কলকাতায় আটকেপড়া বাংলাদেশীরা চরম দুর্ভোগে

কলকাতায় আটকেপড়া বাংলাদেশিদের দেশেফেরা নতুন করে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে আটকেপড়া নাগরিকরা বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে যেতে পারবেন না। তাদের যেতে হলে বাংলাদেশের বুড়িমারী ও আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে যেতে হবে। আটকেপড়া নাগরিকরা ঐ দুটি সীমান্ত দিয়ে যেতে ইচ্ছুক নন। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত তারা স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি ও অর্থ সংকটের কারণে যেতে রাজি হচ্ছে না। তাছাড়া আটকেপড়া বেশিরভাগই যশোর, খুলনা, মাগুরা, ঝিনাইদহ ফরিদপুর, মাদারীপুর, বরিশাল এলাকর বাসিন্দা। বুড়িমারী বা আখাউড়া দিয়ে যাওয়ার মতো টাকা-পয়সা নেই, তার উপর স্বাস্থ্যঝুঁকি তো রয়েছেই, এমন কথা বলেছেন বরগুনার বাসিন্দা গোলাম কবির। ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য তিনি ভারতে এসেছিলেন কিন্তু করোনার কারণে হাসপাতাল থেকে ছুটি দিয়ে দেয়। দেশে ফেরার জন্য কলকাতায় এসে পড়েছেন নানা ঝামেলায়। তিনি বলেন, সরকারি আইন মেনেই তো আমরা দেশে ফিরতে রাজি কিন্তু নিত্যদিন সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে আমরা বেসামাল হয়ে পড়েছি।

কলকাতা উপ-হাইকমিশন থেকে বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট ঐ দু’টি বন্দর ছাড়া তারা এনওসি দেবেন। আজ সারাদিন অপেক্ষা করেও আমি এনওসি পাইনি। আমরা এখানে এখন খেয়ে না খেয়ে পড়ে আছি। সাতক্ষীরার বাসিন্দা জীবন মন্ডল জানান, এই সিদ্ধান্ত কেন নেয়া হলো, আমি যাব সাতক্ষীরা আর আমাকে অসুস্থ শরীর নিয়ে এতটা পথ পাড়ি দিয়ে সাতক্ষীরা যেতে হবে। চিকিৎসা করাতে এসে আমার সব টাকা ফুরিয়ে গেছে। কীভাবে এখানে দিনযাপন করছি একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না। এই কারণে আমাকেও উপ-হাইকমিশন থেকে অনুমতিপত্র দেয়া হয়নি।

খুব কষ্টে আছি। যশোরের বাসিন্দা আসরাফুল ইসলাম বলেন, অসুস্থ শরীর নিয়ে কীভাবে আমরা বুড়িমারী বা আখাউড়া দিয়ে যাব? এতটা পথ ঘুরে যেতে পারব না, তাছাড়া আমার কাছে কোন পয়সা-পাতি নেই। খেতে পারছি না। আমি বেনাপোল দিয়ে গেলে অল্প পথ, তাই বেনাপোল দিয়ে যেতে চাই। এই অফিসের (উপ-হাইকমিশন) বশির স্যার আমাদের খুব সাহায্য করছেন কিন্তু বশির স্যার কেন আপনাকে এনওসি দিচ্ছেন না- এই প্রসঙ্গে তিনি জানান, এই মুহূর্তে বেনাপোল দিয়ে যাওয়ার কোন আদেশ নেই বলে জানান। তবে তিনি চেষ্টা করছেন আমাদের জন্য। এ ব্যাপারে কলকাতার উপ-হাকমিশনার তৌফিক হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, গত ২৬ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত প্রায় দু’হাজার বাংলাদেশি নাগরিককে এনওসি দেয়া হয়েছে। এদের সবাইকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয় কিন্তু বেনাপোল বন্দরে আইসোলেশন সেন্টারে স্থান সংকুলান না হওয়ায় সেখানকার বন্দর ও জেলা প্রশাসনের অনুরোধে আজ থেকে আমরা বুড়িমারী ও আখাউড়া দিয়ে যারা যাবে শুধু তাদেরই এনওসি দেয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসন থেকে কোন লিখিত চিঠি বা কোন অর্ডার আছে কিনা জানতে চাওয়া হলে তৌফিক হাসান বলেন, আমাদের তারা মৌখিকভাবে অনুরোধ করেছে। তাছাড়া ওখানে আইসোলেশন কেন্দ্রে জায়গা না থাকলে সেখানে গিয়ে তাদের তো কষ্ট হবে। কিন্তু কলকাতা থেকে বুড়িমারী সীমান্তের দূরত্ব ৬শ’১৪ কিলোমিটার। তাছাড়া পশ্চিমবঙ্গ সরকার বৃহস্পতিবার থেকে করোনার জন্য লোকাল ট্রেন বন্ধ করে দিয়েছে। এই অবস্থায় অসুস্থ শরীর নিয়ে তার কীভাবে বুড়িমারী থেকে পটুয়াখালীর বরগুনা, যশোর, সাতক্ষীরা ফিরবেন। এ ব্যাপারে উপ-হাইকমিশন থেকে কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি। তারা জানায়, শুধু আজকের প্রায় ৩শ’ বাংলাদেশি নাগরিক দেশে ফেরার জন্য কলকাতা উপ-হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ দেখায়। বরগুনার গোলাম কবির জানান, আমাদের বেনাপোল দিয়ে সরকার যদি দেশে ফেরার ব্যবস্থা না করে তাহলে এবারের ঈদে আমাদের বাড়ি ফেরা হবে না, এখানে না খেয়ে থাকতে হবে।

চিকিৎসাসহ বিভিন্ন কাজে ভারতে এসে আটকেপড়া বাংলাদেশিদের দেশে ফেরাতে দিনরাত কাজ করছে কলকাতায় বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনের কন্স্যুলার বিভাগ। জানা গেছে, সরকারি বিধি অনুযায়ী এই পর্যন্ত মোট ১ হাজার ৭শ’ ১৭ জনকে দেশে ফেরার অনুমতিপত্র দিয়েছে উপ-হাইকমিশন। বেনাপোল পৌঁছালে এদের সবাইকে কোভিড আইনানুয়ায়ী ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। কলকাতা উপ-হাইকমিশনের কন্স্যুলার মো. বশিরউদ্দীন সংবাদ প্রতিনিধিকে জানান, বুধবার কলকাতায় আটকেপড়া আরও ৩৫০ বাংলাদেশিকে দেশে ফেরার এনওসি দিয়েছে তারা। বশির জানান, এদের মধ্যে অনেক রোগী আছেন যারা ক্যান্সার, বাইপাস সার্জারি, টিউমার অপারেশনসহ মারাত্মক অসুস্থ অবস্থায় দেশে ফেরার অপেক্ষায় ছিলেন। মানবিক কারণে তাদের ঈদের আগে দেশে ফেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এমন অসুস্থ রোগী আছেন যাদের হাতে কোন টাকা-পয়সা নেই, থাকা খাওয়ায় চরম অনিশ্চিত প্রায় এমন অবস্থায় রয়েছেন তারা। এসব বাংলাদেশি নাগরিককে দেশে ফেরানো না হলে যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা করছেন মো. বশির উদ্দীন। তিনি বলেন, এখনও অনেক আবেদন জমা করা হয়েছে এবং মানবিক দিক বিবেচনার জন্য তাদের আবেদন যাচাই করা হচ্ছে। ভয়ঙ্কর করোনা সংক্রমণের কারণে বাংলাদেশ সরকার হঠাৎ করে ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ায় কলকাতায় আটকে পড়ে কয়েক হাজার বাংলাদেশি নাগরিক খুব কষ্টের মধ্যে দিনযাপন করছেন। বাংলাদেশ সরকারের এই নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে ২৬ এপ্রিল থেকে ৯ মে পর্যন্ত। মো. বশির জানান, ‘আমাদের অফিসের বেশ কয়েকজন করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে। এই কারণে আমরা অফিস শেষের পরেও অতিরিক্ত সময় কাজ করছি।’

শুক্রবার, ০৭ মে ২০২১ , ২৫ বৈশাখ ১৪২৮ ২৫ রমজান ১৪৪২

কলকাতায় আটকেপড়া বাংলাদেশীরা চরম দুর্ভোগে

দীপক মুখার্জী, কলকাতা

কলকাতায় আটকেপড়া বাংলাদেশিদের দেশেফেরা নতুন করে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে আটকেপড়া নাগরিকরা বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে যেতে পারবেন না। তাদের যেতে হলে বাংলাদেশের বুড়িমারী ও আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে যেতে হবে। আটকেপড়া নাগরিকরা ঐ দুটি সীমান্ত দিয়ে যেতে ইচ্ছুক নন। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত তারা স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি ও অর্থ সংকটের কারণে যেতে রাজি হচ্ছে না। তাছাড়া আটকেপড়া বেশিরভাগই যশোর, খুলনা, মাগুরা, ঝিনাইদহ ফরিদপুর, মাদারীপুর, বরিশাল এলাকর বাসিন্দা। বুড়িমারী বা আখাউড়া দিয়ে যাওয়ার মতো টাকা-পয়সা নেই, তার উপর স্বাস্থ্যঝুঁকি তো রয়েছেই, এমন কথা বলেছেন বরগুনার বাসিন্দা গোলাম কবির। ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য তিনি ভারতে এসেছিলেন কিন্তু করোনার কারণে হাসপাতাল থেকে ছুটি দিয়ে দেয়। দেশে ফেরার জন্য কলকাতায় এসে পড়েছেন নানা ঝামেলায়। তিনি বলেন, সরকারি আইন মেনেই তো আমরা দেশে ফিরতে রাজি কিন্তু নিত্যদিন সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে আমরা বেসামাল হয়ে পড়েছি।

কলকাতা উপ-হাইকমিশন থেকে বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট ঐ দু’টি বন্দর ছাড়া তারা এনওসি দেবেন। আজ সারাদিন অপেক্ষা করেও আমি এনওসি পাইনি। আমরা এখানে এখন খেয়ে না খেয়ে পড়ে আছি। সাতক্ষীরার বাসিন্দা জীবন মন্ডল জানান, এই সিদ্ধান্ত কেন নেয়া হলো, আমি যাব সাতক্ষীরা আর আমাকে অসুস্থ শরীর নিয়ে এতটা পথ পাড়ি দিয়ে সাতক্ষীরা যেতে হবে। চিকিৎসা করাতে এসে আমার সব টাকা ফুরিয়ে গেছে। কীভাবে এখানে দিনযাপন করছি একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না। এই কারণে আমাকেও উপ-হাইকমিশন থেকে অনুমতিপত্র দেয়া হয়নি।

খুব কষ্টে আছি। যশোরের বাসিন্দা আসরাফুল ইসলাম বলেন, অসুস্থ শরীর নিয়ে কীভাবে আমরা বুড়িমারী বা আখাউড়া দিয়ে যাব? এতটা পথ ঘুরে যেতে পারব না, তাছাড়া আমার কাছে কোন পয়সা-পাতি নেই। খেতে পারছি না। আমি বেনাপোল দিয়ে গেলে অল্প পথ, তাই বেনাপোল দিয়ে যেতে চাই। এই অফিসের (উপ-হাইকমিশন) বশির স্যার আমাদের খুব সাহায্য করছেন কিন্তু বশির স্যার কেন আপনাকে এনওসি দিচ্ছেন না- এই প্রসঙ্গে তিনি জানান, এই মুহূর্তে বেনাপোল দিয়ে যাওয়ার কোন আদেশ নেই বলে জানান। তবে তিনি চেষ্টা করছেন আমাদের জন্য। এ ব্যাপারে কলকাতার উপ-হাকমিশনার তৌফিক হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, গত ২৬ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত প্রায় দু’হাজার বাংলাদেশি নাগরিককে এনওসি দেয়া হয়েছে। এদের সবাইকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয় কিন্তু বেনাপোল বন্দরে আইসোলেশন সেন্টারে স্থান সংকুলান না হওয়ায় সেখানকার বন্দর ও জেলা প্রশাসনের অনুরোধে আজ থেকে আমরা বুড়িমারী ও আখাউড়া দিয়ে যারা যাবে শুধু তাদেরই এনওসি দেয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসন থেকে কোন লিখিত চিঠি বা কোন অর্ডার আছে কিনা জানতে চাওয়া হলে তৌফিক হাসান বলেন, আমাদের তারা মৌখিকভাবে অনুরোধ করেছে। তাছাড়া ওখানে আইসোলেশন কেন্দ্রে জায়গা না থাকলে সেখানে গিয়ে তাদের তো কষ্ট হবে। কিন্তু কলকাতা থেকে বুড়িমারী সীমান্তের দূরত্ব ৬শ’১৪ কিলোমিটার। তাছাড়া পশ্চিমবঙ্গ সরকার বৃহস্পতিবার থেকে করোনার জন্য লোকাল ট্রেন বন্ধ করে দিয়েছে। এই অবস্থায় অসুস্থ শরীর নিয়ে তার কীভাবে বুড়িমারী থেকে পটুয়াখালীর বরগুনা, যশোর, সাতক্ষীরা ফিরবেন। এ ব্যাপারে উপ-হাইকমিশন থেকে কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি। তারা জানায়, শুধু আজকের প্রায় ৩শ’ বাংলাদেশি নাগরিক দেশে ফেরার জন্য কলকাতা উপ-হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ দেখায়। বরগুনার গোলাম কবির জানান, আমাদের বেনাপোল দিয়ে সরকার যদি দেশে ফেরার ব্যবস্থা না করে তাহলে এবারের ঈদে আমাদের বাড়ি ফেরা হবে না, এখানে না খেয়ে থাকতে হবে।

চিকিৎসাসহ বিভিন্ন কাজে ভারতে এসে আটকেপড়া বাংলাদেশিদের দেশে ফেরাতে দিনরাত কাজ করছে কলকাতায় বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনের কন্স্যুলার বিভাগ। জানা গেছে, সরকারি বিধি অনুযায়ী এই পর্যন্ত মোট ১ হাজার ৭শ’ ১৭ জনকে দেশে ফেরার অনুমতিপত্র দিয়েছে উপ-হাইকমিশন। বেনাপোল পৌঁছালে এদের সবাইকে কোভিড আইনানুয়ায়ী ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। কলকাতা উপ-হাইকমিশনের কন্স্যুলার মো. বশিরউদ্দীন সংবাদ প্রতিনিধিকে জানান, বুধবার কলকাতায় আটকেপড়া আরও ৩৫০ বাংলাদেশিকে দেশে ফেরার এনওসি দিয়েছে তারা। বশির জানান, এদের মধ্যে অনেক রোগী আছেন যারা ক্যান্সার, বাইপাস সার্জারি, টিউমার অপারেশনসহ মারাত্মক অসুস্থ অবস্থায় দেশে ফেরার অপেক্ষায় ছিলেন। মানবিক কারণে তাদের ঈদের আগে দেশে ফেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এমন অসুস্থ রোগী আছেন যাদের হাতে কোন টাকা-পয়সা নেই, থাকা খাওয়ায় চরম অনিশ্চিত প্রায় এমন অবস্থায় রয়েছেন তারা। এসব বাংলাদেশি নাগরিককে দেশে ফেরানো না হলে যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা করছেন মো. বশির উদ্দীন। তিনি বলেন, এখনও অনেক আবেদন জমা করা হয়েছে এবং মানবিক দিক বিবেচনার জন্য তাদের আবেদন যাচাই করা হচ্ছে। ভয়ঙ্কর করোনা সংক্রমণের কারণে বাংলাদেশ সরকার হঠাৎ করে ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ায় কলকাতায় আটকে পড়ে কয়েক হাজার বাংলাদেশি নাগরিক খুব কষ্টের মধ্যে দিনযাপন করছেন। বাংলাদেশ সরকারের এই নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে ২৬ এপ্রিল থেকে ৯ মে পর্যন্ত। মো. বশির জানান, ‘আমাদের অফিসের বেশ কয়েকজন করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে। এই কারণে আমরা অফিস শেষের পরেও অতিরিক্ত সময় কাজ করছি।’