নতুন-পুরনো নিয়ে মমতার নতুন মন্ত্রিসভা বিতর্কিতরা বাদ

বিরোধীদলীয় নেতা শুভেন্দু

সোমবার সকালে রাজভবনের থ্রোন হলে কোভিড পরিস্থিতির কারণে অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে রাজ্যের নতুন ৪৩ মন্ত্রীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। মন্ত্রিদের শপথবাক্য পাঠ করান রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। ৭ মিনিটের মধ্যেই ৪৩ জন নতুন মন্ত্রীর শপথ গ্রহণ শেষ হয়। এর মধ্যে রয়েছে ২৪ জন পূর্ণমন্ত্রী, ১০ জন স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী ও ৯ জন প্রতিমন্ত্রী।

২০২১-র বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল জয়ের পর, ৫ মে তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর ঠিক পাঁচদিন পর শপথগ্রহণ হলো তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের। এবার মমতার মন্ত্রিসভায় রয়েছেন অনেক নতুন মুখ। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া, বিধানসভার চিফ হুইপ নির্মল ঘোষ ও ডেপুটি চিফ হুইপ হয়েছেন তাপস রায়।

তৃতীয় মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণের পর পরই নবান্নে এদিন সাংবাদিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমেই সবাইকে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘তৃতীয়বার ক্ষমতায় আনার জন্য মা, মাটি, মানুষকে আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। সব ধর্মের মানুষ আমাদের সমর্থন করেছেন। আমরা সব মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমরা বিভেদ চাই না, আমরা ঐক্য চাই। এই রায় শান্তি, সম্প্রীতি, উন্নয়ন, সংহতির রায়’ বলেও মন্তব্য করেন মমতা।

একইসঙ্গে রাজ্যের কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়েও সোমবার কথা বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার কথায়, রাজ্যে এখনই লকডাউন হচ্ছে না, তবে, ‘লকডাউন ঘোষণা না করে, লকডাউনের মতো সাধারণ মানুষকে কোভিড-১৯ বিধি মেনে চলার জন্য কড়া বার্তা দিতে হবে। কারণ লকডাউন দিলে সাধারণ মানুষের অসুবিধা হবে। দরিদ্র মানুষ না খেতে পেয়ে মারা যাবেন, সেটা আমরা চাই না।’

সংবাদ বৈঠকে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধেও সমালোচনা করে বলেন, ‘৩ কোটি টিকা চেয়েছিলাম কিন্তু আজ পেয়েছি মাত্র ১ লাখ টিকা। কেন্দ্রীয় সরকার আমাদের টাকা নিয়েও সাহায্য করছে না। টিকা দিয়েও সাহায্য করছে না।’ পাশাপাশি তিনি জানান, ‘কোভিডে বেডের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। এখন রাজ্যে ১০০ হাসপাতালে কোভিড চিকিৎসা চলছে।

নির্বাচন পর্ব থেকেই এ রাজ্যের দিকে গোটা দেশের নজর ছিল। ভোট পেরিয়ে ফলাফলের পরেও কমেনি এর মাত্রা। একদিকে যেমন দায়িত্ব নিয়েই কোভিড-১৯ মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী, অন্যদিকে ভোট-পরবর্তী হিংসা নিয়ে সরব হয়েছে বিজেপি।

পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ইতিহাসে নিঃসন্দেহে এই মন্ত্রিসভা ব্যতিক্রম। তার প্রথম কারণ, তৃণমূলের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী মমতা ব্যানার্জী নন্দীগ্রামে হেরে গিয়েছেন। সংবিধান অনুযায়ী নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়ার পরে রাজ্যের যে কোন একটি কেন্দ্র থেকে আগামী ছয় মাসের মধ্যে জিতে আসতে হবে তাকে। অন্যদিকে ভোটে না দাঁড়িয়েও রাজ্যের অর্থমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে চলেছেন অমিত মিত্র। শারীরিক কারণে তিনি এবার নির্বাচনে দাঁড়াননি কিন্তু মমতা অমিতকে অর্থমন্ত্রী হিসেবে চেয়েছেন। ফলে মুখ্যমন্ত্রীর মতো অর্থমন্ত্রীকেও জিতে আসতে হবে কোন একটি কেন্দ্র থেকে।

এবার আসা যাক নতুন মুখ কারা থাকছেন সেই প্রসঙ্গে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য নতুন মুখ মানস ভূঁইঞা, রথীন ঘোষ, পুলক রায়, বঙ্কিম হাজরা, বিপ্লব মিত্র। অন্যদিকে প্রতিমন্ত্রী এবং স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে যারা শপথ নিচ্ছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নতুন মুখ শিউলি শাহা, মনোজ তিওয়ারি, অখিল গিরি, বীরবাহা হাঁসদা, বুলু চিক বরাইক, জ্যোৎস্না মান্ডি, সাবিনা ইয়াসমিন এবং প্রাক্তন আইপিএস হুমায়ুন কবীর।

পুরনো মন্ত্রিসভা থেকে যারা বাদ পড়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছে, পূর্ণেন্দু বসু কারণ তিনি এবার ভোটে দাঁড়াননি। একইভাবে রয়েছেন কেদা বামফ্রন্ট থেকে আসা রেজ্জাক মোল্লা, শারীরিক অসুস্থতার জন্য তিনি এবার টিকিট পাননি। রাজ্যের দুটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর পর্যটন এবং উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের দায়িত্ব ছিল যথাক্রমে গৌতম দেব ও রবীন্দ্রনাথ ঘোষের ওপর। দুজনেই এবার ভোটে হেরে গেছেন। বাদ পড়েছেন নির্মল মাঝি। নির্মল মাঝিকে নিয়েও বেশ বিতর্ক হয়েছিল চিকিৎসক নিয়োগসংক্রান্ত প্রশ্নে। অন্যদিকে ভোটের প্রচারণায় তপন দাশগুপ্তর বিতর্কিত ভূমিকা গণমাধ্যমে সংবাদ শিরোনামে উঠে আসে। এজন্যই তাকেও বাদ পড়তে হলো।

বাদ পড়েছেন, অসীমা পাত্র, জাকির হোসেন, বিনয় বর্মণ, শান্তিরাম মাহাতো। গত মন্ত্রিসভায় পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নের দায়িত্বে ছিলেন শান্তিরাম মাহাতো কিন্তু পরবর্তী সময়ে তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ ওঠায় বাদ পড়তে হলো তাকে। আশীষ ব্যানার্জী, মন্টুরাম পাখিরা, গিয়াসুদ্দিন মোল্লা গত মন্ত্রিসভায় থাকলেও এবারের মন্ত্রিসভায় ঠাঁই হয়নি তাদের।

অন্যদিকে শুরু থেকেই তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, নয়া মন্ত্রিসভায় মহিলা এবং আদিবাসী মুখকে গুরুত্ব দেয়া হবে। মমতা তার মন্ত্রিসভায় তার কথা রেখেছেন। পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে শিউলি সাহা, হুমায়ুন কবীর, শ্রীকান্ত মাহাতোকে জায়গা দেয়া হচ্ছে নতুন মন্ত্রিসভায়। ঝাড়গ্রাম থেকে আসছেন বীরবাহা হাঁসদা। পূর্ব মেদিনীপুর থেকে আনুগত্যের পুরস্কার পেয়েছেন অখিল গিরি। দলবদলের কারণে পুরনো মন্ত্রিসভায় বেশ কয়েকটি দপ্তর ফাঁকা হয়েছিল। যেমন শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব ব্যানার্জী, বাচ্চু হাঁসদা। রাজনীতি থেকে সরে গেছেন পুরনো মন্ত্রিসভার ক্রীড়া দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী লক্ষ্মীরতন শুক্লা। সারদা কা-ে গ্রেপ্তার হওয়ার কারণে মন্ত্রিত্ব ছাড়তে হয়েছিল মদন মিত্রকে। এ বছর কামারহাটি থেকে জিতে এসেছেন তিনি। তবে নতুন মন্ত্রিসভায় প্রথম দফায় মদনের জায়গা হয়নি। সূত্রের খবর, আপাতত এই তালিকা থাকলেও পরে আরও কিছু নতুন সদস্যের জায়গা হতে পারে। কারণ, নিজের হাতে খুব বেশি দপ্তর রাখতে চান না মুখ্যমন্ত্রী।

গতবারের মতোই স্বরাষ্ট্র, স্বাস্থ্য ও ভূমি মন্ত্রণালয় তার নিজের হাতেই রেখে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এছাড়াও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন ও তথ্য-সংস্কৃতিসহ একাধিক মন্ত্রকের দায়িত্বে থাকবেন মমতা।

একাধিক মন্ত্রী যেমন আগের মন্ত্রকই পেয়েছেন, তেমনভাবে, অনেক মন্ত্রীর মন্ত্রকবদল করা হয়েছে। মন্ত্রিসভার হেভিওয়েটদের মধ্যে পার্থ চট্টোপাধ্যায় পেলেন শিল্প, বাণিজ্য, তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রক। সুব্রত মুখোপাধ্যায় পেলেন পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন এবং শিল্প পুনর্গঠন। তবে, এ বছর শিক্ষা মন্ত্রকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ব্রাত্য বসুকে। অমিত মিত্র পেলেন অর্থ, পরিকল্পনা ও সংখ্যাতত্ত্ব বিষয়ক মন্ত্রক।

বিরোধী দলীয় নেতা হলেন বিজেপি শুভেন্দু

অবশেষে বিরোধীদলীয় নেতা হলেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। এতদিন বিরপধীদলীয় নেতা কে হবেন শুভেন্দু না মুকুল এ নিয়ে দলের আন্দরে-বাইরে বেশ কয়েকদিন চলে চাপানউতোর। শেষ পর্যন্ত একুশের নির্বাচনে বিজেপির মুখ রক্ষা করেছেন যিনি তাকেই বেছে নিয়েছে গেরুয়া শিবির। বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবীশঙ্কর প্রসাদ সোমবার এমনটাই ঘোষণা করেছেন।

বিধানসভা দলনেতা কে হবেন এ নিয়ে চলছিল বেশ কয়েকদিন ধরে চাপানউতোর। সব জল্পনার অবসান ঘটল। একুশে নির্বাচনে বিজেপির মুখ রক্ষা করেছেন যিনি তাকেই বেছে নিল পদ্ম শিবির। বিজেপি সূত্রের খবর, এর আগে বিরোধী দলনেতা নির্বাচনের জন্য বিজেপির সব বিধায়কদের হেস্টিংসের বিজেপির নির্বাচনী কার্যালয়ে ডাকা হয়েছিল। তাদের সবার মতামতের ভিত্তিতে শুভেন্দু অধীকারীর হাতেই এই দায়িত্ব তুলে দেয় তারা। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ সোমবার এই প্রতিনিধিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে জল্পনা ছিল বিরোধী দলের নেতা কে হবেন মুকুল রায় না সুভেন্দু অধিকারী।

মুকুল রায়কে বাংলায় রাজনীতির ‘চাণক্য’ বলা হয়। বস্তুত যে যাই বলুন, তিনি দল বদলের পরেই ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে বেশ সাফল্য এনে দিয়েছিল গেরুয়া শিবিরকে। বিজেপির আন্দরে এমনটা মনে করেন অনেকেই। দীর্ঘ কাল পরে ২০২১-র ভোটে লড়েছেন এবং জিতেও এসেছেন কৃষ্ণনগর উত্তর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে। কিন্তু এতে মুকুল রায় খুব একটা খুশি নন বরং ক্ষুব্ধ।

বিজেপির প্রতি মোহভঙ্গ হয়েছে তার। কিন্তু সদ্য ভোট হলো, জিতলেনও তিনি। তার পরেও মুকুল রায় কেন আসন্তুষ্ট? রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন তার এই মোহভঙ্গের বেশ কারণ আছে।

ভোট পরবর্তী পর্যালোচনার জন্য বিজেপি রাজ্য সভাপতিসহ বেশ কয়েকজন বিজেপি নেতাকে দিল্লিতে তলব করেছে শীর্ষ নেতারা। তালিকায় মুকুল রায়ের নাম থাকলেও শারীরিক অসুস্থতার কারণ সেই বৈঠকে দিল্লি যেতে পারবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন মুকুল রায়। শুধুই অসুস্থতা না এর পেছনে অন্য কোন কারণ আছে তা নিয়ে বিজেপি শিবিরে জল্পনা চলে।

মঙ্গলবার, ১১ মে ২০২১ , ২৮ বৈশাখ ১৪২৮ ২৮ রমজান ১৪৪২

নতুন-পুরনো নিয়ে মমতার নতুন মন্ত্রিসভা বিতর্কিতরা বাদ

বিরোধীদলীয় নেতা শুভেন্দু

দীপক মুখার্জী, কলকাতা

সোমবার সকালে রাজভবনের থ্রোন হলে কোভিড পরিস্থিতির কারণে অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে রাজ্যের নতুন ৪৩ মন্ত্রীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। মন্ত্রিদের শপথবাক্য পাঠ করান রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। ৭ মিনিটের মধ্যেই ৪৩ জন নতুন মন্ত্রীর শপথ গ্রহণ শেষ হয়। এর মধ্যে রয়েছে ২৪ জন পূর্ণমন্ত্রী, ১০ জন স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী ও ৯ জন প্রতিমন্ত্রী।

২০২১-র বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল জয়ের পর, ৫ মে তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর ঠিক পাঁচদিন পর শপথগ্রহণ হলো তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের। এবার মমতার মন্ত্রিসভায় রয়েছেন অনেক নতুন মুখ। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া, বিধানসভার চিফ হুইপ নির্মল ঘোষ ও ডেপুটি চিফ হুইপ হয়েছেন তাপস রায়।

তৃতীয় মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণের পর পরই নবান্নে এদিন সাংবাদিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমেই সবাইকে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘তৃতীয়বার ক্ষমতায় আনার জন্য মা, মাটি, মানুষকে আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। সব ধর্মের মানুষ আমাদের সমর্থন করেছেন। আমরা সব মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমরা বিভেদ চাই না, আমরা ঐক্য চাই। এই রায় শান্তি, সম্প্রীতি, উন্নয়ন, সংহতির রায়’ বলেও মন্তব্য করেন মমতা।

একইসঙ্গে রাজ্যের কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়েও সোমবার কথা বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার কথায়, রাজ্যে এখনই লকডাউন হচ্ছে না, তবে, ‘লকডাউন ঘোষণা না করে, লকডাউনের মতো সাধারণ মানুষকে কোভিড-১৯ বিধি মেনে চলার জন্য কড়া বার্তা দিতে হবে। কারণ লকডাউন দিলে সাধারণ মানুষের অসুবিধা হবে। দরিদ্র মানুষ না খেতে পেয়ে মারা যাবেন, সেটা আমরা চাই না।’

সংবাদ বৈঠকে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধেও সমালোচনা করে বলেন, ‘৩ কোটি টিকা চেয়েছিলাম কিন্তু আজ পেয়েছি মাত্র ১ লাখ টিকা। কেন্দ্রীয় সরকার আমাদের টাকা নিয়েও সাহায্য করছে না। টিকা দিয়েও সাহায্য করছে না।’ পাশাপাশি তিনি জানান, ‘কোভিডে বেডের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। এখন রাজ্যে ১০০ হাসপাতালে কোভিড চিকিৎসা চলছে।

নির্বাচন পর্ব থেকেই এ রাজ্যের দিকে গোটা দেশের নজর ছিল। ভোট পেরিয়ে ফলাফলের পরেও কমেনি এর মাত্রা। একদিকে যেমন দায়িত্ব নিয়েই কোভিড-১৯ মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী, অন্যদিকে ভোট-পরবর্তী হিংসা নিয়ে সরব হয়েছে বিজেপি।

পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ইতিহাসে নিঃসন্দেহে এই মন্ত্রিসভা ব্যতিক্রম। তার প্রথম কারণ, তৃণমূলের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী মমতা ব্যানার্জী নন্দীগ্রামে হেরে গিয়েছেন। সংবিধান অনুযায়ী নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়ার পরে রাজ্যের যে কোন একটি কেন্দ্র থেকে আগামী ছয় মাসের মধ্যে জিতে আসতে হবে তাকে। অন্যদিকে ভোটে না দাঁড়িয়েও রাজ্যের অর্থমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে চলেছেন অমিত মিত্র। শারীরিক কারণে তিনি এবার নির্বাচনে দাঁড়াননি কিন্তু মমতা অমিতকে অর্থমন্ত্রী হিসেবে চেয়েছেন। ফলে মুখ্যমন্ত্রীর মতো অর্থমন্ত্রীকেও জিতে আসতে হবে কোন একটি কেন্দ্র থেকে।

এবার আসা যাক নতুন মুখ কারা থাকছেন সেই প্রসঙ্গে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য নতুন মুখ মানস ভূঁইঞা, রথীন ঘোষ, পুলক রায়, বঙ্কিম হাজরা, বিপ্লব মিত্র। অন্যদিকে প্রতিমন্ত্রী এবং স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে যারা শপথ নিচ্ছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নতুন মুখ শিউলি শাহা, মনোজ তিওয়ারি, অখিল গিরি, বীরবাহা হাঁসদা, বুলু চিক বরাইক, জ্যোৎস্না মান্ডি, সাবিনা ইয়াসমিন এবং প্রাক্তন আইপিএস হুমায়ুন কবীর।

পুরনো মন্ত্রিসভা থেকে যারা বাদ পড়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছে, পূর্ণেন্দু বসু কারণ তিনি এবার ভোটে দাঁড়াননি। একইভাবে রয়েছেন কেদা বামফ্রন্ট থেকে আসা রেজ্জাক মোল্লা, শারীরিক অসুস্থতার জন্য তিনি এবার টিকিট পাননি। রাজ্যের দুটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর পর্যটন এবং উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের দায়িত্ব ছিল যথাক্রমে গৌতম দেব ও রবীন্দ্রনাথ ঘোষের ওপর। দুজনেই এবার ভোটে হেরে গেছেন। বাদ পড়েছেন নির্মল মাঝি। নির্মল মাঝিকে নিয়েও বেশ বিতর্ক হয়েছিল চিকিৎসক নিয়োগসংক্রান্ত প্রশ্নে। অন্যদিকে ভোটের প্রচারণায় তপন দাশগুপ্তর বিতর্কিত ভূমিকা গণমাধ্যমে সংবাদ শিরোনামে উঠে আসে। এজন্যই তাকেও বাদ পড়তে হলো।

বাদ পড়েছেন, অসীমা পাত্র, জাকির হোসেন, বিনয় বর্মণ, শান্তিরাম মাহাতো। গত মন্ত্রিসভায় পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নের দায়িত্বে ছিলেন শান্তিরাম মাহাতো কিন্তু পরবর্তী সময়ে তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ ওঠায় বাদ পড়তে হলো তাকে। আশীষ ব্যানার্জী, মন্টুরাম পাখিরা, গিয়াসুদ্দিন মোল্লা গত মন্ত্রিসভায় থাকলেও এবারের মন্ত্রিসভায় ঠাঁই হয়নি তাদের।

অন্যদিকে শুরু থেকেই তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, নয়া মন্ত্রিসভায় মহিলা এবং আদিবাসী মুখকে গুরুত্ব দেয়া হবে। মমতা তার মন্ত্রিসভায় তার কথা রেখেছেন। পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে শিউলি সাহা, হুমায়ুন কবীর, শ্রীকান্ত মাহাতোকে জায়গা দেয়া হচ্ছে নতুন মন্ত্রিসভায়। ঝাড়গ্রাম থেকে আসছেন বীরবাহা হাঁসদা। পূর্ব মেদিনীপুর থেকে আনুগত্যের পুরস্কার পেয়েছেন অখিল গিরি। দলবদলের কারণে পুরনো মন্ত্রিসভায় বেশ কয়েকটি দপ্তর ফাঁকা হয়েছিল। যেমন শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব ব্যানার্জী, বাচ্চু হাঁসদা। রাজনীতি থেকে সরে গেছেন পুরনো মন্ত্রিসভার ক্রীড়া দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী লক্ষ্মীরতন শুক্লা। সারদা কা-ে গ্রেপ্তার হওয়ার কারণে মন্ত্রিত্ব ছাড়তে হয়েছিল মদন মিত্রকে। এ বছর কামারহাটি থেকে জিতে এসেছেন তিনি। তবে নতুন মন্ত্রিসভায় প্রথম দফায় মদনের জায়গা হয়নি। সূত্রের খবর, আপাতত এই তালিকা থাকলেও পরে আরও কিছু নতুন সদস্যের জায়গা হতে পারে। কারণ, নিজের হাতে খুব বেশি দপ্তর রাখতে চান না মুখ্যমন্ত্রী।

গতবারের মতোই স্বরাষ্ট্র, স্বাস্থ্য ও ভূমি মন্ত্রণালয় তার নিজের হাতেই রেখে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এছাড়াও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন ও তথ্য-সংস্কৃতিসহ একাধিক মন্ত্রকের দায়িত্বে থাকবেন মমতা।

একাধিক মন্ত্রী যেমন আগের মন্ত্রকই পেয়েছেন, তেমনভাবে, অনেক মন্ত্রীর মন্ত্রকবদল করা হয়েছে। মন্ত্রিসভার হেভিওয়েটদের মধ্যে পার্থ চট্টোপাধ্যায় পেলেন শিল্প, বাণিজ্য, তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রক। সুব্রত মুখোপাধ্যায় পেলেন পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন এবং শিল্প পুনর্গঠন। তবে, এ বছর শিক্ষা মন্ত্রকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ব্রাত্য বসুকে। অমিত মিত্র পেলেন অর্থ, পরিকল্পনা ও সংখ্যাতত্ত্ব বিষয়ক মন্ত্রক।

বিরোধী দলীয় নেতা হলেন বিজেপি শুভেন্দু

অবশেষে বিরোধীদলীয় নেতা হলেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। এতদিন বিরপধীদলীয় নেতা কে হবেন শুভেন্দু না মুকুল এ নিয়ে দলের আন্দরে-বাইরে বেশ কয়েকদিন চলে চাপানউতোর। শেষ পর্যন্ত একুশের নির্বাচনে বিজেপির মুখ রক্ষা করেছেন যিনি তাকেই বেছে নিয়েছে গেরুয়া শিবির। বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবীশঙ্কর প্রসাদ সোমবার এমনটাই ঘোষণা করেছেন।

বিধানসভা দলনেতা কে হবেন এ নিয়ে চলছিল বেশ কয়েকদিন ধরে চাপানউতোর। সব জল্পনার অবসান ঘটল। একুশে নির্বাচনে বিজেপির মুখ রক্ষা করেছেন যিনি তাকেই বেছে নিল পদ্ম শিবির। বিজেপি সূত্রের খবর, এর আগে বিরোধী দলনেতা নির্বাচনের জন্য বিজেপির সব বিধায়কদের হেস্টিংসের বিজেপির নির্বাচনী কার্যালয়ে ডাকা হয়েছিল। তাদের সবার মতামতের ভিত্তিতে শুভেন্দু অধীকারীর হাতেই এই দায়িত্ব তুলে দেয় তারা। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ সোমবার এই প্রতিনিধিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে জল্পনা ছিল বিরোধী দলের নেতা কে হবেন মুকুল রায় না সুভেন্দু অধিকারী।

মুকুল রায়কে বাংলায় রাজনীতির ‘চাণক্য’ বলা হয়। বস্তুত যে যাই বলুন, তিনি দল বদলের পরেই ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে বেশ সাফল্য এনে দিয়েছিল গেরুয়া শিবিরকে। বিজেপির আন্দরে এমনটা মনে করেন অনেকেই। দীর্ঘ কাল পরে ২০২১-র ভোটে লড়েছেন এবং জিতেও এসেছেন কৃষ্ণনগর উত্তর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে। কিন্তু এতে মুকুল রায় খুব একটা খুশি নন বরং ক্ষুব্ধ।

বিজেপির প্রতি মোহভঙ্গ হয়েছে তার। কিন্তু সদ্য ভোট হলো, জিতলেনও তিনি। তার পরেও মুকুল রায় কেন আসন্তুষ্ট? রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন তার এই মোহভঙ্গের বেশ কারণ আছে।

ভোট পরবর্তী পর্যালোচনার জন্য বিজেপি রাজ্য সভাপতিসহ বেশ কয়েকজন বিজেপি নেতাকে দিল্লিতে তলব করেছে শীর্ষ নেতারা। তালিকায় মুকুল রায়ের নাম থাকলেও শারীরিক অসুস্থতার কারণ সেই বৈঠকে দিল্লি যেতে পারবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন মুকুল রায়। শুধুই অসুস্থতা না এর পেছনে অন্য কোন কারণ আছে তা নিয়ে বিজেপি শিবিরে জল্পনা চলে।