নতুন কর আরোপ নয়, কালো টাকা বৈধ করা বন্ধের আহ্বান

আগামী অর্থবছরের (২০২১-২০২২) বাজেটে নতুন কোন কর আরোপ বা কর হার বৃদ্ধি না করে প্রশাসনিক দক্ষতায় কর ফাঁকিবাজদের কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ। গতকাল নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ‘জাতীয় বাজেট ২০২১-২২ : পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য কী থাকছে’ শীর্ষক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। সংলাপে বক্তারা এই আহ্বান জানান। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী ও সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান ও ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, বিজিএমইএ’র পরিচালক আসিফ ইব্রাহীমসহ আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন।

সংলাপে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য তার প্রবন্ধ উপস্থাপনায় বলেন, ‘গত অর্থবছর আমরা এক অদ্ভূত সময়ের মধ্যে পার করেছি। ওই বছর কর আদায়ের হার ও সরকারের ব্যয় কমেছিল। চলতি অর্থবছরেও কর আদায় ও সরকারি ব্যয়ের হার প্রয়োজনের তুলনায় কমেছে। কর আদায় যেখানে হওয়া উচিত ছিল ১০ থেকে ১২ শতাংশ হারে, সেখানে প্রথম ৯ মাসে ৭ শতাংশের কিছু বেশি কর আদায় হয়েছে। সরকারি ব্যয় বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে নি¤œ হারে রয়েছে। যেখানে বাড়ার কথা, সেখানে গত বছরের তুলনায় ৪.৩০ শতাংশ কমেছে। অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অনেক বেশি ইতোমধ্যে নিয়ে ফেলেছি। বাজেটে ব্যাংক খাত থেকে যেখানে ঋণ নেয়ার কথা ৪৫ শতাংশের নিচে, সেখানে ইতোমধ্যে ব্যাংক থেকে ২৮৬.৪৩ শতাংশ ঋণ নিচ্ছি। অর্থ্যাৎ অন্য ঘটতিগুলো ব্যাংকের টাকা নিয়ে পূরণ করছি। একইভাবে ব্যাংক বহির্ভূত উৎস থেকেও ইতোমধ্যে ২৫২ শতাংশ ঋণ নেয়া হয়ে গেছে। তাহলে আমরা তিন-চার রকমের সমস্যার মধ্যে আছি। কর আদায় বাড়ছে না, সরকারি ব্যয় বাড়ছে না। বাজেট ঘাটতি পূরণে সহজ মাধ্যম বৈদেশিক সাহায্য থেকে না নিয়ে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নিচ্ছি।’

আগামী বাজেটে নতুন কর আরোপ না করে কর ফাঁকি বন্ধে প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়ে অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় বলেন, ‘আগামী বাজেটে নতুন কোন কর কিংবা কর হার বৃদ্ধি করা উচিত হবে না। প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধি করে করের আওতা বাড়ানো ও কর ফাঁকি কমিয়ে আনতে হবে। যারা কর দেয় না, তাদের কাছ থেকে কর আদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে। ব্যবসায়ীক গোষ্ঠীর সুবিধায় বিভিন্ন রেয়াতি সুবিধা রয়েছে; যা এখন বাদ দিতে হবে। আবার অভ্যন্তরীণ বাজারে শ্রমঘন শিল্পের ক্ষেত্রে কর হার নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে রাখা জরুরি।’

কালো টাকা সাদা করার সুযোগকে যুক্তিহীন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিকভাবে যুক্তিহীন, নৈতিকভাবে গর্হিত এবং রাজনৈতিকভাবেও অপকারী হচ্ছে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ এবং পাচারকৃত অর্থ ফেরত না আনা কিংবা তাদের জবাবদিহিতার মধ্যে না আনা। এসব সুযোগ অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। একদিকে দরিদ্রের জন্য ব্যয় বৃদ্ধি করতে পারব না, অন্যদিকে অবৈধ অর্থকে বৈধ করার সুবিধা স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে আদৌ গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করি। আর যারা নিয়মিত কর দেয় তাদের হয়রানি বন্ধ করতে হবে। রাজনৈতিকভাবে হয়রানিসহ ইত্যাদি কাজ যেন বন্ধ করা হয়।’

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, ‘সামাজিক কর্মসূচির আওতায় গত দেড় বছরে ২৫টি কর্মসূচি সরকার হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে ১৯টি নতুন ও ছয়টি পুরনো। মোট ব্যয় ১২৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রত্যক্ষ সাহায্যের পরিমাণ মাত্র ২০ দশমিক ৫ শতাংশ। বাকি ৮০ শতাংশ এক ধরনের প্রণোদনার নামে সহজ শর্তে ঋণ। আবার প্রত্যক্ষ সাহায্যের মধ্যে কোভিডের কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তার পরিমাণ অনেক কম। প্রত্যক্ষ সাহায্যের মধ্যে সরকারের সামাজিক কর্মসূচির সব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’

ত্রাণ বিতরণ প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ২৫০০ টাকা করে ৫০ লাখ মানুষের মাঝে বিতরণ করার কথা থাকলেও গত বছর ৩৫ লাখের বেশি মানুষের কাছে তা পৌঁছায়নি। বাস্তবায়ন হয়নি ৩০ শতাংশের বেশি। এবারও কিন্তু তাদেরকেই আবার সাহায্য করা হচ্ছে। সহায়তার আওতা কিন্তু বাড়েনি। অর্থাৎ সরকার তাদের ব্যয় করার ক্ষেত্রে দক্ষতা দেখাতে পারেনি। বর্তমানে সরকারের পাইপলাইনে চার বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক সাহায্য রয়েছে। আসলে অর্থের অভাব নেই, অভাব ব্যয় করার যোগ্যতার। আসলে বৈদেশিক সাহায্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে দক্ষতা দেখাতে পারছি না। বরং সরকারি ব্যয় করার ক্ষেত্রে দুর্নীতি দৃশ্যমান হচ্ছে।’

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘করোনার সময়ে শিশুদের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। শিশুদের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠতে আগামী বাজেটে শিশু বাজেট করতে হবে।’ একই সঙ্গে সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর তাগিদ দেন মোস্তাফিজুর রহমান।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘বাজেটে সবসময় স্বতন্ত্র খাত হিসেবে শিক্ষা অবহেলিত। কোভিড মহামারীর মধ্যে শিক্ষার বিষয়টি মনে রাখছি না। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী খাদ্য ও স্বাস্থ্যের পাশাপাশি শিক্ষা ক্ষেত্রেও ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষা কর্মসূচির আওতায় আমাদের নজর থাকলেও আমি বলব, শিক্ষকদের বিষয়টি পাশকাটিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে এমপিওভুক্তির বাইরে থাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে। কোভিডের নেতিবাচক প্রভাবে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক হাজার হাজার শিক্ষক অন্য পেশায় ঝুঁকে পড়ছেন। কারণ তারা বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। তাহলে বাজেটে তাদের জন্য কী বরাদ্দ থাকছে? তাদের মতো মূল ধারার শিক্ষকের জন্য সরকারের বিশেষ বরাদ্দ রাখা উচিত। এছাড়া আছে শিক্ষা গবেষণায় বরাদ্দ রাখা। সবচেয়ে বড় কথা সঠিক তথ্য-উপাত্ত। কোভিডের মধ্যে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে কতজন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয়েছে? তাদের বর্তমান অবস্থা কী আমরা জানি না। শিক্ষায় বৈষম্য সবসময় ছিল যা বর্তমানে আরও প্রকট হয়েছে যাদের কোন ধরনের ডিভাইসের সাহায্য নেয়ার সক্ষমতা নেই। সেসব শিক্ষার্থীরা এখন বাল্যবিবাহ ও শিশু শ্রমের দিকে ঝুঁকছে। সেজন্য বাজেটে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আলোকে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রণোদনাসহ বরাদ্দ রাখা উচিত।

নাসিম মঞ্জুর বলেন, ‘কালো টাকা সাদা করার সুযোগ পুরোপুরি অনৈতিক। আমরা যারা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করছি, আমরা ৩০ শতাংশ হারে কর দিচ্ছি। আর যারা কালো টাকা সাদা করছেন, তারা ১০ শতাংশ কর দিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছেন। সৎ করদাতাদের কাছে এটি একটি ভুল বার্তা যাচ্ছে। এর মাধ্যমে পরোক্ষভাবে আমাদের কর দিতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ যদি দিতেই হয় সেটি হতে পারে শিল্প খাতে, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে।’

আসিফ ইব্রাহীম বলেন, ‘কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দীর্ঘ মেয়াদে কোন পরিকল্পনা হতে পারে না। রাজস্ব আদায়ের নাম করে এই অনৈতিক সুযোগ বেশি দিন দেয়া ঠিক হবে না।’

শাহীন আনাম বলেন, ‘বাজেটে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য যে টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়, তা খুবই অপ্রতুল। কিন্তু সেই টাকাটাও সঠিকভাবে খরচ হচ্ছে কিনা, তার নজরদারি হয় না। প্রান্তিক মানুষের জন্য বরাদ্দের টাকা নজরদারি করা উচিত।’

আরও খবর
আপনজনদের জীবন হুমকির মুখে ঠেলে দেবেন না প্রধানমন্ত্রী
ভারতের করোনা পরিস্থিতি বাংলাদেশকে বিপজ্জনক বার্তা দিচ্ছে : কাদের
করোনা রিপোর্টে খালেদার জন্মদিন নিয়ে ফের আলোচনা
চার জঙ্গি আটক, অক্সিজেন সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নাশকতার পরিকল্পনা করে
নেপালের সঙ্গে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ
রাজধানীতে এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি আশঙ্কাজনক স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
খালেদার বিদেশে যেতে না দেয়া রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ফখরুল
চট্টগ্রামের দুর্গম পাহাড়ে ভেজাল মদের কারখানা
ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ বাড়লো, দুর্ভোগ বাংলাদেশিদের
করোনা : গ্রামের মানুষের রঙ্গরস
মুমূর্ষু নবজাতকও পেল না ফেরির দেখা, ফিরে যেতে হলো

সোমবার, ১০ মে ২০২১ , ২৭ বৈশাখ ১৪২৮ ২৭ রমজান ১৪৪২

আসন্ন জাতীয় বাজেট শীর্ষক সংলাপ

নতুন কর আরোপ নয়, কালো টাকা বৈধ করা বন্ধের আহ্বান

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

আগামী অর্থবছরের (২০২১-২০২২) বাজেটে নতুন কোন কর আরোপ বা কর হার বৃদ্ধি না করে প্রশাসনিক দক্ষতায় কর ফাঁকিবাজদের কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ। গতকাল নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ‘জাতীয় বাজেট ২০২১-২২ : পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য কী থাকছে’ শীর্ষক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। সংলাপে বক্তারা এই আহ্বান জানান। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী ও সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান ও ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, বিজিএমইএ’র পরিচালক আসিফ ইব্রাহীমসহ আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন।

সংলাপে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য তার প্রবন্ধ উপস্থাপনায় বলেন, ‘গত অর্থবছর আমরা এক অদ্ভূত সময়ের মধ্যে পার করেছি। ওই বছর কর আদায়ের হার ও সরকারের ব্যয় কমেছিল। চলতি অর্থবছরেও কর আদায় ও সরকারি ব্যয়ের হার প্রয়োজনের তুলনায় কমেছে। কর আদায় যেখানে হওয়া উচিত ছিল ১০ থেকে ১২ শতাংশ হারে, সেখানে প্রথম ৯ মাসে ৭ শতাংশের কিছু বেশি কর আদায় হয়েছে। সরকারি ব্যয় বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে নি¤œ হারে রয়েছে। যেখানে বাড়ার কথা, সেখানে গত বছরের তুলনায় ৪.৩০ শতাংশ কমেছে। অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অনেক বেশি ইতোমধ্যে নিয়ে ফেলেছি। বাজেটে ব্যাংক খাত থেকে যেখানে ঋণ নেয়ার কথা ৪৫ শতাংশের নিচে, সেখানে ইতোমধ্যে ব্যাংক থেকে ২৮৬.৪৩ শতাংশ ঋণ নিচ্ছি। অর্থ্যাৎ অন্য ঘটতিগুলো ব্যাংকের টাকা নিয়ে পূরণ করছি। একইভাবে ব্যাংক বহির্ভূত উৎস থেকেও ইতোমধ্যে ২৫২ শতাংশ ঋণ নেয়া হয়ে গেছে। তাহলে আমরা তিন-চার রকমের সমস্যার মধ্যে আছি। কর আদায় বাড়ছে না, সরকারি ব্যয় বাড়ছে না। বাজেট ঘাটতি পূরণে সহজ মাধ্যম বৈদেশিক সাহায্য থেকে না নিয়ে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নিচ্ছি।’

আগামী বাজেটে নতুন কর আরোপ না করে কর ফাঁকি বন্ধে প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়ে অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় বলেন, ‘আগামী বাজেটে নতুন কোন কর কিংবা কর হার বৃদ্ধি করা উচিত হবে না। প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধি করে করের আওতা বাড়ানো ও কর ফাঁকি কমিয়ে আনতে হবে। যারা কর দেয় না, তাদের কাছ থেকে কর আদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে। ব্যবসায়ীক গোষ্ঠীর সুবিধায় বিভিন্ন রেয়াতি সুবিধা রয়েছে; যা এখন বাদ দিতে হবে। আবার অভ্যন্তরীণ বাজারে শ্রমঘন শিল্পের ক্ষেত্রে কর হার নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে রাখা জরুরি।’

কালো টাকা সাদা করার সুযোগকে যুক্তিহীন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিকভাবে যুক্তিহীন, নৈতিকভাবে গর্হিত এবং রাজনৈতিকভাবেও অপকারী হচ্ছে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ এবং পাচারকৃত অর্থ ফেরত না আনা কিংবা তাদের জবাবদিহিতার মধ্যে না আনা। এসব সুযোগ অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। একদিকে দরিদ্রের জন্য ব্যয় বৃদ্ধি করতে পারব না, অন্যদিকে অবৈধ অর্থকে বৈধ করার সুবিধা স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে আদৌ গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করি। আর যারা নিয়মিত কর দেয় তাদের হয়রানি বন্ধ করতে হবে। রাজনৈতিকভাবে হয়রানিসহ ইত্যাদি কাজ যেন বন্ধ করা হয়।’

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, ‘সামাজিক কর্মসূচির আওতায় গত দেড় বছরে ২৫টি কর্মসূচি সরকার হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে ১৯টি নতুন ও ছয়টি পুরনো। মোট ব্যয় ১২৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রত্যক্ষ সাহায্যের পরিমাণ মাত্র ২০ দশমিক ৫ শতাংশ। বাকি ৮০ শতাংশ এক ধরনের প্রণোদনার নামে সহজ শর্তে ঋণ। আবার প্রত্যক্ষ সাহায্যের মধ্যে কোভিডের কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তার পরিমাণ অনেক কম। প্রত্যক্ষ সাহায্যের মধ্যে সরকারের সামাজিক কর্মসূচির সব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’

ত্রাণ বিতরণ প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ২৫০০ টাকা করে ৫০ লাখ মানুষের মাঝে বিতরণ করার কথা থাকলেও গত বছর ৩৫ লাখের বেশি মানুষের কাছে তা পৌঁছায়নি। বাস্তবায়ন হয়নি ৩০ শতাংশের বেশি। এবারও কিন্তু তাদেরকেই আবার সাহায্য করা হচ্ছে। সহায়তার আওতা কিন্তু বাড়েনি। অর্থাৎ সরকার তাদের ব্যয় করার ক্ষেত্রে দক্ষতা দেখাতে পারেনি। বর্তমানে সরকারের পাইপলাইনে চার বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক সাহায্য রয়েছে। আসলে অর্থের অভাব নেই, অভাব ব্যয় করার যোগ্যতার। আসলে বৈদেশিক সাহায্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে দক্ষতা দেখাতে পারছি না। বরং সরকারি ব্যয় করার ক্ষেত্রে দুর্নীতি দৃশ্যমান হচ্ছে।’

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘করোনার সময়ে শিশুদের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। শিশুদের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠতে আগামী বাজেটে শিশু বাজেট করতে হবে।’ একই সঙ্গে সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর তাগিদ দেন মোস্তাফিজুর রহমান।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘বাজেটে সবসময় স্বতন্ত্র খাত হিসেবে শিক্ষা অবহেলিত। কোভিড মহামারীর মধ্যে শিক্ষার বিষয়টি মনে রাখছি না। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী খাদ্য ও স্বাস্থ্যের পাশাপাশি শিক্ষা ক্ষেত্রেও ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষা কর্মসূচির আওতায় আমাদের নজর থাকলেও আমি বলব, শিক্ষকদের বিষয়টি পাশকাটিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে এমপিওভুক্তির বাইরে থাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে। কোভিডের নেতিবাচক প্রভাবে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক হাজার হাজার শিক্ষক অন্য পেশায় ঝুঁকে পড়ছেন। কারণ তারা বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। তাহলে বাজেটে তাদের জন্য কী বরাদ্দ থাকছে? তাদের মতো মূল ধারার শিক্ষকের জন্য সরকারের বিশেষ বরাদ্দ রাখা উচিত। এছাড়া আছে শিক্ষা গবেষণায় বরাদ্দ রাখা। সবচেয়ে বড় কথা সঠিক তথ্য-উপাত্ত। কোভিডের মধ্যে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে কতজন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয়েছে? তাদের বর্তমান অবস্থা কী আমরা জানি না। শিক্ষায় বৈষম্য সবসময় ছিল যা বর্তমানে আরও প্রকট হয়েছে যাদের কোন ধরনের ডিভাইসের সাহায্য নেয়ার সক্ষমতা নেই। সেসব শিক্ষার্থীরা এখন বাল্যবিবাহ ও শিশু শ্রমের দিকে ঝুঁকছে। সেজন্য বাজেটে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আলোকে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রণোদনাসহ বরাদ্দ রাখা উচিত।

নাসিম মঞ্জুর বলেন, ‘কালো টাকা সাদা করার সুযোগ পুরোপুরি অনৈতিক। আমরা যারা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করছি, আমরা ৩০ শতাংশ হারে কর দিচ্ছি। আর যারা কালো টাকা সাদা করছেন, তারা ১০ শতাংশ কর দিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছেন। সৎ করদাতাদের কাছে এটি একটি ভুল বার্তা যাচ্ছে। এর মাধ্যমে পরোক্ষভাবে আমাদের কর দিতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ যদি দিতেই হয় সেটি হতে পারে শিল্প খাতে, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে।’

আসিফ ইব্রাহীম বলেন, ‘কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দীর্ঘ মেয়াদে কোন পরিকল্পনা হতে পারে না। রাজস্ব আদায়ের নাম করে এই অনৈতিক সুযোগ বেশি দিন দেয়া ঠিক হবে না।’

শাহীন আনাম বলেন, ‘বাজেটে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য যে টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়, তা খুবই অপ্রতুল। কিন্তু সেই টাকাটাও সঠিকভাবে খরচ হচ্ছে কিনা, তার নজরদারি হয় না। প্রান্তিক মানুষের জন্য বরাদ্দের টাকা নজরদারি করা উচিত।’