নিষেধাজ্ঞা শেষেও নদীতে মিলছে না কাক্সিক্ষত ইলিশ

পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার তেঁতুলিয়া-বুড়াগৌরাঙ্গ নদীতে ইলিশ শিকারে নেমে জেলেরা হতাশ হচ্ছেন। মা ইলিশ সংরক্ষণে ইলিশ শিকারে দীর্ঘ দুইমাস নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেরা নদীতে জাল ফেলার পর কোন ইলিশ মাছ পাচ্ছে না।

উপজেলার গোলখালী মৎস্য ঘাট ও বাঁশবাড়িয়া ঘাটসহ হাট-বাজার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নদীর পাড়ে অনেক জেলে বসে আছেন। কেউ মাছ ধরতে জাল নিয়ে নদীতে যাচ্ছেন। আবার কেউ জাল ফেলে তেমন মাছ না পেয়ে নদীর পাড়ে চুপচাপ বসে আছেন। নিষেধাজ্ঞা শেষে যেখানে জালভর্তি মাছ পেয়ে জেলেদের মুখে সব সময় হাসির ঝিলিক লেগে থাকার কথা, সেখানে জেলের মুখ হয়ে আছে মলিন। কারণ, নদীতে ইলিশ শিকারের আয়োজনে তাঁদের খরচের টাকাই উঠছে না।

উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সাত ইউনিয়নে কার্ডধারী ১০হাজার ১শ’ ৭১জন রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতের জেলে। আর সরকারি সাহায্য সহযোগিতার আওতায় ভিজিএফ’র ৬ হাজার জেলে সমুদ্রগামী । সমুদ্রগামী জেলেরা নিষেধাজ্ঞার সময় মাছ শিকার থেকে বিরত থাকার জন্য ৪০ কেজি করে ভিজিএফ’র চাল বিতরণ করা হয়েছে।

উপজেলার গোলখালী এলাকা থেকে সোমবার মধ্যরাতে মাছ ধরতে নদীতে নামেন জামাল হোসেনসহ চারজন এক নৌকায়। রাতে তিনটি ‘খেও’ (জাল ফেলে) দেয়ার পর অল্প কিছু পোয়া মাছ ও রাম ছোর পেয়ে ঘাটে এসে নোঙর করে দুশ্চিন্তায় বসে আছে। জামাল বলেন, অভিযান (নিষেধাজ্ঞার) সময় আমরা নদীতে মাছ ধরতে যাইনায়। ওই সময় গেলে মাছ বেশি পাইতাম। অভিযান (নিষেধাজ্ঞা) শেষে নদীতি নামি দেহি কোন মাছ নেই। রাতভর তিন খেপ দিয়া মাত্র ৭-৯ কেজি পোয়া আর ছোট মাছ পাইছি । তাও সব ছোট মাছ আর ১৮০ টাকা কেজি দরে বেঁচিছি । কি আর করমু। মনডা

বাজারে দেখা যায়, নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে অনেক ইলিশ ধরা পড়বে ভেবে বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষজন কিনতে এসেছেন বাজারে। না পেয়ে তারা হতাশ মুখে ফিরে যাচ্ছেন। অধিকাংশ মাছের আড়ত ঘরের সামনে ডালায় সামান্য কিছু মাছ দেখা যায়। ক্রেতাদের ভিড়ে মাছের বাজারও বেশ চড়া। মৎস্য ব্যবসায়ী বাঁশবাড়িয়া ঘাটে মিরাজ খাঁ বলেন, ‘অন্যান্য বছর নিষেধাজ্ঞা শেষে অনেক ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতের মাছ ধরা পড়ত। গতবছর অনেক মাছ বেচাকেনা করেছি। অভিযানের সময় কেউ কেউ লুকিয়ে মাছ ধরেছে। মৎস্য বিভাগ বা প্রশাসনের হাতে ধরা পড়েছে অনেকে। অভিযান শেষে ভাল মাছ ধরা পড়বে এই আশায় অনেকে ধারদেনা হয়ে জাল ও নৌকা নামিয়েছে। নদীতে নেমে মাছ না পেয়ে আমরা হতাশ হচ্ছি।’

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহাবুব আলম তালুকদার বলেন, অন্য বছরের তুলনায় এবার নদীতে মাছের সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম। আর নিষেধাজ্ঞাকালে ৬২লক্ষ ৯২হাজার ৫০মিটার অবৈধ কারেন্ট জাল জব্দ, ছোট-বড় ১শ’ ৭টি বেহেন্দী জাল আটক, গলধা চিংড়ির রেনু ১ লাখ ৩৫ হাজার ও ১হাজার ৫৮ কেজি জাটকা জব্দ করা হয়েছে।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারকের নির্দেশে মাছ উপজেলার বিভিন্ন এতিম খানাসহ অসহায় ও গরিবের মাঝে বিতরণ, অবৈধ কারেন্ট জাল পুড়ে ফেলা ও গলধা চিংড়ির রেনু নদীতে উন্মুক্ত করা হয়।

শনিবার, ০৮ মে ২০২১ , ২৬ বৈশাখ ১৪২৮ ২৬ রমজান ১৪৪২

নিষেধাজ্ঞা শেষেও নদীতে মিলছে না কাক্সিক্ষত ইলিশ

প্রতিনিধি, দশমিনা (পটুয়াখালী)

image

পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার তেঁতুলিয়া-বুড়াগৌরাঙ্গ নদীতে ইলিশ শিকারে নেমে জেলেরা হতাশ হচ্ছেন। মা ইলিশ সংরক্ষণে ইলিশ শিকারে দীর্ঘ দুইমাস নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেরা নদীতে জাল ফেলার পর কোন ইলিশ মাছ পাচ্ছে না।

উপজেলার গোলখালী মৎস্য ঘাট ও বাঁশবাড়িয়া ঘাটসহ হাট-বাজার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নদীর পাড়ে অনেক জেলে বসে আছেন। কেউ মাছ ধরতে জাল নিয়ে নদীতে যাচ্ছেন। আবার কেউ জাল ফেলে তেমন মাছ না পেয়ে নদীর পাড়ে চুপচাপ বসে আছেন। নিষেধাজ্ঞা শেষে যেখানে জালভর্তি মাছ পেয়ে জেলেদের মুখে সব সময় হাসির ঝিলিক লেগে থাকার কথা, সেখানে জেলের মুখ হয়ে আছে মলিন। কারণ, নদীতে ইলিশ শিকারের আয়োজনে তাঁদের খরচের টাকাই উঠছে না।

উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সাত ইউনিয়নে কার্ডধারী ১০হাজার ১শ’ ৭১জন রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতের জেলে। আর সরকারি সাহায্য সহযোগিতার আওতায় ভিজিএফ’র ৬ হাজার জেলে সমুদ্রগামী । সমুদ্রগামী জেলেরা নিষেধাজ্ঞার সময় মাছ শিকার থেকে বিরত থাকার জন্য ৪০ কেজি করে ভিজিএফ’র চাল বিতরণ করা হয়েছে।

উপজেলার গোলখালী এলাকা থেকে সোমবার মধ্যরাতে মাছ ধরতে নদীতে নামেন জামাল হোসেনসহ চারজন এক নৌকায়। রাতে তিনটি ‘খেও’ (জাল ফেলে) দেয়ার পর অল্প কিছু পোয়া মাছ ও রাম ছোর পেয়ে ঘাটে এসে নোঙর করে দুশ্চিন্তায় বসে আছে। জামাল বলেন, অভিযান (নিষেধাজ্ঞার) সময় আমরা নদীতে মাছ ধরতে যাইনায়। ওই সময় গেলে মাছ বেশি পাইতাম। অভিযান (নিষেধাজ্ঞা) শেষে নদীতি নামি দেহি কোন মাছ নেই। রাতভর তিন খেপ দিয়া মাত্র ৭-৯ কেজি পোয়া আর ছোট মাছ পাইছি । তাও সব ছোট মাছ আর ১৮০ টাকা কেজি দরে বেঁচিছি । কি আর করমু। মনডা

বাজারে দেখা যায়, নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে অনেক ইলিশ ধরা পড়বে ভেবে বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষজন কিনতে এসেছেন বাজারে। না পেয়ে তারা হতাশ মুখে ফিরে যাচ্ছেন। অধিকাংশ মাছের আড়ত ঘরের সামনে ডালায় সামান্য কিছু মাছ দেখা যায়। ক্রেতাদের ভিড়ে মাছের বাজারও বেশ চড়া। মৎস্য ব্যবসায়ী বাঁশবাড়িয়া ঘাটে মিরাজ খাঁ বলেন, ‘অন্যান্য বছর নিষেধাজ্ঞা শেষে অনেক ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতের মাছ ধরা পড়ত। গতবছর অনেক মাছ বেচাকেনা করেছি। অভিযানের সময় কেউ কেউ লুকিয়ে মাছ ধরেছে। মৎস্য বিভাগ বা প্রশাসনের হাতে ধরা পড়েছে অনেকে। অভিযান শেষে ভাল মাছ ধরা পড়বে এই আশায় অনেকে ধারদেনা হয়ে জাল ও নৌকা নামিয়েছে। নদীতে নেমে মাছ না পেয়ে আমরা হতাশ হচ্ছি।’

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহাবুব আলম তালুকদার বলেন, অন্য বছরের তুলনায় এবার নদীতে মাছের সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম। আর নিষেধাজ্ঞাকালে ৬২লক্ষ ৯২হাজার ৫০মিটার অবৈধ কারেন্ট জাল জব্দ, ছোট-বড় ১শ’ ৭টি বেহেন্দী জাল আটক, গলধা চিংড়ির রেনু ১ লাখ ৩৫ হাজার ও ১হাজার ৫৮ কেজি জাটকা জব্দ করা হয়েছে।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারকের নির্দেশে মাছ উপজেলার বিভিন্ন এতিম খানাসহ অসহায় ও গরিবের মাঝে বিতরণ, অবৈধ কারেন্ট জাল পুড়ে ফেলা ও গলধা চিংড়ির রেনু নদীতে উন্মুক্ত করা হয়।