আরও সহিংসতার শঙ্কা
ফিলিস্তিনের জেরুজালেমে পবিত্র আল আকসা মসজিদ এলাকায় দখলদার বাহিনীর তাণ্ডব অব্যাহত রয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে মুসল্লিদের ওপর হামলার পর এবার মসজিদ কম্পাউন্ডে অভিযান চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। এ সময় তারা মসজিদ এলাকা ঘেরাও করে রাখে। মুসল্লিদের ওপর রাবার কোটেড বুলেট, টিয়ারগ্যাস ও সাউন্ড বোমা নিক্ষেপ করে। এতে শতাধিক ফিলিস্তিনি আহত হয়। বিবিসি
ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, এদিন দখলদার বাহিনীর হামলায় শতাধিক ফিলিস্তিনি আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে অন্তত ৭০ জনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনীর তাণ্ডবের খবর সংগ্রহের জন্য আল আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে উপস্থিত অন্তত ছয়জন সাংবাদিকও এ সময় চোট পান। তবে আহতদের সেবা দিতে ঘটনাস্থলে চিকিৎসাকর্মীদের যেতে দেয়নি ইসরায়েলি বাহিনী।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, মসজিদের ভেতরে টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করছে দখলদার বাহিনী। মসজিদের অভ্যন্তরে নারীদের নামাজ আদায়ের অংশেও স্টান গ্রেনেড নিক্ষেপ করে তারা। এর আগে শনিবার পবিত্র লাইলাতুল কদরের রাতেও জেরুজালেমে নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ইসরায়েলি বাহিনী।
পবিত্র রমজান মাসে পূর্ব জেরুজালেমে ইহুদি বসতি স্থাপনের জন্য মুসলিমদের তাদের ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ চেষ্টার ঘটনায় এমনিতেই ফিলিস্তিনিদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এর মধ্যেই গত কয়েক দিন ধরে আল আকসা মসজিদের মুসল্লিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে ইসরায়েলি বাহিনী।
২৭ বছরের একজন ফিলিস্তিনি মাহমুদ আল-মারবুয়া রয়টার্সকে বলেন, ‘তারা আমাদের নামাজ পড়তে দিতে চায় না। সেখানে প্রতিদিনই লড়াই করতে হচ্ছে, প্রতিদিনই সহিংসতা হচ্ছে। প্রতিদিনই সেখানে সমস্যা তৈরি হচ্ছে।’
কিছুদিন ধরে শেখ জাররাহ এলাকায় উচ্ছেদের মুখে পড়া পরিবারগুলোর সমর্থনে এলাকাটিতে সমবেত হচ্ছে ফিলিস্তিনিরা। সংহতি জানাতে আসা এসব মানুষদের ওপরও হামলে পড়ে পড়ছে দখলদার বাহিনী। তাদের ওপর টিয়ারগ্যাস, রাবার কোটেড বুলেট এবং শক গ্রেনেড ব্যবহার করে ইসরায়েলি সীমান্তরক্ষীরা।
জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া সাম্প্রতিক এই সহিংসতার ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে। তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দাবি, সবার প্রার্থনা করার অধিকার রক্ষার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করছে তার দেশ। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস একে ইসরায়েলের ‘পাপীদের হামলা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
সহিংসতার পেছনের কারণ
১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের পর থেকেই পূর্ব জেরুজালেম দখল করে রেখেছে ইসরায়েল। পেশীশক্তির জোরে পুরো শহরকে তারা নিজেদের রাজধানী দাবি করলেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাতে স্বীকৃতি দেয়নি। অন্যদিকে ফিলিস্তিনিরা চায়, পূর্ব জেরুজালেম হবে তাদের ভবিষ্যৎ স্বাধীন দেশের রাজধানী।
পূর্ব জেরুজালেমে নিজেদের বাড়িঘর থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে সেখানে ইহুদি বসতি স্থাপনের প্রচেষ্টাকে ঘিরে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়। যে কোন ধরনের উচ্ছেদ কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। বিক্ষোভকারীদের প্রতি সর্বোচ্চ সহনশীলতা দেখানোরও আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। ফিলিস্তিনিদের বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার যে কোন উদ্যোগের বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপ করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আরব লিগ। ইসরায়েলকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র আখ্যায়িত করে ফিলিস্তিনিদের ওপর দেশটির তাণ্ডবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান।
মঙ্গলবার, ১১ মে ২০২১ , ২৮ বৈশাখ ১৪২৮ ২৮ রমজান ১৪৪২
আরও সহিংসতার শঙ্কা
ফিলিস্তিনের জেরুজালেমে পবিত্র আল আকসা মসজিদ এলাকায় দখলদার বাহিনীর তাণ্ডব অব্যাহত রয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে মুসল্লিদের ওপর হামলার পর এবার মসজিদ কম্পাউন্ডে অভিযান চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। এ সময় তারা মসজিদ এলাকা ঘেরাও করে রাখে। মুসল্লিদের ওপর রাবার কোটেড বুলেট, টিয়ারগ্যাস ও সাউন্ড বোমা নিক্ষেপ করে। এতে শতাধিক ফিলিস্তিনি আহত হয়। বিবিসি
ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, এদিন দখলদার বাহিনীর হামলায় শতাধিক ফিলিস্তিনি আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে অন্তত ৭০ জনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনীর তাণ্ডবের খবর সংগ্রহের জন্য আল আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে উপস্থিত অন্তত ছয়জন সাংবাদিকও এ সময় চোট পান। তবে আহতদের সেবা দিতে ঘটনাস্থলে চিকিৎসাকর্মীদের যেতে দেয়নি ইসরায়েলি বাহিনী।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, মসজিদের ভেতরে টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করছে দখলদার বাহিনী। মসজিদের অভ্যন্তরে নারীদের নামাজ আদায়ের অংশেও স্টান গ্রেনেড নিক্ষেপ করে তারা। এর আগে শনিবার পবিত্র লাইলাতুল কদরের রাতেও জেরুজালেমে নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ইসরায়েলি বাহিনী।
পবিত্র রমজান মাসে পূর্ব জেরুজালেমে ইহুদি বসতি স্থাপনের জন্য মুসলিমদের তাদের ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ চেষ্টার ঘটনায় এমনিতেই ফিলিস্তিনিদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এর মধ্যেই গত কয়েক দিন ধরে আল আকসা মসজিদের মুসল্লিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে ইসরায়েলি বাহিনী।
২৭ বছরের একজন ফিলিস্তিনি মাহমুদ আল-মারবুয়া রয়টার্সকে বলেন, ‘তারা আমাদের নামাজ পড়তে দিতে চায় না। সেখানে প্রতিদিনই লড়াই করতে হচ্ছে, প্রতিদিনই সহিংসতা হচ্ছে। প্রতিদিনই সেখানে সমস্যা তৈরি হচ্ছে।’
কিছুদিন ধরে শেখ জাররাহ এলাকায় উচ্ছেদের মুখে পড়া পরিবারগুলোর সমর্থনে এলাকাটিতে সমবেত হচ্ছে ফিলিস্তিনিরা। সংহতি জানাতে আসা এসব মানুষদের ওপরও হামলে পড়ে পড়ছে দখলদার বাহিনী। তাদের ওপর টিয়ারগ্যাস, রাবার কোটেড বুলেট এবং শক গ্রেনেড ব্যবহার করে ইসরায়েলি সীমান্তরক্ষীরা।
জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া সাম্প্রতিক এই সহিংসতার ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে। তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দাবি, সবার প্রার্থনা করার অধিকার রক্ষার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করছে তার দেশ। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস একে ইসরায়েলের ‘পাপীদের হামলা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
সহিংসতার পেছনের কারণ
১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের পর থেকেই পূর্ব জেরুজালেম দখল করে রেখেছে ইসরায়েল। পেশীশক্তির জোরে পুরো শহরকে তারা নিজেদের রাজধানী দাবি করলেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাতে স্বীকৃতি দেয়নি। অন্যদিকে ফিলিস্তিনিরা চায়, পূর্ব জেরুজালেম হবে তাদের ভবিষ্যৎ স্বাধীন দেশের রাজধানী।
পূর্ব জেরুজালেমে নিজেদের বাড়িঘর থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে সেখানে ইহুদি বসতি স্থাপনের প্রচেষ্টাকে ঘিরে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়। যে কোন ধরনের উচ্ছেদ কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। বিক্ষোভকারীদের প্রতি সর্বোচ্চ সহনশীলতা দেখানোরও আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। ফিলিস্তিনিদের বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার যে কোন উদ্যোগের বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপ করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আরব লিগ। ইসরায়েলকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র আখ্যায়িত করে ফিলিস্তিনিদের ওপর দেশটির তাণ্ডবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান।