ব্যাপক দুর্ভোগে পড়েছেন সাতক্ষীরায় কোয়ারেন্টিনে থাকা ভারত ফেরত বাংলাদেশিরা। আর্থিক সংকটসহ নানাবিধ সংকটে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন তারা। তিন দিনের কোয়ারেন্টিন শেষ করে অবিলম্বে নিজ নিজ জেলায় ফেরত যাওয়ার দাবি তাদের। তবে দেশকে ঝুঁকিমুক্ত করতে ত্যাগ স্বীকারের মানসিকতা রাখার প্রত্যাশা প্রশাসনের।
গত বুধবার সন্ধ্যায় দেশে আসা এসব যাত্রীদের মধ্যে ৫০ জনকে আবাসিক হোটেল উত্তরায় রাখা হয়। বাকি ১০০ জনের মধ্যে ৩০ জনকে হোটেল টাইগার প্লাস, ২০ জনকে হোটেল হাসান ও ৫০ জনকে হোটেল আল কাশেম-এ রাখা হয়। তাদের প্রত্যকেরই পাসপোর্ট সদর থানায় জমা রাখা হয়েছে। তাদের বাড়ি চট্টগ্রাম, পটুয়াখালি, বরগুনা, সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। আগামী ১৯ মে পর্যন্ত তাদের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। ইতোমধ্যে তিন দিন অতিবাহিত হয়েছে। এখনও ১১দিন তাদের থাকতে হবে। ভারতে গিয়ে ফুরিয়ে গেছে কাছে থাকা অর্থ। তাই অর্থের অভাবে অনেকেই মানবেতর জীবন-যাপন করছেন বলে জানিয়েছেন।
বরগুনা জেলার মাহবুব হোসেন জানান, আমরা চেন্নাই গিয়েছি। ওখানে আমাদের কোয়ারেন্টিন দেয়নি। ফিরে এসে কোয়ারেন্টিন। এখানে পরিবেশ খুব খারাপ। কোয়ারেন্টিন মানে হলো একক জায়গা। আর এখানে তিন-চার রুমের দশ-বারো জন মিলে একটি টয়লেট ও একটি গোসলখানা। টাকা নিতে আমার স্ত্রীকে চেন্নাই রেখে এসেছি। আর আমি এখানে আটকা পড়েছি। তাহলে তো দু’জনকেই মরতে হবে।
কোয়ারেন্টিনে থাকা অনেকে আবার গুরুতর রোগে আক্রান্ত। এখানে থেকে দিনে দিনে আরও বেশি অসুস্থ হওয়ার দাবি তাদের। চট্টগ্রামের আবদুস সামাদ জানান, আমি একজন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী। আমাদের দাবি, তিন-চার দিন পর আমাদের টেস্ট করা হোক। নেগেটিভ হলে বাড়িতে যেয়ে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকব। আমাদের কারও পকেটে টাকা নেই। বাড়ি থেকে পাঠানোর মতো কেউ নেই। ভারত থেকে আসা এসব বাংলাদেশি নাগরিকদের অভিযোগ, আবাসিক হোটেলে আনার পর হোটেল ভাড়া ও খাওয়া খরচ তাদের নিজেদের বহন করতে হচ্ছে। এর ফলে অনেকেই অনাহারে-অর্ধাহারে দিন পার করছেন। তারা আরও জানান, তাদের অধিকাংশ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত্র হয়ে ভারতে গিয়েছিলেন ডাক্তার দেখাতে। সে দেশে ডাক্তার দেখানোর পর তাদের কাছে আর কোন টাকা নেই। এখন তারা অনাহারে-অর্ধাহারে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। তাদের এখন কিছু হলে তাদের দায়ভার কে নেবে, এ প্রশ্ন তাদের। তাদের স্ব স্ব জেলায় পাঠিয়ে সেখানে কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করাসহ তাদের স্বজনদের কাছে খবর দেয়ার দাবি জানান তারা।
বাগেরহাটের সেতারা বেগম জানান, ভারত থেকে এনওসি করিয়েছি। তারা বলেছে, তিন দিনের কোয়ারেন্টিন। সরকারের থাকা, সরকারের খাওয়া। বাংলাদেশে এসে দেখছি ১৪ দিন। নিজেদের থাকা ও খাওয়া। আমরা অসুস্থ আরও অসুস্থ হয়ে যাব।
সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল জানান, ভারত ফেরত ১৫০ জন বাংলাদেশি সাতক্ষীরায় অবস্থান করছেন। তারা বেনাপোল কাস্টমস অফিস দিয়ে দেশে ফিরেছেন। শহরের ৪টি আবাসিক হোটেলে তারা রয়েছেন। তারা সরকারের কাছ থেকে বিশেষ পাস নিয়েছেন। কিভাবে থাকবেন, সে বিষয়ে ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশি হাইকমিশনে তারা বন্ড দিয়ে এসেছেন। বন্ডে বলা হয়েছে, প্রশাসন যেখানে তাদের থাকার ব্যবস্থা করবেন, সেখানেই তাদের ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। এছাড়া তারা নিজ খরচে থাকবেন। তিনি আরও জানান, স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে তাদের বেনাপোল থেকে সাতক্ষীরায় আনা হয়েছে। বেনাপোল ও যশোরে প্রায় এক হাজার ভারত ফেরত বাংলাদেশি কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। বাকিদের সাতক্ষীরাসহ আশপাশের জেলায় পাঠানো হচ্ছে। তবে এখানে যারা রয়েছেন তাদের সু-ব্যবস্থাপনার জন্য জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশ যৌথভাবে কাজ করছেন। এছাড়া অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও সেখানে নিয়োগ করা হয়েছে। তারা যাতে বাইরে না আসতে পারে সেটি আমাদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। তারা ভিতরে থাকলে তাদের যে খাদ্য খরচ সেটিও তাদের নিজেদেরই বহন করতে হবে।
মনে রাখতে হবে, দেশকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে তাদেরও ত্যাগ স্বীকার করতে হবে, যোগ করেন জেলা প্রশাসক।
ভারত ফেরত বাংলাদেশিদের বিভিন্ন হোটেলে রাখার খবরে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন জেলার সাধারণ মানুষ। ভারতে মহামারী করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনায় ভারতে প্রচুর মানুষ মারা যাচ্ছে। ভারত ফেরতদের মাধ্যমে বাংলাদেশে তার প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশিষ্ট জনেরা। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
শনিবার, ০৮ মে ২০২১ , ২৬ বৈশাখ ১৪২৮ ২৬ রমজান ১৪৪২
প্রতিনিধি, সাতক্ষীরা
ব্যাপক দুর্ভোগে পড়েছেন সাতক্ষীরায় কোয়ারেন্টিনে থাকা ভারত ফেরত বাংলাদেশিরা। আর্থিক সংকটসহ নানাবিধ সংকটে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন তারা। তিন দিনের কোয়ারেন্টিন শেষ করে অবিলম্বে নিজ নিজ জেলায় ফেরত যাওয়ার দাবি তাদের। তবে দেশকে ঝুঁকিমুক্ত করতে ত্যাগ স্বীকারের মানসিকতা রাখার প্রত্যাশা প্রশাসনের।
গত বুধবার সন্ধ্যায় দেশে আসা এসব যাত্রীদের মধ্যে ৫০ জনকে আবাসিক হোটেল উত্তরায় রাখা হয়। বাকি ১০০ জনের মধ্যে ৩০ জনকে হোটেল টাইগার প্লাস, ২০ জনকে হোটেল হাসান ও ৫০ জনকে হোটেল আল কাশেম-এ রাখা হয়। তাদের প্রত্যকেরই পাসপোর্ট সদর থানায় জমা রাখা হয়েছে। তাদের বাড়ি চট্টগ্রাম, পটুয়াখালি, বরগুনা, সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। আগামী ১৯ মে পর্যন্ত তাদের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। ইতোমধ্যে তিন দিন অতিবাহিত হয়েছে। এখনও ১১দিন তাদের থাকতে হবে। ভারতে গিয়ে ফুরিয়ে গেছে কাছে থাকা অর্থ। তাই অর্থের অভাবে অনেকেই মানবেতর জীবন-যাপন করছেন বলে জানিয়েছেন।
বরগুনা জেলার মাহবুব হোসেন জানান, আমরা চেন্নাই গিয়েছি। ওখানে আমাদের কোয়ারেন্টিন দেয়নি। ফিরে এসে কোয়ারেন্টিন। এখানে পরিবেশ খুব খারাপ। কোয়ারেন্টিন মানে হলো একক জায়গা। আর এখানে তিন-চার রুমের দশ-বারো জন মিলে একটি টয়লেট ও একটি গোসলখানা। টাকা নিতে আমার স্ত্রীকে চেন্নাই রেখে এসেছি। আর আমি এখানে আটকা পড়েছি। তাহলে তো দু’জনকেই মরতে হবে।
কোয়ারেন্টিনে থাকা অনেকে আবার গুরুতর রোগে আক্রান্ত। এখানে থেকে দিনে দিনে আরও বেশি অসুস্থ হওয়ার দাবি তাদের। চট্টগ্রামের আবদুস সামাদ জানান, আমি একজন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী। আমাদের দাবি, তিন-চার দিন পর আমাদের টেস্ট করা হোক। নেগেটিভ হলে বাড়িতে যেয়ে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকব। আমাদের কারও পকেটে টাকা নেই। বাড়ি থেকে পাঠানোর মতো কেউ নেই। ভারত থেকে আসা এসব বাংলাদেশি নাগরিকদের অভিযোগ, আবাসিক হোটেলে আনার পর হোটেল ভাড়া ও খাওয়া খরচ তাদের নিজেদের বহন করতে হচ্ছে। এর ফলে অনেকেই অনাহারে-অর্ধাহারে দিন পার করছেন। তারা আরও জানান, তাদের অধিকাংশ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত্র হয়ে ভারতে গিয়েছিলেন ডাক্তার দেখাতে। সে দেশে ডাক্তার দেখানোর পর তাদের কাছে আর কোন টাকা নেই। এখন তারা অনাহারে-অর্ধাহারে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। তাদের এখন কিছু হলে তাদের দায়ভার কে নেবে, এ প্রশ্ন তাদের। তাদের স্ব স্ব জেলায় পাঠিয়ে সেখানে কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করাসহ তাদের স্বজনদের কাছে খবর দেয়ার দাবি জানান তারা।
বাগেরহাটের সেতারা বেগম জানান, ভারত থেকে এনওসি করিয়েছি। তারা বলেছে, তিন দিনের কোয়ারেন্টিন। সরকারের থাকা, সরকারের খাওয়া। বাংলাদেশে এসে দেখছি ১৪ দিন। নিজেদের থাকা ও খাওয়া। আমরা অসুস্থ আরও অসুস্থ হয়ে যাব।
সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল জানান, ভারত ফেরত ১৫০ জন বাংলাদেশি সাতক্ষীরায় অবস্থান করছেন। তারা বেনাপোল কাস্টমস অফিস দিয়ে দেশে ফিরেছেন। শহরের ৪টি আবাসিক হোটেলে তারা রয়েছেন। তারা সরকারের কাছ থেকে বিশেষ পাস নিয়েছেন। কিভাবে থাকবেন, সে বিষয়ে ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশি হাইকমিশনে তারা বন্ড দিয়ে এসেছেন। বন্ডে বলা হয়েছে, প্রশাসন যেখানে তাদের থাকার ব্যবস্থা করবেন, সেখানেই তাদের ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। এছাড়া তারা নিজ খরচে থাকবেন। তিনি আরও জানান, স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে তাদের বেনাপোল থেকে সাতক্ষীরায় আনা হয়েছে। বেনাপোল ও যশোরে প্রায় এক হাজার ভারত ফেরত বাংলাদেশি কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। বাকিদের সাতক্ষীরাসহ আশপাশের জেলায় পাঠানো হচ্ছে। তবে এখানে যারা রয়েছেন তাদের সু-ব্যবস্থাপনার জন্য জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশ যৌথভাবে কাজ করছেন। এছাড়া অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও সেখানে নিয়োগ করা হয়েছে। তারা যাতে বাইরে না আসতে পারে সেটি আমাদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। তারা ভিতরে থাকলে তাদের যে খাদ্য খরচ সেটিও তাদের নিজেদেরই বহন করতে হবে।
মনে রাখতে হবে, দেশকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে তাদেরও ত্যাগ স্বীকার করতে হবে, যোগ করেন জেলা প্রশাসক।
ভারত ফেরত বাংলাদেশিদের বিভিন্ন হোটেলে রাখার খবরে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন জেলার সাধারণ মানুষ। ভারতে মহামারী করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনায় ভারতে প্রচুর মানুষ মারা যাচ্ছে। ভারত ফেরতদের মাধ্যমে বাংলাদেশে তার প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশিষ্ট জনেরা। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।