কাউন্সিলর খোরশেদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে নারীর মামলা

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন সাঈদা আক্তার শিউলী (৪০) নামে এক নারী। ওই নারী নিজেকে খোরশেদের স্ত্রী বলে দাবি করেছেন। গত রোববার রাতে ওই নারী নিজে বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন থানার ওসি মো. রকিবুজ্জামান।

মামলায় ওই নারী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে লাইভ ভিডিওতে তার বিরুদ্ধে আপত্তিকর, বানোয়াট ও মিথ্যা কাহিনী সাজিয়ে কুৎসা রটানোর অভিযোগ এনেছেন। মামলায় নাসিকের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ছাড়াও ফতুল্লা থানার সস্তাপুর এলাকার ফেরদৌসী আক্তার রেহানা নামে এক নারীকেও আসামি করা হয়েছে। মামলার বাদী ফতুল্লা থানার ৩২১নং উত্তর চাষাঢ়ার মৃত মো. জহিরুল হকের মেয়ে। পেশায় তিনি একজন ব্যবসায়ী। মামলায় তিনি নিজেকে নারায়ণগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জ সিএনজি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজেএমইর সদস্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

কিছুদিন আগে ফেইসবুক লাইভে এসে মামলার বাদী সাঈদা আক্তার শিউলীর বিরুদ্ধে ‘বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় হুমকি’ দেয়ার অভিযোগ তোলেন কাউন্সিলর খোরশেদ। যদিও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় বাদী শিউলী দাবি করেছেন, গত বছরের ২ আগস্ট ৫ লাখ টাকা দেনমোহরে খোরশেদ তাকে বিয়ে করেছেন।

উল্লেখ্য, কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খোরশেদ করোনা পরিস্থিতির শুরুর দিকে মৃতের দাফন, সৎকার করে দেশ ও দেশের বাইরে বেশ আলোচিত হয়েছিলেন।

খোরশেদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ডিজিটাল আইনের মামলায় বাদী বলেছেন, ব্যবসার কাজে প্রায় সময় তাকে দেশের বাইরে অবস্থান করতে হয়। ছোটবেলা থেকে বিবাদী খোরশেদের সঙ্গে তার পরিচয়। বাদী একজন ডিভোর্সী নারী। তার সন্তানও রয়েছে। তবে পূর্ব পরিচয়ের সূত্রে খোরশেদের সঙ্গে তার ফেইসবুক ম্যাসেঞ্জারে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। এক পর্যায়ে খোরশেদের পক্ষ থেকে তিনি বিয়ের প্রস্তাব পান। উল্লেখ্য, কাউন্সিলর খোরশেদ পূর্বেই বিবাহিত। তার সন্তানও রয়েছে।

মামলার বাদী শিউলীর দাবি, গত বছরের ২ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের কাচপুরের এসএস ফিলিং স্টেশনে কাউন্সিলর খোরশেদ নিজেই কাজী নিয়ে গিয়ে পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহরে তাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক তৈরি হয়। তবে বিয়ের বিষয়টি জানাজানি হলে খোরশেদ বাদীর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। এমন অবস্থায় শিউলী ব্যবসায়িক কাজে দুবাই চলে যান। এদিকে চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল খোরশেদ তার ফেইসবুক লাইভে এসে তার বিরুদ্ধে আপত্তিকর, মানহানিমূলক তথ্য উপস্থাপন করে এবং নানা বাজে মন্তব্য করে কুৎসা রটায়। এর একদিন পর ২৫ তারিখে ফেরদৌসী আক্তার রেহানা ওরফে রেহানা মুসকান নামে এক নারী খোরশেদ খন্দকারের বাসায় বসে লাইভে এসে তার সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করেন। তাকে রাস্তার মেয়েদের সঙ্গে তুলনা করে আপত্তিকর কথাবার্তা বলেন এবং তার চুল কেটে ফেলা হবে বলেও ফেইসবুক লাইভে বলেন। এই দুটো বিষয়ই দুবাই থাকাকালীন অবস্থায় তিনি তার এক বান্ধবীর কাছ থেকে জানতে পেরে পরবর্তীতে তাদের আইডি থেকে পুরোপুরি বিষয়টি দেখেছেন। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশে ফিরে এসেছেন এবং বর্তমানে তিনি দেশেই অবস্থান করছেন।

মামলা ও বিয়ে প্রসঙ্গে কথা বলতে নারায়ণগঞ্জ সিটি কররপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মুঠোফোনের পৃথক দুটি নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

মামলার বিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানার ওসি মো. রকিবুজ্জামান বলেন, ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগের ভিত্তিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা রুজু হয়েছে। মামলায় দুজন আসামি। প্রধান আসামির সঙ্গে বাদীর বিয়ে হয়েছে বলে বাদী উল্লেখ করেছেন। অন্য আসামি প্রথম আসামির পরিচিত। আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।

মঙ্গলবার, ১৮ মে ২০২১ , ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ৫ শাওয়াল ১৪৪২

নারায়ণগঞ্জে

কাউন্সিলর খোরশেদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে নারীর মামলা

প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন সাঈদা আক্তার শিউলী (৪০) নামে এক নারী। ওই নারী নিজেকে খোরশেদের স্ত্রী বলে দাবি করেছেন। গত রোববার রাতে ওই নারী নিজে বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন থানার ওসি মো. রকিবুজ্জামান।

মামলায় ওই নারী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে লাইভ ভিডিওতে তার বিরুদ্ধে আপত্তিকর, বানোয়াট ও মিথ্যা কাহিনী সাজিয়ে কুৎসা রটানোর অভিযোগ এনেছেন। মামলায় নাসিকের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ছাড়াও ফতুল্লা থানার সস্তাপুর এলাকার ফেরদৌসী আক্তার রেহানা নামে এক নারীকেও আসামি করা হয়েছে। মামলার বাদী ফতুল্লা থানার ৩২১নং উত্তর চাষাঢ়ার মৃত মো. জহিরুল হকের মেয়ে। পেশায় তিনি একজন ব্যবসায়ী। মামলায় তিনি নিজেকে নারায়ণগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জ সিএনজি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজেএমইর সদস্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

কিছুদিন আগে ফেইসবুক লাইভে এসে মামলার বাদী সাঈদা আক্তার শিউলীর বিরুদ্ধে ‘বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় হুমকি’ দেয়ার অভিযোগ তোলেন কাউন্সিলর খোরশেদ। যদিও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় বাদী শিউলী দাবি করেছেন, গত বছরের ২ আগস্ট ৫ লাখ টাকা দেনমোহরে খোরশেদ তাকে বিয়ে করেছেন।

উল্লেখ্য, কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খোরশেদ করোনা পরিস্থিতির শুরুর দিকে মৃতের দাফন, সৎকার করে দেশ ও দেশের বাইরে বেশ আলোচিত হয়েছিলেন।

খোরশেদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ডিজিটাল আইনের মামলায় বাদী বলেছেন, ব্যবসার কাজে প্রায় সময় তাকে দেশের বাইরে অবস্থান করতে হয়। ছোটবেলা থেকে বিবাদী খোরশেদের সঙ্গে তার পরিচয়। বাদী একজন ডিভোর্সী নারী। তার সন্তানও রয়েছে। তবে পূর্ব পরিচয়ের সূত্রে খোরশেদের সঙ্গে তার ফেইসবুক ম্যাসেঞ্জারে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। এক পর্যায়ে খোরশেদের পক্ষ থেকে তিনি বিয়ের প্রস্তাব পান। উল্লেখ্য, কাউন্সিলর খোরশেদ পূর্বেই বিবাহিত। তার সন্তানও রয়েছে।

মামলার বাদী শিউলীর দাবি, গত বছরের ২ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের কাচপুরের এসএস ফিলিং স্টেশনে কাউন্সিলর খোরশেদ নিজেই কাজী নিয়ে গিয়ে পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহরে তাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক তৈরি হয়। তবে বিয়ের বিষয়টি জানাজানি হলে খোরশেদ বাদীর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। এমন অবস্থায় শিউলী ব্যবসায়িক কাজে দুবাই চলে যান। এদিকে চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল খোরশেদ তার ফেইসবুক লাইভে এসে তার বিরুদ্ধে আপত্তিকর, মানহানিমূলক তথ্য উপস্থাপন করে এবং নানা বাজে মন্তব্য করে কুৎসা রটায়। এর একদিন পর ২৫ তারিখে ফেরদৌসী আক্তার রেহানা ওরফে রেহানা মুসকান নামে এক নারী খোরশেদ খন্দকারের বাসায় বসে লাইভে এসে তার সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করেন। তাকে রাস্তার মেয়েদের সঙ্গে তুলনা করে আপত্তিকর কথাবার্তা বলেন এবং তার চুল কেটে ফেলা হবে বলেও ফেইসবুক লাইভে বলেন। এই দুটো বিষয়ই দুবাই থাকাকালীন অবস্থায় তিনি তার এক বান্ধবীর কাছ থেকে জানতে পেরে পরবর্তীতে তাদের আইডি থেকে পুরোপুরি বিষয়টি দেখেছেন। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশে ফিরে এসেছেন এবং বর্তমানে তিনি দেশেই অবস্থান করছেন।

মামলা ও বিয়ে প্রসঙ্গে কথা বলতে নারায়ণগঞ্জ সিটি কররপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মুঠোফোনের পৃথক দুটি নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

মামলার বিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানার ওসি মো. রকিবুজ্জামান বলেন, ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগের ভিত্তিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা রুজু হয়েছে। মামলায় দুজন আসামি। প্রধান আসামির সঙ্গে বাদীর বিয়ে হয়েছে বলে বাদী উল্লেখ করেছেন। অন্য আসামি প্রথম আসামির পরিচিত। আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।