সাইফুল ইসলাম চৌধুরী
সারা পৃথিবী আজ এক নীরব ঘাতকের আক্রমণে মুমূর্ষু। সরব পৃথিবী অজানা আতঙ্কে নীরব-নিস্তব্ধ। দুনিয়ার চিরচেনা রূপ যেন আজ সম্পূর্ণই অচেনা। আগের সেই কোলাহল, প্রাণচাঞ্চল্য আজ আর নেই। সূর্যের উদয়াস্ত আছে। নেই প্রকৃত আলো। চারিদিকে অন্ধকার আর অন্ধকার। মাটির উপরের দাপুটে অনেক চেনা মুখ আজ মাটির নিচে। খসে পড়েছে অনেক তারকা। বিশ্বকে মাতিয়ে রাখা অনেক কণ্ঠ বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। পৃথিবীতে আলো ছড়ানো অনেক সূর্যসন্তান নিভে গেছে অকালে। আয়ের চাকা বন্ধ। অনেকেই আজ সর্বহারা। আকস্মিক এক ঝড়। তছনছ করে দিয়েছে সবকিছু। পরিবর্তন করে দিয়েছে পৃথিবীর গতিপথ। পাল্টে দিয়েছে জীবনযাত্রা। ভেঙে দিয়েছে স্বপ্ন। গুড়িয়ে দিয়েছে প্রত্যাশার রাজপ্রাসাদ।
পৃথিবীর সব স্বাধীন দেশে সাংবিধানিক সরকার থাকলেও এখন সাতশ’ কোটি মানুষের এ গোটা দুনিয়ায় রাজত্ব এক অদৃশ্য শক্তির। সেই অদৃশ্য রাজার নাম মহামারি করোনাভাইরাস। নভেল করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯। এ অদৃশ্য শক্তির আগমন ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। মরণঘাতী ভাইরাস আর চীনের উহানে সীমাবদ্ধ নেই। ছড়িয়ে পড়েছে পুরো বিশ্বে। যদি বলি তাকে ছাড়া পৃথিবীর কোন দেশ ও অঞ্চল নেই, তাহলে একবিন্দুও বাড়িয়ে বলা হবে না। তার আধিপত্য এখন সবখানে। গোটা দুনিয়া করোনা যুদ্ধে লিপ্ত। পৃথিবীর বাঘা-বাঘা দেশও করোনার কাছে অসহায়। এ যাবত এ গোপন ঘাতক ওপেন কেড়ে নিয়েছে পৃথিবীর তেত্রিশ লাখের কাছাকাছি তাজাপ্রাণ। কত যে বাবা-মায়ের বুক খালি করেছে; কত স্ত্রী অকালে সাদা শাড়ি বরণ করেছে; কত সন্তান এতিমের পরিচয় সঙ্গী করেছে; কত বাবা-মায়ের অবুঝ শিশুটি চিরদিনের জন্য চোখ বুঁজেছে তার কোন অন্ত নেই। আরো কত ফুল অকালে ঝরে যাবে, কত জীবনবাতি অবেলায় নিভে যাবে, আল্লাহ মালুম।
করোনা মহামারি প্রথম ঢেউ থেকে দ্বিতীয় ঢেউ বেশি ভয়াবহ। আরও বেশি শক্তিধর। হাসপাতালের সিটে কাতরানো করোনা রোগীদের কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে আসছে। একটু বাঁচার আকুতি। কৃত্রিম অক্সিজেনের অভাবে অনেক হাসপাতালের অসহায় আত্মসমর্পণ। হাসপাতালে সিট খালি নেই। আইসিইউ বেডের সংকট। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এগিয়ে দেশগুলোর চিত্র আরও করুণ। মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে উন্নত বিশ্বের দেশসমূহ। মেধায় যারা চাঁদের দেশে পৌঁছতে সক্ষম তারাও ব্যর্থ করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কারে। করোনার ভয়াবহতা এতদিন দূর থেকে দেখলেও, এখন একেবারে নিকটে। সীমান্তের ওপরে (ভারত) জ্বলছে! শ্মশানে জায়গা নেই। সৎকারের মানুষ নেই। দিল্লির রাস্তায় পড়ে আছে করোনায় মৃতের লাশ। চলছে মহামারি করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। প্রতিদিন ভাঙছে করোনায় প্রাণহানি ও আক্রান্তের রেকর্ড। পিছিয়ে নেই প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশও। একদিনে শতের ওপর মৃত্যু দেখেছে বাংলাদেশ।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে দেশে চলছে কড়াকড়ি লকডাউন। সরকার বেধে দিয়েছে স্বাস্থ্যবিধি। মহামারি থেকে বাঁচতে জনসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। শারীরিক দূরত্ব বজায় চলা। বিশ্বময় একটিই সেøাগান, ঘরে থাকুন, মুখে মাস্ক পড়ুন। ঘরে থাকাটাই যখন এ যুদ্ধ জয়ের প্রধান হাতিয়ার। শারীরিক দূরত্বে থেকে মাস্ক পড়াটাই যখন মহামারির প্রাথমিক প্রতিষেধক। ভয়ে আতঙ্কে সচেতন মহলের যখন ইয়া নফছি নফছি অবস্থা। তখন আমাদের দেশের এক শ্রেণির অদম্য শপিং পাগল দিব্বি ঘুরে বেড়াচ্ছে! যেখানে বলা হচ্ছে জনসমাগম এড়িয়ে চলতে, সেখানে তারা গাদাগাদির প্রতিযোগিতা লাগিয়ে দিয়েছে। ন্যূনতম শারীরিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই। হাজার টাকার শপিং করতে পারে কিন্তু জীবন বাঁচাতে পাঁচ টাকার মাস্ক কিনতে পারে না।
শপিংমল থেকে শুরু করে সাধারণ দোকানপাট ও ফুটপাতে মানুষ ঈদের জন্য কেনাকাটায় হুমড়ি খেয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে। এ দৃশ্য শুধু ঢাকাতেই নয় মফস্বল শহর, উপজেলা এবং গ্রামের বড় বড় বাজারেও দেখা যাচ্ছে। শুধু ক্রেতারাই নয়, বিক্রেতাদের বেশিরভাগই মাস্ক ঠিকমতো পরছেন না, দোকানে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখারও দৃশ্য চোখে পড়ে না, হাত ধুয়ে কিংবা হ্যান্ড স্যানিটাইজ করে শপিংমলে প্রবেশ করার নিয়মও তেমন কেউ মানছেন না। সীমান্তের ওপারের আগুন আমাদের আতঙ্কিত করলেও সচেতন করতে পারেনি। এপারের কিছু যুবক-যুবতী, নারী-পুরুষ বুঝতেই চাইছে না, মার্কেটে যে নতুন কাপড়ের সাথে মরণঘাতী করোনা ফ্রি পাওয়া যাচ্ছে।
আসুন এবার ঈদ প্রিয়জনকে বাঁচাতে প্রিয়জনের কাছে গিয়ে নয় বরং প্রিয়জনের জন্য প্রভুর কাছে দোয়ার মাধ্যমে কাটাই। যেখানে আছি সেখানে সুস্থ থেকে পরিবারের সাথে কাটাই। এটাই একমাত্র ঈদ নয়। কিন্তু মানুষের জীবন একটাই। বেঁচে থাকলে অসংখ্যবার ঈদ করা যাবে। বেঁচে থাকলে অনেক ভ্রমণ করা যাবে। করোনা থেকে মুক্তি পেয়ে বিশ্ব যেন তার চিরচেনা রূপে আবার ফিরে যায়, সেই প্রার্থনা করি। অন্ধকার কেটে যেন আলোর ঝলকানিতে ভরে উঠে এ নীল-গগন।
[লেখক : প্রাবন্ধিক]
মঙ্গলবার, ১১ মে ২০২১ , ২৮ বৈশাখ ১৪২৮ ২৮ রমজান ১৪৪২
সাইফুল ইসলাম চৌধুরী
সারা পৃথিবী আজ এক নীরব ঘাতকের আক্রমণে মুমূর্ষু। সরব পৃথিবী অজানা আতঙ্কে নীরব-নিস্তব্ধ। দুনিয়ার চিরচেনা রূপ যেন আজ সম্পূর্ণই অচেনা। আগের সেই কোলাহল, প্রাণচাঞ্চল্য আজ আর নেই। সূর্যের উদয়াস্ত আছে। নেই প্রকৃত আলো। চারিদিকে অন্ধকার আর অন্ধকার। মাটির উপরের দাপুটে অনেক চেনা মুখ আজ মাটির নিচে। খসে পড়েছে অনেক তারকা। বিশ্বকে মাতিয়ে রাখা অনেক কণ্ঠ বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। পৃথিবীতে আলো ছড়ানো অনেক সূর্যসন্তান নিভে গেছে অকালে। আয়ের চাকা বন্ধ। অনেকেই আজ সর্বহারা। আকস্মিক এক ঝড়। তছনছ করে দিয়েছে সবকিছু। পরিবর্তন করে দিয়েছে পৃথিবীর গতিপথ। পাল্টে দিয়েছে জীবনযাত্রা। ভেঙে দিয়েছে স্বপ্ন। গুড়িয়ে দিয়েছে প্রত্যাশার রাজপ্রাসাদ।
পৃথিবীর সব স্বাধীন দেশে সাংবিধানিক সরকার থাকলেও এখন সাতশ’ কোটি মানুষের এ গোটা দুনিয়ায় রাজত্ব এক অদৃশ্য শক্তির। সেই অদৃশ্য রাজার নাম মহামারি করোনাভাইরাস। নভেল করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯। এ অদৃশ্য শক্তির আগমন ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। মরণঘাতী ভাইরাস আর চীনের উহানে সীমাবদ্ধ নেই। ছড়িয়ে পড়েছে পুরো বিশ্বে। যদি বলি তাকে ছাড়া পৃথিবীর কোন দেশ ও অঞ্চল নেই, তাহলে একবিন্দুও বাড়িয়ে বলা হবে না। তার আধিপত্য এখন সবখানে। গোটা দুনিয়া করোনা যুদ্ধে লিপ্ত। পৃথিবীর বাঘা-বাঘা দেশও করোনার কাছে অসহায়। এ যাবত এ গোপন ঘাতক ওপেন কেড়ে নিয়েছে পৃথিবীর তেত্রিশ লাখের কাছাকাছি তাজাপ্রাণ। কত যে বাবা-মায়ের বুক খালি করেছে; কত স্ত্রী অকালে সাদা শাড়ি বরণ করেছে; কত সন্তান এতিমের পরিচয় সঙ্গী করেছে; কত বাবা-মায়ের অবুঝ শিশুটি চিরদিনের জন্য চোখ বুঁজেছে তার কোন অন্ত নেই। আরো কত ফুল অকালে ঝরে যাবে, কত জীবনবাতি অবেলায় নিভে যাবে, আল্লাহ মালুম।
করোনা মহামারি প্রথম ঢেউ থেকে দ্বিতীয় ঢেউ বেশি ভয়াবহ। আরও বেশি শক্তিধর। হাসপাতালের সিটে কাতরানো করোনা রোগীদের কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে আসছে। একটু বাঁচার আকুতি। কৃত্রিম অক্সিজেনের অভাবে অনেক হাসপাতালের অসহায় আত্মসমর্পণ। হাসপাতালে সিট খালি নেই। আইসিইউ বেডের সংকট। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এগিয়ে দেশগুলোর চিত্র আরও করুণ। মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে উন্নত বিশ্বের দেশসমূহ। মেধায় যারা চাঁদের দেশে পৌঁছতে সক্ষম তারাও ব্যর্থ করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কারে। করোনার ভয়াবহতা এতদিন দূর থেকে দেখলেও, এখন একেবারে নিকটে। সীমান্তের ওপরে (ভারত) জ্বলছে! শ্মশানে জায়গা নেই। সৎকারের মানুষ নেই। দিল্লির রাস্তায় পড়ে আছে করোনায় মৃতের লাশ। চলছে মহামারি করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। প্রতিদিন ভাঙছে করোনায় প্রাণহানি ও আক্রান্তের রেকর্ড। পিছিয়ে নেই প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশও। একদিনে শতের ওপর মৃত্যু দেখেছে বাংলাদেশ।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে দেশে চলছে কড়াকড়ি লকডাউন। সরকার বেধে দিয়েছে স্বাস্থ্যবিধি। মহামারি থেকে বাঁচতে জনসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। শারীরিক দূরত্ব বজায় চলা। বিশ্বময় একটিই সেøাগান, ঘরে থাকুন, মুখে মাস্ক পড়ুন। ঘরে থাকাটাই যখন এ যুদ্ধ জয়ের প্রধান হাতিয়ার। শারীরিক দূরত্বে থেকে মাস্ক পড়াটাই যখন মহামারির প্রাথমিক প্রতিষেধক। ভয়ে আতঙ্কে সচেতন মহলের যখন ইয়া নফছি নফছি অবস্থা। তখন আমাদের দেশের এক শ্রেণির অদম্য শপিং পাগল দিব্বি ঘুরে বেড়াচ্ছে! যেখানে বলা হচ্ছে জনসমাগম এড়িয়ে চলতে, সেখানে তারা গাদাগাদির প্রতিযোগিতা লাগিয়ে দিয়েছে। ন্যূনতম শারীরিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই। হাজার টাকার শপিং করতে পারে কিন্তু জীবন বাঁচাতে পাঁচ টাকার মাস্ক কিনতে পারে না।
শপিংমল থেকে শুরু করে সাধারণ দোকানপাট ও ফুটপাতে মানুষ ঈদের জন্য কেনাকাটায় হুমড়ি খেয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে। এ দৃশ্য শুধু ঢাকাতেই নয় মফস্বল শহর, উপজেলা এবং গ্রামের বড় বড় বাজারেও দেখা যাচ্ছে। শুধু ক্রেতারাই নয়, বিক্রেতাদের বেশিরভাগই মাস্ক ঠিকমতো পরছেন না, দোকানে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখারও দৃশ্য চোখে পড়ে না, হাত ধুয়ে কিংবা হ্যান্ড স্যানিটাইজ করে শপিংমলে প্রবেশ করার নিয়মও তেমন কেউ মানছেন না। সীমান্তের ওপারের আগুন আমাদের আতঙ্কিত করলেও সচেতন করতে পারেনি। এপারের কিছু যুবক-যুবতী, নারী-পুরুষ বুঝতেই চাইছে না, মার্কেটে যে নতুন কাপড়ের সাথে মরণঘাতী করোনা ফ্রি পাওয়া যাচ্ছে।
আসুন এবার ঈদ প্রিয়জনকে বাঁচাতে প্রিয়জনের কাছে গিয়ে নয় বরং প্রিয়জনের জন্য প্রভুর কাছে দোয়ার মাধ্যমে কাটাই। যেখানে আছি সেখানে সুস্থ থেকে পরিবারের সাথে কাটাই। এটাই একমাত্র ঈদ নয়। কিন্তু মানুষের জীবন একটাই। বেঁচে থাকলে অসংখ্যবার ঈদ করা যাবে। বেঁচে থাকলে অনেক ভ্রমণ করা যাবে। করোনা থেকে মুক্তি পেয়ে বিশ্ব যেন তার চিরচেনা রূপে আবার ফিরে যায়, সেই প্রার্থনা করি। অন্ধকার কেটে যেন আলোর ঝলকানিতে ভরে উঠে এ নীল-গগন।
[লেখক : প্রাবন্ধিক]