সেরামের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের পরামর্শ সংসদীয় কমিটির

চুক্তি নির্ধারিত সময়ে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের টিকা পাঠাতে না পারায় ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটির ২০তম বৈঠকে এ পরামর্শ দেয়া হয়।

বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি লে. কর্নেল মুহাম্মদ ফারুক খান (অব.) সংবাদকে বলেন, ‘ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট চুক্তি অনুযায়ী আমাদের টিকা দিতে পারেনি। তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নকেও (ইইউ) চুক্তি অনুযায়ী টিকা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে আমি খবরে দেখেছি। ইইউ সেরামের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছে। আমরাও মন্ত্রণালয়কে সেরামের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছি।’

চুক্তি অনুযায়ী, সেরামের কাছ থেকে প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে ছয় মাসে তিন কোটি ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের। তবে সময় মতো টিকার চালান না আসায় সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ। সেরাম ইনস্টিটিউটের প্রথম চালানে ৫০ লাখ ডোজ পাওয়ার পর গত ফেব্রুয়ারিতে দেশে গণটিকাদান শুরু হয়। তবে বিশ্বজুড়ে টিকা সরবরাহ সংকট শুরু হলে ফেব্রুয়ারিতে দ্বিতীয় চালানে ২০ লাখ ডোজ টিকা পাঠায় প্রতিষ্ঠানটি। ভারত সরকারের উপহার হিসেবে দুই দফায় আসে আরও ৩২ লাখ ডোজ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা। এর মধ্যে এপ্রিলে সারাদেশে টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেয়া শুরু করে বাংলাদেশ। কিন্তু নিজেদের চাহিদা মেটাতে ভারত টিকা রপ্তানি নিষিদ্ধ করলে শুরু হয় নতুন সংকট। এ অবস্থায় প্রথম ডোজের টিকাদান বন্ধ রাখতে হয় সরকারকে। সরকারের হাতে এখন যে মজুদ আছে, তা দিয়ে প্রথম ডোজের সবাইকে দ্বিতীয় ডোজ দেয়াও সম্ভব হবে না।

লে. কর্নেল মুহাম্মদ ফারুক খান (অব.) সংবাদকে আরও বলেন, ‘দেশে প্রথম ডোজে যারা অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়েছেন, দ্বিতীয় ডোজেও তারা যেন একই টিকা নিতে পারেন, সেজন্য বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পাওয়ার জন্য জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে গত ফেব্রুয়ারি মাসেই একাধিক সোর্স থেকে টিকা আনার কথা বলা হয়েছিল। একটি সোর্স থেকে টিকা কেন নেয়া হল, এ বিষয়েও প্রশ্ন করা হয়েছে। পরারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা হলো এটা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিষয়। তবে তারা এখন মাল্টিপল সোর্স থেকে টিকা আনার চেষ্টা করছে। ভারত থেকেও আশা করছে পাবে। আমেরিকা থেকে পাওয়ার চেষ্টা করছে। রাশিয়া ও চায়না থেকেও টিকা আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।’

কমিটির সভাপতি লে. কর্নেল মুহম্মদ ফারুক খানের (অব.) সভাপতিত্বে কমিটির সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে. আবদুল মোমেন, নুরুল ইসলাম নাহিদ, মো. আবদুল মজিদ খান, মো. হাবিবে মিল্লাত এবং কাজী নাবিল আহমেদ বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, ইরাকের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে চীনের সিনোফার্ম ভ্যাক্সিনের সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্যও প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে কমিটি মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করা হয়। এছাড়া কাভিড-১৯ এর বর্তমান পরিস্থতির কারণে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত বন্ধ রাখারও সুপারিশ করা হয় বৈঠকে।

বৈঠকে মে মাসের শেষ সপ্তাহের মধ্যে পররাষ্ট্র কমিটিকে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের অবস্থা সরেজমিনে পরিদর্শনের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কমিটি মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করে। ইরাকের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করা এবং ইরাকে কর্মরত বাংলাদেশি মানবসম্পদকে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদানের জন্য কমিটি মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করে।

সোমবার, ১০ মে ২০২১ , ২৭ বৈশাখ ১৪২৮ ২৭ রমজান ১৪৪২

চুক্তির টিকা না দেয়ায়

সেরামের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের পরামর্শ সংসদীয় কমিটির

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

চুক্তি নির্ধারিত সময়ে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের টিকা পাঠাতে না পারায় ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটির ২০তম বৈঠকে এ পরামর্শ দেয়া হয়।

বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি লে. কর্নেল মুহাম্মদ ফারুক খান (অব.) সংবাদকে বলেন, ‘ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট চুক্তি অনুযায়ী আমাদের টিকা দিতে পারেনি। তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নকেও (ইইউ) চুক্তি অনুযায়ী টিকা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে আমি খবরে দেখেছি। ইইউ সেরামের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছে। আমরাও মন্ত্রণালয়কে সেরামের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছি।’

চুক্তি অনুযায়ী, সেরামের কাছ থেকে প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে ছয় মাসে তিন কোটি ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের। তবে সময় মতো টিকার চালান না আসায় সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ। সেরাম ইনস্টিটিউটের প্রথম চালানে ৫০ লাখ ডোজ পাওয়ার পর গত ফেব্রুয়ারিতে দেশে গণটিকাদান শুরু হয়। তবে বিশ্বজুড়ে টিকা সরবরাহ সংকট শুরু হলে ফেব্রুয়ারিতে দ্বিতীয় চালানে ২০ লাখ ডোজ টিকা পাঠায় প্রতিষ্ঠানটি। ভারত সরকারের উপহার হিসেবে দুই দফায় আসে আরও ৩২ লাখ ডোজ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা। এর মধ্যে এপ্রিলে সারাদেশে টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেয়া শুরু করে বাংলাদেশ। কিন্তু নিজেদের চাহিদা মেটাতে ভারত টিকা রপ্তানি নিষিদ্ধ করলে শুরু হয় নতুন সংকট। এ অবস্থায় প্রথম ডোজের টিকাদান বন্ধ রাখতে হয় সরকারকে। সরকারের হাতে এখন যে মজুদ আছে, তা দিয়ে প্রথম ডোজের সবাইকে দ্বিতীয় ডোজ দেয়াও সম্ভব হবে না।

লে. কর্নেল মুহাম্মদ ফারুক খান (অব.) সংবাদকে আরও বলেন, ‘দেশে প্রথম ডোজে যারা অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়েছেন, দ্বিতীয় ডোজেও তারা যেন একই টিকা নিতে পারেন, সেজন্য বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পাওয়ার জন্য জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে গত ফেব্রুয়ারি মাসেই একাধিক সোর্স থেকে টিকা আনার কথা বলা হয়েছিল। একটি সোর্স থেকে টিকা কেন নেয়া হল, এ বিষয়েও প্রশ্ন করা হয়েছে। পরারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা হলো এটা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিষয়। তবে তারা এখন মাল্টিপল সোর্স থেকে টিকা আনার চেষ্টা করছে। ভারত থেকেও আশা করছে পাবে। আমেরিকা থেকে পাওয়ার চেষ্টা করছে। রাশিয়া ও চায়না থেকেও টিকা আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।’

কমিটির সভাপতি লে. কর্নেল মুহম্মদ ফারুক খানের (অব.) সভাপতিত্বে কমিটির সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে. আবদুল মোমেন, নুরুল ইসলাম নাহিদ, মো. আবদুল মজিদ খান, মো. হাবিবে মিল্লাত এবং কাজী নাবিল আহমেদ বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, ইরাকের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে চীনের সিনোফার্ম ভ্যাক্সিনের সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্যও প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে কমিটি মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করা হয়। এছাড়া কাভিড-১৯ এর বর্তমান পরিস্থতির কারণে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত বন্ধ রাখারও সুপারিশ করা হয় বৈঠকে।

বৈঠকে মে মাসের শেষ সপ্তাহের মধ্যে পররাষ্ট্র কমিটিকে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের অবস্থা সরেজমিনে পরিদর্শনের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কমিটি মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করে। ইরাকের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করা এবং ইরাকে কর্মরত বাংলাদেশি মানবসম্পদকে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদানের জন্য কমিটি মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করে।