ফেনীর ৭০ শতাংশ পথশিশু ‘ড্যান্ডি’ নেশায় আসক্ত

ফেনীর পথশিশুরা ‘ড্যান্ডি’র নেশায় আসক্ত হচ্ছে। তাদের নেশার উপদান হলো ড্যানড্রাইট অ্যাডহেসিভ বা ড্যন্ড্রাইট আঠা (গাম)। তবে এটি তাদের কাছে ‘ড্যান্ডি’ নামেই এটি বেশি পরিচিত। এটা মূলত তীব্র ঘ্রাণযুক্ত এবং এ ঘ্রাণ থেকেই এক ধরনের আসক্তি হয়। ফেনী রেল স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে থাকা এসব পথশিশুরা ঘাড়ে চটের বস্তা নিয়ে এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় ঘুরে বেড়ায়, কুড়িয়ে পাওয়া প্লাস্টিক, লোহা কিংবা পুরনো জিনিস। এগুলো বিক্রি করে ও মানুষের কাছে হাত পেতে যে আয় হয়, তা দিয়ে খাবার কিনে খায় এবং বাকি টাকা দিয়ে সর্বনাশী এ নেশা করে। ফেনী শহরের স্থানীয় সমাজ সচেতন ও বিশিষ্ট জনেরা মনে করছেন, পথশিশু হলেও ওরা সমাজেরই একটা অংশ। এ ধরনের ভয়ঙ্কর নেশা থেকে শিশুদের রক্ষা করার দায়িত্ব এ সমাজেরই। স্থানীয় প্রশাসন এবং স্বাস্থ্যবিভাগ বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে পারে। এর জন্য প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ।

কবির আহমেদ নামে শহরের এক হার্ডওয়ার সামগ্রী ব্যবসায়ী বলেন, এ গামটি মূলত ছোটখাটো ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি, জুতার চামড়া ও প্লাস্টিকের পণ্য জোড়া লাগানোর কাজে ব্যবহৃত হয়। পথ শিশুরা মূলত মুচি এবং বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অল্প পরিমানে এ গাম কিনে নিয়ে নেশা করে থাকে। তিনি বলেন, এ গামটি টিউবে এবং কৌটায় দুইভাবে পাওয়া যায়। এগুলো সাধারণত হার্ডওয়ারের দোকানে বিক্রি হয়।

নাম প্রকাশে অনি”ছুক শহরের রেল স্টেশন এলাকার এক পথশিশু জানায়, সে তার আরেক বন্ধুর কাছ থেকে দেখে এখন নিয়মিত এ নেশা করে। সে জানায়, এ গামের মধ্যে একটা ঘ্রাণ আছে, সে ঘ্রাণ নিলে তার ‘অন্যরকম ভালো লাগা’ কাজ করে। সে জানায়, পলিথিনের ভেতরে গাম রেখে, পলিথিনের মুখে নাক দিয়ে এই নেশা করা হয়। এর ভেতরে একটা মিষ্টি ঘ্রাণ থাকে। এটা মাথায় গিয়ে এক ধরনের অনুভূতি তৈরি করে।

শিশু অধিকার ও পথশিশুদের নিয়ে কাজ করেন স্বেচ্ছাসবী মাহবুবা তাবাস্সুম ইমা জানান, গত দুই বছর আগে আমরা ফেনী শহরের পথশিশুদের নিয়ে একটা জরিপ করি, জরিপে দেখা গেছে প্রায় ৭০ শতাংশ পথ শিশুই এ নেশাটির সঙ্গে জড়িত। তাদের এখান থেকে ফেরানোর জন্য স্থানীয় প্রশাসন থেকে কোন ধরনের উদ্যোগও আমাদের চোখে পড়েনি।

এ নেশাটির ক্ষতিকারক প্রভাব সম্পর্কে নোয়াখালী আবদুল মালেক উকিল মেডিক্যাল কলেজের সহকারী অধ্যাপক (মেডিসিন) ডা. অসীম কুমার সাহার বলেন, এ ভয়ঙ্কর নেশার কারণে শিশুদের মধ্যে অনেক ক্ষতিকারক প্রভাব দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে শ্বাসকষ্ট, লিভার ডিজিজ,কিডনি ডিজিজ এবং এর ফলে শিশুরা মানসিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই গামের ঘ্রাণ শরীরের যেসব জায়গায় গিয়ে পৌঁছায়, সেসব জায়গার কোষগুলো নষ্ট হয়ে যায়। আর কোষ নষ্ট হওয়ার কারণে মস্তিষ্কের কাজে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়।

এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ফেনীর সহকারী পরিচালক মো. আবদুল হামিদের বলেন, এ গামটি মাদকের তালিকায় নেই, সে কারণে এটা নিয়ে আমাদের কোনো ধরনের অভিযান চলমান নেই। তবে এ বিষয়ে আমরা খবর পেলে অভিযান পরিচালনা করবো। তিনি বলেন, ফেনীর সাবেক সিভিল সার্জন মীর মোবারক হোসেন দিগন্ত একবার উদ্যোগ নিয়েছিলেন স্বাস্থ্য শিক্ষার আওতায় এসব শিশুর চিকিৎসা করার ব্যাপারে, পরে তিনি চলে যাওয়ায় সে কর্মসূচি আর এগোতে পারেনি।

শনিবার, ০৮ মে ২০২১ , ২৬ বৈশাখ ১৪২৮ ২৬ রমজান ১৪৪২

ফেনীর ৭০ শতাংশ পথশিশু ‘ড্যান্ডি’ নেশায় আসক্ত

প্রতিনিধি, ফেনী

ফেনীর পথশিশুরা ‘ড্যান্ডি’র নেশায় আসক্ত হচ্ছে। তাদের নেশার উপদান হলো ড্যানড্রাইট অ্যাডহেসিভ বা ড্যন্ড্রাইট আঠা (গাম)। তবে এটি তাদের কাছে ‘ড্যান্ডি’ নামেই এটি বেশি পরিচিত। এটা মূলত তীব্র ঘ্রাণযুক্ত এবং এ ঘ্রাণ থেকেই এক ধরনের আসক্তি হয়। ফেনী রেল স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে থাকা এসব পথশিশুরা ঘাড়ে চটের বস্তা নিয়ে এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় ঘুরে বেড়ায়, কুড়িয়ে পাওয়া প্লাস্টিক, লোহা কিংবা পুরনো জিনিস। এগুলো বিক্রি করে ও মানুষের কাছে হাত পেতে যে আয় হয়, তা দিয়ে খাবার কিনে খায় এবং বাকি টাকা দিয়ে সর্বনাশী এ নেশা করে। ফেনী শহরের স্থানীয় সমাজ সচেতন ও বিশিষ্ট জনেরা মনে করছেন, পথশিশু হলেও ওরা সমাজেরই একটা অংশ। এ ধরনের ভয়ঙ্কর নেশা থেকে শিশুদের রক্ষা করার দায়িত্ব এ সমাজেরই। স্থানীয় প্রশাসন এবং স্বাস্থ্যবিভাগ বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে পারে। এর জন্য প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ।

কবির আহমেদ নামে শহরের এক হার্ডওয়ার সামগ্রী ব্যবসায়ী বলেন, এ গামটি মূলত ছোটখাটো ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি, জুতার চামড়া ও প্লাস্টিকের পণ্য জোড়া লাগানোর কাজে ব্যবহৃত হয়। পথ শিশুরা মূলত মুচি এবং বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অল্প পরিমানে এ গাম কিনে নিয়ে নেশা করে থাকে। তিনি বলেন, এ গামটি টিউবে এবং কৌটায় দুইভাবে পাওয়া যায়। এগুলো সাধারণত হার্ডওয়ারের দোকানে বিক্রি হয়।

নাম প্রকাশে অনি”ছুক শহরের রেল স্টেশন এলাকার এক পথশিশু জানায়, সে তার আরেক বন্ধুর কাছ থেকে দেখে এখন নিয়মিত এ নেশা করে। সে জানায়, এ গামের মধ্যে একটা ঘ্রাণ আছে, সে ঘ্রাণ নিলে তার ‘অন্যরকম ভালো লাগা’ কাজ করে। সে জানায়, পলিথিনের ভেতরে গাম রেখে, পলিথিনের মুখে নাক দিয়ে এই নেশা করা হয়। এর ভেতরে একটা মিষ্টি ঘ্রাণ থাকে। এটা মাথায় গিয়ে এক ধরনের অনুভূতি তৈরি করে।

শিশু অধিকার ও পথশিশুদের নিয়ে কাজ করেন স্বেচ্ছাসবী মাহবুবা তাবাস্সুম ইমা জানান, গত দুই বছর আগে আমরা ফেনী শহরের পথশিশুদের নিয়ে একটা জরিপ করি, জরিপে দেখা গেছে প্রায় ৭০ শতাংশ পথ শিশুই এ নেশাটির সঙ্গে জড়িত। তাদের এখান থেকে ফেরানোর জন্য স্থানীয় প্রশাসন থেকে কোন ধরনের উদ্যোগও আমাদের চোখে পড়েনি।

এ নেশাটির ক্ষতিকারক প্রভাব সম্পর্কে নোয়াখালী আবদুল মালেক উকিল মেডিক্যাল কলেজের সহকারী অধ্যাপক (মেডিসিন) ডা. অসীম কুমার সাহার বলেন, এ ভয়ঙ্কর নেশার কারণে শিশুদের মধ্যে অনেক ক্ষতিকারক প্রভাব দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে শ্বাসকষ্ট, লিভার ডিজিজ,কিডনি ডিজিজ এবং এর ফলে শিশুরা মানসিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই গামের ঘ্রাণ শরীরের যেসব জায়গায় গিয়ে পৌঁছায়, সেসব জায়গার কোষগুলো নষ্ট হয়ে যায়। আর কোষ নষ্ট হওয়ার কারণে মস্তিষ্কের কাজে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়।

এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ফেনীর সহকারী পরিচালক মো. আবদুল হামিদের বলেন, এ গামটি মাদকের তালিকায় নেই, সে কারণে এটা নিয়ে আমাদের কোনো ধরনের অভিযান চলমান নেই। তবে এ বিষয়ে আমরা খবর পেলে অভিযান পরিচালনা করবো। তিনি বলেন, ফেনীর সাবেক সিভিল সার্জন মীর মোবারক হোসেন দিগন্ত একবার উদ্যোগ নিয়েছিলেন স্বাস্থ্য শিক্ষার আওতায় এসব শিশুর চিকিৎসা করার ব্যাপারে, পরে তিনি চলে যাওয়ায় সে কর্মসূচি আর এগোতে পারেনি।