পুলিশের কাছে তথ্য প্রকাশ
আনসার আল ইসলামের জঙ্গিরা দেশে অক্সিজেন সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নাশকতার পরিকল্পনা করছে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ১০ জনের মতো সদস্য রিক্রুট করেছে আনসার আল ইসলাম। অক্সিজেন সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নাশকতা জঙ্গিদের নতুন কৌশল।
আনসার আল ইসলামের সদস্য সন্দেহে ৪ জনকে গ্রেপ্তারের পর গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করেছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান ডিআইজি মো. আসাদুজ্জামান। শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রাজধানীতে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে জসিমুল ইসলাম জ্যাক, মো. আব্দুল মুকিত, মো. আমিনুল হক এভং সজীব ইখতিয়ার নামে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি। এ সময় তাদের কাছ তেকে ১টি ব্যাগ, ১টি চাপাতি, ৫টি স্টার্ম ফোন ও ২টি ল্যাপটপ উদ্ধারের দাবি করা হয়। সিটিটিসির দাবি আটক হওয়া ব্যক্তিরা নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সক্রিয় সদস্য। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে তারা রাজধানীতে পুলিশের উপর হামলার প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিল।
সিটিটিসি প্রধান ডিআইজি মো. আসাদুজ্জামান জানান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে ৪ জনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে মো. জসিমুল হক বেসরকারি অতীশ দীপংকর ইউনিভার্সিটির বিবিএ প্রথম বর্ষের ছাত্র। মো. আব্দুল মকিত হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ থানার মারকাজুস সুন্নাহ্ আল ইসলামিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক। মো. আমিনুল হক সিলেটের আল হিদায়া ইসলামিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র এবং মো. সজীব ইখতিয়ার সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী।
ডিআইজি মো. আসাদুজ্জামানের ভাষ্য, ‘সায়েন্স প্রজেক্ট’ নামে একটি প্রকল্প নিয়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটানোর লক্ষ্যে তারা একত্রিত হয়েছিল। এরা মূলত ঢাকায় এসেছে পুলিশের যে কোন স্থাপনা অথবা টহল পুলিশ অথবা ফাঁড়িতে হামলার টার্গেট নিয়েছে। হামলার পর এরা আফগানিস্তানে হিজরত করার চিন্তা করে রেখেছিল। এই গ্রুপের দুজন সদস্য ইতোমধ্যে আফগানিস্তানে হিজরতে গেছে। এরাও ঢাকায় পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে আফগানিস্তানে হিজরত করার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল। আসাদুজ্জমানের ভাষ্য, ঢাকায় পুলিশের স্থাপনা ছাড়াও সিলেট অঞ্চলে বিজিবির স্থাপনা, চেকপোস্ট অথবা টহল দলের উপরও হামলার প্রস্তুতি নিয়েছে জঙ্গিরা। পুলিশের বাইরে হঠাৎ কেন বিজিবির উপর টার্গেট করেছে জঙ্গিরা এমন প্রশ্ন করলে ডিআইজি বলেন, মূলত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে টার্গেটে পরিণত করেছে জঙ্গিরা। এজন্য পুলিশের পাশাপাশি তারা বিজিবিকেও হামলার লক্ষবস্তুতে টার্গেট করেছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জঙ্গিদের দেয়া তথ্য দাবি করে ডিআইজি আসাদুজ্জামান বলেন, আনসার আল ইসলাম টেলিগ্রাম অ্যাপসে একটি গ্রুপ করেছে, যে গ্রুপটির নাম সায়েন্স প্রজেক্ট গ্রুপ। মূলত এ গ্রুপের নামে তারা একটি আলাদা গ্রুপ তৈরি করছিল যারা টার্গেট নিয়েছে দেশে অক্সিজেন সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে কীভাবে হামলা করা যায়। এ জন্য আনসার আল ইসলাম সায়েন্স প্রজেক্ট গ্রুপে ১০ নতুন সদস্য রিক্রুট করে। হয়তো অচিরেই তারা এ ধরনের হামলার প্রস্তুতি নিয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করত।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছে তারা আনসার আল ইসলামের দায়িত্বশীল। তারা ‘মাসুল’ ফরিদ ওরফে তারিক ও আবদুল্লাহ নামে দুজনের সহযোগিতায় মেসেঞ্জার চ্যাট গ্রুপ তৈরি করে। পরে এরা আনসার আল ইসলামে যোগ দেয়। তারা টেলিগ্রাম এবং প্রোটেক্টেট টেক্সস নামে সিক্রেট চ্যাটিং অ্যাপস ব্যবহার করে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করত। সেই যোগাযোগের মাধ্যমে এরা তাদের উপর দায়িত্ব বাস্তবায়নের পাশাপাশি সদস্য রিক্রুট (সংগ্রহ) এবং সংগঠনের অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করে।
সিটিটিসি জানিয়েছে, এর আগে সিলেটে একটি হোটেলে হামলা চালিয়ে হোটেল ম্যানেজারকে ছুরিকাঘাত করে। ওই হামলাও আনসার আল ইসলামের জঙ্গিরা করেছে। এর আগে আনসার আল ইসলামের এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে যে জাতীয় সংসদ ভবনে হামলার পরিকল্পনা করেছিল। সে যে ব্যক্তির উস্কানিমূলক বক্তব্যের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ হয়ে জঙ্গি সংগঠনে যোগ দিয়েছে সেই বক্তাকেও গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
সিটিটিসি জানিয়েছে, আটক হওয়া ৪ জনের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেই মামলায় তাদের ১০ দিনের রিমান্ড হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
সোমবার, ১০ মে ২০২১ , ২৭ বৈশাখ ১৪২৮ ২৭ রমজান ১৪৪২
পুলিশের কাছে তথ্য প্রকাশ
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
আনসার আল ইসলামের জঙ্গিরা দেশে অক্সিজেন সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নাশকতার পরিকল্পনা করছে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ১০ জনের মতো সদস্য রিক্রুট করেছে আনসার আল ইসলাম। অক্সিজেন সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নাশকতা জঙ্গিদের নতুন কৌশল।
আনসার আল ইসলামের সদস্য সন্দেহে ৪ জনকে গ্রেপ্তারের পর গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করেছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান ডিআইজি মো. আসাদুজ্জামান। শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রাজধানীতে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে জসিমুল ইসলাম জ্যাক, মো. আব্দুল মুকিত, মো. আমিনুল হক এভং সজীব ইখতিয়ার নামে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি। এ সময় তাদের কাছ তেকে ১টি ব্যাগ, ১টি চাপাতি, ৫টি স্টার্ম ফোন ও ২টি ল্যাপটপ উদ্ধারের দাবি করা হয়। সিটিটিসির দাবি আটক হওয়া ব্যক্তিরা নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সক্রিয় সদস্য। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে তারা রাজধানীতে পুলিশের উপর হামলার প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিল।
সিটিটিসি প্রধান ডিআইজি মো. আসাদুজ্জামান জানান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে ৪ জনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে মো. জসিমুল হক বেসরকারি অতীশ দীপংকর ইউনিভার্সিটির বিবিএ প্রথম বর্ষের ছাত্র। মো. আব্দুল মকিত হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ থানার মারকাজুস সুন্নাহ্ আল ইসলামিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক। মো. আমিনুল হক সিলেটের আল হিদায়া ইসলামিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র এবং মো. সজীব ইখতিয়ার সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী।
ডিআইজি মো. আসাদুজ্জামানের ভাষ্য, ‘সায়েন্স প্রজেক্ট’ নামে একটি প্রকল্প নিয়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটানোর লক্ষ্যে তারা একত্রিত হয়েছিল। এরা মূলত ঢাকায় এসেছে পুলিশের যে কোন স্থাপনা অথবা টহল পুলিশ অথবা ফাঁড়িতে হামলার টার্গেট নিয়েছে। হামলার পর এরা আফগানিস্তানে হিজরত করার চিন্তা করে রেখেছিল। এই গ্রুপের দুজন সদস্য ইতোমধ্যে আফগানিস্তানে হিজরতে গেছে। এরাও ঢাকায় পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে আফগানিস্তানে হিজরত করার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল। আসাদুজ্জমানের ভাষ্য, ঢাকায় পুলিশের স্থাপনা ছাড়াও সিলেট অঞ্চলে বিজিবির স্থাপনা, চেকপোস্ট অথবা টহল দলের উপরও হামলার প্রস্তুতি নিয়েছে জঙ্গিরা। পুলিশের বাইরে হঠাৎ কেন বিজিবির উপর টার্গেট করেছে জঙ্গিরা এমন প্রশ্ন করলে ডিআইজি বলেন, মূলত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে টার্গেটে পরিণত করেছে জঙ্গিরা। এজন্য পুলিশের পাশাপাশি তারা বিজিবিকেও হামলার লক্ষবস্তুতে টার্গেট করেছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জঙ্গিদের দেয়া তথ্য দাবি করে ডিআইজি আসাদুজ্জামান বলেন, আনসার আল ইসলাম টেলিগ্রাম অ্যাপসে একটি গ্রুপ করেছে, যে গ্রুপটির নাম সায়েন্স প্রজেক্ট গ্রুপ। মূলত এ গ্রুপের নামে তারা একটি আলাদা গ্রুপ তৈরি করছিল যারা টার্গেট নিয়েছে দেশে অক্সিজেন সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে কীভাবে হামলা করা যায়। এ জন্য আনসার আল ইসলাম সায়েন্স প্রজেক্ট গ্রুপে ১০ নতুন সদস্য রিক্রুট করে। হয়তো অচিরেই তারা এ ধরনের হামলার প্রস্তুতি নিয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করত।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছে তারা আনসার আল ইসলামের দায়িত্বশীল। তারা ‘মাসুল’ ফরিদ ওরফে তারিক ও আবদুল্লাহ নামে দুজনের সহযোগিতায় মেসেঞ্জার চ্যাট গ্রুপ তৈরি করে। পরে এরা আনসার আল ইসলামে যোগ দেয়। তারা টেলিগ্রাম এবং প্রোটেক্টেট টেক্সস নামে সিক্রেট চ্যাটিং অ্যাপস ব্যবহার করে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করত। সেই যোগাযোগের মাধ্যমে এরা তাদের উপর দায়িত্ব বাস্তবায়নের পাশাপাশি সদস্য রিক্রুট (সংগ্রহ) এবং সংগঠনের অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করে।
সিটিটিসি জানিয়েছে, এর আগে সিলেটে একটি হোটেলে হামলা চালিয়ে হোটেল ম্যানেজারকে ছুরিকাঘাত করে। ওই হামলাও আনসার আল ইসলামের জঙ্গিরা করেছে। এর আগে আনসার আল ইসলামের এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে যে জাতীয় সংসদ ভবনে হামলার পরিকল্পনা করেছিল। সে যে ব্যক্তির উস্কানিমূলক বক্তব্যের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ হয়ে জঙ্গি সংগঠনে যোগ দিয়েছে সেই বক্তাকেও গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
সিটিটিসি জানিয়েছে, আটক হওয়া ৪ জনের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেই মামলায় তাদের ১০ দিনের রিমান্ড হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।