কেশবপুর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের শেষ সীমানা, যেখান থেকে শুরু হয়েছে সুজাপুর গ্রাম। ঠিক এই জায়গায় একটি চৌরাস্তা পাশের বিভিন্ন গ্রামের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেছে। চৌরাস্তাটি বর্ষা খোঁড়ার মোড় নামে পরিচিত। কারণ এখানেই বর্ষা নামে এক ব্যক্তি রয়েছেন। জন্ম থেকেই তিনি প্রতিবন্ধী। হাত-পা সবই অচল। এক কথায় বিকলাঙ্গ।
এই মোড়টিতে একটি একটি করে প্রায় ত্রিশটি দোকান চালু হয়ে গেছে। চায়ের দোকান থেকে মুদি, ওষুধের দোকান, কাঁচামাল, মাছ-মাংস সবই পাওয়া যায়। এলাকাটিতে অসংখ্য মাছের ঘের থাকায় সন্ধ্যায় বেশ জমে ওঠে। মাছ ঘেরের মালিক, পাহারাদার সাধারণ মানুষ সবাই আড্ডা দিতে আসে এখানে। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে তিন কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে উপজেলা সদরে সাধারণত কেউ আসে না।
চায়ের দোকানের সামনে বেঞ্চ আকৃতির বাঁশের চড়াতের ওপর বসে লাল চা খাচ্ছে ইসলাম নামের মাঝ বয়সী লোকটি। সন্ধ্যা তখন প্রায় সাড়ে সাতটা। চায়ের দোকানের টেলিভিশনে একটি বাংলা ছবি চলছে। অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখছে ইসলাম। মাঝে মধ্যে চায়ে চুমুক দিচ্ছে। হঠাৎ তার কাঁধে হাত পড়লো বন্ধু ইসলামের। দুজন দুজনকে বেয়াই বলে ডাকে।
কি বেয়াই তোর ‘করোনায়’ আজ ক’জন গেলো?’
‘দাঁড়া আগে নাচটা দেখে নেই। দেখ দেখ কিভাবে মুখ লুকাচ্ছে ছ্যামড়ার বুকের মদ্দি।’
একে ওকে চড়াতে আরও চারজন এসে বসেছে। এর মধ্যে অল্প বয়স্ক একজনের দাড়িতে মাস্ক লাগানো। বাকি পাঁচজনের কারও মুখে মাস্ক নেই।
এর মধ্যে আটটার খবর শুরু হয়েছে। মাস্ক লাগানো ছেলেটিকে একটি খারাপ কথা বলে ইসলাম বললো ও ঝুলিয়ে রেখেছিস ক্যান। ইসলামের এমন কথায় হাসির রোল উঠল। আরেকজন বললো, ‘শোন সবই আল্লাহর গজব, যখন গাছের পাতা পড়ে যাবে তখন তুই ও ফুড়ুত। একেবারে আসমানের উপর চলে যাবি। এখানে আর চা গিলতে আসবি না।’
এর মধ্যে সুকুমার বলে উঠল, ‘মরে গেলে তো সবাই বেঁচে যায়। দেখছো না গৌতম নায়েবের বাড়িতে চারজনের করোনা হয়েছে। ওদের বাড়ি লাল পতাকা উড়িয়ে দিয়ে গেছে ইউএনও অফিসের লোক। যাতে ওদের বাড়িতে কেউ না যায়। তোমরা যাই বলো রোগটা আসলে মারাত্মক। কোন করোনা রোগির গায়ের সঙ্গে গা লাগলে তার শরীরে ওই রোগ ঢুকে যায়।’ বসে থাকা কেউই সকুমারের কথা মানতে চায় না। ‘ও ঢাকার বড় লোকদের অসুখ, এতদূর আসবে না।’ এমনটাই বলল দ্বিতীয় ইসলাম।
সুকুমার খুলনায় একটি প্রাইভেট ফার্মে চাকরি করে। আইএ পাস। বাস্তবতা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান রয়েছে। তাছাড়া বিভাগীয় শহরে থেকে বেশ চালু হয়ে গেছে। সুকুমার বলল, ‘তাহলে সরকার প্রতিদিন আক্রান্ত এবং মৃত্যুর যে খবর দিচ্ছে তাও তো ঠিক না।’
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এবং পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের চিত্র দেখেও সাধারণ মানুষের মনে কোন উদ্বেগ উৎকণ্ঠা নেই। একজনের উক্তি সরকার এখন যা বলছে তা কোন কিছুই ঠিক না। ‘আল্লাহর ডাক পড়লে আর সময় পাওয়া যাবে না।’ এমনি সব বিক্ষিপ্ত আলাপ চলছে। কয়েক মিনিট শুনে মোটরভ্যানে চললাম সামনের দিকে।
পাকা পিচের রাস্তা। প্রায় তিন কিলোমিটার পর মাগুরখালী বাজার। প্রতিদিন প্রায় সারাদিনই বাজার চলে। গ্রামের মধ্যে বেশ বড় বাজার। সব ধরনের দোকানপাট রয়েছে। একটি ওষুধের দোকানের সামনে দেখি বেশ ভিড়। লোকজন ওষুধ কিনছে। আবার চলে যাচ্ছে। বাজারের মধ্যে এ দোকানটিই বেশ বড়। দোকানি আমাকে চেনে। তখন ক্রেতাশূন্য। দোকানি লম্বা একটা সালাম দিয়ে কর্মচারীকে একটি চেয়ার দিতে বলল। বললাম না এই মহামারীর সময় বাইরে কিছুই খাচ্ছি না থাক।
‘কি মনে করে ভাই এদিকে।’
বললাম ‘না এমনিই একটু বেরুলাম। ঠিক তা না আমার এক বাল্যবন্ধুর অসুখের খবর শুনে তাকে দেখাই উদ্দেশ্য।’ ‘তা বাজার তো বেশ বড় হয়ে গেছে। যা ভাই বর্তমান সরকার সব গ্রামকে শহর বানাচ্ছে না। তাই মনে হয় বাজারও বড় হচ্ছে।’
ডাক্তার আবার গ্রাম্য ডাক্তারের সার্টিফিকেট নিয়ে টুকটাক রোগী দেখে। এর মধ্যে ভ্যানে শোয়ানো পঞ্চাশোর্ধ এক ব্যক্তিকে নিয়ে তার ছেলে এসেছে ডাক্তার দেখাতে। কয়েক দিন ধরে জ্বর। কিছুতেই দুয়ের নিচে নামছে না। ডাক্তার বলল ‘কিছু না ইনফ্লুয়েঞ্জা। ওষুধ দিচ্ছি ভালো হয়ে যাবে।’ সেই একই ডায়ালগ ‘করেনা’র ভয় নেই। আরে করোনা কোন রোগ না। ইনফ্লুয়েঞ্জার নতুন নাম হয়েছে করোনা। কিছু ওষুধ দিয়ে পঞ্চাশ টাকা নিয়ে বিদায় দিল।
ডাক্তার তার তিন বন্ধুকে নিয়ে একেবারে গায়ে গা ঘেসে বসে মুড়ি চানাচুর খাচ্ছে খবরের কাগজের উপর রেখে। ডাক্তারসহ কারও মুখে মাস্ক নেই। নেই সামাজিক দূরত্বের বালাই। ‘বুঝলে ভাই সরকার একেক সময় এক এক হুজুগ তুলে মানুষকে আতঙ্কগ্রস্ত করে তোলে। এর কোন ভিত্তি নেই। স্রেফ ইনফ্লুয়েঞ্জার গায়ে রং লাগিয়ে করোনা বানানো হয়েছে।’ বললাম ‘তাহলে এই যে নামি-দামি লোকসহ এত লোক মারা যাচ্ছে প্রতিদিন, এর কারণ কী?’ ‘ইনফ্লুয়েঞ্জা,’ ডাক্তারের উত্তর। ‘শোনেন ভাই ভগবান যখন যাকে খুশি তাকে নিয়ে নিতে পারেন।’
পাশে একটি বেশ বড় আকারের মুদি খানা। তিনজন কর্মচারী খরিদ্দার সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। একমাত্র দোকানি ক্যাশে বসে টাকা নিচ্ছেন। তার এক কানে ঝুলছে একটি মাস্ক। খরিদ্দার এবং দোকান কর্মচারী কারও মুখে নেই কোন মাস্ক। বাজারের অধিকাংশ মানুষই মাস্ক ছাড়া। কোন দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নেই। গায়ে গায়ে মিশে চলছে হ্যান্ড শেক করছে।
কিছু সময় বাজারে ঘোরাঘুরি করলাম। কয়েকজন বাড়িমুখো লোকের সঙ্গে কথা বললাম মাস্ক ব্যবহাররে ব্যাপারে। কিন্তু উত্তর একই। ‘আজরাইল এসে গেলে কারও ধরে রাখার ক্ষমতা নেই। সোজা বুকে বসবে আর জান টা নিয়ে চলে যাবে।’ বললাম, ‘আল্লাহ তো জ্ঞান, বুদ্ধি বিবেক সব কিছু দিয়ে তার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন মানুষকে বানিয়েছেন। তিনি নিজেকে নিরাপদ রাখার উপদেশ দিয়ে আমাদের মর্ত্যে পাঠিয়েছেন। তাহলে আমাদের নিরাপদ থাকার সমস্যা কোথায়?’ কয়েক জনের উত্তর মাস্ক পরলেই কি নিরাপদ থাকা যাবে? মরতে হবে না কোন দিন? এমন গ্যারান্টি থাকলে আমি এখনই মাস্ক পরব। এ কথায় জবাব দেয়ার ভাষা আমি খুঁজে পাইনি। বুঝলাম ধর্মান্ধতা গ্রামের মানুষকে এখনও আঁকড়ে আছে।
বয়সে তরুণ তিন-চার বন্ধু রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছে। ওদের কথোপকথন শোনার আগ্রহে আমিও এককাপ চায়ের কথা বলে কাছাকাছি দাঁড়ালাম। ‘সোহাগ শোন এই করোনা আমাদের কোনদিনও করতে আসবে না। ও সব বুঝুক শহরে যারা বাস করে।’ সহপাঠীরা হো হো করে হেসে উঠল। সোহাগ বলল ‘ও করোনা আমাদের কাছে আসবে না ক্যান জানিস আমাদের বাড়ি খতিয়াখালী। আমাদের খালি করতে ও কোন দিনও ঢুকবে না।’ এই গ্রামের পাশেই খতিয়ালী নামের একটি গ্রাম আছে। গ্রামটিতে ঋষি সম্প্রদায়ের বাস। বুঝলাম ওরা ওই গ্রামেরই ছেলে।
সোমবার, ১০ মে ২০২১ , ২৭ বৈশাখ ১৪২৮ ২৭ রমজান ১৪৪২
সামসুজ্জামান, কেশবপুর (যশোর)
কেশবপুর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের শেষ সীমানা, যেখান থেকে শুরু হয়েছে সুজাপুর গ্রাম। ঠিক এই জায়গায় একটি চৌরাস্তা পাশের বিভিন্ন গ্রামের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেছে। চৌরাস্তাটি বর্ষা খোঁড়ার মোড় নামে পরিচিত। কারণ এখানেই বর্ষা নামে এক ব্যক্তি রয়েছেন। জন্ম থেকেই তিনি প্রতিবন্ধী। হাত-পা সবই অচল। এক কথায় বিকলাঙ্গ।
এই মোড়টিতে একটি একটি করে প্রায় ত্রিশটি দোকান চালু হয়ে গেছে। চায়ের দোকান থেকে মুদি, ওষুধের দোকান, কাঁচামাল, মাছ-মাংস সবই পাওয়া যায়। এলাকাটিতে অসংখ্য মাছের ঘের থাকায় সন্ধ্যায় বেশ জমে ওঠে। মাছ ঘেরের মালিক, পাহারাদার সাধারণ মানুষ সবাই আড্ডা দিতে আসে এখানে। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে তিন কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে উপজেলা সদরে সাধারণত কেউ আসে না।
চায়ের দোকানের সামনে বেঞ্চ আকৃতির বাঁশের চড়াতের ওপর বসে লাল চা খাচ্ছে ইসলাম নামের মাঝ বয়সী লোকটি। সন্ধ্যা তখন প্রায় সাড়ে সাতটা। চায়ের দোকানের টেলিভিশনে একটি বাংলা ছবি চলছে। অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখছে ইসলাম। মাঝে মধ্যে চায়ে চুমুক দিচ্ছে। হঠাৎ তার কাঁধে হাত পড়লো বন্ধু ইসলামের। দুজন দুজনকে বেয়াই বলে ডাকে।
কি বেয়াই তোর ‘করোনায়’ আজ ক’জন গেলো?’
‘দাঁড়া আগে নাচটা দেখে নেই। দেখ দেখ কিভাবে মুখ লুকাচ্ছে ছ্যামড়ার বুকের মদ্দি।’
একে ওকে চড়াতে আরও চারজন এসে বসেছে। এর মধ্যে অল্প বয়স্ক একজনের দাড়িতে মাস্ক লাগানো। বাকি পাঁচজনের কারও মুখে মাস্ক নেই।
এর মধ্যে আটটার খবর শুরু হয়েছে। মাস্ক লাগানো ছেলেটিকে একটি খারাপ কথা বলে ইসলাম বললো ও ঝুলিয়ে রেখেছিস ক্যান। ইসলামের এমন কথায় হাসির রোল উঠল। আরেকজন বললো, ‘শোন সবই আল্লাহর গজব, যখন গাছের পাতা পড়ে যাবে তখন তুই ও ফুড়ুত। একেবারে আসমানের উপর চলে যাবি। এখানে আর চা গিলতে আসবি না।’
এর মধ্যে সুকুমার বলে উঠল, ‘মরে গেলে তো সবাই বেঁচে যায়। দেখছো না গৌতম নায়েবের বাড়িতে চারজনের করোনা হয়েছে। ওদের বাড়ি লাল পতাকা উড়িয়ে দিয়ে গেছে ইউএনও অফিসের লোক। যাতে ওদের বাড়িতে কেউ না যায়। তোমরা যাই বলো রোগটা আসলে মারাত্মক। কোন করোনা রোগির গায়ের সঙ্গে গা লাগলে তার শরীরে ওই রোগ ঢুকে যায়।’ বসে থাকা কেউই সকুমারের কথা মানতে চায় না। ‘ও ঢাকার বড় লোকদের অসুখ, এতদূর আসবে না।’ এমনটাই বলল দ্বিতীয় ইসলাম।
সুকুমার খুলনায় একটি প্রাইভেট ফার্মে চাকরি করে। আইএ পাস। বাস্তবতা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান রয়েছে। তাছাড়া বিভাগীয় শহরে থেকে বেশ চালু হয়ে গেছে। সুকুমার বলল, ‘তাহলে সরকার প্রতিদিন আক্রান্ত এবং মৃত্যুর যে খবর দিচ্ছে তাও তো ঠিক না।’
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এবং পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের চিত্র দেখেও সাধারণ মানুষের মনে কোন উদ্বেগ উৎকণ্ঠা নেই। একজনের উক্তি সরকার এখন যা বলছে তা কোন কিছুই ঠিক না। ‘আল্লাহর ডাক পড়লে আর সময় পাওয়া যাবে না।’ এমনি সব বিক্ষিপ্ত আলাপ চলছে। কয়েক মিনিট শুনে মোটরভ্যানে চললাম সামনের দিকে।
পাকা পিচের রাস্তা। প্রায় তিন কিলোমিটার পর মাগুরখালী বাজার। প্রতিদিন প্রায় সারাদিনই বাজার চলে। গ্রামের মধ্যে বেশ বড় বাজার। সব ধরনের দোকানপাট রয়েছে। একটি ওষুধের দোকানের সামনে দেখি বেশ ভিড়। লোকজন ওষুধ কিনছে। আবার চলে যাচ্ছে। বাজারের মধ্যে এ দোকানটিই বেশ বড়। দোকানি আমাকে চেনে। তখন ক্রেতাশূন্য। দোকানি লম্বা একটা সালাম দিয়ে কর্মচারীকে একটি চেয়ার দিতে বলল। বললাম না এই মহামারীর সময় বাইরে কিছুই খাচ্ছি না থাক।
‘কি মনে করে ভাই এদিকে।’
বললাম ‘না এমনিই একটু বেরুলাম। ঠিক তা না আমার এক বাল্যবন্ধুর অসুখের খবর শুনে তাকে দেখাই উদ্দেশ্য।’ ‘তা বাজার তো বেশ বড় হয়ে গেছে। যা ভাই বর্তমান সরকার সব গ্রামকে শহর বানাচ্ছে না। তাই মনে হয় বাজারও বড় হচ্ছে।’
ডাক্তার আবার গ্রাম্য ডাক্তারের সার্টিফিকেট নিয়ে টুকটাক রোগী দেখে। এর মধ্যে ভ্যানে শোয়ানো পঞ্চাশোর্ধ এক ব্যক্তিকে নিয়ে তার ছেলে এসেছে ডাক্তার দেখাতে। কয়েক দিন ধরে জ্বর। কিছুতেই দুয়ের নিচে নামছে না। ডাক্তার বলল ‘কিছু না ইনফ্লুয়েঞ্জা। ওষুধ দিচ্ছি ভালো হয়ে যাবে।’ সেই একই ডায়ালগ ‘করেনা’র ভয় নেই। আরে করোনা কোন রোগ না। ইনফ্লুয়েঞ্জার নতুন নাম হয়েছে করোনা। কিছু ওষুধ দিয়ে পঞ্চাশ টাকা নিয়ে বিদায় দিল।
ডাক্তার তার তিন বন্ধুকে নিয়ে একেবারে গায়ে গা ঘেসে বসে মুড়ি চানাচুর খাচ্ছে খবরের কাগজের উপর রেখে। ডাক্তারসহ কারও মুখে মাস্ক নেই। নেই সামাজিক দূরত্বের বালাই। ‘বুঝলে ভাই সরকার একেক সময় এক এক হুজুগ তুলে মানুষকে আতঙ্কগ্রস্ত করে তোলে। এর কোন ভিত্তি নেই। স্রেফ ইনফ্লুয়েঞ্জার গায়ে রং লাগিয়ে করোনা বানানো হয়েছে।’ বললাম ‘তাহলে এই যে নামি-দামি লোকসহ এত লোক মারা যাচ্ছে প্রতিদিন, এর কারণ কী?’ ‘ইনফ্লুয়েঞ্জা,’ ডাক্তারের উত্তর। ‘শোনেন ভাই ভগবান যখন যাকে খুশি তাকে নিয়ে নিতে পারেন।’
পাশে একটি বেশ বড় আকারের মুদি খানা। তিনজন কর্মচারী খরিদ্দার সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। একমাত্র দোকানি ক্যাশে বসে টাকা নিচ্ছেন। তার এক কানে ঝুলছে একটি মাস্ক। খরিদ্দার এবং দোকান কর্মচারী কারও মুখে নেই কোন মাস্ক। বাজারের অধিকাংশ মানুষই মাস্ক ছাড়া। কোন দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নেই। গায়ে গায়ে মিশে চলছে হ্যান্ড শেক করছে।
কিছু সময় বাজারে ঘোরাঘুরি করলাম। কয়েকজন বাড়িমুখো লোকের সঙ্গে কথা বললাম মাস্ক ব্যবহাররে ব্যাপারে। কিন্তু উত্তর একই। ‘আজরাইল এসে গেলে কারও ধরে রাখার ক্ষমতা নেই। সোজা বুকে বসবে আর জান টা নিয়ে চলে যাবে।’ বললাম, ‘আল্লাহ তো জ্ঞান, বুদ্ধি বিবেক সব কিছু দিয়ে তার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন মানুষকে বানিয়েছেন। তিনি নিজেকে নিরাপদ রাখার উপদেশ দিয়ে আমাদের মর্ত্যে পাঠিয়েছেন। তাহলে আমাদের নিরাপদ থাকার সমস্যা কোথায়?’ কয়েক জনের উত্তর মাস্ক পরলেই কি নিরাপদ থাকা যাবে? মরতে হবে না কোন দিন? এমন গ্যারান্টি থাকলে আমি এখনই মাস্ক পরব। এ কথায় জবাব দেয়ার ভাষা আমি খুঁজে পাইনি। বুঝলাম ধর্মান্ধতা গ্রামের মানুষকে এখনও আঁকড়ে আছে।
বয়সে তরুণ তিন-চার বন্ধু রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছে। ওদের কথোপকথন শোনার আগ্রহে আমিও এককাপ চায়ের কথা বলে কাছাকাছি দাঁড়ালাম। ‘সোহাগ শোন এই করোনা আমাদের কোনদিনও করতে আসবে না। ও সব বুঝুক শহরে যারা বাস করে।’ সহপাঠীরা হো হো করে হেসে উঠল। সোহাগ বলল ‘ও করোনা আমাদের কাছে আসবে না ক্যান জানিস আমাদের বাড়ি খতিয়াখালী। আমাদের খালি করতে ও কোন দিনও ঢুকবে না।’ এই গ্রামের পাশেই খতিয়ালী নামের একটি গ্রাম আছে। গ্রামটিতে ঋষি সম্প্রদায়ের বাস। বুঝলাম ওরা ওই গ্রামেরই ছেলে।