চট্টগ্রামে বহুল আলোচিত মিতু হত্যায় ‘কিলিং মিশনের প্রধান হিসেবে অভিযুক্ত’ ছিলেন কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা। সিসিটিভি ফুটেজে তাকে স্পষ্ট দেখা গেলেও তাকে চেনেন না বলে জানিয়েছিলেন মিতুর স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার। পাঁচ বছর পর একই ঘটনায় গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে বাবুল স্বীকার করেছেন, সেই মুসা ছিলেন তার সোর্স। তবে হত্যাকাণ্ডের আগে-পরে মুসার সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টি জিজ্ঞাসাবাদে এড়িয়ে গেছেন। মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) হেফাজতে পাঁচদিন জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বিষয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই, চট্টগ্রাম মহানগরের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে অনেক প্রশ্নের উত্তরই এড়িয়ে গেছেন বাবুল আক্তার। তবে কয়েকটি প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট উত্তর দিয়েছেন। মুসার বিষয়ে কোন তথ্য দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মুসা উনার সোর্স ছিলেন বলে স্বীকার করেছেন।
হত্যাকাণ্ডের পরপরই ঘটনাস্থল থেকে সংগ্রহ করা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজে একজনকে দেখা গিয়েছিল। পুলিশ তদন্ত করে তাকে কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা হিসেবে শনাক্ত করে। এছাড়া তদন্তে বেরিয়ে এসেছিল, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা ইউনিটে কর্মরত থাকার সময় ওই মুসা সোর্স ছিলেন বাবুল আক্তারের কিন্তু সে সময় ঢাকায় গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও তিনি মুসাকে চেনেন না বলে জানিয়েছিলেন।
বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তারের দিন গত ১২ মে সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার অভিযোগ করেছিলেন, হত্যাকাণ্ডের পর জিজ্ঞাসাবাদে বাবুল আক্তার তার সোর্স মুসাকে চেনেন না বলে জানিয়েছিলেন। এভাবে বাবুল আক্তার শুরু থেকে ঘটনার তদন্তকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছিলেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।
ঘটনাস্থলের কাছ থেকে সংগ্রহ করা সিসিটিভির ফুটেজে একজনকে দেখা গিয়েছিল, পরে জানা যায় সে বাবুল আক্তারের সোর্স কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা। ভিডিও ফুটেজে স্পষ্ট মুসাকে চেনা গেছে কিন্তু তদন্তে ও জিজ্ঞাসাবাদে মুসাকে নিয়ে বাবুল আক্তার কোন সন্দেহের কথা বলেননি। পরে আমরা তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছি যে বাবুল আক্তার ইচ্ছাকৃতভাবে তার ব্যক্তিগত সোর্স মুসাকে নিয়ে পুলিশকে কিছু জানায়নি।
এদিকে পিবিআইয়ের তদন্ত সংশ্লিষ্টদের কাছে তথ্য ছিল, হত্যাকাণ্ডের পর মুসাই প্রথম বাবুল আক্তারকে ফোন করে বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদে বাবুল আক্তার মুসার কাছ থেকে কোন ধরনের ফোন পাওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন বরং তিনি জানিয়েছেন, হত্যাকাণ্ডের পর তাকে প্রথম বাসার গৃহকর্মী ফোন করেছিলেন। তিনি ঘুমে থাকায় কল রিসিভ করতে পারেননি। এরপর ফোন করে ‘বাড়িওয়ালা’ বিষয়টি তাকে জানান।
বাবুল আক্তারের এই বক্তব্য পুরোপুরি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি তদন্ত সংশ্লিষ্টদের কাছে। তারা বলেছেন, এ বিষয়ে আরও জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন আছে। পাঁচ বছর আগে হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই পলাতক আছেন কামরুল ইসলাম সিকদার মুসা। তবে তার স্ত্রী পান্না আক্তারের দাবি, মুসাকে ওই বছরের ২২ জুন প্রশাসনের লোকজন তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তার আর কোন খোঁজ মিলছে না।
এদিকে গতকাল বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের দেয়া পাঁচদিনের সময়সীমা শেষ হয়েছে। পিবিআই সূত্র জানিয়েছে, আদালতে হাজিরের পর তিনি যদি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে সম্মত না হন, সেক্ষেত্রে তাকে আবারও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন করা হবে।
মঙ্গলবার, ১৮ মে ২০২১ , ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ৫ শাওয়াল ১৪৪২
নিরুপম দাশগুপ্ত, চট্টগ্রাম ব্যুরো
চট্টগ্রামে বহুল আলোচিত মিতু হত্যায় ‘কিলিং মিশনের প্রধান হিসেবে অভিযুক্ত’ ছিলেন কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা। সিসিটিভি ফুটেজে তাকে স্পষ্ট দেখা গেলেও তাকে চেনেন না বলে জানিয়েছিলেন মিতুর স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার। পাঁচ বছর পর একই ঘটনায় গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে বাবুল স্বীকার করেছেন, সেই মুসা ছিলেন তার সোর্স। তবে হত্যাকাণ্ডের আগে-পরে মুসার সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টি জিজ্ঞাসাবাদে এড়িয়ে গেছেন। মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) হেফাজতে পাঁচদিন জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বিষয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই, চট্টগ্রাম মহানগরের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে অনেক প্রশ্নের উত্তরই এড়িয়ে গেছেন বাবুল আক্তার। তবে কয়েকটি প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট উত্তর দিয়েছেন। মুসার বিষয়ে কোন তথ্য দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মুসা উনার সোর্স ছিলেন বলে স্বীকার করেছেন।
হত্যাকাণ্ডের পরপরই ঘটনাস্থল থেকে সংগ্রহ করা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজে একজনকে দেখা গিয়েছিল। পুলিশ তদন্ত করে তাকে কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা হিসেবে শনাক্ত করে। এছাড়া তদন্তে বেরিয়ে এসেছিল, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা ইউনিটে কর্মরত থাকার সময় ওই মুসা সোর্স ছিলেন বাবুল আক্তারের কিন্তু সে সময় ঢাকায় গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও তিনি মুসাকে চেনেন না বলে জানিয়েছিলেন।
বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তারের দিন গত ১২ মে সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার অভিযোগ করেছিলেন, হত্যাকাণ্ডের পর জিজ্ঞাসাবাদে বাবুল আক্তার তার সোর্স মুসাকে চেনেন না বলে জানিয়েছিলেন। এভাবে বাবুল আক্তার শুরু থেকে ঘটনার তদন্তকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছিলেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।
ঘটনাস্থলের কাছ থেকে সংগ্রহ করা সিসিটিভির ফুটেজে একজনকে দেখা গিয়েছিল, পরে জানা যায় সে বাবুল আক্তারের সোর্স কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা। ভিডিও ফুটেজে স্পষ্ট মুসাকে চেনা গেছে কিন্তু তদন্তে ও জিজ্ঞাসাবাদে মুসাকে নিয়ে বাবুল আক্তার কোন সন্দেহের কথা বলেননি। পরে আমরা তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছি যে বাবুল আক্তার ইচ্ছাকৃতভাবে তার ব্যক্তিগত সোর্স মুসাকে নিয়ে পুলিশকে কিছু জানায়নি।
এদিকে পিবিআইয়ের তদন্ত সংশ্লিষ্টদের কাছে তথ্য ছিল, হত্যাকাণ্ডের পর মুসাই প্রথম বাবুল আক্তারকে ফোন করে বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদে বাবুল আক্তার মুসার কাছ থেকে কোন ধরনের ফোন পাওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন বরং তিনি জানিয়েছেন, হত্যাকাণ্ডের পর তাকে প্রথম বাসার গৃহকর্মী ফোন করেছিলেন। তিনি ঘুমে থাকায় কল রিসিভ করতে পারেননি। এরপর ফোন করে ‘বাড়িওয়ালা’ বিষয়টি তাকে জানান।
বাবুল আক্তারের এই বক্তব্য পুরোপুরি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি তদন্ত সংশ্লিষ্টদের কাছে। তারা বলেছেন, এ বিষয়ে আরও জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন আছে। পাঁচ বছর আগে হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই পলাতক আছেন কামরুল ইসলাম সিকদার মুসা। তবে তার স্ত্রী পান্না আক্তারের দাবি, মুসাকে ওই বছরের ২২ জুন প্রশাসনের লোকজন তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তার আর কোন খোঁজ মিলছে না।
এদিকে গতকাল বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের দেয়া পাঁচদিনের সময়সীমা শেষ হয়েছে। পিবিআই সূত্র জানিয়েছে, আদালতে হাজিরের পর তিনি যদি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে সম্মত না হন, সেক্ষেত্রে তাকে আবারও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন করা হবে।