রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের গোপন সিন্ডিকেট সভা আহ্বান

ক্ষুব্ধ শিক্ষক-কর্মচারী

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার মাত্র ৩৬ দিন আগে গোপনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করেছেন। ঢাকায় ভার্চুয়াল সভার নামে এই সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করা হয়েছে বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।

ঘটনাটি জানাজানি হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী কর্মকর্তা কর্মচারীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। পুরো বিষয় নিয়ে তোলপাড় চলছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য পদে মেয়াদ চলতি বছরের ১৪ জুন শেষ হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে দুর্নিতি, ক্ষমতার অপব্যাহার, নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে। ইতোমধ্যে ইউজিসি তদন্ত প্রতিবেদনে তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। ইউজিসির অন্য একটি টিম কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া অবৈধ নিয়োগ, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ ১০১টি অভিযোগের সরেজমিন তদন্ত সম্পন্ন করেছে। করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় কঠোর লকডাউনের কারণে সেই প্রতিবেদন এখনও প্রদান করেনি। এমনি অবস্থায় দ্বিতীয় দফা

উপাচার্য হিসেবে পুনঃনিয়োগ পাওয়ার কোন সম্ভাবনা না থাকাায় তার সব অপকর্ম জায়েজ করা বিপুল সংখ্যক অবৈধ নিয়োগ বৈধ করা এবং তার অপকর্মের সহায়তাকারী জাতীয় পতাকা অবমাননা মামলার আসামি চার শিক্ষক কর্মকর্তার অবৈধ পদোন্নতিকে বৈধ করার জন্য তড়িঘড়ি করে ছুটির মধ্যে ১১ মে সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করেছেন।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ফরিদুল ইসলাম জানান উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ে সব অবকাঠামো থাকার পরেও সিন্ডিকেট সভা ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় লিয়াজোঁ অফিসে করেন। আমরা তাকে অনেক বার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সিন্ডিকেট সভা কক্ষে সভা করার আহ্বান জানিয়ে ব্যর্থ হয়ে সভা বয়কট করেছি। উপাচার্য তার অনেক অপকর্ম বিশেষ করে নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন কর্মকা- সিন্ডিকেটে পাস করিয়ে নিয়েছেন। এবারে তিনি ছুটির মধ্যে বিশেষ করে কঠোর লকডাউনের মধ্যে সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করেছেন বলে শুনেছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ওই সিন্ডিকেট সভায় উপাচার্য অনেক সিনিয়রকে পদোন্নতি না দিয়ে জাতীয় পতাকা অবমাননা মামলার আসামি কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক প্রদীব কুমার, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সদরুল ইসলাম, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাবিউর রহমান প্রধানকে সহযোগী অধ্যাপক পদে এবং উপাচার্যের একান্ত সচিব আমিনুর রহমানকে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার পদে পদোন্নতি দিয়েছেন। এসব পদোন্নতি বৈধতা দেয় ও অবৈধ নিয়োগ জায়েজ করার জন্য সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করেছেন।

এ ব্যাপারে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকার সুরক্ষা পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মতিউর রহমান অভিযোগ করেছেন, আমরা জানতে পেরেছি উপাচার্য অনেক অবৈধ নিয়োগ ও পদোন্নতি বৈধ করার জন্য ঈদের দুদিন আগে ছুটি ও কঠোর লকডাউনের মধ্যে সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করেছেন। আমরা শিক্ষামন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা এবং সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করা থেকে বিরত থাকার ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছি। এদিকে জাতীয় পতাকা অবমাননা মামলার বাদী বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান ও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহমুদুল হক জানিয়েছেন, পতাকা অবমাননা মামলার আসামিদের অবৈধ পদোন্নতি বাতিল করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইউজিসি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সিন্ডিকেট সদস্যের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ হয়েছে। সার্বিক বিষয়ে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

সোমবার, ১০ মে ২০২১ , ২৭ বৈশাখ ১৪২৮ ২৭ রমজান ১৪৪২

রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের গোপন সিন্ডিকেট সভা আহ্বান

ক্ষুব্ধ শিক্ষক-কর্মচারী

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, রংপুর

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার মাত্র ৩৬ দিন আগে গোপনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করেছেন। ঢাকায় ভার্চুয়াল সভার নামে এই সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করা হয়েছে বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।

ঘটনাটি জানাজানি হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী কর্মকর্তা কর্মচারীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। পুরো বিষয় নিয়ে তোলপাড় চলছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য পদে মেয়াদ চলতি বছরের ১৪ জুন শেষ হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে দুর্নিতি, ক্ষমতার অপব্যাহার, নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে। ইতোমধ্যে ইউজিসি তদন্ত প্রতিবেদনে তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। ইউজিসির অন্য একটি টিম কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া অবৈধ নিয়োগ, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ ১০১টি অভিযোগের সরেজমিন তদন্ত সম্পন্ন করেছে। করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় কঠোর লকডাউনের কারণে সেই প্রতিবেদন এখনও প্রদান করেনি। এমনি অবস্থায় দ্বিতীয় দফা

উপাচার্য হিসেবে পুনঃনিয়োগ পাওয়ার কোন সম্ভাবনা না থাকাায় তার সব অপকর্ম জায়েজ করা বিপুল সংখ্যক অবৈধ নিয়োগ বৈধ করা এবং তার অপকর্মের সহায়তাকারী জাতীয় পতাকা অবমাননা মামলার আসামি চার শিক্ষক কর্মকর্তার অবৈধ পদোন্নতিকে বৈধ করার জন্য তড়িঘড়ি করে ছুটির মধ্যে ১১ মে সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করেছেন।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ফরিদুল ইসলাম জানান উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ে সব অবকাঠামো থাকার পরেও সিন্ডিকেট সভা ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় লিয়াজোঁ অফিসে করেন। আমরা তাকে অনেক বার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সিন্ডিকেট সভা কক্ষে সভা করার আহ্বান জানিয়ে ব্যর্থ হয়ে সভা বয়কট করেছি। উপাচার্য তার অনেক অপকর্ম বিশেষ করে নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন কর্মকা- সিন্ডিকেটে পাস করিয়ে নিয়েছেন। এবারে তিনি ছুটির মধ্যে বিশেষ করে কঠোর লকডাউনের মধ্যে সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করেছেন বলে শুনেছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ওই সিন্ডিকেট সভায় উপাচার্য অনেক সিনিয়রকে পদোন্নতি না দিয়ে জাতীয় পতাকা অবমাননা মামলার আসামি কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক প্রদীব কুমার, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সদরুল ইসলাম, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাবিউর রহমান প্রধানকে সহযোগী অধ্যাপক পদে এবং উপাচার্যের একান্ত সচিব আমিনুর রহমানকে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার পদে পদোন্নতি দিয়েছেন। এসব পদোন্নতি বৈধতা দেয় ও অবৈধ নিয়োগ জায়েজ করার জন্য সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করেছেন।

এ ব্যাপারে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকার সুরক্ষা পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মতিউর রহমান অভিযোগ করেছেন, আমরা জানতে পেরেছি উপাচার্য অনেক অবৈধ নিয়োগ ও পদোন্নতি বৈধ করার জন্য ঈদের দুদিন আগে ছুটি ও কঠোর লকডাউনের মধ্যে সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করেছেন। আমরা শিক্ষামন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা এবং সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করা থেকে বিরত থাকার ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছি। এদিকে জাতীয় পতাকা অবমাননা মামলার বাদী বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান ও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহমুদুল হক জানিয়েছেন, পতাকা অবমাননা মামলার আসামিদের অবৈধ পদোন্নতি বাতিল করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইউজিসি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সিন্ডিকেট সদস্যের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ হয়েছে। সার্বিক বিষয়ে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।