সরকারের কঠোর লকডাউন উপেক্ষা করে রংপুর থেকে প্রতিদিন শতাধিক বাস ও মাইক্রোবাস যাত্রী নিয়ে দূরপাল্লাও ঢাকায় যাচ্ছে। বাসগুলোতে ধান কাটা শ্রমিক ব্যানার লাগিয়ে প্রকাশ্য দিনের বেলায় ঢাকায় যাচ্ছে। এ জন্য জনপ্রতি দুই-তিন গুণ ভাড়া নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অন্যদিকে প্রকাশ্য দিনের বেলায় একটার পর একটা অবৈধভাবে মাইক্রেবাসে গাদাগাদি করে যাত্রী নেয়া হচ্ছে এতে সামাজিক দূরত্বের কোন বালাই নেই। যাত্রীদের মুখে মাস্ক নেই। তার পরেও মাইক্রেবাস বোঝাই করে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এসব প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন নজরদারি নেই।
সরেজমিনে বিভাগীয় নগরী রংপুরের প্রবেশদ্বার মডার্ন মোড়ে শনিবার দুপুর ১২টার দিকে ঘুরে দেখা গেছে বেশ কয়েকটা মাইক্রেবাস দাঁড়িয়ে আছে। স্থানীয় শ্রমিক ও দালালরা ঢাকা ঢাকা বলে চিৎকার করে মাইক্রেবাস বোঝাই করে যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিচ্ছে। যাত্রীদের বেশিরভাগই রংপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলার মানুষ। এ ক্ষেত্রে একটি মাইক্রোবাসে ১০টি সিট থাকলেও গাদাগাদি করে ১৩/১৪ জন করে যাত্রী নেয়া হচ্ছে। গাদাগাদি আর ঠাসাঠাসি করে বসানো হচ্ছে মাইক্রেবাসে। এ ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব একেবারেই বজায় থাকছে না। এ ছাড়াও ড্রাইভার, হেলপার থেকে শুরু করে যাত্রীদের বেশিরভাগের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। এ ব্যাপারে একটি মাইক্রোবাসের ড্রাইভার তোফাজ্জল হোসেন জানালেন, আমরা জনপ্রতি এক হাজার টাকা করে নিচ্ছি। যাতায়াতের পথে পথখরচ ৩/৪ হাজার টাকা দিতে হয় শ্রমিক সংগঠনসহ পুলিশকে। ফলে কোন অসুবিধা হয় না। নিজের মুখে মাস্ক নেই, যাত্রীদের নেই, সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না-এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মুখে মাস্ক পরতে বলা হয় অনেকেই শোনে না আর গাদাগাদি আর ঠাসাঠাসি করে যাত্রী না নিলে তাদের পোষায় না।
একই কথা বলেন অপর এক মাইক্রোবাসচালক মনিরুল ইসলাম। তিনি জানান, ১৪ জন যাত্রী নিয়ে তিন দিন ধরে রংপুর থেকে ঢাকায় যাতায়াত করছেন পথিমধ্যে কোন সমস্যা হয়নি। ৩/৪ হাজার টাকা খরচ করলেই সব ম্যানেজ হয়ে যায়।
মাইক্রোবাসে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করা কুড়িগ্রামের মজনু বলেন, জরুরি প্রয়োজনে ঢাকায় যেতে হচ্ছে। করোনা সংক্রমণের ভয় থাকলেও উপায় নেই, ঢাকায় যেতেই হবে। তিনি বলেন, এমনি সময় বাসে করে ঢাকায় গেলে ৫শ’ টাকা লাগত এখন এক হাজার টাকা দিয়ে যেতে হচ্ছে। লালমনিরহাট থেকে আসা রহমত আলী জানান, অটোতে করে ভেঙে ভেঙে রংপুরে এসে মাইক্রোবাসে ঢাকায় যাচ্ছেন মুখে মাস্ক নেই কেনÑ এমন প্রশ্নের উত্তরে সাদামাটা উত্তর পকেটে আছে।
এদিকে মডার্ন মোড়ে শ্রমিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সবাইকে ম্যানেজ করে প্রতিদিন গড়ে ৭০/৮০টি মাইক্রোবাস রংপুর থেকে ঢাকায় যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা যাত্রীবোঝাই করে দেই। যাত্রীপ্রতি ৫০ টাকা করে আমরা পাচ্ছি, এটা ভাগ করে নিচ্ছি। তার পরেও গড়ে ২/৩ হাজার টাকা আয় হয়।
অন্যদিকে বাসের সামনে গ্লাসের মধ্যে ধান কাটা শ্রমিক লিখে যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে ঢাকায়। জনপ্রতি ১ হাজার টাকা নেয়া হচ্ছে বলে জানালেন হেলপার সোহরাব। তবে বাসে একজনও ধান কাটা শ্রমিক দেখা গেল না। নারী ও পুরুষ শিশু মিলিয়ে বিভিন্ন পেশার মানুষ যাত্রী হয়ে যাচ্ছেন ঢাকায়। বাসের ড্রাইভার নাম প্রকাশ না করে বলেন, সবাইকে ম্যানেজ করে যেতে হয়। ৪/৫ হাজার টাকা পথখরচ পড়ে। বাসের যাত্রীদের জিজ্ঞাসা করা হলে তারা কেউই বলেননি তারা ধান কাটা শ্রমিক। তারা বললেন জরুরি প্রয়োজনে ঢাকায় যেতেই হচ্ছে। এভাবে কঠোর লকডাউন উপেক্ষা করে সরকারি বিধিনিষেধ অমান্য করে রংপুর থেকে শতাধিক বাস মাইক্রোবাস যাচ্ছে ঢাকায়, দেখার যেন কেউ নেই। খোঁজ নিয়ে মডার্ন মোড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন সদস্যকে দেখা যায়নি।
এ ব্যাপারে রংপুর মেট্রোপলিটান পুলিশের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কেউই কথা বলতে রাজি হননি।
রবিবার, ০৯ মে ২০২১ , ২৬ বৈশাখ ১৪২৮ ২৬ রমজান ১৪৪২
লিয়াকত আলী বাদল রংপুর
সরকারের কঠোর লকডাউন উপেক্ষা করে রংপুর থেকে প্রতিদিন শতাধিক বাস ও মাইক্রোবাস যাত্রী নিয়ে দূরপাল্লাও ঢাকায় যাচ্ছে। বাসগুলোতে ধান কাটা শ্রমিক ব্যানার লাগিয়ে প্রকাশ্য দিনের বেলায় ঢাকায় যাচ্ছে। এ জন্য জনপ্রতি দুই-তিন গুণ ভাড়া নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অন্যদিকে প্রকাশ্য দিনের বেলায় একটার পর একটা অবৈধভাবে মাইক্রেবাসে গাদাগাদি করে যাত্রী নেয়া হচ্ছে এতে সামাজিক দূরত্বের কোন বালাই নেই। যাত্রীদের মুখে মাস্ক নেই। তার পরেও মাইক্রেবাস বোঝাই করে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এসব প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন নজরদারি নেই।
সরেজমিনে বিভাগীয় নগরী রংপুরের প্রবেশদ্বার মডার্ন মোড়ে শনিবার দুপুর ১২টার দিকে ঘুরে দেখা গেছে বেশ কয়েকটা মাইক্রেবাস দাঁড়িয়ে আছে। স্থানীয় শ্রমিক ও দালালরা ঢাকা ঢাকা বলে চিৎকার করে মাইক্রেবাস বোঝাই করে যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিচ্ছে। যাত্রীদের বেশিরভাগই রংপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলার মানুষ। এ ক্ষেত্রে একটি মাইক্রোবাসে ১০টি সিট থাকলেও গাদাগাদি করে ১৩/১৪ জন করে যাত্রী নেয়া হচ্ছে। গাদাগাদি আর ঠাসাঠাসি করে বসানো হচ্ছে মাইক্রেবাসে। এ ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব একেবারেই বজায় থাকছে না। এ ছাড়াও ড্রাইভার, হেলপার থেকে শুরু করে যাত্রীদের বেশিরভাগের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। এ ব্যাপারে একটি মাইক্রোবাসের ড্রাইভার তোফাজ্জল হোসেন জানালেন, আমরা জনপ্রতি এক হাজার টাকা করে নিচ্ছি। যাতায়াতের পথে পথখরচ ৩/৪ হাজার টাকা দিতে হয় শ্রমিক সংগঠনসহ পুলিশকে। ফলে কোন অসুবিধা হয় না। নিজের মুখে মাস্ক নেই, যাত্রীদের নেই, সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না-এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মুখে মাস্ক পরতে বলা হয় অনেকেই শোনে না আর গাদাগাদি আর ঠাসাঠাসি করে যাত্রী না নিলে তাদের পোষায় না।
একই কথা বলেন অপর এক মাইক্রোবাসচালক মনিরুল ইসলাম। তিনি জানান, ১৪ জন যাত্রী নিয়ে তিন দিন ধরে রংপুর থেকে ঢাকায় যাতায়াত করছেন পথিমধ্যে কোন সমস্যা হয়নি। ৩/৪ হাজার টাকা খরচ করলেই সব ম্যানেজ হয়ে যায়।
মাইক্রোবাসে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করা কুড়িগ্রামের মজনু বলেন, জরুরি প্রয়োজনে ঢাকায় যেতে হচ্ছে। করোনা সংক্রমণের ভয় থাকলেও উপায় নেই, ঢাকায় যেতেই হবে। তিনি বলেন, এমনি সময় বাসে করে ঢাকায় গেলে ৫শ’ টাকা লাগত এখন এক হাজার টাকা দিয়ে যেতে হচ্ছে। লালমনিরহাট থেকে আসা রহমত আলী জানান, অটোতে করে ভেঙে ভেঙে রংপুরে এসে মাইক্রোবাসে ঢাকায় যাচ্ছেন মুখে মাস্ক নেই কেনÑ এমন প্রশ্নের উত্তরে সাদামাটা উত্তর পকেটে আছে।
এদিকে মডার্ন মোড়ে শ্রমিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সবাইকে ম্যানেজ করে প্রতিদিন গড়ে ৭০/৮০টি মাইক্রোবাস রংপুর থেকে ঢাকায় যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা যাত্রীবোঝাই করে দেই। যাত্রীপ্রতি ৫০ টাকা করে আমরা পাচ্ছি, এটা ভাগ করে নিচ্ছি। তার পরেও গড়ে ২/৩ হাজার টাকা আয় হয়।
অন্যদিকে বাসের সামনে গ্লাসের মধ্যে ধান কাটা শ্রমিক লিখে যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে ঢাকায়। জনপ্রতি ১ হাজার টাকা নেয়া হচ্ছে বলে জানালেন হেলপার সোহরাব। তবে বাসে একজনও ধান কাটা শ্রমিক দেখা গেল না। নারী ও পুরুষ শিশু মিলিয়ে বিভিন্ন পেশার মানুষ যাত্রী হয়ে যাচ্ছেন ঢাকায়। বাসের ড্রাইভার নাম প্রকাশ না করে বলেন, সবাইকে ম্যানেজ করে যেতে হয়। ৪/৫ হাজার টাকা পথখরচ পড়ে। বাসের যাত্রীদের জিজ্ঞাসা করা হলে তারা কেউই বলেননি তারা ধান কাটা শ্রমিক। তারা বললেন জরুরি প্রয়োজনে ঢাকায় যেতেই হচ্ছে। এভাবে কঠোর লকডাউন উপেক্ষা করে সরকারি বিধিনিষেধ অমান্য করে রংপুর থেকে শতাধিক বাস মাইক্রোবাস যাচ্ছে ঢাকায়, দেখার যেন কেউ নেই। খোঁজ নিয়ে মডার্ন মোড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন সদস্যকে দেখা যায়নি।
এ ব্যাপারে রংপুর মেট্রোপলিটান পুলিশের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কেউই কথা বলতে রাজি হননি।