে না। নতুন ব্যবসা তো দূরের কথা নবায়ন প্রিমিয়ামও সংগ্রহ করতে পারছে না। এ পরিস্থিতিতে বীমা এজেন্টদের অগ্রিম ৫ শতাংশ কর পরিশোধের বিধান আগামী দুই অর্থবছরের জন্য স্থগিত করা প্রয়োজন।

পুনঃবীমার উৎসে মূল্য সংযোজন কর প্রত্যাহার দাবির পক্ষে বলা হয়, বীমা কোম্পানি প্রিমিয়াম গ্রহণ করলেই গ্রাহকের নিকট থেকে ১৫ শতাংশ হারে মূসক গ্রহণ করে তা সরকারি কোষাগারে জমা দেয়। বীমা কোম্পানি ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার স্বার্থে এই প্রিমিয়ামের একটি অংশ পুনঃবীমা করে। এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি ব্যবস্থা। যেহেতু প্রিমিয়াম নেয়ার সময় সম্পূর্ণ প্রিমিয়ামের ওপর আইন অনুযায়ী মূসক সরকারি কোষাগারে জমা করা হয় এবং এই প্রিমিয়ামেরই একটি অংশ পুনঃবীমাকারীকে দেয়া হয়, সেহেতু পুনঃবীমা প্রিমিয়ামের ওপর ভ্যাট আরোপের কোন সুযোগ নেই। এ ধরনের ভ্যাট ধার্য করা হলে বিষয়টিকে দ্বৈতকর বলে বিবেচিত হবে।

করপোরেট ট্যাক্স কমানোর দাবি জানিয়ে বলা হয়, আইন অনুযায়ী- তালিকাভুক্ত ব্যাংক, ইন্স্যুরেন্স ও অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর হার সাড়ে ৩৭ শতাংশ। কিন্তু ব্যাংকের তুলনায় বীমা কোম্পানির আয় খুবই নগণ্য। ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কর হার ব্যাংকিং কোম্পানির সমান, যা কখনো কাম্য হতে পারে না। অন্যদিকে উৎপাদনকারী ও অন্য সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের কর হার ২৫ শতাংশ অথবা তার চেয়ে কম। অর্থ সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান করে বিধায় বিশ্বের অধিকাংশ দেশে লাইফ বীমা কোম্পানির করপোরেট ট্যাক্স নন-লাইফ বীমা কোম্পানির থেকে কম হয়। তাই ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির করপোরেট কর হার ব্যাংকিং কোম্পানির সমান না রেখে নন-লাইফ বীমা কোম্পানির জন্য ৩৫ শতাংশ এবং লাইফ বীমা কোম্পানির জন্য ৩০ শতাংশ করা প্রয়োজন।

জীবন বীমার পলিসিহোল্ডারদের মুনাফার ওপর ৫ শতাংশ গেইন ট্যাক্স কাটার নিয়ম বন্ধ করার পক্ষে বলা হয়, গ্রামগঞ্জের পলিসিহোল্ডারদের ঝুঁকির বিষয় মুনাফার সম্বন্ধে সুবিধার কথা বুঝিয়ে তারপর পলিসি বিক্রি করা হয়। ক্ষুদ্র পলিসিহোল্ডারদের মুনাফার ওপর ৫ শতাংশ গেই ট্যাক্সের যে বিধান চালু করা হয়েছে তা যদি উঠিয়ে নেয়া না হয়, তাহলে দেশে লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ব্যবসা প্রতিনিয়ত কমতে থাকবে এবং কোম্পানিগুলোর পক্ষে টিকে থাকা কষ্টসাধ্য হবে।

স্বাস্থ্য বীমার ওপর থেকে ট্যাক্স কর্তন রহিতকরণের পক্ষে যুক্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়, আমাদের দেশে প্রচলিত বীমা আইনে জীবন বীমা পলিসির প্রিমিয়ামের ওপর কোন ভ্যাট দিতে হয় না। কিন্তু কোন বীমাগ্রহীতা জীবন বীমার সঙ্গে স্বাস্থ্য বীমা যুক্ত করে পলিসি করলে স্বাস্থ্য বীমার প্রিমিয়ামের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। এতে করে প্রিমিয়ামের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলশ্রুতিতে গ্রাহক স্বাস্থ্য বীমা করার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।

শুক্রবার, ০৭ মে ২০২১ , ২৫ বৈশাখ ১৪২৮ ২৫ রমজান ১৪৪২

বীমা খাত উন্নয়নে ছয় দাবি বিআইএ’র

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

আগামী অর্থবছরের বাজেট উপলক্ষে দেশে ব্যবসা করা বীমা কোম্পানিগুলোর পক্ষে পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ)। গতকাল ভার্চুয়ালি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি শেখ কবির হোসেন এসব দাবি তুলে ধরেন। বিআইএ’র দাবির মধ্যে রয়েছে- পুনঃবীমার বিপরীতে উৎস কর প্রত্যাহার, জীবন বীমা পলিসিহোল্ডারদর মুনার ওপর গেইন ট্যাক্স প্রত্যাহার, এজেন্ট কমিশনের অগ্রিম কর দুই বছরের জন্য প্রত্যাহার, স্বাস্থ্য বীমার ওপর থেকে ট্যাক্স কর্তন রহিতকরণ এবং কর্পোরেট ট্যাক্স হার কমানো।

বীমা মালিকদের এই সমিতিতে শেখ কবির হোসেন প্রায় এক যুগ ধরে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ২০১১ সালে তিনি প্রথম সংগঠনটির সভাপতি নির্বাচিত হন।

দুই বছরের জন্য এজেন্ট কমিশনের অগ্রিম কর প্রত্যাহার করার দাবির পক্ষে বলা হয়, এজেন্ট কমিশনের ওপর ৫ শতাংশ অগ্রিম কর পরিশোধের বিধান রয়েছে। কিন্তু বর্তমান আগ্রাসী করোনাভাইরাসে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, যা বৈশ্বিকভাবে মহামারী আকারে আবির্ভূত হয়েছে। করোনার কারণে বিগত তিন মাস সব মাঠকর্মী গৃহবন্দি থাকায় তারা কোন কাজ করতে পারছে না। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার স্বার্থে তারা জনগণের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে প্রিমিয়াম সংগ্রহ করতে পারছে না। নতুন ব্যবসা তো দূরের কথা নবায়ন প্রিমিয়ামও সংগ্রহ করতে পারছে না। এ পরিস্থিতিতে বীমা এজেন্টদের অগ্রিম ৫ শতাংশ কর পরিশোধের বিধান আগামী দুই অর্থবছরের জন্য স্থগিত করা প্রয়োজন।

পুনঃবীমার উৎসে মূল্য সংযোজন কর প্রত্যাহার দাবির পক্ষে বলা হয়, বীমা কোম্পানি প্রিমিয়াম গ্রহণ করলেই গ্রাহকের নিকট থেকে ১৫ শতাংশ হারে মূসক গ্রহণ করে তা সরকারি কোষাগারে জমা দেয়। বীমা কোম্পানি ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার স্বার্থে এই প্রিমিয়ামের একটি অংশ পুনঃবীমা করে। এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি ব্যবস্থা। যেহেতু প্রিমিয়াম নেয়ার সময় সম্পূর্ণ প্রিমিয়ামের ওপর আইন অনুযায়ী মূসক সরকারি কোষাগারে জমা করা হয় এবং এই প্রিমিয়ামেরই একটি অংশ পুনঃবীমাকারীকে দেয়া হয়, সেহেতু পুনঃবীমা প্রিমিয়ামের ওপর ভ্যাট আরোপের কোন সুযোগ নেই। এ ধরনের ভ্যাট ধার্য করা হলে বিষয়টিকে দ্বৈতকর বলে বিবেচিত হবে।

করপোরেট ট্যাক্স কমানোর দাবি জানিয়ে বলা হয়, আইন অনুযায়ী- তালিকাভুক্ত ব্যাংক, ইন্স্যুরেন্স ও অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর হার সাড়ে ৩৭ শতাংশ। কিন্তু ব্যাংকের তুলনায় বীমা কোম্পানির আয় খুবই নগণ্য। ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কর হার ব্যাংকিং কোম্পানির সমান, যা কখনো কাম্য হতে পারে না। অন্যদিকে উৎপাদনকারী ও অন্য সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের কর হার ২৫ শতাংশ অথবা তার চেয়ে কম। অর্থ সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান করে বিধায় বিশ্বের অধিকাংশ দেশে লাইফ বীমা কোম্পানির করপোরেট ট্যাক্স নন-লাইফ বীমা কোম্পানির থেকে কম হয়। তাই ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির করপোরেট কর হার ব্যাংকিং কোম্পানির সমান না রেখে নন-লাইফ বীমা কোম্পানির জন্য ৩৫ শতাংশ এবং লাইফ বীমা কোম্পানির জন্য ৩০ শতাংশ করা প্রয়োজন।

জীবন বীমার পলিসিহোল্ডারদের মুনাফার ওপর ৫ শতাংশ গেইন ট্যাক্স কাটার নিয়ম বন্ধ করার পক্ষে বলা হয়, গ্রামগঞ্জের পলিসিহোল্ডারদের ঝুঁকির বিষয় মুনাফার সম্বন্ধে সুবিধার কথা বুঝিয়ে তারপর পলিসি বিক্রি করা হয়। ক্ষুদ্র পলিসিহোল্ডারদের মুনাফার ওপর ৫ শতাংশ গেই ট্যাক্সের যে বিধান চালু করা হয়েছে তা যদি উঠিয়ে নেয়া না হয়, তাহলে দেশে লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ব্যবসা প্রতিনিয়ত কমতে থাকবে এবং কোম্পানিগুলোর পক্ষে টিকে থাকা কষ্টসাধ্য হবে।

স্বাস্থ্য বীমার ওপর থেকে ট্যাক্স কর্তন রহিতকরণের পক্ষে যুক্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়, আমাদের দেশে প্রচলিত বীমা আইনে জীবন বীমা পলিসির প্রিমিয়ামের ওপর কোন ভ্যাট দিতে হয় না। কিন্তু কোন বীমাগ্রহীতা জীবন বীমার সঙ্গে স্বাস্থ্য বীমা যুক্ত করে পলিসি করলে স্বাস্থ্য বীমার প্রিমিয়ামের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। এতে করে প্রিমিয়ামের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলশ্রুতিতে গ্রাহক স্বাস্থ্য বীমা করার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।