গাজায় হামলা অব্যাহত

ইসরায়েলি বর্বরতায় নিহত শিশুসহ প্রায় ২০০

প্যালেস্টাইনের গাজা উপত্যকায় অষ্টম দিনের মতো হামলা অব্যাহত রেখেছে দখলদার ইসরায়েলের সেনাবাহিনী। এদিন হামলায় নতুন করে প্রাণ হারিয়েছেন ৪২ জন। আহত হয়েছেন অনেকে। নিহতদের মধ্যে ১০ জন শিশু বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য বিভাগ।

ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় এখন পর্যন্ত গাজায় প্রাণ গেছে প্রায় ১৯২ জন প্যালেস্টাইনির। নিহতদের মধ্যে ৫৮ জন শিশু ও ৩৪ জন নারী রয়েছেন। অর্থাৎ নিহতদের মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশই হলো নারী ও শিশু।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হামলা দ্রুত বন্ধ হচ্ছে না জানানোর কয়েক ঘণ্টা পর সোমবারও গোলাবর্ষণ ও নতুন নতুন স্থানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

গত সাতদিন ধরে ইসরায়েলের বিমানবাহিনীর অব্যাহত গোলাবর্ষণে গাজার মূল শহরসহ বিভিন্ন এলাকার সড়ক, বসতবাড়ি, বাণিজ্যিক ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর ভবন, হামাস ও অন্যান্য সশস্ত্র সংগঠনের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের অধিকাংশই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। আলজাজিরা

সংঘাত অষ্টম দিনে গড়ালেও অবশ্য হামাস এবং ইসরায়েলি সেনাবাহিনী কোন পক্ষের মধ্যেই যুদ্ধবিরতিতে যাওয়ার কোন লক্ষণ বা আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। হামাসের তরফ থেকেও রকেট হামলা অব্যাহত রাখা হয়েছে। তবে আয়রন ডোম মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম ব্যবহার করে তার অধিকাংশই অকার্যকর করে দিচ্ছে ইসরায়েল সেনাবাহিনী।

এরপরও কিছু রকেট আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছে ইসরায়েলে। দেশটির সামরিক বাহিনীর এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, হামাসের রকেট হামলায় এ পর্যন্ত ইসরায়েলে ১০ জন নিহত হয়েছেন, যাদের দুইজন শিশু।

তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মন্ত্রিসভার এক বৈঠকের পর জানিয়েছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত ইসরায়েলের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত হামলা অব্যাহত রাখবে সামরিক বাহিনী।

এদিকে গাজায় কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা ও মার্কিন বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) ব্যুরো কার্যালয় যে ভবনটিতে ছিল, সেই ‘আল জালা’ নামের ১২ তলা ভবনটি ধ্বংসের পক্ষে সাফাই দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। ওই ভবনটি গুঁড়িয়ে দেয়া ‘সম্পূর্ণ বৈধ’ বলেও দাবি করেছেন তিনি।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গোয়েন্দাসূত্রে আমরা জানতে পেরেছিলাম, আল জালা নামের ওই ভবনটিতে একটি প্যালেস্টাইনির সশস্ত্র জঙ্গি সংগঠনের গোপন দপ্তর ছিল। জঙ্গিরা ইসরায়েল ও তার নাগরিকদের ওপর হামলা চালানোর পরিকল্পনা সাজাতে ওই ভবনটি ব্যবহার করছিল বলেও তথ্য এসেছিল আমাদের কাছে।’

হামাস ও ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলায় উদ্বেগ প্রকাশ করে রোববার জরুরি বৈঠকে বসে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। তবে তারা এ বিষয়ে একমত হতে এবং যৌথ বিবৃতি দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

সংস্থাটির মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস সতর্ক করে বলেছেন, লড়াই এভাবে চলতে থাকলে ওই অঞ্চল অনিয়ন্ত্রিত সংকটের মধ্যে ডুবে যেতে পারে। অত্যন্ত ভয়াবহ এ সহিংসতা অবিলম্বে শেষ করার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

গাজায় জ্বালানি সংকট দেখা দিচ্ছে আর এ কারণে প্যালেস্টাইনের ছিটমহলটির হাসপাতাল ও অন্যান্য স্থাপনা বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ।

মধ্যপ্রাচের শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য নিয়োজিত জাতিসংঘের বিশেষ উপ-সমন্বয়কারী ল্যান হেস্টিংস জানিয়েছেন, জাতিসংঘকে জ্বালানি ও অন্যান্য সরবরাহ পাঠানোর অনুমতি দেয়ার জন্য তিনি ইসরায়েল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন কিন্তু এটি নিরাপদ হবে না বলে তাকে জানানো হয়েছে।

আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০১৪ সালে গাজায় ইসরায়েলিদের সঙ্গে প্যালেস্টাইনিদের সাত সপ্তাহের যুদ্ধের পর এবারই সবচেয়ে বড় ধরনের সংঘাত হচ্ছে।

মঙ্গলবার, ১৮ মে ২০২১ , ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ৫ শাওয়াল ১৪৪২

গাজায় হামলা অব্যাহত

ইসরায়েলি বর্বরতায় নিহত শিশুসহ প্রায় ২০০

সংবাদ ডেস্ক

image

ইসরায়েলি বর্বর হামলায় নিহত শিশু সন্তানকে বুকে জড়িয়ে মায়ের আহাজারি

প্যালেস্টাইনের গাজা উপত্যকায় অষ্টম দিনের মতো হামলা অব্যাহত রেখেছে দখলদার ইসরায়েলের সেনাবাহিনী। এদিন হামলায় নতুন করে প্রাণ হারিয়েছেন ৪২ জন। আহত হয়েছেন অনেকে। নিহতদের মধ্যে ১০ জন শিশু বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য বিভাগ।

ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় এখন পর্যন্ত গাজায় প্রাণ গেছে প্রায় ১৯২ জন প্যালেস্টাইনির। নিহতদের মধ্যে ৫৮ জন শিশু ও ৩৪ জন নারী রয়েছেন। অর্থাৎ নিহতদের মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশই হলো নারী ও শিশু।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হামলা দ্রুত বন্ধ হচ্ছে না জানানোর কয়েক ঘণ্টা পর সোমবারও গোলাবর্ষণ ও নতুন নতুন স্থানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

গত সাতদিন ধরে ইসরায়েলের বিমানবাহিনীর অব্যাহত গোলাবর্ষণে গাজার মূল শহরসহ বিভিন্ন এলাকার সড়ক, বসতবাড়ি, বাণিজ্যিক ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর ভবন, হামাস ও অন্যান্য সশস্ত্র সংগঠনের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের অধিকাংশই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। আলজাজিরা

সংঘাত অষ্টম দিনে গড়ালেও অবশ্য হামাস এবং ইসরায়েলি সেনাবাহিনী কোন পক্ষের মধ্যেই যুদ্ধবিরতিতে যাওয়ার কোন লক্ষণ বা আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। হামাসের তরফ থেকেও রকেট হামলা অব্যাহত রাখা হয়েছে। তবে আয়রন ডোম মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম ব্যবহার করে তার অধিকাংশই অকার্যকর করে দিচ্ছে ইসরায়েল সেনাবাহিনী।

এরপরও কিছু রকেট আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছে ইসরায়েলে। দেশটির সামরিক বাহিনীর এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, হামাসের রকেট হামলায় এ পর্যন্ত ইসরায়েলে ১০ জন নিহত হয়েছেন, যাদের দুইজন শিশু।

তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মন্ত্রিসভার এক বৈঠকের পর জানিয়েছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত ইসরায়েলের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত হামলা অব্যাহত রাখবে সামরিক বাহিনী।

এদিকে গাজায় কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা ও মার্কিন বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) ব্যুরো কার্যালয় যে ভবনটিতে ছিল, সেই ‘আল জালা’ নামের ১২ তলা ভবনটি ধ্বংসের পক্ষে সাফাই দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। ওই ভবনটি গুঁড়িয়ে দেয়া ‘সম্পূর্ণ বৈধ’ বলেও দাবি করেছেন তিনি।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গোয়েন্দাসূত্রে আমরা জানতে পেরেছিলাম, আল জালা নামের ওই ভবনটিতে একটি প্যালেস্টাইনির সশস্ত্র জঙ্গি সংগঠনের গোপন দপ্তর ছিল। জঙ্গিরা ইসরায়েল ও তার নাগরিকদের ওপর হামলা চালানোর পরিকল্পনা সাজাতে ওই ভবনটি ব্যবহার করছিল বলেও তথ্য এসেছিল আমাদের কাছে।’

হামাস ও ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলায় উদ্বেগ প্রকাশ করে রোববার জরুরি বৈঠকে বসে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। তবে তারা এ বিষয়ে একমত হতে এবং যৌথ বিবৃতি দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

সংস্থাটির মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস সতর্ক করে বলেছেন, লড়াই এভাবে চলতে থাকলে ওই অঞ্চল অনিয়ন্ত্রিত সংকটের মধ্যে ডুবে যেতে পারে। অত্যন্ত ভয়াবহ এ সহিংসতা অবিলম্বে শেষ করার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

গাজায় জ্বালানি সংকট দেখা দিচ্ছে আর এ কারণে প্যালেস্টাইনের ছিটমহলটির হাসপাতাল ও অন্যান্য স্থাপনা বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ।

মধ্যপ্রাচের শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য নিয়োজিত জাতিসংঘের বিশেষ উপ-সমন্বয়কারী ল্যান হেস্টিংস জানিয়েছেন, জাতিসংঘকে জ্বালানি ও অন্যান্য সরবরাহ পাঠানোর অনুমতি দেয়ার জন্য তিনি ইসরায়েল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন কিন্তু এটি নিরাপদ হবে না বলে তাকে জানানো হয়েছে।

আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০১৪ সালে গাজায় ইসরায়েলিদের সঙ্গে প্যালেস্টাইনিদের সাত সপ্তাহের যুদ্ধের পর এবারই সবচেয়ে বড় ধরনের সংঘাত হচ্ছে।