পিকের থাবায় ফাস ফাইন্যান্স

এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক এবং রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার হালদার (পিকে হালদার) ও তার সহযোগীরা ফাস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে হাতিয়ে নিয়েছে ১৫০০ কোটি টাকা। ২০টি কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে এ প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেয়া হলেও পুরোটাই গেছে পিকে হালদারের পকেটে। দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধানে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। দুদকের অনুসন্ধান টিম জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ নেয়ার প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন সাপেক্ষে ৪০ জনকে আসামি করে ২০টি মামলার সুপারিশসহ প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছেন।

ইতোমধ্যে পিকে হালদার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ১৭টি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। এসব মামলার অধিকাংশের বাদী দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান। এছাড়া আরও কয়েকজন কর্মকর্তা এসব মামলা তদন্ত করছেন।

দুদকের অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট টিমের প্রধান উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান টেলিফোনে সংবাদকে জানান, দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে ফাস ফাইন্যান্স থেকে ঋণের নামে যে ১৫০০ কোটি টাকা নেয়া হয়েছে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মর্টগেজ ছিল না। কোন কোন ঋণের ক্ষেত্রে মর্টগেজ থাকলেও তার পরিমাণ খুবই নগণ্য, কিছু ক্ষেত্রে মর্টগেজ নেয়ার কথা থাকলেও পরে মর্টগেজ নেয়া হয়নি। অথচ ঋণ হিসাব থেকে সব টাকা সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এজন্য ফাস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লি.-এর বোর্ড অব ডিরেক্টরস ও চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক কোনভাবেই দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। দুদকের অনুসন্ধান টিম সব রেকর্ডপত্রের আলোকে ২০টি অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে জালিয়াতির মাধ্যমে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ও ফাস ফাইন্যান্স থেকে ঋণ নেয়ার প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন সাপেক্ষে ৪০ জনকে আসামি করে ২০টি মামলার সুপারিশসহ প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছেন। শীঘ্রই প্রতিবেদন কমিশনে উপস্থাপন করা হবে।

উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার বলেন, এ পর্যন্ত পিকে ও তার সহযোগীদের নামে ১৭টি মামলা হয়েছে। ফাস ফাইন্যান্স লুটপাটে ২০টি মামলার পস্তুতি নিচ্ছে দুদক। শ্রীঘ্রই মামলাগুলো করা হবে।

দুদকের অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট টিম জানিয়েছে, প্রশান্ত কুমার হালদার ও তার সহযোগীদের বিষয়ে ৪ আর্থিক প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া করে ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি ঋণের নামে উত্তোলন এবং সেই অর্থ বিদেশে পাচারসহ নানাভাবে আত্মসাতের যে অভিযোগ সেটি অনুসন্ধান চলমান রয়েছে।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, পিকে হালদার যেসব প্রতিষ্ঠানের নামে টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করেছেন তার মধ্যে রয়েছে নিউটেক এন্টারপ্রাইজ, নিউট্রিক্যাল লি., এসএ এন্টারপ্রাইজ, সুখাদা প্রপার্টিজ লি., নেচ্যার এন্টারপ্রাইজ লি., উইনটেল ইন্টারন্যাশনাল লি., বর্ণ, সন্দ্বীপ করপোরেশন, আনান কেমিক্যাল ইন্ড্রাস্ট্রিজ লি., অ্যান্ডবি ট্রেডিং, আরবি এন্টারপ্রাইজ, দেয়া শিপিং লি., ইমার এন্টারপ্রাইজ, জিঅ্যান্ডজি এন্টারপ্রাইজ, হাল ইন্টারন্যাশনাল লি., কণিকা এন্টারপ্রাইজ, মেরিনট্রাস্ট লি., মুন এন্টারপ্রাইজ, এমটিবি মেরিন লি., পিঅ্যান্ডএল ইন্টারন্যাশনাল লি.।

দুদক জানিয়েছে, ফাস ফাইন্যান্স থেকে এমটিবি মেরিন লি.-এর নামে ঋণ প্রদান করা হলেও ঋণের অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে সরিয়ে নেয়া হয়। এর মধ্যে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিচালক ও ইসিও অডিট কমিটির প্রধান একেএম শহীদর রেজার মালিকানাধীন পদ্মা ওয়েভিং লিমিটেড, পদ্মা ব্লিচিং লিমিটেড, ফ্যাশন প্লাস লিমিটের নামে ব্যাংক হিসাবে ৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা সরিয়ে নেয়া হয়েছে। কনিকা এন্টারপ্রাইজের নামে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ঋণ নেয়া হলেও ঋণের টাকার মধ্যে ১১ কোটি ৫০ লাখ টাকা টোটাল ট্রান্সপোর্টের হিসাবে, ৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা স্বপন কুমার মিস্ত্রির মালিকানাধীন সন্দীপ করপোরেশনের নামে ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা সাদাব হোসেনের নামে থাকা হিসাবে, রতন কুমার বিশ্বাসের প্রতিষ্ঠান ডেনিম প্রসেসিং প্ল্যান লিমিটেডের নামে, হাল এন্টারপ্রাইজ, মুন এন্টারপ্রাইজের ব্যাংক হিসাবে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

শুক্রবার, ০৭ মে ২০২১ , ২৫ বৈশাখ ১৪২৮ ২৫ রমজান ১৪৪২

পিকের থাবায় ফাস ফাইন্যান্স

সাইফ বাবলু

এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক এবং রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার হালদার (পিকে হালদার) ও তার সহযোগীরা ফাস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে হাতিয়ে নিয়েছে ১৫০০ কোটি টাকা। ২০টি কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে এ প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেয়া হলেও পুরোটাই গেছে পিকে হালদারের পকেটে। দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধানে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। দুদকের অনুসন্ধান টিম জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ নেয়ার প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন সাপেক্ষে ৪০ জনকে আসামি করে ২০টি মামলার সুপারিশসহ প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছেন।

ইতোমধ্যে পিকে হালদার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ১৭টি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। এসব মামলার অধিকাংশের বাদী দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান। এছাড়া আরও কয়েকজন কর্মকর্তা এসব মামলা তদন্ত করছেন।

দুদকের অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট টিমের প্রধান উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান টেলিফোনে সংবাদকে জানান, দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে ফাস ফাইন্যান্স থেকে ঋণের নামে যে ১৫০০ কোটি টাকা নেয়া হয়েছে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মর্টগেজ ছিল না। কোন কোন ঋণের ক্ষেত্রে মর্টগেজ থাকলেও তার পরিমাণ খুবই নগণ্য, কিছু ক্ষেত্রে মর্টগেজ নেয়ার কথা থাকলেও পরে মর্টগেজ নেয়া হয়নি। অথচ ঋণ হিসাব থেকে সব টাকা সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এজন্য ফাস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লি.-এর বোর্ড অব ডিরেক্টরস ও চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক কোনভাবেই দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। দুদকের অনুসন্ধান টিম সব রেকর্ডপত্রের আলোকে ২০টি অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে জালিয়াতির মাধ্যমে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ও ফাস ফাইন্যান্স থেকে ঋণ নেয়ার প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন সাপেক্ষে ৪০ জনকে আসামি করে ২০টি মামলার সুপারিশসহ প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছেন। শীঘ্রই প্রতিবেদন কমিশনে উপস্থাপন করা হবে।

উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার বলেন, এ পর্যন্ত পিকে ও তার সহযোগীদের নামে ১৭টি মামলা হয়েছে। ফাস ফাইন্যান্স লুটপাটে ২০টি মামলার পস্তুতি নিচ্ছে দুদক। শ্রীঘ্রই মামলাগুলো করা হবে।

দুদকের অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট টিম জানিয়েছে, প্রশান্ত কুমার হালদার ও তার সহযোগীদের বিষয়ে ৪ আর্থিক প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া করে ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি ঋণের নামে উত্তোলন এবং সেই অর্থ বিদেশে পাচারসহ নানাভাবে আত্মসাতের যে অভিযোগ সেটি অনুসন্ধান চলমান রয়েছে।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, পিকে হালদার যেসব প্রতিষ্ঠানের নামে টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করেছেন তার মধ্যে রয়েছে নিউটেক এন্টারপ্রাইজ, নিউট্রিক্যাল লি., এসএ এন্টারপ্রাইজ, সুখাদা প্রপার্টিজ লি., নেচ্যার এন্টারপ্রাইজ লি., উইনটেল ইন্টারন্যাশনাল লি., বর্ণ, সন্দ্বীপ করপোরেশন, আনান কেমিক্যাল ইন্ড্রাস্ট্রিজ লি., অ্যান্ডবি ট্রেডিং, আরবি এন্টারপ্রাইজ, দেয়া শিপিং লি., ইমার এন্টারপ্রাইজ, জিঅ্যান্ডজি এন্টারপ্রাইজ, হাল ইন্টারন্যাশনাল লি., কণিকা এন্টারপ্রাইজ, মেরিনট্রাস্ট লি., মুন এন্টারপ্রাইজ, এমটিবি মেরিন লি., পিঅ্যান্ডএল ইন্টারন্যাশনাল লি.।

দুদক জানিয়েছে, ফাস ফাইন্যান্স থেকে এমটিবি মেরিন লি.-এর নামে ঋণ প্রদান করা হলেও ঋণের অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে সরিয়ে নেয়া হয়। এর মধ্যে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিচালক ও ইসিও অডিট কমিটির প্রধান একেএম শহীদর রেজার মালিকানাধীন পদ্মা ওয়েভিং লিমিটেড, পদ্মা ব্লিচিং লিমিটেড, ফ্যাশন প্লাস লিমিটের নামে ব্যাংক হিসাবে ৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা সরিয়ে নেয়া হয়েছে। কনিকা এন্টারপ্রাইজের নামে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ঋণ নেয়া হলেও ঋণের টাকার মধ্যে ১১ কোটি ৫০ লাখ টাকা টোটাল ট্রান্সপোর্টের হিসাবে, ৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা স্বপন কুমার মিস্ত্রির মালিকানাধীন সন্দীপ করপোরেশনের নামে ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা সাদাব হোসেনের নামে থাকা হিসাবে, রতন কুমার বিশ্বাসের প্রতিষ্ঠান ডেনিম প্রসেসিং প্ল্যান লিমিটেডের নামে, হাল এন্টারপ্রাইজ, মুন এন্টারপ্রাইজের ব্যাংক হিসাবে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।