বিদায়ী উপাচার্যের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি অর্থ কেলেঙ্কারিসহ নানা অভিযোগ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) প্রথম মেয়াদে উপাচার্য থাকাকালে গণহারে নিয়োগ দিয়ে আলোচনায় আসেন অধ্যাপক আবদুস সোবহান। পরবর্তীতে দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণের পর ঘটনার পুনরাবৃত্তি করে ফের সমালোচনায় পড়েন তিনি। আব্দুস সোবহানের দুই মেয়াদে দেয়া নিয়োগগুলোর বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি ও আইন লঙ্ঘনের সত্যতা মিলেছে। উঠেছে অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগ।

সর্বশেষ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সদ্য বিদায়ী উপাচার্য এম আব্দুস সোবহান তার মেয়াদের শেষ দিনে ১৪১ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন। আইন লঙ্ঘন করে অস্থায়ী ভিত্তিতে বিভিন্ন পদে এই নিয়োগ দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বিদায় নিয়েছেন তিনি। নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে শিক্ষকদের আত্মীয়স্বজন থাকলেও বড় একটি অংশ রয়েছে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সাবেক-বর্তমান ৪৩ নেতাকর্মী। নিয়োগ তালিকায় রয়েছে ৪ সাংবাদিক নেতাও। অবৈধভাবে এই নিয়োগে চাকরি স্থায়ীকরণে রয়েছে শঙ্কা। এতে খুশি নন তারা।

এর আগে ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনিয়ম ও দুর্নীতির ৩০০ পৃষ্ঠার একটি অভিযোগপত্র প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসিতে জমা দেন শিক্ষকদের একাংশ। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তদন্তে নামে ইউজিসি। তদন্ত শেষে ২৫টি অভিযোগের প্রমাণ পায় ইউজিসি। শুধু তাই নয়, উপাচার্য থাকাকালে দুই মেয়াদেই লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে আব্দুস সোবহানের বিরুদ্ধে।

উপাচার্যের এরূপ অসাধুতার বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষক সমাজের আহ্বায়ক অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম টিপু জানান, ‘প্রথম মেয়াদে নিয়োগ পাওয়ার পরেই আব্দুস সোবহান দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। আইন লঙ্ঘন, স্বজনপ্রতি করে অসংখ্য নিয়োগ দেন। দ্বিতীয় মেয়াদে এসেও একই পন্থা অবলম্বন করেন তিনি। তিনি বলেন, এই নিয়োগে অনেক অর্থ লেন-দেন হয়েছে। নিয়োগ না পাওয়া কয়েকজন ইতোমধ্যে নিয়োগবাণিজ্য হয়েছে বলে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন।’

আব্দুস সোবহানের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ- রাষ্ট্রপতিকে অসত্য তথ্য প্রদান ও অবসর গ্রহণ, উপাচার্যের বাড়ি ভাড়া নিয়ে দুর্নীতি এবং শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালার পরিবর্তন করে নিজ মেয়ে ও জামাতাকে নিয়োগ। সর্বশেষ নিয়োগপত্রের তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন, তাদের বেশিরভাগই শিক্ষকদের স্ত্রী, সন্তান অথবা আত্মীয়স্বজন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের খন্দকার ফরহাদ হোসেনের ছেলে ঋত্বিক মাহমুদ সংগীত বিভাগে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে নিয়োগ পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন মিশ্রর ছেলে ইন্দ্রনীল মিশ্র। ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক খাইরুল ইসলামের স্ত্রী সাবিহা ইয়াসমিনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে সেন্টার অব এক্সিলেন্স ইন টিচিং অ্যান্ড লার্নিংয়ের সহযোগী অধ্যাপক (আইটি) হিসেবে। ইতিহাস বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে মো. কামরুজ্জামানকে। তিনি ওই বিভাগের অধ্যাপক শেরেজ্জামানের আত্মীয় বলে জানা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিভাগের প্রভাষক পদে মো. শাহরিয়ার মাহবুব নিয়োগ পেয়েছেন। তিনি জামালপুরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদের জামাতা। কলেজ পরিদর্শক ও অধ্যাপক আবদুল গণির স্ত্রী ফারহানা একরাম নিয়োগ পেয়েছেন তাপসী রাবেয়া হলের আবাসিক শিক্ষিকা হিসেবে। সহকারী আবাসিক শিক্ষিকা হিসেবে রহমতুন্নেছা হলে নিয়োগ পেয়েছেন অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মাহমুদ হোসেন রিয়াজির স্ত্রী বুরুজ ই জোবাইরা।

তবে শিক্ষক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিভাগীয় কোন প্ল্যানিং কমিটির সভা বা কোন ধরনের চাহিদা ছিল না বলে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সভাপতিরা জানিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো. এমদাদুল হক বলেন, শিক্ষক নিয়োগের জন্য তারা কোন প্ল্যানিং কমিটির সভা করেননি। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে তাদের এ বিষয়ে কোন আলাপও হয়নি।

নিয়োগের বিষয়ে বিশ^বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুস সালাম জানান, ‘বিদায়ী উপাচার্য বিদায়কালে অবৈধভাবে নিয়োগ দেয়ার চেষ্টা করেছেন কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়টি অবগত হওয়ার পর অবৈধ নিয়োগ বৈধতা পাবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। পাশাপাশি এই নিয়োগ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি বিশ^বিদ্যালয়ে এসে তাদের তদন্ত শুরু করেছেন। এই অবৈধ নিয়োগে চাকরিপ্রাপ্তদের কেউই চাকরিতে যোগদান করতে পারবেন না।’

আব্দুস সোবহানের দ্বিতীয় মেয়াদে নিয়োগ নীতিমালা লঙ্ঘন করে গণহারে নিয়োগ দেয়ার ঘটনাটি নতুন নয়। জানা গেছে, ২০০৯ থেকে ২০১৩ সালে প্রথম মেয়াদে উপাচার্য থাকাকালে ৩৩০ শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছিলেন। এদের মধ্যে অস্থায়ী ভিত্তিতেই নিয়োগ দেয়া হয়েছিল ৯৫ জন শিক্ষককে। শুধু শিক্ষক নিয়োগেই নয়, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগেও আবদুস সোবহান একতরফা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন। জানা গেছে, উপাচার্য থাকাকালে সোবহান ৩৪৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেন।

বিশ^বিদ্যালয়ের একাধিক সিনিয়র অধ্যাপক বলেছেন, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশিত পদসংখ্যার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও নিয়োগকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছিল। প্রতিজন শিক্ষক নিয়োগে গড়ে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা এবং প্রতিজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা দিতে হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদন না থাকলেও এই বিপুলসংখ্যক শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের ঘটনায় চরম অর্থ সংকটে পড়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়টি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ফান্ড, ছাত্র কল্যাণ ফান্ড, গবেষণা খাত থেকে এসব অতিরিক্ত নিয়োগ পাওয়াদের বেতন মেটাতে হয়েছিল। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষার মান উন্নয়ন অনেকটাই থমকে গিয়েছিল।

রবিবার, ০৯ মে ২০২১ , ২৬ বৈশাখ ১৪২৮ ২৬ রমজান ১৪৪২

বিদায়ী উপাচার্যের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি অর্থ কেলেঙ্কারিসহ নানা অভিযোগ

ওয়াসিফ রিয়াদ, রাবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) প্রথম মেয়াদে উপাচার্য থাকাকালে গণহারে নিয়োগ দিয়ে আলোচনায় আসেন অধ্যাপক আবদুস সোবহান। পরবর্তীতে দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণের পর ঘটনার পুনরাবৃত্তি করে ফের সমালোচনায় পড়েন তিনি। আব্দুস সোবহানের দুই মেয়াদে দেয়া নিয়োগগুলোর বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি ও আইন লঙ্ঘনের সত্যতা মিলেছে। উঠেছে অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগ।

সর্বশেষ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সদ্য বিদায়ী উপাচার্য এম আব্দুস সোবহান তার মেয়াদের শেষ দিনে ১৪১ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন। আইন লঙ্ঘন করে অস্থায়ী ভিত্তিতে বিভিন্ন পদে এই নিয়োগ দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বিদায় নিয়েছেন তিনি। নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে শিক্ষকদের আত্মীয়স্বজন থাকলেও বড় একটি অংশ রয়েছে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সাবেক-বর্তমান ৪৩ নেতাকর্মী। নিয়োগ তালিকায় রয়েছে ৪ সাংবাদিক নেতাও। অবৈধভাবে এই নিয়োগে চাকরি স্থায়ীকরণে রয়েছে শঙ্কা। এতে খুশি নন তারা।

এর আগে ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনিয়ম ও দুর্নীতির ৩০০ পৃষ্ঠার একটি অভিযোগপত্র প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসিতে জমা দেন শিক্ষকদের একাংশ। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তদন্তে নামে ইউজিসি। তদন্ত শেষে ২৫টি অভিযোগের প্রমাণ পায় ইউজিসি। শুধু তাই নয়, উপাচার্য থাকাকালে দুই মেয়াদেই লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে আব্দুস সোবহানের বিরুদ্ধে।

উপাচার্যের এরূপ অসাধুতার বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষক সমাজের আহ্বায়ক অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম টিপু জানান, ‘প্রথম মেয়াদে নিয়োগ পাওয়ার পরেই আব্দুস সোবহান দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। আইন লঙ্ঘন, স্বজনপ্রতি করে অসংখ্য নিয়োগ দেন। দ্বিতীয় মেয়াদে এসেও একই পন্থা অবলম্বন করেন তিনি। তিনি বলেন, এই নিয়োগে অনেক অর্থ লেন-দেন হয়েছে। নিয়োগ না পাওয়া কয়েকজন ইতোমধ্যে নিয়োগবাণিজ্য হয়েছে বলে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন।’

আব্দুস সোবহানের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ- রাষ্ট্রপতিকে অসত্য তথ্য প্রদান ও অবসর গ্রহণ, উপাচার্যের বাড়ি ভাড়া নিয়ে দুর্নীতি এবং শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালার পরিবর্তন করে নিজ মেয়ে ও জামাতাকে নিয়োগ। সর্বশেষ নিয়োগপত্রের তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন, তাদের বেশিরভাগই শিক্ষকদের স্ত্রী, সন্তান অথবা আত্মীয়স্বজন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের খন্দকার ফরহাদ হোসেনের ছেলে ঋত্বিক মাহমুদ সংগীত বিভাগে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে নিয়োগ পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন মিশ্রর ছেলে ইন্দ্রনীল মিশ্র। ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক খাইরুল ইসলামের স্ত্রী সাবিহা ইয়াসমিনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে সেন্টার অব এক্সিলেন্স ইন টিচিং অ্যান্ড লার্নিংয়ের সহযোগী অধ্যাপক (আইটি) হিসেবে। ইতিহাস বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে মো. কামরুজ্জামানকে। তিনি ওই বিভাগের অধ্যাপক শেরেজ্জামানের আত্মীয় বলে জানা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিভাগের প্রভাষক পদে মো. শাহরিয়ার মাহবুব নিয়োগ পেয়েছেন। তিনি জামালপুরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদের জামাতা। কলেজ পরিদর্শক ও অধ্যাপক আবদুল গণির স্ত্রী ফারহানা একরাম নিয়োগ পেয়েছেন তাপসী রাবেয়া হলের আবাসিক শিক্ষিকা হিসেবে। সহকারী আবাসিক শিক্ষিকা হিসেবে রহমতুন্নেছা হলে নিয়োগ পেয়েছেন অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মাহমুদ হোসেন রিয়াজির স্ত্রী বুরুজ ই জোবাইরা।

তবে শিক্ষক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিভাগীয় কোন প্ল্যানিং কমিটির সভা বা কোন ধরনের চাহিদা ছিল না বলে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সভাপতিরা জানিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো. এমদাদুল হক বলেন, শিক্ষক নিয়োগের জন্য তারা কোন প্ল্যানিং কমিটির সভা করেননি। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে তাদের এ বিষয়ে কোন আলাপও হয়নি।

নিয়োগের বিষয়ে বিশ^বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুস সালাম জানান, ‘বিদায়ী উপাচার্য বিদায়কালে অবৈধভাবে নিয়োগ দেয়ার চেষ্টা করেছেন কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়টি অবগত হওয়ার পর অবৈধ নিয়োগ বৈধতা পাবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। পাশাপাশি এই নিয়োগ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি বিশ^বিদ্যালয়ে এসে তাদের তদন্ত শুরু করেছেন। এই অবৈধ নিয়োগে চাকরিপ্রাপ্তদের কেউই চাকরিতে যোগদান করতে পারবেন না।’

আব্দুস সোবহানের দ্বিতীয় মেয়াদে নিয়োগ নীতিমালা লঙ্ঘন করে গণহারে নিয়োগ দেয়ার ঘটনাটি নতুন নয়। জানা গেছে, ২০০৯ থেকে ২০১৩ সালে প্রথম মেয়াদে উপাচার্য থাকাকালে ৩৩০ শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছিলেন। এদের মধ্যে অস্থায়ী ভিত্তিতেই নিয়োগ দেয়া হয়েছিল ৯৫ জন শিক্ষককে। শুধু শিক্ষক নিয়োগেই নয়, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগেও আবদুস সোবহান একতরফা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন। জানা গেছে, উপাচার্য থাকাকালে সোবহান ৩৪৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেন।

বিশ^বিদ্যালয়ের একাধিক সিনিয়র অধ্যাপক বলেছেন, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশিত পদসংখ্যার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও নিয়োগকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছিল। প্রতিজন শিক্ষক নিয়োগে গড়ে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা এবং প্রতিজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা দিতে হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদন না থাকলেও এই বিপুলসংখ্যক শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের ঘটনায় চরম অর্থ সংকটে পড়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়টি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ফান্ড, ছাত্র কল্যাণ ফান্ড, গবেষণা খাত থেকে এসব অতিরিক্ত নিয়োগ পাওয়াদের বেতন মেটাতে হয়েছিল। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষার মান উন্নয়ন অনেকটাই থমকে গিয়েছিল।