রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ত্রাস গাংচিল বাহিনীর নাঈম আটক

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের এসি গাংচিল বাহিনীর সদস্য হত্যা ধর্ষণসহ ১৩ মামলার আসামি মো. নাঈমকে আটক করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাব ২। গত শনিবার মোহাম্মদপুরের আক্কাসনগর এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়।

র‌্যাব-২ এর এএসপি মো. ফজলুল হক জানিয়েছেন, গাংচিল বাহিনীর অন্যতম সন্ত্রসী মো. নাঈম বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড লম্বু মোশারফের ভাগিনা। আটক হওয়া নাইমের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, পুলিশ অ্যাসল্টসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১৩টির বেশি মামলা রয়েছে। বেশ কিছু অভিযোগের কারণে নাঈমকে দীর্ঘদিন পর্যবেক্ষণে রেখেছিল র‌্যাব। শেষ পর্যন্ত গত শনিবার তাকে আটক করা সম্ভব হয়েছে। এ সময় তার কাছ থেকে বিদেশি পিস্তল ও গুলি উদ্ধার করা হয়। এএসপি মো. ফজুলল হক বলেন, ভাগিনা নাঈম ও তার সহযোগীরা মোহাম্মদপুর থানার ঢাকা উদ্যান এলাকায় কিশোর গ্যাং-এর নেতৃত্ব দিতো ও আশপাশের এলাকায় চাঁদাবাজি ও ছিনতাইসহ সব অপরাধমূলক কর্মকা- করে আসছিল। জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানায়, তার সহযোগীরা দিনে ভূমি দখল ও ব্যবসায়ীদের কাছে হতে ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা আদায় করতো। সন্ধ্যার পর থেকে মাদকব্যবসা, চুরি, ডাকাতিসহবিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ করে আসছিল।

র‌্যাব জানিয়েছে মোহাম্মদপুর এলাকায় গাংচিল বাহিনীর ব্যাপক আধিপত্য। এ বাহিনীর সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজি, দখল বাণিজ্য, মানুষকে কথায় কথায় গুলি এমনকি হত্যা করা মামুলি বিষয় ছিল। এমনকি পুলিশের সদস্যরা এ বাহিনীর সন্ত্রাসীদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছে। এতোসব অভিযোগের মধ্যেও এ বাহিনীর সদস্যরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। এ বাহিনীর অন্যতম সেকেন্ড ইন কমান্ড লম্বু মোশাররফ এবং তার ভাগিনা মো. নাইম মূলত এ বাহিনীর মূল শক্তি। তাদের নিয়ন্ত্রণে গোটা মোহাম্মদপুর এলাকায় চলে ত্রাসের রাজস্ব। তবে বেশ কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে গত শনিবার নাইমকে আটক করা সম্ভব হলেও লম্বু মোশাররফ এখনও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। র‌্যাব জানিয়েছে, এ বাহিনীর আরও অন্যান্য সদস্যদের আটক করার জন্য র‌্যাবের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যদের নিয়ে গঠিত গাংচিল বাহিনী গোটা মোহাম্মদপুর এলাকায় মূর্তিমান আতঙ্ক ছিল। সাধারণ মানুষ এ বাহিনীর সদস্যদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছিল। মূলত নাইমের নেতৃত্বে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে চাঁদাবাজি, মারধর, দখলের কার্যক্রম চলতো। নাইম আটক হওয়ার খবরে তার বাহিনীর অন্যন্যা সহযোগিরা আত্মগোপনে চলে গেছে। ভাগিনা নাইমকে আটকের খবরে এলাকায় সস্তি ফিরে এসেছে সাধারণ মানুষের মাঝে। ভাগিনা নাইমের বাড়ি ভোলা জেলায়। তার বাবার নাম কাদের মিয়া। মোহাম্মদপুর থানার চাঁদ উদ্যান ও ঢাকা উদ্যান হাউজিংসহ আশপাশের এলাকারআধিপত্য ছিল।

র‌্যাব-২ এর একটি সূত্র জানিয়েছে, ভাগিনা নাইমের উত্থান ২০১৭ সালের দিকে। সে খুব বেশি পড়াশুনা করেনি। মামা লম্বু মোশাররফের হাত ধরেই নাইম গাংচিল বাহিনীতে যোগ দেয়। এ বাহিনীর হয়ে সে একাধিক হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ পেয়েছে র‌্যাব। তার বিরদ্ধে হত্যার অভিযোগে মামলাও আছে। এছাড়া ধর্ষণ, চাঁদাবাজির একাধিক অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা আছে। পুলিশও অ্যাসল্ট করেছে ভাগিনা নাইম। একাধিক বার আটক হলে আদালত থেকে জামিন নিয়ে বের হয়ে এসেছে। অদৃশ্য শক্তি কাজ করছে গাংচিল বাহিনীর সদস্য নাইম ও তার মামা লম্বু মোশাররফের পেছনে। সেই পেছনের শক্তিগুলো কারা ছিল তা খুঁজে বের করার জন্য র‌্যাব তদন্ত শুরু করেছে। নাইমের মতো তার মামা লম্বু মোশাররফের বিরুদ্ধে অর্ধশত মামলা রয়েছে। এ বাহিনীর প্রত্যেক সদস্যদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে কাজ করছে র‌্যাব। শুধু গাংচিল বাহিনী নয় মোহাম্মদপুর এলাকায় এমন আরও একাধিক বাহিনী রয়েছে যারা এলাকা ভাগ করে নিয়ে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকা- চালাচ্ছে। নির্মাণাধীন ভবনগুলোতে ঠিকাদারকে জিম্মি করে চাঁদাবাজি এদের অর্থনৈতিক শক্তির একটি বড় উৎস। এছাড়া বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বাড়িওয়াদের কাছ থেকেও এ বাহিনী চাঁদা আদায় করে। বিভিন্ন দখলদারদের পক্ষ থেকে অস্ত্র নিয়ে জায়গা, বাড়ি দখল করে দেয়াও এদের কাজ।

সোমবার, ১৭ মে ২০২১ , ৩০ বৈশাখ ১৪২৮ ৩০ রমজান ১৪৪২

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ত্রাস গাংচিল বাহিনীর নাঈম আটক

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের এসি গাংচিল বাহিনীর সদস্য হত্যা ধর্ষণসহ ১৩ মামলার আসামি মো. নাঈমকে আটক করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাব ২। গত শনিবার মোহাম্মদপুরের আক্কাসনগর এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়।

র‌্যাব-২ এর এএসপি মো. ফজলুল হক জানিয়েছেন, গাংচিল বাহিনীর অন্যতম সন্ত্রসী মো. নাঈম বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড লম্বু মোশারফের ভাগিনা। আটক হওয়া নাইমের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, পুলিশ অ্যাসল্টসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১৩টির বেশি মামলা রয়েছে। বেশ কিছু অভিযোগের কারণে নাঈমকে দীর্ঘদিন পর্যবেক্ষণে রেখেছিল র‌্যাব। শেষ পর্যন্ত গত শনিবার তাকে আটক করা সম্ভব হয়েছে। এ সময় তার কাছ থেকে বিদেশি পিস্তল ও গুলি উদ্ধার করা হয়। এএসপি মো. ফজুলল হক বলেন, ভাগিনা নাঈম ও তার সহযোগীরা মোহাম্মদপুর থানার ঢাকা উদ্যান এলাকায় কিশোর গ্যাং-এর নেতৃত্ব দিতো ও আশপাশের এলাকায় চাঁদাবাজি ও ছিনতাইসহ সব অপরাধমূলক কর্মকা- করে আসছিল। জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানায়, তার সহযোগীরা দিনে ভূমি দখল ও ব্যবসায়ীদের কাছে হতে ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা আদায় করতো। সন্ধ্যার পর থেকে মাদকব্যবসা, চুরি, ডাকাতিসহবিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ করে আসছিল।

র‌্যাব জানিয়েছে মোহাম্মদপুর এলাকায় গাংচিল বাহিনীর ব্যাপক আধিপত্য। এ বাহিনীর সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজি, দখল বাণিজ্য, মানুষকে কথায় কথায় গুলি এমনকি হত্যা করা মামুলি বিষয় ছিল। এমনকি পুলিশের সদস্যরা এ বাহিনীর সন্ত্রাসীদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছে। এতোসব অভিযোগের মধ্যেও এ বাহিনীর সদস্যরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। এ বাহিনীর অন্যতম সেকেন্ড ইন কমান্ড লম্বু মোশাররফ এবং তার ভাগিনা মো. নাইম মূলত এ বাহিনীর মূল শক্তি। তাদের নিয়ন্ত্রণে গোটা মোহাম্মদপুর এলাকায় চলে ত্রাসের রাজস্ব। তবে বেশ কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে গত শনিবার নাইমকে আটক করা সম্ভব হলেও লম্বু মোশাররফ এখনও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। র‌্যাব জানিয়েছে, এ বাহিনীর আরও অন্যান্য সদস্যদের আটক করার জন্য র‌্যাবের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যদের নিয়ে গঠিত গাংচিল বাহিনী গোটা মোহাম্মদপুর এলাকায় মূর্তিমান আতঙ্ক ছিল। সাধারণ মানুষ এ বাহিনীর সদস্যদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছিল। মূলত নাইমের নেতৃত্বে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে চাঁদাবাজি, মারধর, দখলের কার্যক্রম চলতো। নাইম আটক হওয়ার খবরে তার বাহিনীর অন্যন্যা সহযোগিরা আত্মগোপনে চলে গেছে। ভাগিনা নাইমকে আটকের খবরে এলাকায় সস্তি ফিরে এসেছে সাধারণ মানুষের মাঝে। ভাগিনা নাইমের বাড়ি ভোলা জেলায়। তার বাবার নাম কাদের মিয়া। মোহাম্মদপুর থানার চাঁদ উদ্যান ও ঢাকা উদ্যান হাউজিংসহ আশপাশের এলাকারআধিপত্য ছিল।

র‌্যাব-২ এর একটি সূত্র জানিয়েছে, ভাগিনা নাইমের উত্থান ২০১৭ সালের দিকে। সে খুব বেশি পড়াশুনা করেনি। মামা লম্বু মোশাররফের হাত ধরেই নাইম গাংচিল বাহিনীতে যোগ দেয়। এ বাহিনীর হয়ে সে একাধিক হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ পেয়েছে র‌্যাব। তার বিরদ্ধে হত্যার অভিযোগে মামলাও আছে। এছাড়া ধর্ষণ, চাঁদাবাজির একাধিক অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা আছে। পুলিশও অ্যাসল্ট করেছে ভাগিনা নাইম। একাধিক বার আটক হলে আদালত থেকে জামিন নিয়ে বের হয়ে এসেছে। অদৃশ্য শক্তি কাজ করছে গাংচিল বাহিনীর সদস্য নাইম ও তার মামা লম্বু মোশাররফের পেছনে। সেই পেছনের শক্তিগুলো কারা ছিল তা খুঁজে বের করার জন্য র‌্যাব তদন্ত শুরু করেছে। নাইমের মতো তার মামা লম্বু মোশাররফের বিরুদ্ধে অর্ধশত মামলা রয়েছে। এ বাহিনীর প্রত্যেক সদস্যদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে কাজ করছে র‌্যাব। শুধু গাংচিল বাহিনী নয় মোহাম্মদপুর এলাকায় এমন আরও একাধিক বাহিনী রয়েছে যারা এলাকা ভাগ করে নিয়ে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকা- চালাচ্ছে। নির্মাণাধীন ভবনগুলোতে ঠিকাদারকে জিম্মি করে চাঁদাবাজি এদের অর্থনৈতিক শক্তির একটি বড় উৎস। এছাড়া বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বাড়িওয়াদের কাছ থেকেও এ বাহিনী চাঁদা আদায় করে। বিভিন্ন দখলদারদের পক্ষ থেকে অস্ত্র নিয়ে জায়গা, বাড়ি দখল করে দেয়াও এদের কাজ।