আফগানিস্তানে যাওয়ার প্রস্তুতিকালে গ্রেপ্তার ৪ জঙ্গি

রাজধানীতে নাশকতার প্রস্তুতিকালে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া আনসার আল ইসলামের চার সদস্য আফগানিস্তান যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এই লক্ষ্যে জঙ্গি সংগঠন থেকে তাদের পাসপোর্ট তৈরি করতে বলা হয়েছে। গ্রেপ্তার চারজন সেই মোতাবেক কাজও করছিল কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। চারজনকে গত শনিবার ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)। চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদে আফগান যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে সিটিটিসি।

গ্রেপ্তার চারজন হলোÑ রাজধানীর অতীশ দীপঙ্কর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর ছাত্র জসিমুল ইসলাম জ্যাক (২৫), হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ থানার মারকাজুস সুন্নাহ আল ইসলামিয়া মাদরাসার শিক্ষক আব্দুল মুকিত (২৯), সিলেটের আল হিদায়া ইসলামিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র আমিনুল হক (২০) এবং সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের অনার্সের শিক্ষার্থী সজীব ইখতিয়ার (২০)। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছে, তাদের সহযোগীরা চট্টগ্রাম হয়ে আফগানিস্তানে গেছেন। আর সিলেট থেকে আব্দুল্লাহ নামের এক ব্যক্তি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সবার পাসপোর্ট প্রস্তুত করতে বলেছেন। তবে এই আব্দুল্লাহ কে- সে বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারেননি তদন্তকারীরা। গ্রেপ্তার সজীব ইখতিয়ারের বরাত দিয়ে তদন্তকারীরা বলছেন, তার বন্ধু রাজ্জাক ঈদের আগেই তাকে আফগানিস্তানে নেয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করছিলেন। সিলেটের আব্দুল্লাহও তাকে চাপ দিচ্ছিলেন। সিটিটিসির কর্মকর্তারা বলছেন, সম্প্রতি বাংলাদেশের তিন তরুণ আফগানিস্তানে ‘হিজরত’ করতে বাড়ি ছেড়েছেন। তাদের মধ্যে দুজনের সেখানে পৌঁছানোর বিষয়েও তারা নিশ্চিত হয়েছেন। এদের মধ্যে কুমিল্লার তরুণ আব্দুর রাজ্জাক ও সিলেটের শিব্বির আহমেদ আফগানিস্তানে পৌঁছেছেন বলে পুলিশের কাছে খবর রয়েছে।

রাজ্জাক সিলেটে একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনার পাশাপাশি গাড়ি চালাতেন। তার সন্ধান চেয়ে ভাই সালমান খান ২৫ মার্চ সিলেটের কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন। আর রবিউল নামে নোয়াখালীর এক তরুণও আফগানিস্তানে পাড়ি জমাতে বাড়ি ছেড়েছেন বলে জানালেও তার অবস্থান নিয়ে নিশ্চিত নয় পুলিশ। গ্রেপ্তার চারজনও আফগানিস্তানে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল বলে নিশ্চিত হয়েছে সিটিটিসি।

সিটিটিসির প্রধান ডিআইজি আসাদুজ্জামান গত রোববার সাংবাদিকদের বলেন, সম্প্রতি তারা একটি ‘মেসেঞ্জার গ্রুপের’ সন্ধান পেয়েছেন। যেটা জঙ্গিবাদী মতাদর্শ প্রচার ও কর্মকা- পরিচালনার একটি নেটওয়ার্ক। সায়েন্স প্রোজেক্ট’ নামের ওই চ্যাট গ্রুপে ১০ তরুণ যুক্ত ছিলেন। এদের মধ্যে দুজন আফগানিস্তান গেছেন, আরেকজনের বিষয়টি নিশ্চিত নয়। গত শনিবার যে চার তরুণকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তারাও ‘সায়েন্স প্রোজেক্ট’ নামের ওই মেসেঞ্জার গ্রুপে যুক্ত ছিলেন বলে আসাদুজ্জামান জানিয়েছিলেন।

তবে ওই তরুণেরা পাসপোর্ট ব্যবহার করে দেশ ছেড়েছেন এমন কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই। সিটিটিসি সূত্রে জানা গেছে, ‘সায়েন্স প্রোজেক্ট’ গ্রুপটি গত বছরের অগাস্টে তৈরি করা হলেও গ্রেপ্তার চারজনের মধ্যে পরিচয় দুই বছরের বেশি সময় ধরে। গত দুই মাসের মধ্যে তাদের ‘আফগানযাত্রার প্রক্রিয়া’ শুরু হয়। তারাও বাংলাদেশে ‘নাশকতা’ ঘটিয়ে আফগানিস্তানে ‘হিজরত’ করার পরিকল্পনায় ছিলেন জানিয়ে ডিআইজি আসাদুজ্জামান বলেন, আনসার আল ইসলাম উপমহাদেশের আল-কায়েদার শাখা বলে নিজেদের দাবি করে। সেই সূত্র ধরেই তারা হয়তোবা আফগানিস্তানে হিজরত করতে গিয়ে থাকতে পারে। তবে এটা তাদের ভাষ্য। এ বিষয়ে আমরা এখনও নিশ্চিত হতে পারিনি।

বুধবার, ১২ মে ২০২১ , ২৯ বৈশাখ ১৪২৮ ২৯ রমজান ১৪৪২

আফগানিস্তানে যাওয়ার প্রস্তুতিকালে গ্রেপ্তার ৪ জঙ্গি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

রাজধানীতে নাশকতার প্রস্তুতিকালে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া আনসার আল ইসলামের চার সদস্য আফগানিস্তান যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এই লক্ষ্যে জঙ্গি সংগঠন থেকে তাদের পাসপোর্ট তৈরি করতে বলা হয়েছে। গ্রেপ্তার চারজন সেই মোতাবেক কাজও করছিল কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। চারজনকে গত শনিবার ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)। চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদে আফগান যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে সিটিটিসি।

গ্রেপ্তার চারজন হলোÑ রাজধানীর অতীশ দীপঙ্কর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর ছাত্র জসিমুল ইসলাম জ্যাক (২৫), হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ থানার মারকাজুস সুন্নাহ আল ইসলামিয়া মাদরাসার শিক্ষক আব্দুল মুকিত (২৯), সিলেটের আল হিদায়া ইসলামিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র আমিনুল হক (২০) এবং সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের অনার্সের শিক্ষার্থী সজীব ইখতিয়ার (২০)। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছে, তাদের সহযোগীরা চট্টগ্রাম হয়ে আফগানিস্তানে গেছেন। আর সিলেট থেকে আব্দুল্লাহ নামের এক ব্যক্তি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সবার পাসপোর্ট প্রস্তুত করতে বলেছেন। তবে এই আব্দুল্লাহ কে- সে বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারেননি তদন্তকারীরা। গ্রেপ্তার সজীব ইখতিয়ারের বরাত দিয়ে তদন্তকারীরা বলছেন, তার বন্ধু রাজ্জাক ঈদের আগেই তাকে আফগানিস্তানে নেয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করছিলেন। সিলেটের আব্দুল্লাহও তাকে চাপ দিচ্ছিলেন। সিটিটিসির কর্মকর্তারা বলছেন, সম্প্রতি বাংলাদেশের তিন তরুণ আফগানিস্তানে ‘হিজরত’ করতে বাড়ি ছেড়েছেন। তাদের মধ্যে দুজনের সেখানে পৌঁছানোর বিষয়েও তারা নিশ্চিত হয়েছেন। এদের মধ্যে কুমিল্লার তরুণ আব্দুর রাজ্জাক ও সিলেটের শিব্বির আহমেদ আফগানিস্তানে পৌঁছেছেন বলে পুলিশের কাছে খবর রয়েছে।

রাজ্জাক সিলেটে একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনার পাশাপাশি গাড়ি চালাতেন। তার সন্ধান চেয়ে ভাই সালমান খান ২৫ মার্চ সিলেটের কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন। আর রবিউল নামে নোয়াখালীর এক তরুণও আফগানিস্তানে পাড়ি জমাতে বাড়ি ছেড়েছেন বলে জানালেও তার অবস্থান নিয়ে নিশ্চিত নয় পুলিশ। গ্রেপ্তার চারজনও আফগানিস্তানে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল বলে নিশ্চিত হয়েছে সিটিটিসি।

সিটিটিসির প্রধান ডিআইজি আসাদুজ্জামান গত রোববার সাংবাদিকদের বলেন, সম্প্রতি তারা একটি ‘মেসেঞ্জার গ্রুপের’ সন্ধান পেয়েছেন। যেটা জঙ্গিবাদী মতাদর্শ প্রচার ও কর্মকা- পরিচালনার একটি নেটওয়ার্ক। সায়েন্স প্রোজেক্ট’ নামের ওই চ্যাট গ্রুপে ১০ তরুণ যুক্ত ছিলেন। এদের মধ্যে দুজন আফগানিস্তান গেছেন, আরেকজনের বিষয়টি নিশ্চিত নয়। গত শনিবার যে চার তরুণকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তারাও ‘সায়েন্স প্রোজেক্ট’ নামের ওই মেসেঞ্জার গ্রুপে যুক্ত ছিলেন বলে আসাদুজ্জামান জানিয়েছিলেন।

তবে ওই তরুণেরা পাসপোর্ট ব্যবহার করে দেশ ছেড়েছেন এমন কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই। সিটিটিসি সূত্রে জানা গেছে, ‘সায়েন্স প্রোজেক্ট’ গ্রুপটি গত বছরের অগাস্টে তৈরি করা হলেও গ্রেপ্তার চারজনের মধ্যে পরিচয় দুই বছরের বেশি সময় ধরে। গত দুই মাসের মধ্যে তাদের ‘আফগানযাত্রার প্রক্রিয়া’ শুরু হয়। তারাও বাংলাদেশে ‘নাশকতা’ ঘটিয়ে আফগানিস্তানে ‘হিজরত’ করার পরিকল্পনায় ছিলেন জানিয়ে ডিআইজি আসাদুজ্জামান বলেন, আনসার আল ইসলাম উপমহাদেশের আল-কায়েদার শাখা বলে নিজেদের দাবি করে। সেই সূত্র ধরেই তারা হয়তোবা আফগানিস্তানে হিজরত করতে গিয়ে থাকতে পারে। তবে এটা তাদের ভাষ্য। এ বিষয়ে আমরা এখনও নিশ্চিত হতে পারিনি।