স্মরণে কবিগুরু

বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৬০ বছর আগে ১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখ পশ্চিমবঙ্গের জোড়া সাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্ম যেন বাংলা সাহিত্যে এক আশীর্বাদ। গান, কবিতা, ছোটগল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাস, চিত্রকর্ম সৃষ্টির মধ্য দিয়ে বাংলা সাহিত্যের প্রতিটি শাখাকে তিনি সুনিপুণ হাতে সাজিয়েছে। তার হাত ধরেই বাংলা সাহিত্য পেয়েছে আধুনিকতার ছোঁয়া। তিনিই প্রথম বাংলা সার্থক ছোটগল্পের রচিয়তা। সমাজ, ধর্ম, সংস্কৃতি ও জীবনবোধের এক অপিমেয় সংমিশ্রণে তার লেখাগুলো আজও জীবন্ত হয়ে আছে, অনূদিতও হয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায়।

রবীন্দ্রনাথের মাঝে জাতীয়তাবাদ ও স্বদেশ প্রেমও ছিল প্রবল। জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের পর ব্রিটিশ সরকারের দেয়া ‘নাইট’ পদবি তিনি বর্জন করেছিলেন। আর এই দেশপ্রেমের ছাপ ফুটে উঠেছে তার সৃষ্টিতে। তাইতো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার দেশাত্মবোধক গানগুলো আমাদের সূর্যসন্তানদের প্রেরণা জুগিয়েছিল। তিনি প্রচলিত আবদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে এক নতুন শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিলেন। এ জন্যই ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যের জন্য এশিয়দের মাঝে প্রথম নোবেল বিজয়ী হলে সেই নোবেলপ্রাপ্তির অর্থ দিয়ে তিনি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি নিজেই সেখানে খোলা আকাশের নিচে গাছ তলায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাতেন, আজও সংকীর্ণ পরিসরে মাঝে-মাঝে সেখানে শিক্ষার্থীদের খোলা আকাশের নিচে পাঠদান করানো হয়।

বাঙালির প্রেম-প্রীতি, হাসি-আনন্দের নিভৃত-অন্তরালে জড়িয়ে আছে রবীন্দ্রনাথ। তাইতো আজও প্রেমিকযুগল অজান্তেই গেয়ে ওঠে রবীন্দ্রনাথের সেই বিখ্যাত চরণদ্বয়- ‘আমারও পরানো যাহা চায়/তুমি তাই তুমি তাই গো।’ এছাড়া বাঙালির কষ্ট বেদনাতেও রবীন্দ্রনাথকেই ছুঁয়ে যায়। কালো অনিমেষ যখন হৃদয় ছুঁয়ে যায় ঠিক তখনই, ‘মন রে আজ কহ যে, /ভালো মন্দ যাহাই আসুক/সত্যরে লও সহজে’র মতো লাইনগুলো আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে দেয়। বসন্ত বরণ, পহেলা বৈশাখসহ বাঙালির সব জাতীয় উৎসবগুলোও যেন রবীন্দ্র সংগীত ছাড়া অপূর্ণ।

প্রতি বছর ব্যাপক আয়োজনের মধ্য দিয়ে রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকী পালিত হলেও গত বছর থেকে করোনাভাইরাসের কবলে পড়ে থেমে গেছে সব আয়োজন। এবারও শিল্পকলা একাডেমিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে না, ছায়ানটে রবীন্দ্র-আসর বসবে না। তবুও রবীন্দ্রনাথ বাঙালির মাঝেই আছেন। ভক্তদের হৃদয়ে তিনি নিত্য খেলা করছেন তার লেখা চরণ দুটির মতো করেই- ‘তখন কে বলে গো সেই প্রভাতে নেই আমি/ সকল খেলায় করবে খেলা এই আমি।’

রুকাইয়া মিজান মিমি

শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

রবিবার, ০৯ মে ২০২১ , ২৬ বৈশাখ ১৪২৮ ২৬ রমজান ১৪৪২

স্মরণে কবিগুরু

বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৬০ বছর আগে ১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখ পশ্চিমবঙ্গের জোড়া সাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্ম যেন বাংলা সাহিত্যে এক আশীর্বাদ। গান, কবিতা, ছোটগল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাস, চিত্রকর্ম সৃষ্টির মধ্য দিয়ে বাংলা সাহিত্যের প্রতিটি শাখাকে তিনি সুনিপুণ হাতে সাজিয়েছে। তার হাত ধরেই বাংলা সাহিত্য পেয়েছে আধুনিকতার ছোঁয়া। তিনিই প্রথম বাংলা সার্থক ছোটগল্পের রচিয়তা। সমাজ, ধর্ম, সংস্কৃতি ও জীবনবোধের এক অপিমেয় সংমিশ্রণে তার লেখাগুলো আজও জীবন্ত হয়ে আছে, অনূদিতও হয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায়।

রবীন্দ্রনাথের মাঝে জাতীয়তাবাদ ও স্বদেশ প্রেমও ছিল প্রবল। জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের পর ব্রিটিশ সরকারের দেয়া ‘নাইট’ পদবি তিনি বর্জন করেছিলেন। আর এই দেশপ্রেমের ছাপ ফুটে উঠেছে তার সৃষ্টিতে। তাইতো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার দেশাত্মবোধক গানগুলো আমাদের সূর্যসন্তানদের প্রেরণা জুগিয়েছিল। তিনি প্রচলিত আবদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে এক নতুন শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিলেন। এ জন্যই ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যের জন্য এশিয়দের মাঝে প্রথম নোবেল বিজয়ী হলে সেই নোবেলপ্রাপ্তির অর্থ দিয়ে তিনি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি নিজেই সেখানে খোলা আকাশের নিচে গাছ তলায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাতেন, আজও সংকীর্ণ পরিসরে মাঝে-মাঝে সেখানে শিক্ষার্থীদের খোলা আকাশের নিচে পাঠদান করানো হয়।

বাঙালির প্রেম-প্রীতি, হাসি-আনন্দের নিভৃত-অন্তরালে জড়িয়ে আছে রবীন্দ্রনাথ। তাইতো আজও প্রেমিকযুগল অজান্তেই গেয়ে ওঠে রবীন্দ্রনাথের সেই বিখ্যাত চরণদ্বয়- ‘আমারও পরানো যাহা চায়/তুমি তাই তুমি তাই গো।’ এছাড়া বাঙালির কষ্ট বেদনাতেও রবীন্দ্রনাথকেই ছুঁয়ে যায়। কালো অনিমেষ যখন হৃদয় ছুঁয়ে যায় ঠিক তখনই, ‘মন রে আজ কহ যে, /ভালো মন্দ যাহাই আসুক/সত্যরে লও সহজে’র মতো লাইনগুলো আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে দেয়। বসন্ত বরণ, পহেলা বৈশাখসহ বাঙালির সব জাতীয় উৎসবগুলোও যেন রবীন্দ্র সংগীত ছাড়া অপূর্ণ।

প্রতি বছর ব্যাপক আয়োজনের মধ্য দিয়ে রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকী পালিত হলেও গত বছর থেকে করোনাভাইরাসের কবলে পড়ে থেমে গেছে সব আয়োজন। এবারও শিল্পকলা একাডেমিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে না, ছায়ানটে রবীন্দ্র-আসর বসবে না। তবুও রবীন্দ্রনাথ বাঙালির মাঝেই আছেন। ভক্তদের হৃদয়ে তিনি নিত্য খেলা করছেন তার লেখা চরণ দুটির মতো করেই- ‘তখন কে বলে গো সেই প্রভাতে নেই আমি/ সকল খেলায় করবে খেলা এই আমি।’

রুকাইয়া মিজান মিমি

শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।