বৃক্ষনিধনে জড়িতদের শাস্তিসহ ৫ দফা দাবি পরিবেশবাদীদের
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছ কাটার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন দেশের কবি, লেখক, শিল্পী, ছোট কাগজ ও সংস্কৃতি কর্মীরা। অন্যদিকে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সবুজ ধ্বংস করে রেস্টুরেন্ট নির্মাণ বন্ধ করা এবং বৃক্ষনিধনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের শাস্তি দেয়াসহ ৫ দফা দাবি জানিয়েছে পরিবেশবাদী যুব সংগঠন গ্রিন ভয়েস।
গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বিপরীত পাশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রবেশ পথে ছবির হাটে এ মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের ঐতিহাসিক একটি স্থান হচ্ছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। এই সবুজ উদ্যানটি ঢাকা শহরের একটি অক্সিজেন ভা-ার। এই অক্সিজেন ভা-ারের ওপর নজর পড়ছে কুচক্রী ব্যবসায়ীদের। এখানের গাছ কেটে রেস্তোরাঁ তৈরি করার চেষ্টা করছে তারা। অক্সিজেন ভা-ারকে বানানোর চেষ্টা করছে ব্যবসাখানা। যেটি আমরা কখনও হতে দেব না। আমরা বলতে চাই, কোনভাবেই উদ্যানের গাছ কাটতে দেয়া হবে না।
বক্তারা আরও বলেন, স্বাধীনতার ঊষালগ্ন থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে গড়ে তোলা হয়েছে এবং সবুজায়ন করা হয়েছে। এখানে স্বাধীনতা স্মৃতী রক্ষার জন্য নানা পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। কিন্তু এই গাছ কেটে ফেলা কেন হচ্ছে, সেটা আমরা বুঝতে পারছি না। এই গাছগুলো অক্সিজেনের ফ্যাক্টরি। পরিবেশকে রক্ষায় যেখানে গাছ লাগাতে হবে, সেখানে উল্টো কার্যক্রম আমরা দেখছি। প্রধানমন্ত্রী বলে থাকেন, ‘গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান। একটি গাছ কাটার আগে পাঁচটি গাছ লাগান’ অথচ নাগরিক হিসেবে আমরা এখানকার পরিকল্পনায় বুঝতে পারছি না। আমাদের জানতে দেয়া হচ্ছে না আসলে এখানে কী করা হচ্ছে। আমরা দেখছি, গাছ কেটে পুঁজিপতিদের আরও ব্যবসার সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। সুতরাং আমরা বলতে চাই, প্রধানমন্ত্রী আমাদের এই জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা দেখান। যে সমস্ত আমলারা আপনাকে এই গাছ কাটার বুদ্ধি দিয়েছে, তাদের সে কু-বুদ্ধি আপনারা শুনবেন না। আপনারা এ দেশের নাগরিকদের প্রতি শ্রদ্ধা দেখান, তাদের দাবি মেনে নেন।
তারা আরও বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান রক্ষা করতে হলে অবশ্যই পরিবেশবান্ধব প্রকৌশলী নিয়োগ করা প্রয়োজন। যিনি গাছ না কেটে, গাছ রেখেই সুন্দর উদ্যান তৈরি করতে পারবেন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ যাবতকালে যত গাছ কাটা হয়েছে তার বিপরীতে ১০ হাজার গাছ লাগাতে হবে। আমরা যতক্ষণ না পর্যন্ত জানতে পারব, প্রকৃতপক্ষে উদ্যানের আর কোন গাছ কাটা হবে না ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন সারাদেশব্যাপী চলতে থাকবে। আমরা বারবার বলতে চাই, উদ্যানের গাছ কোনভাবেই কাটতে দেয়া হবে না।
অন্যদিকে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সবুজ ধ্বংস করে রেস্টুরেন্ট নির্মাণ বন্ধ করা এবং বৃক্ষনিধনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের শাস্তি দেয়াসহ ৫ দফা দাবি জানায় পরিবেশবাদী যুব সংগঠন গ্রিন ভয়েস।
সংগঠনের অন্যান্য দাবিগুলো হচ্ছে- সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে বৃক্ষময় করে গড়ে তুলতে হবে; উদ্যানের পরিবেশ বান্ধব উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে; সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জন্য একটি দক্ষ, আন্তরিক, গণমুখী রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে এবং উদ্যানটি সর্বসাধারণের জন্য সব সময় উন্মুক্ত রাখতে হবে। একই সঙ্গে মাঠের অখ-তা, নিরাপত্তা, চেতনাগত গাম্ভীর্য ও পবিত্রতা নিশ্চিত করতে হবে।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খাবারের দোকান করতে কেটে ফেলা হয়েছে প্রায় দেড় শতাধিক গাছ। আমরা সবাই জানি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। উদ্যানটিকে গিলে খেতে ভূমিদস্যুরা একের পর এক নীলনকশা করেই যাচ্ছে। উদ্যানের একটি অংশ বেশকিছু ছোট বড় দখলদারদের পদানত হয়ে আছে। এক কোটির অধিক মানুষ অধ্যুষিত ঢাকা মহানগরীতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সবার দম নেয়ার একটি বৃহৎ স্থান।
সংশোধনী ও পরিমার্জন করে প্রকল্পের পরিকল্পনা প্রণয়নসহ ৭ দফা সুপারিশ বিআইপি’র
ঢাকার অক্সিজেনের আধার ও ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্নয়ন প্রকল্পের নামে বৃক্ষনিধনসহ উদ্যানের গাছপালা, পরিবেশ-প্রতিবেশ-এর উপর যে ধ্বংসযজ্ঞ ইতিমধ্যে চালানো হয়েছে তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)। নগর পরিকল্পনাবিদদের কোনরূপ সম্পৃক্ত না করেই মহাপরিকল্পনার নাম দিয়ে এবং শহর পরিকল্পনার ক্ষেত্রে আদর্শ পরিকল্পনাগত পদ্ধতি অনুসরণ না করে যদি কোন উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হলে যে পরিণতি হবার কথা ছিল, ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ক্ষেত্রে সেই পরিণতিই হয়েছে। তাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ অনতিবিলম্বে বন্ধ করে দিয়ে প্রস্তাবিত প্রকল্পের পরিকল্পনাগত বিশ্লেষণ ও পরিবেশ-প্রতিবেশগত প্রয়োজনীয় সমীক্ষা করার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সংশোধনী ও পরিমার্জন করে প্রকল্পের পরিকল্পনার প্রণয়নসহ ৭ দফা সুপারিশ করেছে সংগঠনটি। গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে এই সুপারিশ করে সংগঠনটি।
তাদের অন্য সুপারিশগুলো হলো- প্রকল্প প্রণয়নে যথোপযুক্ত পেশাজীবী যথা নগর পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি, নগর নকশাবিদ, প্রকৌশলী, উদ্যানতত্ত্ববিদ, বাস্তুতন্ত্র ও প্রতিবেশ বিশেষজ্ঞ, সমাজবিজ্ঞানী প্রভৃতি বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভূক্ত করা; সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্নয়ন প্রকল্পের পরিকল্পনা ইমারত নির্মাণ বিধিমালার আওতায় গঠিত ‘নগর উন্নয়ন কমিটি’র মতামত সাপেক্ষে অনুমোদনের মাধ্যমে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া; স্থাপত্য অধিদপ্তর কর্তৃক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন প্রকল্পের ডিজাইনে পেশাজীবীদের ‘প্রফেশনাল কোড অব এথিক্স এবং স্ট্যান্ডার্ড প্র্যাকটিস’-এর ব্যত্যয় ঘটে থাকলে সংশ্লিষ্টদের পেশাজীবী ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া; নগর পরিকল্পনা ও নির্মিত পরিবেশ সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের ‘প্রফেশনাল কোড অব এথিক্স’ মেনে গণপরিসর পরিকল্পনায় পরিবেশ-প্রতিবেশ-জনস্বার্থ সংরক্ষণে সর্বোচ্চ পেশাদারী আচরণ নিশ্চিত করা; সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে বৃক্ষ নিধন ও পরিবেশ-প্রতিবেশের ক্ষতিসাধন এর সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের দ্রুত তদন্তসাপেক্ষে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা উচিত যেন বাংলাদেশের আর কোথাও পরিবেশ-প্রতিবেশকে ধ্বংস করে উন্নয়ন ও সৌন্দর্য বর্ধনের নামে হঠকারী পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া না হয়; বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় সারাদেশের উদ্যান, পার্ক, খেলার মাঠ, গণপরিসর পরিকল্পনা ও রক্ষণাবেক্ষণে পেশাজীবীদের সমন্বয়ে অনিতিবিলম্বে বিশেষ সংস্থা গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করা।
তাই ঢাকা নগরের পরিবেশ-প্রতিবেশের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণসহ আমাদের স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রামের অনেক ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সঠিক পরিকল্পনার প্রণয়নের মাধ্যমে ঐতিহাসিক স্মৃতি ও পরিবেশ দুটোই রক্ষা করা সম্ভব। এ ব্যাপারে পেশাজীবীসহ সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিকতা থাকলে আমরা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এই গুরুত্বপূর্ণ উদ্যান সংরক্ষণ করার মাধ্যমে পরিকল্পিত ও টেকসই ঢাকা গড়বার অঙ্গীকার পালন করতে সমর্থ হবে সংগঠনটি।
শনিবার, ০৮ মে ২০২১ , ২৬ বৈশাখ ১৪২৮ ২৬ রমজান ১৪৪২
বৃক্ষনিধনে জড়িতদের শাস্তিসহ ৫ দফা দাবি পরিবেশবাদীদের
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছ কাটার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন দেশের কবি, লেখক, শিল্পী, ছোট কাগজ ও সংস্কৃতি কর্মীরা। অন্যদিকে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সবুজ ধ্বংস করে রেস্টুরেন্ট নির্মাণ বন্ধ করা এবং বৃক্ষনিধনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের শাস্তি দেয়াসহ ৫ দফা দাবি জানিয়েছে পরিবেশবাদী যুব সংগঠন গ্রিন ভয়েস।
গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বিপরীত পাশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রবেশ পথে ছবির হাটে এ মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের ঐতিহাসিক একটি স্থান হচ্ছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। এই সবুজ উদ্যানটি ঢাকা শহরের একটি অক্সিজেন ভা-ার। এই অক্সিজেন ভা-ারের ওপর নজর পড়ছে কুচক্রী ব্যবসায়ীদের। এখানের গাছ কেটে রেস্তোরাঁ তৈরি করার চেষ্টা করছে তারা। অক্সিজেন ভা-ারকে বানানোর চেষ্টা করছে ব্যবসাখানা। যেটি আমরা কখনও হতে দেব না। আমরা বলতে চাই, কোনভাবেই উদ্যানের গাছ কাটতে দেয়া হবে না।
বক্তারা আরও বলেন, স্বাধীনতার ঊষালগ্ন থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে গড়ে তোলা হয়েছে এবং সবুজায়ন করা হয়েছে। এখানে স্বাধীনতা স্মৃতী রক্ষার জন্য নানা পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। কিন্তু এই গাছ কেটে ফেলা কেন হচ্ছে, সেটা আমরা বুঝতে পারছি না। এই গাছগুলো অক্সিজেনের ফ্যাক্টরি। পরিবেশকে রক্ষায় যেখানে গাছ লাগাতে হবে, সেখানে উল্টো কার্যক্রম আমরা দেখছি। প্রধানমন্ত্রী বলে থাকেন, ‘গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান। একটি গাছ কাটার আগে পাঁচটি গাছ লাগান’ অথচ নাগরিক হিসেবে আমরা এখানকার পরিকল্পনায় বুঝতে পারছি না। আমাদের জানতে দেয়া হচ্ছে না আসলে এখানে কী করা হচ্ছে। আমরা দেখছি, গাছ কেটে পুঁজিপতিদের আরও ব্যবসার সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। সুতরাং আমরা বলতে চাই, প্রধানমন্ত্রী আমাদের এই জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা দেখান। যে সমস্ত আমলারা আপনাকে এই গাছ কাটার বুদ্ধি দিয়েছে, তাদের সে কু-বুদ্ধি আপনারা শুনবেন না। আপনারা এ দেশের নাগরিকদের প্রতি শ্রদ্ধা দেখান, তাদের দাবি মেনে নেন।
তারা আরও বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান রক্ষা করতে হলে অবশ্যই পরিবেশবান্ধব প্রকৌশলী নিয়োগ করা প্রয়োজন। যিনি গাছ না কেটে, গাছ রেখেই সুন্দর উদ্যান তৈরি করতে পারবেন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ যাবতকালে যত গাছ কাটা হয়েছে তার বিপরীতে ১০ হাজার গাছ লাগাতে হবে। আমরা যতক্ষণ না পর্যন্ত জানতে পারব, প্রকৃতপক্ষে উদ্যানের আর কোন গাছ কাটা হবে না ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন সারাদেশব্যাপী চলতে থাকবে। আমরা বারবার বলতে চাই, উদ্যানের গাছ কোনভাবেই কাটতে দেয়া হবে না।
অন্যদিকে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সবুজ ধ্বংস করে রেস্টুরেন্ট নির্মাণ বন্ধ করা এবং বৃক্ষনিধনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের শাস্তি দেয়াসহ ৫ দফা দাবি জানায় পরিবেশবাদী যুব সংগঠন গ্রিন ভয়েস।
সংগঠনের অন্যান্য দাবিগুলো হচ্ছে- সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে বৃক্ষময় করে গড়ে তুলতে হবে; উদ্যানের পরিবেশ বান্ধব উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে; সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জন্য একটি দক্ষ, আন্তরিক, গণমুখী রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে এবং উদ্যানটি সর্বসাধারণের জন্য সব সময় উন্মুক্ত রাখতে হবে। একই সঙ্গে মাঠের অখ-তা, নিরাপত্তা, চেতনাগত গাম্ভীর্য ও পবিত্রতা নিশ্চিত করতে হবে।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খাবারের দোকান করতে কেটে ফেলা হয়েছে প্রায় দেড় শতাধিক গাছ। আমরা সবাই জানি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। উদ্যানটিকে গিলে খেতে ভূমিদস্যুরা একের পর এক নীলনকশা করেই যাচ্ছে। উদ্যানের একটি অংশ বেশকিছু ছোট বড় দখলদারদের পদানত হয়ে আছে। এক কোটির অধিক মানুষ অধ্যুষিত ঢাকা মহানগরীতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সবার দম নেয়ার একটি বৃহৎ স্থান।
সংশোধনী ও পরিমার্জন করে প্রকল্পের পরিকল্পনা প্রণয়নসহ ৭ দফা সুপারিশ বিআইপি’র
ঢাকার অক্সিজেনের আধার ও ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্নয়ন প্রকল্পের নামে বৃক্ষনিধনসহ উদ্যানের গাছপালা, পরিবেশ-প্রতিবেশ-এর উপর যে ধ্বংসযজ্ঞ ইতিমধ্যে চালানো হয়েছে তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)। নগর পরিকল্পনাবিদদের কোনরূপ সম্পৃক্ত না করেই মহাপরিকল্পনার নাম দিয়ে এবং শহর পরিকল্পনার ক্ষেত্রে আদর্শ পরিকল্পনাগত পদ্ধতি অনুসরণ না করে যদি কোন উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হলে যে পরিণতি হবার কথা ছিল, ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ক্ষেত্রে সেই পরিণতিই হয়েছে। তাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ অনতিবিলম্বে বন্ধ করে দিয়ে প্রস্তাবিত প্রকল্পের পরিকল্পনাগত বিশ্লেষণ ও পরিবেশ-প্রতিবেশগত প্রয়োজনীয় সমীক্ষা করার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সংশোধনী ও পরিমার্জন করে প্রকল্পের পরিকল্পনার প্রণয়নসহ ৭ দফা সুপারিশ করেছে সংগঠনটি। গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে এই সুপারিশ করে সংগঠনটি।
তাদের অন্য সুপারিশগুলো হলো- প্রকল্প প্রণয়নে যথোপযুক্ত পেশাজীবী যথা নগর পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি, নগর নকশাবিদ, প্রকৌশলী, উদ্যানতত্ত্ববিদ, বাস্তুতন্ত্র ও প্রতিবেশ বিশেষজ্ঞ, সমাজবিজ্ঞানী প্রভৃতি বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভূক্ত করা; সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্নয়ন প্রকল্পের পরিকল্পনা ইমারত নির্মাণ বিধিমালার আওতায় গঠিত ‘নগর উন্নয়ন কমিটি’র মতামত সাপেক্ষে অনুমোদনের মাধ্যমে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া; স্থাপত্য অধিদপ্তর কর্তৃক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন প্রকল্পের ডিজাইনে পেশাজীবীদের ‘প্রফেশনাল কোড অব এথিক্স এবং স্ট্যান্ডার্ড প্র্যাকটিস’-এর ব্যত্যয় ঘটে থাকলে সংশ্লিষ্টদের পেশাজীবী ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া; নগর পরিকল্পনা ও নির্মিত পরিবেশ সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের ‘প্রফেশনাল কোড অব এথিক্স’ মেনে গণপরিসর পরিকল্পনায় পরিবেশ-প্রতিবেশ-জনস্বার্থ সংরক্ষণে সর্বোচ্চ পেশাদারী আচরণ নিশ্চিত করা; সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে বৃক্ষ নিধন ও পরিবেশ-প্রতিবেশের ক্ষতিসাধন এর সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের দ্রুত তদন্তসাপেক্ষে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা উচিত যেন বাংলাদেশের আর কোথাও পরিবেশ-প্রতিবেশকে ধ্বংস করে উন্নয়ন ও সৌন্দর্য বর্ধনের নামে হঠকারী পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া না হয়; বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় সারাদেশের উদ্যান, পার্ক, খেলার মাঠ, গণপরিসর পরিকল্পনা ও রক্ষণাবেক্ষণে পেশাজীবীদের সমন্বয়ে অনিতিবিলম্বে বিশেষ সংস্থা গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করা।
তাই ঢাকা নগরের পরিবেশ-প্রতিবেশের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণসহ আমাদের স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রামের অনেক ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সঠিক পরিকল্পনার প্রণয়নের মাধ্যমে ঐতিহাসিক স্মৃতি ও পরিবেশ দুটোই রক্ষা করা সম্ভব। এ ব্যাপারে পেশাজীবীসহ সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিকতা থাকলে আমরা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এই গুরুত্বপূর্ণ উদ্যান সংরক্ষণ করার মাধ্যমে পরিকল্পিত ও টেকসই ঢাকা গড়বার অঙ্গীকার পালন করতে সমর্থ হবে সংগঠনটি।