ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চুরির অপবাদ দিয়ে কিশোরকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন গ্রেপ্তার ৩

হাতিয়ায় গ্রাম্য সালিশে ৫ কিশোর নির্যাতন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে মোবাইল ফোন চুরির অপবাদে ইয়াকুব (১৩) নামে এক কিশোরকে হাত-পা বেঁধে নির্মম নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্যাতনের শিকার কিশোর উপজেলার সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের মেরাসানী গ্রামের মৃত মজলু ভূঁইয়ার ছেলে। পুলিশ গতকাল এ ঘটনায় জড়িত উপজেলার সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের পশ্চিম মেরাসানী গ্রামের বাবুল মিয়া (৪৫), মান্নান (২৩) ও শাহীন ওরফে মান্নাকে (২১) গ্রেপ্তার করে।

এর আগে গত রোববার কিশোরটিকে নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এতে দেখা যায়, কয়েকজন যুবক মিলে কিশোরটির হাত-পা বেঁধে মাটিতে ফেলে নির্যাতন করছে। এ সময় সে চিৎকার করলেও থেমে থাকেনি নির্যাতন।

কিশোরের পরিবারের লোকজন জানায়, ইয়াকুবের বাবা না থাকায় সে পশ্চিম মেরাসানী গ্রামে নানার বাড়িতে থাকে। চারদিন আগে মেরাসানী গ্রামের রুবেলের বোন জামাইয়ের বাড়িতে মোবাইল চুরি ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গত শনিবার কিশোর ইয়াকুবকে কৌশলে ডেকে রুবেলের বাড়িতে নিয়ে যায়। পরে মোবাইল চুরির অপবাদে বাবু, মান্না, রুবেলসহ কয়েকজন মিলে হাত-পা বেঁধে মারধর করতে থাকে। কিশোরটির কান্নার শব্দ শুনে আশপাশের লোকজন তার পরিবারকে খবর দেয়। তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় রোববার রাতে বিজয়নগর থানায় ৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন ইয়াকুবের নানি আরিজা বেগম।

নির্যাতনে শিকার কিশোর ইয়াকুব বলেন, আমাকে চেয়ারের সঙ্গে বেঁধে রেখে নির্যাতন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বিদ্যুতের শকও দেয়া হয়েছে।

বিজয়নগর থানার ওসি মো. আতিকুর রহমান জানান, শিশু নির্যাতনের বিষয়টি পুলিশ গুরুত্বসহকারে দেখছে। ফেইসবুকে ভিডিও দেখার পরই পুলিশ অভিযুক্তদের ধরতে অভিযানে নামে। তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

৫ কিশোরকে বেঁধে নির্মম নির্যাতন

প্রতিনিধি, হাতিয়া : মাছ ধরার জাল চুরির অভিযোগে নোয়াখালীর হাতিয়ায় পাঁচ কিশোরকে বেঁধে নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, তাদের আবার জরিমানা করা হয়েছে। জেলেদের গ্রাম্য সালিশে প্রকাশ্যে এ নির্যাতন করা হয়। গত রোববার এ ভয়াবহ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে হাতিয়া ও নোয়াখালীতে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অবশেষে ঘটনাটি থানা পুলিশের নজরে আসে। পুলিশ ঘটনায় আইনি পদক্ষেপ নিয়ে ৫ মাতাব্বরকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা কিশোর নির্যাতনের কথা স্বীকার করেছে। তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃত মাতব্বররা হলো, শুল্লকিয়া গ্রামের জেলেপাড়ার মাতব্বর শ্রীহরি জলদাস, নেপাল চন্দ জলদাস, বিধান চন্দ জলদাস, রায় মেহেন জলদাস, প্রিয় লাল জলদাস।

আমাদের নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, সোমবার দুপুরে হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল খায়ের জানান, গত রোববার রাতে নির্যাতনের শিকার কিশোর পদ দাসের পিতা হরিপদ দাস বাদী হয়ে ৬ জনকে আসামি করে হাতিয়া থানায় একটি মামলা করে। ওই মামলার ৫ আসামিকে আটক করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।

অভিযুক্তরা গত রোববার সকাল পৌনে ১১টার দিকে উপজেলার চরকিং ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ শুল্লকিয়া গ্রামের জেলেপাড়ার গ্রাম্য সালিশে কিশোর জেলেদের বেঁধে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটানোর এ ঘটনা ঘটে।

নির্যাতনের শিকার কিশোররা হলো, উপজেলার চরকিং ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ শুল্লকিয়া গ্রামের জেলেপাড়ার বাসিন্দা সহদেব (১৫), কিরণ (১৫), শিশুপদ, (১৬), সমূল্য (১৫), রতন (১৬)।

ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নির্যাতনের ১ মিনিট ১১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফেইসবুকে ভাইরাল হলে জেলা পুলিশ প্রশাসনের টনক নড়ে। পরে জেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে হাতিয়া থানা পুলিশ তাৎক্ষণিক এ ঘটনায় ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে।

ভিডিওতে দেখা যায়, স্থানীয় জেলেপাড়ার নারী-পুরুষের সামনে ৫ কিশোরকে লাঠিপেটা করা হচ্ছে। এই সময় ওই পাঁচ কিশোর এবং তাদের পরিবারের নারী সদস্যরা আহাজারি করে তাদের ছেড়ে দেয়ার আকুতি জানাচ্ছেন। কান্নারত নারীরা এগিয়ে এলে তাদেরও ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়া হয়।

চরকিং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ মহিউদ্দিন আহাম্মেদ জানান, গত কয়েক দিন আগে ৫ কিশোর মিলে এক জেলের একটি বিন্দি জাল চুরি করে পার্শ¦বর্তী সোনাদিয়া ইউনিয়নের এক জেলের কাছে বিক্রি করে দেয়। পরে ওই জাল উদ্ধার করে শনিবার বিকেলে মালিককে ফিরিয়ে দেয়া হয়। এরপর এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত রোববার সকালে জেলেপাড়ার মাতব্বর শ্রীহরি দলদাস, নেপাল চন্দ জলদাস, প্রিয় লাল জলদাস বিধান চন্দ জলদাস, রায় মেহেন জলদাসের নেতৃত্বে একটি সালিশি বৈঠক বসে। বৈঠকের একপর্যায়ে জেলেপাড়ার ৫ মাতব্বর অভিযুক্তদের একজনকে ১০ বেত করে মারার আদেশ দেন এবং প্রত্যেকের ২ হাজার টাকা করে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। পরে জেলেপাড়ার মাতব্বরদের নির্দেশে ৫ কিশোরকে বেঁধে প্রকাশ্যে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটান চৌকিদার আমির হোসেন।

গতকাল রাতে হাতিয়া থানার ওসি সংবাদকে জানান, পাঁচ কিশোর জেলে পরিবারের সন্তান। তাদের বিচার করেছে জেলে মাতাব্বররা। বিচারে তারাই বেত দেয়া ও জরিমানার করার রায় দিয়েছে। জরিমানার সাড়ে ৭ হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে।

মঙ্গলবার, ১৮ মে ২০২১ , ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ৫ শাওয়াল ১৪৪২

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চুরির অপবাদ দিয়ে কিশোরকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন গ্রেপ্তার ৩

হাতিয়ায় গ্রাম্য সালিশে ৫ কিশোর নির্যাতন

জেলা বার্তা পরিবেশক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে মোবাইল ফোন চুরির অপবাদে ইয়াকুব (১৩) নামে এক কিশোরকে হাত-পা বেঁধে নির্মম নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্যাতনের শিকার কিশোর উপজেলার সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের মেরাসানী গ্রামের মৃত মজলু ভূঁইয়ার ছেলে। পুলিশ গতকাল এ ঘটনায় জড়িত উপজেলার সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের পশ্চিম মেরাসানী গ্রামের বাবুল মিয়া (৪৫), মান্নান (২৩) ও শাহীন ওরফে মান্নাকে (২১) গ্রেপ্তার করে।

এর আগে গত রোববার কিশোরটিকে নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এতে দেখা যায়, কয়েকজন যুবক মিলে কিশোরটির হাত-পা বেঁধে মাটিতে ফেলে নির্যাতন করছে। এ সময় সে চিৎকার করলেও থেমে থাকেনি নির্যাতন।

কিশোরের পরিবারের লোকজন জানায়, ইয়াকুবের বাবা না থাকায় সে পশ্চিম মেরাসানী গ্রামে নানার বাড়িতে থাকে। চারদিন আগে মেরাসানী গ্রামের রুবেলের বোন জামাইয়ের বাড়িতে মোবাইল চুরি ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গত শনিবার কিশোর ইয়াকুবকে কৌশলে ডেকে রুবেলের বাড়িতে নিয়ে যায়। পরে মোবাইল চুরির অপবাদে বাবু, মান্না, রুবেলসহ কয়েকজন মিলে হাত-পা বেঁধে মারধর করতে থাকে। কিশোরটির কান্নার শব্দ শুনে আশপাশের লোকজন তার পরিবারকে খবর দেয়। তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় রোববার রাতে বিজয়নগর থানায় ৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন ইয়াকুবের নানি আরিজা বেগম।

নির্যাতনে শিকার কিশোর ইয়াকুব বলেন, আমাকে চেয়ারের সঙ্গে বেঁধে রেখে নির্যাতন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বিদ্যুতের শকও দেয়া হয়েছে।

বিজয়নগর থানার ওসি মো. আতিকুর রহমান জানান, শিশু নির্যাতনের বিষয়টি পুলিশ গুরুত্বসহকারে দেখছে। ফেইসবুকে ভিডিও দেখার পরই পুলিশ অভিযুক্তদের ধরতে অভিযানে নামে। তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

৫ কিশোরকে বেঁধে নির্মম নির্যাতন

প্রতিনিধি, হাতিয়া : মাছ ধরার জাল চুরির অভিযোগে নোয়াখালীর হাতিয়ায় পাঁচ কিশোরকে বেঁধে নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, তাদের আবার জরিমানা করা হয়েছে। জেলেদের গ্রাম্য সালিশে প্রকাশ্যে এ নির্যাতন করা হয়। গত রোববার এ ভয়াবহ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে হাতিয়া ও নোয়াখালীতে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অবশেষে ঘটনাটি থানা পুলিশের নজরে আসে। পুলিশ ঘটনায় আইনি পদক্ষেপ নিয়ে ৫ মাতাব্বরকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা কিশোর নির্যাতনের কথা স্বীকার করেছে। তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃত মাতব্বররা হলো, শুল্লকিয়া গ্রামের জেলেপাড়ার মাতব্বর শ্রীহরি জলদাস, নেপাল চন্দ জলদাস, বিধান চন্দ জলদাস, রায় মেহেন জলদাস, প্রিয় লাল জলদাস।

আমাদের নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, সোমবার দুপুরে হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল খায়ের জানান, গত রোববার রাতে নির্যাতনের শিকার কিশোর পদ দাসের পিতা হরিপদ দাস বাদী হয়ে ৬ জনকে আসামি করে হাতিয়া থানায় একটি মামলা করে। ওই মামলার ৫ আসামিকে আটক করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।

অভিযুক্তরা গত রোববার সকাল পৌনে ১১টার দিকে উপজেলার চরকিং ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ শুল্লকিয়া গ্রামের জেলেপাড়ার গ্রাম্য সালিশে কিশোর জেলেদের বেঁধে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটানোর এ ঘটনা ঘটে।

নির্যাতনের শিকার কিশোররা হলো, উপজেলার চরকিং ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ শুল্লকিয়া গ্রামের জেলেপাড়ার বাসিন্দা সহদেব (১৫), কিরণ (১৫), শিশুপদ, (১৬), সমূল্য (১৫), রতন (১৬)।

ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নির্যাতনের ১ মিনিট ১১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফেইসবুকে ভাইরাল হলে জেলা পুলিশ প্রশাসনের টনক নড়ে। পরে জেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে হাতিয়া থানা পুলিশ তাৎক্ষণিক এ ঘটনায় ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে।

ভিডিওতে দেখা যায়, স্থানীয় জেলেপাড়ার নারী-পুরুষের সামনে ৫ কিশোরকে লাঠিপেটা করা হচ্ছে। এই সময় ওই পাঁচ কিশোর এবং তাদের পরিবারের নারী সদস্যরা আহাজারি করে তাদের ছেড়ে দেয়ার আকুতি জানাচ্ছেন। কান্নারত নারীরা এগিয়ে এলে তাদেরও ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়া হয়।

চরকিং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ মহিউদ্দিন আহাম্মেদ জানান, গত কয়েক দিন আগে ৫ কিশোর মিলে এক জেলের একটি বিন্দি জাল চুরি করে পার্শ¦বর্তী সোনাদিয়া ইউনিয়নের এক জেলের কাছে বিক্রি করে দেয়। পরে ওই জাল উদ্ধার করে শনিবার বিকেলে মালিককে ফিরিয়ে দেয়া হয়। এরপর এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত রোববার সকালে জেলেপাড়ার মাতব্বর শ্রীহরি দলদাস, নেপাল চন্দ জলদাস, প্রিয় লাল জলদাস বিধান চন্দ জলদাস, রায় মেহেন জলদাসের নেতৃত্বে একটি সালিশি বৈঠক বসে। বৈঠকের একপর্যায়ে জেলেপাড়ার ৫ মাতব্বর অভিযুক্তদের একজনকে ১০ বেত করে মারার আদেশ দেন এবং প্রত্যেকের ২ হাজার টাকা করে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। পরে জেলেপাড়ার মাতব্বরদের নির্দেশে ৫ কিশোরকে বেঁধে প্রকাশ্যে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটান চৌকিদার আমির হোসেন।

গতকাল রাতে হাতিয়া থানার ওসি সংবাদকে জানান, পাঁচ কিশোর জেলে পরিবারের সন্তান। তাদের বিচার করেছে জেলে মাতাব্বররা। বিচারে তারাই বেত দেয়া ও জরিমানার করার রায় দিয়েছে। জরিমানার সাড়ে ৭ হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে।