শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বেড়েছে ২৯ মে পর্যন্ত, এরপরও খোলা অনিশ্চিত

করোনা সংক্রমণের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি আরেক দফা বাড়াল সরকার। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ২৯ মে পর্যন্ত ছুটি থাকবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। টানা এক বছরের বেশি সময় বন্ধ থাকায় আগামী ২৩ মে থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত ছিল।

এদিকে দীর্ঘ ছুটির কারণে সীমিত পরিসরে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং গত বছর একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের শ্রেণী কার্যক্রম চালু করার চিন্তাভাবনা করছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।

দেশে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে মানুষের চলাচল ও সার্বিক কাজকর্মে চলমান বিধিনিষেধ আরও এক সপ্তাহ বাড়িয়ে গতকাল প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। এর আলোকেই দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান ছুটি আরেক দফা বাড়িয়ে ২৯ মে পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় গতকাল এ সংক্রান্ত পৃথক আদেশ জারি করেছে। তবে আগামী ২৯ মে’র পরও স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় খোলা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে বলে মনে করছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) প্রফেসর শাহেদুল কবির চৌধুরী গতকাল সংবাদকে জানিয়েছেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি ২৯ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ২৯ মে’র পরও কবে নাগাদ স্কুল-কলেজ খোলা যাবে সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না। এই অনিশ্চিত পরিস্থিতির কারণে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং গতবার যারা একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছে, তাদের ক্লাস কিভাবে নেয়া যায় সেটা বিশেষভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। কারণ গতবার যারা একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছে তারা একদিনও ক্লাসে বসার সুযোগ পায়নি।’

পূর্বঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ থেকে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল খুলে দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে সেখান থেকে সরে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা বলছেন, সরকার বিধিনিষেধ আগামী ২৩ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এই অবস্থায় হল খুলে দেয়া সম্ভব নয়। কবে নাগাদ তা খুলে দেয়া হবে তাও নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছেন না। তাছাড়া দেশের সব শিক্ষক, কর্মচারী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের এক লাখ ৩০ হাজার আবাসিক শিক্ষার্থীর টিকা গ্রহণ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে পূর্বনির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী ২৪ মে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলছে না।

করোনা পরিস্থিতিতে আগামী ২৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খোলার যাবে কিনা- তা পর্যালোচনা করতে গত ৫ মে বৈঠকে বসেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা। ওই বৈঠকেও করোনা পরিস্থিতিতে কী করণীয় তা নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েন তারা। এ কারণে ১৭ মে আবাসিক হল খুলে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক ভিসি তখন জানিয়েছিলেন। আগামী জুন থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ২০২০-২১ সালের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি শীঘ্রই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার নতুন তারিখ ঘোষণা দেবেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

মাউশি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরকারি বিধিনিষেধ প্রত্যাহার হলে পুনরায় ‘অ্যাসাইনমেন্ট’ শুরু করা যাবে। সংক্রমণ কমতে থাকলে একটা সময় সীমিত আকারে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার জন্য তৈরি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস পড়ানো শুরু করা যাবে। অন্যান্য ক্লাসও শুরু করা হবে পর্যায়ক্রমে।

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি গত ২২ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, দেশের সরকারি বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষে সরাসরি ক্লাস শুরু হবে ঈদুল ফিতরের পর আগামী ২৪ মে থেকে। তার এক সপ্তাহ আগে ১৭ মে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবাসিক হল খুলে দেয়া হবে। তার আগে অবশ্যই করোনার টিকা নিতে হবে। হল খোলার আগেই আবাসিক শিক্ষার্থী, আবাসিক হলের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের টিকার ব্যবস্থা করা হবে।

করোনার কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে একটানা ১৪ মাস ধরে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এর ফলে প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থী মারাত্মক সমস্যা পড়েছে। ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের অনেকে ঘাটতি নিয়ে ওপরের ক্লাসে উঠছে। কতটুকু শিখল, সেটাও যাচাই করা যাচ্ছে না।

সর্বশেষ গত ১৫ মে রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা এমএ খায়ের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে অতি সম্প্রতি চলমান কোভিড-১৯ অতিমারীতে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি পরিলক্ষিত হওয়ায় শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মচারী ও অভিভাবকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও সার্বিক নিরাপত্তার বিবেচনায় এবং কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির সঙ্গে পরামর্শক্রমে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি আগামী ২৯ মে পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই সময়ে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন’।

সোমবার, ১৭ মে ২০২১ , ৩০ বৈশাখ ১৪২৮ ৩০ রমজান ১৪৪২

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বেড়েছে ২৯ মে পর্যন্ত, এরপরও খোলা অনিশ্চিত

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

করোনা সংক্রমণের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি আরেক দফা বাড়াল সরকার। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ২৯ মে পর্যন্ত ছুটি থাকবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। টানা এক বছরের বেশি সময় বন্ধ থাকায় আগামী ২৩ মে থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত ছিল।

এদিকে দীর্ঘ ছুটির কারণে সীমিত পরিসরে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং গত বছর একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের শ্রেণী কার্যক্রম চালু করার চিন্তাভাবনা করছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।

দেশে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে মানুষের চলাচল ও সার্বিক কাজকর্মে চলমান বিধিনিষেধ আরও এক সপ্তাহ বাড়িয়ে গতকাল প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। এর আলোকেই দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান ছুটি আরেক দফা বাড়িয়ে ২৯ মে পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় গতকাল এ সংক্রান্ত পৃথক আদেশ জারি করেছে। তবে আগামী ২৯ মে’র পরও স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় খোলা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে বলে মনে করছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) প্রফেসর শাহেদুল কবির চৌধুরী গতকাল সংবাদকে জানিয়েছেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি ২৯ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ২৯ মে’র পরও কবে নাগাদ স্কুল-কলেজ খোলা যাবে সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না। এই অনিশ্চিত পরিস্থিতির কারণে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং গতবার যারা একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছে, তাদের ক্লাস কিভাবে নেয়া যায় সেটা বিশেষভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। কারণ গতবার যারা একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছে তারা একদিনও ক্লাসে বসার সুযোগ পায়নি।’

পূর্বঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ থেকে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল খুলে দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে সেখান থেকে সরে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা বলছেন, সরকার বিধিনিষেধ আগামী ২৩ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এই অবস্থায় হল খুলে দেয়া সম্ভব নয়। কবে নাগাদ তা খুলে দেয়া হবে তাও নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছেন না। তাছাড়া দেশের সব শিক্ষক, কর্মচারী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের এক লাখ ৩০ হাজার আবাসিক শিক্ষার্থীর টিকা গ্রহণ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে পূর্বনির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী ২৪ মে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলছে না।

করোনা পরিস্থিতিতে আগামী ২৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খোলার যাবে কিনা- তা পর্যালোচনা করতে গত ৫ মে বৈঠকে বসেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা। ওই বৈঠকেও করোনা পরিস্থিতিতে কী করণীয় তা নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েন তারা। এ কারণে ১৭ মে আবাসিক হল খুলে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক ভিসি তখন জানিয়েছিলেন। আগামী জুন থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ২০২০-২১ সালের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি শীঘ্রই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার নতুন তারিখ ঘোষণা দেবেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

মাউশি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরকারি বিধিনিষেধ প্রত্যাহার হলে পুনরায় ‘অ্যাসাইনমেন্ট’ শুরু করা যাবে। সংক্রমণ কমতে থাকলে একটা সময় সীমিত আকারে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার জন্য তৈরি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস পড়ানো শুরু করা যাবে। অন্যান্য ক্লাসও শুরু করা হবে পর্যায়ক্রমে।

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি গত ২২ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, দেশের সরকারি বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষে সরাসরি ক্লাস শুরু হবে ঈদুল ফিতরের পর আগামী ২৪ মে থেকে। তার এক সপ্তাহ আগে ১৭ মে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবাসিক হল খুলে দেয়া হবে। তার আগে অবশ্যই করোনার টিকা নিতে হবে। হল খোলার আগেই আবাসিক শিক্ষার্থী, আবাসিক হলের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের টিকার ব্যবস্থা করা হবে।

করোনার কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে একটানা ১৪ মাস ধরে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এর ফলে প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থী মারাত্মক সমস্যা পড়েছে। ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের অনেকে ঘাটতি নিয়ে ওপরের ক্লাসে উঠছে। কতটুকু শিখল, সেটাও যাচাই করা যাচ্ছে না।

সর্বশেষ গত ১৫ মে রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা এমএ খায়ের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে অতি সম্প্রতি চলমান কোভিড-১৯ অতিমারীতে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি পরিলক্ষিত হওয়ায় শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মচারী ও অভিভাবকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও সার্বিক নিরাপত্তার বিবেচনায় এবং কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির সঙ্গে পরামর্শক্রমে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি আগামী ২৯ মে পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই সময়ে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন’।