কলকাতা উপ-হাইকমিশনের সামনে

দেশে ফেরার দাবিতে বাংলাদেশিদের বিক্ষোভ

৫ বছরের ছেলের মৃত্যু

করোনা সংক্রমণের কারণে সীমান্ত পথে জনযাতায়াতের উপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে দেশে ফেরার দাবিতে গতকাল সকাল থেকে তিন শতাধিক বাংলাদেশি নাগরিক উপ-হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এই সময় হাইকমিশনের লোকজন তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ করেছেন নাগরিকরা। অন্যদিকে দেশে ফেরার এনওসি না পাওয়ায় গতকাল রাতে ক্যান্সারে আক্রান্ত পাঁচ বছরের একটি ছেলের করুণ মৃত্যু ঘটে।

শনিবার বাংলাদেশ সরকারের আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্থল সীমান্ত পথে যাতায়াতের নিষেধাজ্ঞা আরও দুই সপ্তাহ বৃদ্ধি করা হয়। এর আগে সরকারি নিষেধাজ্ঞা ছিল ২৬ এপ্রিল থেকে ৯ মে পর্যন্ত আর এখন তা বৃদ্ধি করে ২৩ মে পর্যন্ত করা হয়। তবে যাদের ভিসার মেয়াদ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে শেষ হবে বা হয়েছে কেবল এমন অসুস্থ রোগীদের ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা শর্তসাপেক্ষ শিথিল থাকবে কিন্তু বগুড়ার শেরপুরের বাসিন্দা আব্দুল লতিফ জানান, কলকাতা উপ-হাইকমিশন থেকে আমাকে এনওসি না দেয়ায় আমার পাঁচ বছরের ছেলেকে এখানেই মরতে হলো। আব্দুল লতিফ জানান, আমার ছেলের বয়স যখন তিন বছর তখন সে ক্যান্সারে আক্রান্ত। এতদিন বাংলাদেশে তার ট্রিটমেন্ট চলছিল কিন্তু আড়াই মাস আগে বাংলাদেশের ডাক্তারের পরামর্শে ভারতের ভেলরে আমার ছেলে আল হাসান রাফির ভালো চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসি। ভেলরের একটি হাসপাতালে ওর চিকিৎসা চলছিল। চিকিৎসকরা তাকে অপারেশন করাতে হবে বলে জানান কিন্তু করোনা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় অপারেশন না করে তাদের বাড়ি গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার কথা বলে ছুটি দিয়ে দেন। গত ৭ এপ্রিল কলকাতায় ফিরে আসি। দেশ ফেরার জন্য এনওসি নেয়ার জন্য কলকাতা উপ-হাইকমিশনে গেলে সেখানকার গার্ড ও রিসিপসনিস্টরা তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। তারপরেও আমি তাদের অনুরোধ করে বলি, আমার বাচ্চাটি খুব অসুস্থ আমকে বাড়ি ফিরতে হবে, আপনারা আমাকে অফিসারদের সঙ্গে দেখা করতে দিন। পরে তাকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন। হাইকমিশনের অসহযোগিতার জন্য আমার ছেলেটি আজ মারা যায়। এখন তারা আমাকে মৃতদেহ নেয়ার জন্য অনুমতি দেবে। লতিফ মিয়া আক্ষেপ করে বলেন, আমার ছেলেটিকে বাড়ি যাওয়ার অনুমতি দিলে আমার ছেলেকে মরতে হতো না।

এ ব্যাপারে কলকাতা উপ-হাইকমিশনার তৌফিক হাসানের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি জানি না কিন্তু অফিস দু’দিন বন্ধ ছিল এই কারণেই সমস্যা হয়েছে বলে জানান। কিন্তু উপ-হাইকমিশন বাংলাদেশি নাগরিকদের সহায়তা করতে অফিস বন্ধ থাকলেও জরুরি কাজের জন্য তারা কি দু’দিন অপেক্ষা করবে? এই প্রশ্নের জবাবে তৌফিক হাসান বলেন, ভারতের ভ্যারিয়েন্টের জন্য সরকারি সিদ্ধান্ত মান্যতা দিতে হবে, আমরা সরকারি নির্দেশমতো কাজ করে যাচ্ছি। এই অসুবিধাটুকু সবাইকে মানতে হবে। তৌফিক হাসান বলেন, ঈদের পরে মুমূর্ষু রোগীদের শর্তসাপেক্ষে এনওসি দেয়া হবে।

কলকাতা উপ-হাইকমিশনের কন্স্যুলার মো. বশিরউদ্দীন সংবাদকে জানান, আজও বেনাপোল ও বুড়িমারী সীমান্ত দিয়ে ৫৫ বাংলাদেশি নাগরিক দেশে ফিরেছেন। তবে তাদের এনওসি দেয়া হয়েছিল ৯ এপ্রিলের আগে। উপ-হাইকমিশনার জানান, এই পর্যন্ত ৩ হাজার বাংলাদেশি নাগরিককে এনওসি দেয়া হয়েছে যারা ইতোমধ্যে দেশে ফিরেছেন।

মঙ্গলবার, ১১ মে ২০২১ , ২৮ বৈশাখ ১৪২৮ ২৮ রমজান ১৪৪২

কলকাতা উপ-হাইকমিশনের সামনে

দেশে ফেরার দাবিতে বাংলাদেশিদের বিক্ষোভ

৫ বছরের ছেলের মৃত্যু

প্রতিনিধি, কলকাতা

image

কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের সামনে দেশে ফেরার দাবিতে বাংলাদেশিদের বিক্ষোভ

করোনা সংক্রমণের কারণে সীমান্ত পথে জনযাতায়াতের উপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে দেশে ফেরার দাবিতে গতকাল সকাল থেকে তিন শতাধিক বাংলাদেশি নাগরিক উপ-হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এই সময় হাইকমিশনের লোকজন তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ করেছেন নাগরিকরা। অন্যদিকে দেশে ফেরার এনওসি না পাওয়ায় গতকাল রাতে ক্যান্সারে আক্রান্ত পাঁচ বছরের একটি ছেলের করুণ মৃত্যু ঘটে।

শনিবার বাংলাদেশ সরকারের আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্থল সীমান্ত পথে যাতায়াতের নিষেধাজ্ঞা আরও দুই সপ্তাহ বৃদ্ধি করা হয়। এর আগে সরকারি নিষেধাজ্ঞা ছিল ২৬ এপ্রিল থেকে ৯ মে পর্যন্ত আর এখন তা বৃদ্ধি করে ২৩ মে পর্যন্ত করা হয়। তবে যাদের ভিসার মেয়াদ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে শেষ হবে বা হয়েছে কেবল এমন অসুস্থ রোগীদের ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা শর্তসাপেক্ষ শিথিল থাকবে কিন্তু বগুড়ার শেরপুরের বাসিন্দা আব্দুল লতিফ জানান, কলকাতা উপ-হাইকমিশন থেকে আমাকে এনওসি না দেয়ায় আমার পাঁচ বছরের ছেলেকে এখানেই মরতে হলো। আব্দুল লতিফ জানান, আমার ছেলের বয়স যখন তিন বছর তখন সে ক্যান্সারে আক্রান্ত। এতদিন বাংলাদেশে তার ট্রিটমেন্ট চলছিল কিন্তু আড়াই মাস আগে বাংলাদেশের ডাক্তারের পরামর্শে ভারতের ভেলরে আমার ছেলে আল হাসান রাফির ভালো চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসি। ভেলরের একটি হাসপাতালে ওর চিকিৎসা চলছিল। চিকিৎসকরা তাকে অপারেশন করাতে হবে বলে জানান কিন্তু করোনা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় অপারেশন না করে তাদের বাড়ি গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার কথা বলে ছুটি দিয়ে দেন। গত ৭ এপ্রিল কলকাতায় ফিরে আসি। দেশ ফেরার জন্য এনওসি নেয়ার জন্য কলকাতা উপ-হাইকমিশনে গেলে সেখানকার গার্ড ও রিসিপসনিস্টরা তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। তারপরেও আমি তাদের অনুরোধ করে বলি, আমার বাচ্চাটি খুব অসুস্থ আমকে বাড়ি ফিরতে হবে, আপনারা আমাকে অফিসারদের সঙ্গে দেখা করতে দিন। পরে তাকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন। হাইকমিশনের অসহযোগিতার জন্য আমার ছেলেটি আজ মারা যায়। এখন তারা আমাকে মৃতদেহ নেয়ার জন্য অনুমতি দেবে। লতিফ মিয়া আক্ষেপ করে বলেন, আমার ছেলেটিকে বাড়ি যাওয়ার অনুমতি দিলে আমার ছেলেকে মরতে হতো না।

এ ব্যাপারে কলকাতা উপ-হাইকমিশনার তৌফিক হাসানের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি জানি না কিন্তু অফিস দু’দিন বন্ধ ছিল এই কারণেই সমস্যা হয়েছে বলে জানান। কিন্তু উপ-হাইকমিশন বাংলাদেশি নাগরিকদের সহায়তা করতে অফিস বন্ধ থাকলেও জরুরি কাজের জন্য তারা কি দু’দিন অপেক্ষা করবে? এই প্রশ্নের জবাবে তৌফিক হাসান বলেন, ভারতের ভ্যারিয়েন্টের জন্য সরকারি সিদ্ধান্ত মান্যতা দিতে হবে, আমরা সরকারি নির্দেশমতো কাজ করে যাচ্ছি। এই অসুবিধাটুকু সবাইকে মানতে হবে। তৌফিক হাসান বলেন, ঈদের পরে মুমূর্ষু রোগীদের শর্তসাপেক্ষে এনওসি দেয়া হবে।

কলকাতা উপ-হাইকমিশনের কন্স্যুলার মো. বশিরউদ্দীন সংবাদকে জানান, আজও বেনাপোল ও বুড়িমারী সীমান্ত দিয়ে ৫৫ বাংলাদেশি নাগরিক দেশে ফিরেছেন। তবে তাদের এনওসি দেয়া হয়েছিল ৯ এপ্রিলের আগে। উপ-হাইকমিশনার জানান, এই পর্যন্ত ৩ হাজার বাংলাদেশি নাগরিককে এনওসি দেয়া হয়েছে যারা ইতোমধ্যে দেশে ফিরেছেন।