ঈদের ছুটি বাড়াতে গতকাল রাজধানীর মিরপুর, মতিঝিল এবং গাজীপুরে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেছে পোশাক শ্রমিকরা। গাজীপুরে টঙ্গীর মিল গেইট এলাকায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় পুলিশের গুলিতে অন্তত ২১ শ্রমিক আহত হয়েছেন।
গাজীপুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ ও শ্রমিকরা জানান, ঈদে ১০ দিন বাড়তি ছুটির দাবিতে গতকাল বেলা ১১টার দিকে হা-মীম গ্রুপের শ্রমিকরা কারখানার ভেতরে বিক্ষোভ করে। পরবর্তীতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ ও থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলে কারখানার শ্রমিকরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশও শ্রমিকদের ওপর লাঠিচার্জ ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এ সময় দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে আট পুলিশ সদস্য ও ২১ শ্রমিক আহত হন। পরে শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এদের মধ্যে ১১ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়েছে।
পুলিশের গুলিতে আহত ২১ জনের মধ্যে ১৯ জনের নাম জানা গেছে। তারা হলো- হাসান মিয়া (২৬), রাজীবুল ইসলাম (২৬), মামুন মিয়া (২৭), রবি (২১), লতিফ (১৯), ইমরান (১৯), রুবেল (২৪), রুবেল (২২), রনি (২২), এহসানুল হক (৩৫), রাজিবুল (২৬), কলি বেগম (২৪), নিজাম উদ্দিন (৩০), সমলা (২৫), ইয়াসিন (২০), হাসিনা (৪০), সাব্বির (২২), সাবিনা (২৫), রিনা বেগম (২০)।
পায়ে গুলিবিদ্ধ হন শ্রমিক রনি ইসলাম। তিনি বলেন, ঈদে বাড়তি ছুটির দাবি নিয়ে তারা কাজ বন্ধ রেখে টঙ্গী মিলগেটে জমায়েত হন। এ সময় আচমকা পুলিশ এসে শ্রমিকদের পেটাতে শুরু করে। একজনের মাথাও ফাটিয়ে ফেলে। কেন বিনা কারণে তাদের ওপর হামলা চালানো হলো জানতে চাইলে, পুলিশ আরও মারমুখী হয়ে ওঠে, লাঠিচার্জ করে ও গুলি ছোড়ে। একই রকম বক্তব্য পাওয়া গেছে আহত অপর দুই শ্রমিক সোহেল ও রুবেলের কাছ থেকেও। গাজীপুর শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, শ্রমিকেরা বেপরোয়াভাবে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকায় তারা মৃদু প্রতিহত করেছেন। শ্রমিকদের হামলায় পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। শ্রমিকেরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক বন্ধ করে দিলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে ও রাবার বুলেট ছোড়ে। তারা বেশ কিছু গাড়িও ভাঙচুর করেছেন।
গতকাল দুপুরের দিকে গাড়িতে করে আহত শ্রমিকদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসতে দেখা যায়। তাদের কাউকে কাউকে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) যেতে বলা হয়েছে।
আহত শ্রমিক রুবেল বলেন, ছুটি চাইছিলাম। গুলি খাইছি। এখন শ্রমের টাকা দিয়া হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরি। পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় আট পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তারা হলেন- ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) জালাল হাওলাদার, এএসপি এস আলম, সিটিএসবির এসআই রুবেল, এসআই কামাল হোসেন, পুলিশের এসআই লিটন, কনস্টেবল এনামুল হোসেন। বাকি দুই পুলিশ সদস্যের নাম জানা যায়নি।
হা-মীম গ্রুপের টঙ্গী জোনের এজিএম মিজানুর রহমান বলেন, শ্রমিকরা দাবি তোলার পর গত রোববারই সাত দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয় কিন্তু তারা ১০ দিন দাবি করে গতকাল সকালে ভাঙচুর করেছে। কম্পিউটার, সিসি ক্যামেরা, দরজা-জানালার কাচ, কারখানার গাড়িসহ আসবাবপত্র ভাঙচুর করে মহাসড়কে চলে যায় তারা। এই কারখানায় ১৫ হাজারের মতো শ্রমিক রয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা তদন্ত করে দেখছি কী ক্ষতি হয়েছে। এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয়া হবে তা পরে চিন্তা করব।
এদিকে গাজীপুর কালিয়াকৈর উপজেলার বিশ্বাসপাড়া এলাকার স্টার লিংক ডিজাইন নামে আরেকটি কারখানার শ্রমিকরা ঈদে ১২ দিন ছুটির দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। ওই কারখানার শ্রমিক আসমা খাতুন বলেন, সকালে কাজে যোগ দিতে গিয়ে তারা ঈদে তিন দিনের ছুটির কথা জানতে পারেন। তখন তারা ১২ দিন ছুটির দাবিতে কাজ বন্ধ করে কারখানার সামনে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবস্থান নেন।
এছাড়া রাজধানীর মিরপুর ও মতিঝিলেও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে শ্রমিকরা। গতকাল দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত দুই দফায় কালশীর ‘স্ট্যান্ডার্ড’ পোশাক কারখানার শ্রমিকরা সামনের সড়কে বিক্ষোভ করেন। তবে মিরপুর ও মতিঝিলে বিক্ষোভের সময় পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। মিরপুর বিভাগের পুলিশের উপ-কমিশনার মাহতাব উদ্দিন বলেন, দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ শ্রমিকদের সরিয়ে দিলেও দুপুর ২টার দিকে আবারো তারা সড়কে জড়ো হন। এমনি ছুটি ৩ দিনের। তারপরও কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের ৬ দিন ছুটি দিয়েছেন কিন্তু শ্রমিকদের দাবি ১০ দিন ছুটির।
মঙ্গলবার, ১১ মে ২০২১ , ২৮ বৈশাখ ১৪২৮ ২৮ রমজান ১৪৪২
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
ঈদের ছুটি বাড়াতে গতকাল রাজধানীর মিরপুর, মতিঝিল এবং গাজীপুরে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেছে পোশাক শ্রমিকরা। গাজীপুরে টঙ্গীর মিল গেইট এলাকায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় পুলিশের গুলিতে অন্তত ২১ শ্রমিক আহত হয়েছেন।
গাজীপুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ ও শ্রমিকরা জানান, ঈদে ১০ দিন বাড়তি ছুটির দাবিতে গতকাল বেলা ১১টার দিকে হা-মীম গ্রুপের শ্রমিকরা কারখানার ভেতরে বিক্ষোভ করে। পরবর্তীতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ ও থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলে কারখানার শ্রমিকরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশও শ্রমিকদের ওপর লাঠিচার্জ ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এ সময় দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে আট পুলিশ সদস্য ও ২১ শ্রমিক আহত হন। পরে শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এদের মধ্যে ১১ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়েছে।
পুলিশের গুলিতে আহত ২১ জনের মধ্যে ১৯ জনের নাম জানা গেছে। তারা হলো- হাসান মিয়া (২৬), রাজীবুল ইসলাম (২৬), মামুন মিয়া (২৭), রবি (২১), লতিফ (১৯), ইমরান (১৯), রুবেল (২৪), রুবেল (২২), রনি (২২), এহসানুল হক (৩৫), রাজিবুল (২৬), কলি বেগম (২৪), নিজাম উদ্দিন (৩০), সমলা (২৫), ইয়াসিন (২০), হাসিনা (৪০), সাব্বির (২২), সাবিনা (২৫), রিনা বেগম (২০)।
পায়ে গুলিবিদ্ধ হন শ্রমিক রনি ইসলাম। তিনি বলেন, ঈদে বাড়তি ছুটির দাবি নিয়ে তারা কাজ বন্ধ রেখে টঙ্গী মিলগেটে জমায়েত হন। এ সময় আচমকা পুলিশ এসে শ্রমিকদের পেটাতে শুরু করে। একজনের মাথাও ফাটিয়ে ফেলে। কেন বিনা কারণে তাদের ওপর হামলা চালানো হলো জানতে চাইলে, পুলিশ আরও মারমুখী হয়ে ওঠে, লাঠিচার্জ করে ও গুলি ছোড়ে। একই রকম বক্তব্য পাওয়া গেছে আহত অপর দুই শ্রমিক সোহেল ও রুবেলের কাছ থেকেও। গাজীপুর শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, শ্রমিকেরা বেপরোয়াভাবে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকায় তারা মৃদু প্রতিহত করেছেন। শ্রমিকদের হামলায় পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। শ্রমিকেরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক বন্ধ করে দিলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে ও রাবার বুলেট ছোড়ে। তারা বেশ কিছু গাড়িও ভাঙচুর করেছেন।
গতকাল দুপুরের দিকে গাড়িতে করে আহত শ্রমিকদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসতে দেখা যায়। তাদের কাউকে কাউকে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) যেতে বলা হয়েছে।
আহত শ্রমিক রুবেল বলেন, ছুটি চাইছিলাম। গুলি খাইছি। এখন শ্রমের টাকা দিয়া হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরি। পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় আট পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তারা হলেন- ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) জালাল হাওলাদার, এএসপি এস আলম, সিটিএসবির এসআই রুবেল, এসআই কামাল হোসেন, পুলিশের এসআই লিটন, কনস্টেবল এনামুল হোসেন। বাকি দুই পুলিশ সদস্যের নাম জানা যায়নি।
হা-মীম গ্রুপের টঙ্গী জোনের এজিএম মিজানুর রহমান বলেন, শ্রমিকরা দাবি তোলার পর গত রোববারই সাত দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয় কিন্তু তারা ১০ দিন দাবি করে গতকাল সকালে ভাঙচুর করেছে। কম্পিউটার, সিসি ক্যামেরা, দরজা-জানালার কাচ, কারখানার গাড়িসহ আসবাবপত্র ভাঙচুর করে মহাসড়কে চলে যায় তারা। এই কারখানায় ১৫ হাজারের মতো শ্রমিক রয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা তদন্ত করে দেখছি কী ক্ষতি হয়েছে। এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয়া হবে তা পরে চিন্তা করব।
এদিকে গাজীপুর কালিয়াকৈর উপজেলার বিশ্বাসপাড়া এলাকার স্টার লিংক ডিজাইন নামে আরেকটি কারখানার শ্রমিকরা ঈদে ১২ দিন ছুটির দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। ওই কারখানার শ্রমিক আসমা খাতুন বলেন, সকালে কাজে যোগ দিতে গিয়ে তারা ঈদে তিন দিনের ছুটির কথা জানতে পারেন। তখন তারা ১২ দিন ছুটির দাবিতে কাজ বন্ধ করে কারখানার সামনে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবস্থান নেন।
এছাড়া রাজধানীর মিরপুর ও মতিঝিলেও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে শ্রমিকরা। গতকাল দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত দুই দফায় কালশীর ‘স্ট্যান্ডার্ড’ পোশাক কারখানার শ্রমিকরা সামনের সড়কে বিক্ষোভ করেন। তবে মিরপুর ও মতিঝিলে বিক্ষোভের সময় পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। মিরপুর বিভাগের পুলিশের উপ-কমিশনার মাহতাব উদ্দিন বলেন, দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ শ্রমিকদের সরিয়ে দিলেও দুপুর ২টার দিকে আবারো তারা সড়কে জড়ো হন। এমনি ছুটি ৩ দিনের। তারপরও কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের ৬ দিন ছুটি দিয়েছেন কিন্তু শ্রমিকদের দাবি ১০ দিন ছুটির।