বিজিবি দিয়েও ঠেকানো যাচ্ছে না জনস্রোত

মহাসড়কে গণপরিবহনের লুকোচুরি

বিজিবি দিয়ে ঠেকানো যাচ্ছে না ঘরমুখো মানুষের স্রোত। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বিধিনিষেদের কারণে বন্ধ রয়েছে আন্তঃজেলা বাস সার্ভিস, লঞ্চ ও ট্রেন। ফেরিতে যাত্রী পারাপার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাই দিনের বেলায় বন্ধ রয়েছে ফেরি সার্ভিস। ফেরিঘাটে যাত্রীশূন্য রাখার জন্য মোতায়েন করা হয়েছে বিজিবি কিন্তু পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে গতকালও রাজধানী ছাড়ছেন ঘরমুখো হাজারো মানুষ। সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েই ঢাকা ছাড়ছেন এসব মানুষ। জেলার অভ্যন্তরে গণপরিবহন চালু থাকায় ভেঙে ভেঙে গ্রাম যাচ্ছেন তারা। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে রাতে মহাসড়কে চলছে গণপরিবহন। প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল ও পিকআপ ভ্যানে ঝুঁকি নিয়ে ঢাকা ছাড়তে দেখা গেছে ঘরমুখো মানুষদের।

সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন প্রবেশমুখ ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকার অভ্যন্তরীণ সিটি সার্ভিস বাসে ঈদযাত্রীদের নিয়ে ফেরিঘাট ও মহাসড়কের যাতায়াত করতে দেখা গেছে। তুরাগ ও অনাবিলসহ ছোট পরিবহনে যাত্রীবোঝাই করে বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তার মোড়ে গতকাল দুপুর ২টার দিকে যাত্রাবাড়ী-টঙ্গী রুটে চলাচল করা তুরাগ পরিবহনে যাত্রী পরিবহন করে মাওয়ার ফেরিঘাটের যেতে দেখা গেছে। যাত্রাবাড়ী থেকে মাওয়া ফেরিঘাটের ভাড়া যাত্রীপ্রতি নেয়া হচ্ছে ২০০ টাকা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে মাওয়া মাওয়া বলে যাত্রী ওঠাতে দেখা গেছে এসব পরিবহনে। ভাড়া নেয়া হচ্ছে দুই-তিন গুণ।

সফিক নামের বরিশালের এক যাত্রী জানান, লঞ্চ বন্ধ থাকায় গাড়িতে বরিশাল যাচ্ছেন তিনি। প্রথমে বাসে মাওয়া ফেরিঘাটে যাবে। সেখান থেকে রাতে ফেরিপার হয়ে মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে বরিশাল যাবেন। এভাবে ভেঙে ভেঙে যেতে তাদের সময় বেশি লাগবে ও টাকা বেশি খরচ হবে। স্ত্রী, সন্তানদের সঙ্গে ঈদ করতেই এই ঝুঁকি নিয়ে বাড়িতে যেতে হচ্ছে বলে জানান তিনি। তানভীর নামে খুলনার এক যাত্রী বলেন, ‘পরিবার নিয়ে ঈদ করতে বাড়ি যাচ্ছি। গুলিস্তান থেকে বাসে সাভার যাচ্ছি। তারপর ফেরিপার হয়ে মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকারে খুলনা যাব।’

হাসেম নামের খুলনার এক যাত্রী বলেন, ‘ঢাকা থেকে সহজেই গাড়িতে করে বিভিন্ন স্থানে যাওয়া যাচ্ছে। ঘাটে আসা যাচ্ছে। ঘাটে ফেরি বন্ধ করার ফলে লোক সমাগম আরও বাড়ছে। করোনা সংক্রমণ রোধে সরকার যে ব্যবস্থা নিচ্ছে তাতে তো উল্টো হবে। হাজার হাজার যাত্রী ঘাটে গায়ে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। ফেরিতে গাদাগাদি করে দুর্ভোগ মাথা নিয়ে বাড়ি ফিরছে। সব নৌযান চালু রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই পার করতে পারত।’ সারোয়ার নামে টেকেরহাটের এক যাত্রী বলেন, ‘বাড়িতে মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তান রয়েছে। ঈদের নতুন জামা কাপড়ের জন্য বাচ্চা পথ চেয়ে আছে। প্রায় সারাবছরই তো বাড়ির বাইরে থাকি। ঈদের সময় পরিবারের কাছে যাবো না? ঈদের সময় ঢাকায় থাইক্যা কী করমু?’

এভাবে ভেঙে ভেঙে ঢাকা ছাড়ছেন ঘরমুখো মানুষ। রাজধানীর গাবতলী ও সায়েদাবাদ প্রধান বাস টার্মিনালে যাত্রীদের তেমন ভিড় না থাকলেও ঢাকা থেকে বের হওয়ার পথে হাজারো মানুষের ভিড় দেখা গেছে। যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা ও গাবতলীর আমিনবাজার ব্রিজের ওপারে বিভিন্ন পরিবহনের অপেক্ষা করতে দেখা গেছে হাজারো মানুষকে। সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বাস, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে ঝুঁকি নিয়ে ঢাকা ছাড়তে দেখা গেছে। গাবতলী-আরিচার প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে জনপ্রতি ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। বাসে জনপ্রতি ভাড়া নেয়া হচ্ছে ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা।

ফেরিতে মানুষের ঢল থামাতে বিজিবি মোতায়েন করা হলেও মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়ায় বাড়িফেরা মানুষের ঢল থামেনি। বিজিবির বাধা সত্ত্বেও জোর করে ফেরিতে উঠতে দেখা গেছে যাত্রীদের। গতকাল অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে শিমুলিয়া ঘাট থেকে কয়েকটি ছেড়ে গেছে। এছাড়া অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি প্রয়োজনে তিনটি ফেরি চলাচল করছে শিমুলিয়া ফেরিঘাট দিয়ে। বিআইডব্লিউটিসি গত শনিবার রাতভর ১৫টি ফেরি দিয়ে পারাপার করলেও গতকাল ভোর থেকে তা বন্ধ করে দেয়া হয়। মহামারীর বিস্তার ঠেকাতে ঈদের আগে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট থেকে দিনের বেলা ফেরি চলাচল বন্ধ থাকবে কিন্তু গতকাল রোববার সকালে অ্যাম্বুলেন্স বহনের জন্য ‘শাহ-পরান’ নামের ফেরিটি ঘাটে ভেড়া মাত্র ঘরমুখো বেপরোয়া মানুষ মুহুর্তের মধ্যে তাতে উঠে পড়ে। তখন বাধ্য হয়ে ফেরিতে যাত্রী পরিবহন করা হয় বলে বিআইডব্লিউটিসির সূত্র জানায়।

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসির সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দিনের বেলায় ফেরি বন্ধ। শুধু জরুরি পরিষেবার কিছু যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। সেই ফেরিতেই লোকজন ¯্রােতের মতো উঠে যাচ্ছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকির মধ্যেও লোকজন বাড়ি ছুটছেন। কোন বাধাই মানছেন না।’

একই অবস্থা মানিকগঞ্জের আরিচা ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাটেও। গতকাল সকালের দিকে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকায় ঘরমুখো যাত্রীদের তেমন একটা চাপ দেখা না গেলেও দুপুরের পরে তা বাড়তে থাকে বলে স্থানীয়রা জানান। সায়েম নামের পাবনার এক যাত্রী জানান, বোনকে নিয়ে রওনা হয়েছেন অনিশ্চিত যাত্রায়। তিনি বললে, ‘বাড়িতে যাচ্ছি অসুস্থ মায়ের জন্য। মা অসুস্থ না থাকলে এই পরিস্থিতিতে বাড়িতে যেতাম না। মূলত মাকে দেখতেই বাড়ি যাচ্ছি। সরকারের লকডাউনে আমরা সাধারণ জনগণ বিপদে পড়েছি বলে জানান তিনি।

সাইফুল নামে এক যাত্রী যাবেন মানিকগঞ্জের সাটুরিয়াতে। তিনি বলেন, ‘গাড়ি চলাচল না করায় বিপদে পড়েছি। সরকারের লকডাউনে আমরা সাধারণ জনগণ বিপদে পড়েছি। ফার্মগেট থেকে বাসে গাবতলী এসেছি। গাবতলী থেকে হেঁটে আমিনবাজার এসেছি। এখান থেকে লেগুনা করে যাব।’ আসমা নামে টাঙ্গাইলের এক যাত্রী বলেন, ‘ঈদ করতে বাড়িতে যাচ্ছি। ঈদ শেষে আবার ঢাকায় আসব। প্রাইভেটকারে যাবো। ভাড়া একটু বেশি লাগবে, তবে নিশ্চিন্তে বাড়িতে যেতে পারব, এটাই স্বস্তির।’

মহাসড়কে রাতে চলে দূরপাল্লার বাস

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে রাত থেকে ভোর পর্যন্ত দূরপাল্লার বাস চলাচল করতে দেখা গেছে। এসব বাসে ঈদকে সামনে রেখে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ। করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিস্তার রোধে লকডাউনের মধ্যে দূরপাল্লার বাস চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে কিন্তু সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করেই উত্তরের পথে দূরপাল্লার গণপরিবহন চলছে গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত। গতকাল সকাল ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত মহাসড়কের এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় উত্তরবঙ্গ থেকে ছেড়ে আসা অন্তত পাঁচটি দূরপাল্লার যাত্রাবাহী বাস ঢাকার দিকে যেতে দেখা গেছে বলে স্থানীয় জানায়। এ বিষয়ে রংপুর থেকে ঢাকাগামী দূরপাল্লার এক চালকের (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) কাছে নিষেধাজ্ঞার মধ্যে গাড়ি চালানোর কারণ জানতে চাইলে বলেন, ‘ভাই আমাদের কী পরিবার নাই, আমরা কী করে চলমু বলেন?” কুড়িগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা সিনাস্নিগ্ধা পরিবহনের শ্রমিক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, ‘আমারাও তো মানুষ, সব চলতেছে শুধু গণপরিবহন বন্ধ কেন ভাই? আমাদেরও তো পেট আছে, আমরা কী করে চলমু আপনারাই কন।” একই কথা জানালেন ঢাকা সিটি সার্ভিস অনাবিল পরিবহনের চালকও।

সোমবার, ১০ মে ২০২১ , ২৭ বৈশাখ ১৪২৮ ২৭ রমজান ১৪৪২

বিজিবি দিয়েও ঠেকানো যাচ্ছে না জনস্রোত

মহাসড়কে গণপরিবহনের লুকোচুরি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

জনস্রোত ঠেকানো যাচ্ছে না। গতকালও মাওয়া ঘাটে মানুষ ছুটছে গ্রাম অভিমুখে -সংবাদ

বিজিবি দিয়ে ঠেকানো যাচ্ছে না ঘরমুখো মানুষের স্রোত। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বিধিনিষেদের কারণে বন্ধ রয়েছে আন্তঃজেলা বাস সার্ভিস, লঞ্চ ও ট্রেন। ফেরিতে যাত্রী পারাপার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাই দিনের বেলায় বন্ধ রয়েছে ফেরি সার্ভিস। ফেরিঘাটে যাত্রীশূন্য রাখার জন্য মোতায়েন করা হয়েছে বিজিবি কিন্তু পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে গতকালও রাজধানী ছাড়ছেন ঘরমুখো হাজারো মানুষ। সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েই ঢাকা ছাড়ছেন এসব মানুষ। জেলার অভ্যন্তরে গণপরিবহন চালু থাকায় ভেঙে ভেঙে গ্রাম যাচ্ছেন তারা। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে রাতে মহাসড়কে চলছে গণপরিবহন। প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল ও পিকআপ ভ্যানে ঝুঁকি নিয়ে ঢাকা ছাড়তে দেখা গেছে ঘরমুখো মানুষদের।

সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন প্রবেশমুখ ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকার অভ্যন্তরীণ সিটি সার্ভিস বাসে ঈদযাত্রীদের নিয়ে ফেরিঘাট ও মহাসড়কের যাতায়াত করতে দেখা গেছে। তুরাগ ও অনাবিলসহ ছোট পরিবহনে যাত্রীবোঝাই করে বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তার মোড়ে গতকাল দুপুর ২টার দিকে যাত্রাবাড়ী-টঙ্গী রুটে চলাচল করা তুরাগ পরিবহনে যাত্রী পরিবহন করে মাওয়ার ফেরিঘাটের যেতে দেখা গেছে। যাত্রাবাড়ী থেকে মাওয়া ফেরিঘাটের ভাড়া যাত্রীপ্রতি নেয়া হচ্ছে ২০০ টাকা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে মাওয়া মাওয়া বলে যাত্রী ওঠাতে দেখা গেছে এসব পরিবহনে। ভাড়া নেয়া হচ্ছে দুই-তিন গুণ।

সফিক নামের বরিশালের এক যাত্রী জানান, লঞ্চ বন্ধ থাকায় গাড়িতে বরিশাল যাচ্ছেন তিনি। প্রথমে বাসে মাওয়া ফেরিঘাটে যাবে। সেখান থেকে রাতে ফেরিপার হয়ে মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে বরিশাল যাবেন। এভাবে ভেঙে ভেঙে যেতে তাদের সময় বেশি লাগবে ও টাকা বেশি খরচ হবে। স্ত্রী, সন্তানদের সঙ্গে ঈদ করতেই এই ঝুঁকি নিয়ে বাড়িতে যেতে হচ্ছে বলে জানান তিনি। তানভীর নামে খুলনার এক যাত্রী বলেন, ‘পরিবার নিয়ে ঈদ করতে বাড়ি যাচ্ছি। গুলিস্তান থেকে বাসে সাভার যাচ্ছি। তারপর ফেরিপার হয়ে মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকারে খুলনা যাব।’

হাসেম নামের খুলনার এক যাত্রী বলেন, ‘ঢাকা থেকে সহজেই গাড়িতে করে বিভিন্ন স্থানে যাওয়া যাচ্ছে। ঘাটে আসা যাচ্ছে। ঘাটে ফেরি বন্ধ করার ফলে লোক সমাগম আরও বাড়ছে। করোনা সংক্রমণ রোধে সরকার যে ব্যবস্থা নিচ্ছে তাতে তো উল্টো হবে। হাজার হাজার যাত্রী ঘাটে গায়ে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। ফেরিতে গাদাগাদি করে দুর্ভোগ মাথা নিয়ে বাড়ি ফিরছে। সব নৌযান চালু রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই পার করতে পারত।’ সারোয়ার নামে টেকেরহাটের এক যাত্রী বলেন, ‘বাড়িতে মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তান রয়েছে। ঈদের নতুন জামা কাপড়ের জন্য বাচ্চা পথ চেয়ে আছে। প্রায় সারাবছরই তো বাড়ির বাইরে থাকি। ঈদের সময় পরিবারের কাছে যাবো না? ঈদের সময় ঢাকায় থাইক্যা কী করমু?’

এভাবে ভেঙে ভেঙে ঢাকা ছাড়ছেন ঘরমুখো মানুষ। রাজধানীর গাবতলী ও সায়েদাবাদ প্রধান বাস টার্মিনালে যাত্রীদের তেমন ভিড় না থাকলেও ঢাকা থেকে বের হওয়ার পথে হাজারো মানুষের ভিড় দেখা গেছে। যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা ও গাবতলীর আমিনবাজার ব্রিজের ওপারে বিভিন্ন পরিবহনের অপেক্ষা করতে দেখা গেছে হাজারো মানুষকে। সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বাস, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে ঝুঁকি নিয়ে ঢাকা ছাড়তে দেখা গেছে। গাবতলী-আরিচার প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে জনপ্রতি ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। বাসে জনপ্রতি ভাড়া নেয়া হচ্ছে ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা।

ফেরিতে মানুষের ঢল থামাতে বিজিবি মোতায়েন করা হলেও মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়ায় বাড়িফেরা মানুষের ঢল থামেনি। বিজিবির বাধা সত্ত্বেও জোর করে ফেরিতে উঠতে দেখা গেছে যাত্রীদের। গতকাল অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে শিমুলিয়া ঘাট থেকে কয়েকটি ছেড়ে গেছে। এছাড়া অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি প্রয়োজনে তিনটি ফেরি চলাচল করছে শিমুলিয়া ফেরিঘাট দিয়ে। বিআইডব্লিউটিসি গত শনিবার রাতভর ১৫টি ফেরি দিয়ে পারাপার করলেও গতকাল ভোর থেকে তা বন্ধ করে দেয়া হয়। মহামারীর বিস্তার ঠেকাতে ঈদের আগে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট থেকে দিনের বেলা ফেরি চলাচল বন্ধ থাকবে কিন্তু গতকাল রোববার সকালে অ্যাম্বুলেন্স বহনের জন্য ‘শাহ-পরান’ নামের ফেরিটি ঘাটে ভেড়া মাত্র ঘরমুখো বেপরোয়া মানুষ মুহুর্তের মধ্যে তাতে উঠে পড়ে। তখন বাধ্য হয়ে ফেরিতে যাত্রী পরিবহন করা হয় বলে বিআইডব্লিউটিসির সূত্র জানায়।

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসির সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দিনের বেলায় ফেরি বন্ধ। শুধু জরুরি পরিষেবার কিছু যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। সেই ফেরিতেই লোকজন ¯্রােতের মতো উঠে যাচ্ছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকির মধ্যেও লোকজন বাড়ি ছুটছেন। কোন বাধাই মানছেন না।’

একই অবস্থা মানিকগঞ্জের আরিচা ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাটেও। গতকাল সকালের দিকে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকায় ঘরমুখো যাত্রীদের তেমন একটা চাপ দেখা না গেলেও দুপুরের পরে তা বাড়তে থাকে বলে স্থানীয়রা জানান। সায়েম নামের পাবনার এক যাত্রী জানান, বোনকে নিয়ে রওনা হয়েছেন অনিশ্চিত যাত্রায়। তিনি বললে, ‘বাড়িতে যাচ্ছি অসুস্থ মায়ের জন্য। মা অসুস্থ না থাকলে এই পরিস্থিতিতে বাড়িতে যেতাম না। মূলত মাকে দেখতেই বাড়ি যাচ্ছি। সরকারের লকডাউনে আমরা সাধারণ জনগণ বিপদে পড়েছি বলে জানান তিনি।

সাইফুল নামে এক যাত্রী যাবেন মানিকগঞ্জের সাটুরিয়াতে। তিনি বলেন, ‘গাড়ি চলাচল না করায় বিপদে পড়েছি। সরকারের লকডাউনে আমরা সাধারণ জনগণ বিপদে পড়েছি। ফার্মগেট থেকে বাসে গাবতলী এসেছি। গাবতলী থেকে হেঁটে আমিনবাজার এসেছি। এখান থেকে লেগুনা করে যাব।’ আসমা নামে টাঙ্গাইলের এক যাত্রী বলেন, ‘ঈদ করতে বাড়িতে যাচ্ছি। ঈদ শেষে আবার ঢাকায় আসব। প্রাইভেটকারে যাবো। ভাড়া একটু বেশি লাগবে, তবে নিশ্চিন্তে বাড়িতে যেতে পারব, এটাই স্বস্তির।’

মহাসড়কে রাতে চলে দূরপাল্লার বাস

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে রাত থেকে ভোর পর্যন্ত দূরপাল্লার বাস চলাচল করতে দেখা গেছে। এসব বাসে ঈদকে সামনে রেখে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ। করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিস্তার রোধে লকডাউনের মধ্যে দূরপাল্লার বাস চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে কিন্তু সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করেই উত্তরের পথে দূরপাল্লার গণপরিবহন চলছে গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত। গতকাল সকাল ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত মহাসড়কের এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় উত্তরবঙ্গ থেকে ছেড়ে আসা অন্তত পাঁচটি দূরপাল্লার যাত্রাবাহী বাস ঢাকার দিকে যেতে দেখা গেছে বলে স্থানীয় জানায়। এ বিষয়ে রংপুর থেকে ঢাকাগামী দূরপাল্লার এক চালকের (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) কাছে নিষেধাজ্ঞার মধ্যে গাড়ি চালানোর কারণ জানতে চাইলে বলেন, ‘ভাই আমাদের কী পরিবার নাই, আমরা কী করে চলমু বলেন?” কুড়িগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা সিনাস্নিগ্ধা পরিবহনের শ্রমিক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, ‘আমারাও তো মানুষ, সব চলতেছে শুধু গণপরিবহন বন্ধ কেন ভাই? আমাদেরও তো পেট আছে, আমরা কী করে চলমু আপনারাই কন।” একই কথা জানালেন ঢাকা সিটি সার্ভিস অনাবিল পরিবহনের চালকও।