দূরপাল্লার সব বন্ধ, এই সুযোগে বেসরকারি বিমান ভাড়া নিচ্ছে তিনগুণ বেশি

স্বাস্থ্যবিধিও মানে না

ঢাকা-বরিশাল রুটে সরকারি বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলো সাধারণ সময়ে জনপ্রতি ২ হাজার ৭শ’ টাকায় টিকেট কিনে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারেন। কিন্তু এবার ঈদ উল ফিতরকে সামনে রেখে সড়ক ও নৌপথে গণপরিবহন বন্ধ থাকার কারণে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগে আকাশপথই একমাত্র মাধ্যম হলেও বিমান সংস্থাগুলো আকাশচুম্বী ভাড়া আদায় করে নিচ্ছে।

সরকারি বিমান সংস্থা স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রী পরিবহন করলেও বেসরকারি সংস্থার কাছে ঈদের কারণে স্বাস্থ্যবিধির কোন বালাই নেই। ঢাকা-বরিশাল রুটে গত বুধবার বেসরকারি এয়রলাইন্সের একটি টিকেট বিক্রি হয়েছে ৯ হাজার টাকায়।

অথচ এ বিপুল চাহিদার মধ্যেও নানা বিধিনিষেধে বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো ফ্লাইট সংখ্যা বাড়াতে না পারলেও রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থাটি ঈদের পরদিন থেকে নিয়মিত দৈনিক ফ্লাইট পরিচালনার পরিবর্তে সপ্তাহে ৩ দিন ফ্লাইট পরিচালনা করার ঘোষণা দিয়েছে। ফলে মানুষের দুর্ভোগ আরও বৃদ্ধির সঙ্গে বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোর বাড়তি ভাড়া আদায়ের ক্ষেত্র আরও মজবুত হবে বলে মনে করছেন যাত্রীরা।

করোনা মহামারী প্রতিরোধে চলমান লকডাউনে সড়ক ও নৌপথে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধের মধ্যে গত ২২ এপ্রিল থেকে সরকার সীমিত পরিসরে আকাশ পরিবহন চালুর অনুমোদন দেয়। সেই নিরিখে বেসরকারি নভো এয়ার ও ইউএস-বাংলা বরিশাল সেক্টরে প্রতিদিন ১টি করে ফ্লাইট চালু করে। রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থাটি ২৩ এপ্রিল থেকে বেশ কয়েকবার সময়সূচি পরিবর্তন করে সকালের দিকে প্রতিদিন ১টি ফ্লাইট পরিচালনা করলেও ঈদের আগের দিন পর্যন্ত রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার সকাল ও বিকেলে দুটি ফ্লাইট পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছে।

কিন্তু ঈদের পরদিন থেকেই সংস্থাটি বরিশাল সেক্টরে দৈনিক ফ্লাইট আবার সপ্তাহে ৩দিনে হ্রাস করছে বলে জানা গেছে। ফলে এই সেক্টরে যাত্রী দুর্ভোগ বৃদ্ধির সঙ্গে ভাড়া নিয়েও সব ধরনের ভারসাম্যতা বিনষ্ট হচ্ছে। বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো বুধবার থেকে মাত্র ৬৮ অ্যারোনটিক্যাল মাইলের ঢাকা-বরিশাল আকাশপথে যেমন ৯ হাজার টাকা ভাড়া আদায় করছে তেমনি ঈদের পরও ৫ হাজার ৭শ’ থেকে ৯ হাজার টাকায় টিকেট বিক্রি করছে।

তবে এ বাড়তি ভাড়াতেও ঈদের পরের টিকেট প্রায় শেষ। অথচ করোনা সংকটের আগে ঢাকা-ব্যাংকক-ঢাকা রুটের প্রায় সাড়ে ১৬শ’ অ্যরোনটিক্যাল মাইলে থাইল্যন্ডের একটি বেসরকারি এয়ারলাইন্স মাত্র ১২ হাজার ৫শ’ ঢাকায় যাত্রী পরিবহন করেছে। এমনকি ঈদের পরে সরকারি বিমান সংস্থা সপ্তাহে ৩ দিন সীমিত করায় বেসরকারি এয়ারলইন্স ভাড়া বৃদ্ধির বাড়তি সুযোগ নিচ্ছে বলেও অভিযোগ সাধারণ যাত্রীদের।

এ ব্যাপারে বিমান বাংলাদেশ’র বরিশাল সেলস অফিসের জেলা ব্যবস্থাপক কোন মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ফ্লাইটি সময়সূচি প্রধান কার্যালয় থেকে নির্ধরিত হয় বলে জানান। ইউএস-বাংলার বরিশাল সেলস অফিসের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, করোনা সংকটের আগে বরিশাল সেক্টরে আমাদের দুটি ফ্লাইট থাকলেও এখন বেবিচকের অনুমোদন না থাকায় ১টির বেশি ফ্লাইট পরিচালনা সম্ভব হচ্ছে না। বাড়তি ভাড়ার প্রসঙ্গে কোন মন্তব্য না করলেও যাত্রী চাহিদার কারণে ভাড়া নির্ধরিত হয় বলে জানান তিনি। নভো এয়ার-এর দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, ঈদের পরের এক সপ্তাহের টিকেট বিক্রি প্রায় শেষ হয়ে গেছে। বাড়তি ভাড়া প্রসঙ্গে তিনি জনান, যাত্রী চাহিদার বৃদ্ধির সঙ্গে ভাড়া বৃদ্ধির নিয়ম বিশ^ব্যপী স্বীকৃত।

তবে এ প্রসঙ্গে বুধবার বরিশালে বিমান, ইউএস-বাংলা এবং নভো এয়ার অফিসের সামনে একাধিক যাত্রী রাষ্ট্রীয় বিমানকে আগের মতোই যাত্রীবান্ধব সময়সূচি অনুযায়ী নিয়মিত ফ্লাইট পরিচলনার দাবি জানান। বিমান বার বার সময়সূচি পরিবর্তন করায় যাত্রীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে জানিয়ে বেসরকারি এয়ারলাইন্সকে বাড়তি টাকা আদায়ের সুযোগ করে দেয়ার জন্যই বিমানের একটি মহল কাজ করছে বলেও অভিযোগ যাত্রীদের। পাশাপাশি নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বেসামরিক বিমান চলাচল কতৃপক্ষ-বেবিচক’কে দূরত্ব অনুযায়ী ভাড়া নিয়ন্ত্রণেরও দাবি জানায় যাত্রীরা।

শুক্রবার, ০৭ মে ২০২১ , ২৫ বৈশাখ ১৪২৮ ২৫ রমজান ১৪৪২

দূরপাল্লার সব বন্ধ, এই সুযোগে বেসরকারি বিমান ভাড়া নিচ্ছে তিনগুণ বেশি

স্বাস্থ্যবিধিও মানে না

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, বরিশাল

ঢাকা-বরিশাল রুটে সরকারি বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলো সাধারণ সময়ে জনপ্রতি ২ হাজার ৭শ’ টাকায় টিকেট কিনে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারেন। কিন্তু এবার ঈদ উল ফিতরকে সামনে রেখে সড়ক ও নৌপথে গণপরিবহন বন্ধ থাকার কারণে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগে আকাশপথই একমাত্র মাধ্যম হলেও বিমান সংস্থাগুলো আকাশচুম্বী ভাড়া আদায় করে নিচ্ছে।

সরকারি বিমান সংস্থা স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রী পরিবহন করলেও বেসরকারি সংস্থার কাছে ঈদের কারণে স্বাস্থ্যবিধির কোন বালাই নেই। ঢাকা-বরিশাল রুটে গত বুধবার বেসরকারি এয়রলাইন্সের একটি টিকেট বিক্রি হয়েছে ৯ হাজার টাকায়।

অথচ এ বিপুল চাহিদার মধ্যেও নানা বিধিনিষেধে বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো ফ্লাইট সংখ্যা বাড়াতে না পারলেও রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থাটি ঈদের পরদিন থেকে নিয়মিত দৈনিক ফ্লাইট পরিচালনার পরিবর্তে সপ্তাহে ৩ দিন ফ্লাইট পরিচালনা করার ঘোষণা দিয়েছে। ফলে মানুষের দুর্ভোগ আরও বৃদ্ধির সঙ্গে বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোর বাড়তি ভাড়া আদায়ের ক্ষেত্র আরও মজবুত হবে বলে মনে করছেন যাত্রীরা।

করোনা মহামারী প্রতিরোধে চলমান লকডাউনে সড়ক ও নৌপথে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধের মধ্যে গত ২২ এপ্রিল থেকে সরকার সীমিত পরিসরে আকাশ পরিবহন চালুর অনুমোদন দেয়। সেই নিরিখে বেসরকারি নভো এয়ার ও ইউএস-বাংলা বরিশাল সেক্টরে প্রতিদিন ১টি করে ফ্লাইট চালু করে। রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থাটি ২৩ এপ্রিল থেকে বেশ কয়েকবার সময়সূচি পরিবর্তন করে সকালের দিকে প্রতিদিন ১টি ফ্লাইট পরিচালনা করলেও ঈদের আগের দিন পর্যন্ত রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার সকাল ও বিকেলে দুটি ফ্লাইট পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছে।

কিন্তু ঈদের পরদিন থেকেই সংস্থাটি বরিশাল সেক্টরে দৈনিক ফ্লাইট আবার সপ্তাহে ৩দিনে হ্রাস করছে বলে জানা গেছে। ফলে এই সেক্টরে যাত্রী দুর্ভোগ বৃদ্ধির সঙ্গে ভাড়া নিয়েও সব ধরনের ভারসাম্যতা বিনষ্ট হচ্ছে। বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো বুধবার থেকে মাত্র ৬৮ অ্যারোনটিক্যাল মাইলের ঢাকা-বরিশাল আকাশপথে যেমন ৯ হাজার টাকা ভাড়া আদায় করছে তেমনি ঈদের পরও ৫ হাজার ৭শ’ থেকে ৯ হাজার টাকায় টিকেট বিক্রি করছে।

তবে এ বাড়তি ভাড়াতেও ঈদের পরের টিকেট প্রায় শেষ। অথচ করোনা সংকটের আগে ঢাকা-ব্যাংকক-ঢাকা রুটের প্রায় সাড়ে ১৬শ’ অ্যরোনটিক্যাল মাইলে থাইল্যন্ডের একটি বেসরকারি এয়ারলাইন্স মাত্র ১২ হাজার ৫শ’ ঢাকায় যাত্রী পরিবহন করেছে। এমনকি ঈদের পরে সরকারি বিমান সংস্থা সপ্তাহে ৩ দিন সীমিত করায় বেসরকারি এয়ারলইন্স ভাড়া বৃদ্ধির বাড়তি সুযোগ নিচ্ছে বলেও অভিযোগ সাধারণ যাত্রীদের।

এ ব্যাপারে বিমান বাংলাদেশ’র বরিশাল সেলস অফিসের জেলা ব্যবস্থাপক কোন মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ফ্লাইটি সময়সূচি প্রধান কার্যালয় থেকে নির্ধরিত হয় বলে জানান। ইউএস-বাংলার বরিশাল সেলস অফিসের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, করোনা সংকটের আগে বরিশাল সেক্টরে আমাদের দুটি ফ্লাইট থাকলেও এখন বেবিচকের অনুমোদন না থাকায় ১টির বেশি ফ্লাইট পরিচালনা সম্ভব হচ্ছে না। বাড়তি ভাড়ার প্রসঙ্গে কোন মন্তব্য না করলেও যাত্রী চাহিদার কারণে ভাড়া নির্ধরিত হয় বলে জানান তিনি। নভো এয়ার-এর দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, ঈদের পরের এক সপ্তাহের টিকেট বিক্রি প্রায় শেষ হয়ে গেছে। বাড়তি ভাড়া প্রসঙ্গে তিনি জনান, যাত্রী চাহিদার বৃদ্ধির সঙ্গে ভাড়া বৃদ্ধির নিয়ম বিশ^ব্যপী স্বীকৃত।

তবে এ প্রসঙ্গে বুধবার বরিশালে বিমান, ইউএস-বাংলা এবং নভো এয়ার অফিসের সামনে একাধিক যাত্রী রাষ্ট্রীয় বিমানকে আগের মতোই যাত্রীবান্ধব সময়সূচি অনুযায়ী নিয়মিত ফ্লাইট পরিচলনার দাবি জানান। বিমান বার বার সময়সূচি পরিবর্তন করায় যাত্রীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে জানিয়ে বেসরকারি এয়ারলাইন্সকে বাড়তি টাকা আদায়ের সুযোগ করে দেয়ার জন্যই বিমানের একটি মহল কাজ করছে বলেও অভিযোগ যাত্রীদের। পাশাপাশি নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বেসামরিক বিমান চলাচল কতৃপক্ষ-বেবিচক’কে দূরত্ব অনুযায়ী ভাড়া নিয়ন্ত্রণেরও দাবি জানায় যাত্রীরা।