মা দিবসের একটি পোস্ট ... অতঃপর

দেবাহুতি চক্রবর্তী

দিনটা ছিল নির্মল একটা আনন্দের দিন। মা দিবস। এই দিবসের সঙ্গে করপোরেট বাণিজ্য কোথায় কীভাবে জড়ানো সেটা অন্য প্রশ্ন। খালি চোখে দেখলে মা-সন্তানের সম্পর্কও সব সম্পর্কের মতোই পৃথক পরিচর্যার দাবি রাখে। অন্য অনেকের মতোই চঞ্চল চৌধুরী মায়ের সঙ্গে স্বভাবজাত হাস্যোজ্বল একটা পোস্ট দিয়েছেন সেদিন। শাঁখা -সিঁদুর পরিহিত মায়ের ছবিটা নিয়েই বিপত্তির শুরু। চঞ্চল চৌধুরী নামটা আর পদবিটা এদেশের যে কোন ধর্মের মানুষেরই হতে পারে। তাই, তার ধর্ম পরিচয় কারও অজানা থাকা দোষের নয়। তাছাড়া এদেশে বহু ধর্মান্তরিত হিন্দু নারী-পুরুষ প্রকাশ্যে তাদের পৈত্রিক নাম-পদবি ব্যবহার করে থাকে। বিশেষত সমাজে উচ্চ আসনে যারা আছে বলে নিজেদের মনে করে। সুতরাং বিভ্রান্তি বা অজানা থাকতেই পারে। সেটা দোষের নয়। কিন্তু পোস্টে চঞ্চল চৌধুরীর মায়ের ছবি দেখার পর একাধিক প্রশ্ন করে বিব্রত করার কারণ থাকে না। এভাবে শাঁখা সিঁদুর হিন্দু নারীদেরই ব্যবহার দেখা যায়। অনেক দেশেই ব্যক্তির ধর্ম, বয়স, লিঙ্গ, প্রতিবন্ধিতা, শিক্ষা, পেশা নিয়ে প্রয়োজনের বাইরে কৌতূহল প্রকাশ শুধু শিষ্টাচারবিরোধী নয়, অপরাধ হিসেবেই গণ্য হয়। আমাদের দেশে বহু বছর সেই সব দেশে গড়িয়ে আসার পরেও এই আচরণটুকু অনেকেই আয়ত্ত করতে পারে না। কী আর করা? কিন্তু স্পষ্টত জেনে-বুঝে একজনকে বিব্রত করার উত্তর যেটা হওয়া দরকার, চঞ্চল চৌধুরী সেটাই দিয়েছেন। তিনি ... মানুষ। কিন্তু না, এদেশে হিন্দুরা বা সংখ্যালঘুরা অনেকের চোখেই শুধু মানুষ হিসেবে ধর্ত্যবে পড়ে না। সেটা বুঝতে পোস্টদাতার সময় লেগেছে। কলমে-কণ্ঠে যতই নিজেকে মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান সেটা ধোপে টেকা এই উত্যক্তকারীদের কাছে খুব কঠিন। অজস্র অমার্জিত, অশালীন, অপ্রীতিকর মন্তব্য মা আর ছেলের একান্ত দিনটাকে একরাশ অন্ধকারে অচঞ্চল থাকতে বাধ্য করেছে। বয়কট ... চঞ্চল চৌধুরী’ ... বহু জায়গায় মন্তব্য পাওয়া গেছে। কেন বয়কট? কোথা থেকে বয়কট?? হ্যাঁ, তিনি বাংলাদেশের মঞ্চ, ছোটপর্দা, বড়পর্দার একজন প্রতিষ্ঠিত অভিনয় শিল্পী। ইদানীং ওয়েবিনারেও তার জনপ্রিয়তা উল্লেখযোগ্য। কিন্তু প্রকাশ্যে তাকে নিয়ে কোন পেশাগত দ্বন্দ্বের কথা শোনা যায়নি। বয়কটের তাহলে একটাই কারণ, অভিনেতা যত ভালোই হোক, হিন্দু জেনে অনুভূতিতে ছ্যাঁকা’ খাওয়াটা মূল বিষয়। আর এই বিষয়টা কে অনেক জায়গা থেকে শুধু সাইবার বুলিং হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে। এদেশেই ইতিপূর্বে সাকিব আল হাসানসহ অনেককেই এই ধরনের আক্রমণের শিকার হতে দেখা গেছে। সেগুলো শুধু সাইবার বুলিং ছিল না। তদন্ত ও বিশ্লেষণে তা প্রমাণিত হয়েছে বারবার। ধর্মান্ধ- মৌলবাদীদের তৎপরতা থেমে থাকেনি। চঞ্চল চৌধুরী স্পষ্টতই সাম্প্রদায়িক আক্রমণের শিকার। এর জন্য ধর্মীয় পরিচয় ছাড়া আর কোনো কারণ দরকার হয় না। খুব ভালো করে মন্তব্যগুলো লক্ষ করলে এও বোঝা যায় এগুলো কোন বিচ্ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন মস্তিষ্কের উর্বর ফসল নয়। এরা এক সংঘবদ্ধ গোষ্ঠী। যারা প্রকাশ্যে, অপ্রকাশ্যে, অনলাইনে, লাইনে তাদের তৎপরতা নানাভাবে চালিয়েই যাচ্ছে। চঞ্চল চৌধুরীদের মতো ব্যক্তিদের আক্রমণের অর্থ, তাদের অস্তিত্ব ও শক্তির জানান দেয়া। উল্লেখ্য ফেসবুকে হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে যারাই এর বিরুদ্ধে কথা বলতে চেষ্টা করেছে, তারাও অধিকাংশ নানাভাবে আক্রমণের শিকার হয়েছে। আবার একপর্যায়ে অনেক হিন্দুও পাল্টা আক্রমণাত্মক মন্তব্য করেছে। যার কোনটাই কাম্য হতে পারে না। তবে ঝুমন দাস, রসরাজসহ অনেক অনেক হিন্দু ছেলে মেয়ে যেখানে কারাগারে ছিল -আছে, প্রশ্ন উঠেছে ধর্মানুভূতিকে আঘাত দেয়ার জন্য শুধু একটা জনগোষ্ঠীই কী বিবেচ্য? আমরা কেউ জানি না, কে কখন কীভাবে কোন চক্রান্তের শিকার হতে পারি? আমরা জানি, এই দেশের অধিকাংশ মানুষ অসাম্প্রদায়িক। এদেশে হিন্দু মুসলিম অন্যান্য সম্প্রদায়ের মিলেমিশে বসবাসের ইতিহাস, ঐতিহ্য দীর্ঘদিনের। কিছু অশুভশক্তি বারবার সেখানে আঘাত করে। যার প্রতিবাদ সম্মিলিত শক্তিতেই হয়ে থাকে। তবে তা আরও জোরালো হওয়া সময়ের দাবি।

শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক কর্মী, বুদ্ধিজীবী বিভিন্ন ঘটনায় যারা মুখে কুলুপ মেরে থাকেন, যারা দিনের আলোয় বালুর মধ্যে উটের মতো মুখ গুঁজে থাকেন, তারা যে যে ধর্মেরই হন না কেন নিজেদের সম্পূর্ণ নিরাপদ ভাবেন কী করে? মানবতার বিরুদ্ধে নানাবিধ অপতৎপরতায় দেশ যখন আক্রান্ত, তখন আপ্তবাক্যের মতো নিরাপদ দূরত্বে থেকে কখনও কখনও বিবৃতি দেয়া যথেষ্ট কী? সব ক্ষেত্রে সবাইকেই মনে রাখতে হবে, পাশের বাড়ি আগুন দেখে উপভোগ করার কিছু নেই, স্বস্তিতে থাকার কিছু নেই। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পেরিয়ে আজও যখন এই দেশের নাগরিক হিসেবে ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে সদা কুণ্ঠিত, বিব্রত, আংশিক থাকতে হয়, যখন অমুসলিম কোন সম্প্রদায়ের হয়ে এদেশে অপরাধবোধে ভুগতে হয় তখন স্বাধীনতা আদৌ কী অর্থবহ থাকে? চঞ্চল চৌধুরীর আর তার মায়ের ওপর আঘাত কোন ব্যক্তি বিশেষের ওপর আঘাত নয়Ñ এটা স্পষ্ট বোঝার সময় এসেছে। মানুষের বিভাজন যেমন সত্য, শিল্পীর বিভাজন ও সেই একইভাবে সত্য হয়ে উঠছে। এখনও এইসত্য উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হলে তার খেসারত ভবিষ্যতে অনেকভাবে দিতে হবে। এটা কালের লিখন। কী আশ্চর্য! কাকতালীয় মনে হতে পারে! এই ঘটনার আগের দিন ২৫ বৈশাখে রবীন্দ্রনাথকে তার যে উদ্ধৃতি দিয়ে মনে করেছিলাম, আজ তা দিয়েই শেষ করছি ...। এবং এই কথাগুলো সব দেশ সব জাতির জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য বলে বিশ্বাস করি। ... ‘রাষ্ট্রিক মহাসন নির্মাণের চেয়ে রাষ্ট্রিক মহাজাতি সৃষ্টির প্রয়োজন আমাদের দেশে অনেক বড়ো। ... যে দেশে প্রধানত ধর্মের মিলেই মানুষকে মেলায়, অন্য কোন বাঁধনে তাকে বাঁধতে পারে না, সে দেশ হতভাগ্য। সে দেশ স্বয়ং ধর্মকে দিয়ে যে বিভেদ সৃষ্টি করে সেইটে সবার চেয়ে সর্বনেশে বিভেদ। মানুষ বলেই মানুষের যে মূল্য সেইটেকেই সহজ প্রীতির সঙ্গে স্বীকার করা প্রকৃত ধর্মবুদ্ধি।’

মঙ্গলবার, ১৮ মে ২০২১ , ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ৫ শাওয়াল ১৪৪২

মা দিবসের একটি পোস্ট ... অতঃপর

দেবাহুতি চক্রবর্তী

দিনটা ছিল নির্মল একটা আনন্দের দিন। মা দিবস। এই দিবসের সঙ্গে করপোরেট বাণিজ্য কোথায় কীভাবে জড়ানো সেটা অন্য প্রশ্ন। খালি চোখে দেখলে মা-সন্তানের সম্পর্কও সব সম্পর্কের মতোই পৃথক পরিচর্যার দাবি রাখে। অন্য অনেকের মতোই চঞ্চল চৌধুরী মায়ের সঙ্গে স্বভাবজাত হাস্যোজ্বল একটা পোস্ট দিয়েছেন সেদিন। শাঁখা -সিঁদুর পরিহিত মায়ের ছবিটা নিয়েই বিপত্তির শুরু। চঞ্চল চৌধুরী নামটা আর পদবিটা এদেশের যে কোন ধর্মের মানুষেরই হতে পারে। তাই, তার ধর্ম পরিচয় কারও অজানা থাকা দোষের নয়। তাছাড়া এদেশে বহু ধর্মান্তরিত হিন্দু নারী-পুরুষ প্রকাশ্যে তাদের পৈত্রিক নাম-পদবি ব্যবহার করে থাকে। বিশেষত সমাজে উচ্চ আসনে যারা আছে বলে নিজেদের মনে করে। সুতরাং বিভ্রান্তি বা অজানা থাকতেই পারে। সেটা দোষের নয়। কিন্তু পোস্টে চঞ্চল চৌধুরীর মায়ের ছবি দেখার পর একাধিক প্রশ্ন করে বিব্রত করার কারণ থাকে না। এভাবে শাঁখা সিঁদুর হিন্দু নারীদেরই ব্যবহার দেখা যায়। অনেক দেশেই ব্যক্তির ধর্ম, বয়স, লিঙ্গ, প্রতিবন্ধিতা, শিক্ষা, পেশা নিয়ে প্রয়োজনের বাইরে কৌতূহল প্রকাশ শুধু শিষ্টাচারবিরোধী নয়, অপরাধ হিসেবেই গণ্য হয়। আমাদের দেশে বহু বছর সেই সব দেশে গড়িয়ে আসার পরেও এই আচরণটুকু অনেকেই আয়ত্ত করতে পারে না। কী আর করা? কিন্তু স্পষ্টত জেনে-বুঝে একজনকে বিব্রত করার উত্তর যেটা হওয়া দরকার, চঞ্চল চৌধুরী সেটাই দিয়েছেন। তিনি ... মানুষ। কিন্তু না, এদেশে হিন্দুরা বা সংখ্যালঘুরা অনেকের চোখেই শুধু মানুষ হিসেবে ধর্ত্যবে পড়ে না। সেটা বুঝতে পোস্টদাতার সময় লেগেছে। কলমে-কণ্ঠে যতই নিজেকে মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান সেটা ধোপে টেকা এই উত্যক্তকারীদের কাছে খুব কঠিন। অজস্র অমার্জিত, অশালীন, অপ্রীতিকর মন্তব্য মা আর ছেলের একান্ত দিনটাকে একরাশ অন্ধকারে অচঞ্চল থাকতে বাধ্য করেছে। বয়কট ... চঞ্চল চৌধুরী’ ... বহু জায়গায় মন্তব্য পাওয়া গেছে। কেন বয়কট? কোথা থেকে বয়কট?? হ্যাঁ, তিনি বাংলাদেশের মঞ্চ, ছোটপর্দা, বড়পর্দার একজন প্রতিষ্ঠিত অভিনয় শিল্পী। ইদানীং ওয়েবিনারেও তার জনপ্রিয়তা উল্লেখযোগ্য। কিন্তু প্রকাশ্যে তাকে নিয়ে কোন পেশাগত দ্বন্দ্বের কথা শোনা যায়নি। বয়কটের তাহলে একটাই কারণ, অভিনেতা যত ভালোই হোক, হিন্দু জেনে অনুভূতিতে ছ্যাঁকা’ খাওয়াটা মূল বিষয়। আর এই বিষয়টা কে অনেক জায়গা থেকে শুধু সাইবার বুলিং হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে। এদেশেই ইতিপূর্বে সাকিব আল হাসানসহ অনেককেই এই ধরনের আক্রমণের শিকার হতে দেখা গেছে। সেগুলো শুধু সাইবার বুলিং ছিল না। তদন্ত ও বিশ্লেষণে তা প্রমাণিত হয়েছে বারবার। ধর্মান্ধ- মৌলবাদীদের তৎপরতা থেমে থাকেনি। চঞ্চল চৌধুরী স্পষ্টতই সাম্প্রদায়িক আক্রমণের শিকার। এর জন্য ধর্মীয় পরিচয় ছাড়া আর কোনো কারণ দরকার হয় না। খুব ভালো করে মন্তব্যগুলো লক্ষ করলে এও বোঝা যায় এগুলো কোন বিচ্ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন মস্তিষ্কের উর্বর ফসল নয়। এরা এক সংঘবদ্ধ গোষ্ঠী। যারা প্রকাশ্যে, অপ্রকাশ্যে, অনলাইনে, লাইনে তাদের তৎপরতা নানাভাবে চালিয়েই যাচ্ছে। চঞ্চল চৌধুরীদের মতো ব্যক্তিদের আক্রমণের অর্থ, তাদের অস্তিত্ব ও শক্তির জানান দেয়া। উল্লেখ্য ফেসবুকে হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে যারাই এর বিরুদ্ধে কথা বলতে চেষ্টা করেছে, তারাও অধিকাংশ নানাভাবে আক্রমণের শিকার হয়েছে। আবার একপর্যায়ে অনেক হিন্দুও পাল্টা আক্রমণাত্মক মন্তব্য করেছে। যার কোনটাই কাম্য হতে পারে না। তবে ঝুমন দাস, রসরাজসহ অনেক অনেক হিন্দু ছেলে মেয়ে যেখানে কারাগারে ছিল -আছে, প্রশ্ন উঠেছে ধর্মানুভূতিকে আঘাত দেয়ার জন্য শুধু একটা জনগোষ্ঠীই কী বিবেচ্য? আমরা কেউ জানি না, কে কখন কীভাবে কোন চক্রান্তের শিকার হতে পারি? আমরা জানি, এই দেশের অধিকাংশ মানুষ অসাম্প্রদায়িক। এদেশে হিন্দু মুসলিম অন্যান্য সম্প্রদায়ের মিলেমিশে বসবাসের ইতিহাস, ঐতিহ্য দীর্ঘদিনের। কিছু অশুভশক্তি বারবার সেখানে আঘাত করে। যার প্রতিবাদ সম্মিলিত শক্তিতেই হয়ে থাকে। তবে তা আরও জোরালো হওয়া সময়ের দাবি।

শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক কর্মী, বুদ্ধিজীবী বিভিন্ন ঘটনায় যারা মুখে কুলুপ মেরে থাকেন, যারা দিনের আলোয় বালুর মধ্যে উটের মতো মুখ গুঁজে থাকেন, তারা যে যে ধর্মেরই হন না কেন নিজেদের সম্পূর্ণ নিরাপদ ভাবেন কী করে? মানবতার বিরুদ্ধে নানাবিধ অপতৎপরতায় দেশ যখন আক্রান্ত, তখন আপ্তবাক্যের মতো নিরাপদ দূরত্বে থেকে কখনও কখনও বিবৃতি দেয়া যথেষ্ট কী? সব ক্ষেত্রে সবাইকেই মনে রাখতে হবে, পাশের বাড়ি আগুন দেখে উপভোগ করার কিছু নেই, স্বস্তিতে থাকার কিছু নেই। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পেরিয়ে আজও যখন এই দেশের নাগরিক হিসেবে ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে সদা কুণ্ঠিত, বিব্রত, আংশিক থাকতে হয়, যখন অমুসলিম কোন সম্প্রদায়ের হয়ে এদেশে অপরাধবোধে ভুগতে হয় তখন স্বাধীনতা আদৌ কী অর্থবহ থাকে? চঞ্চল চৌধুরীর আর তার মায়ের ওপর আঘাত কোন ব্যক্তি বিশেষের ওপর আঘাত নয়Ñ এটা স্পষ্ট বোঝার সময় এসেছে। মানুষের বিভাজন যেমন সত্য, শিল্পীর বিভাজন ও সেই একইভাবে সত্য হয়ে উঠছে। এখনও এইসত্য উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হলে তার খেসারত ভবিষ্যতে অনেকভাবে দিতে হবে। এটা কালের লিখন। কী আশ্চর্য! কাকতালীয় মনে হতে পারে! এই ঘটনার আগের দিন ২৫ বৈশাখে রবীন্দ্রনাথকে তার যে উদ্ধৃতি দিয়ে মনে করেছিলাম, আজ তা দিয়েই শেষ করছি ...। এবং এই কথাগুলো সব দেশ সব জাতির জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য বলে বিশ্বাস করি। ... ‘রাষ্ট্রিক মহাসন নির্মাণের চেয়ে রাষ্ট্রিক মহাজাতি সৃষ্টির প্রয়োজন আমাদের দেশে অনেক বড়ো। ... যে দেশে প্রধানত ধর্মের মিলেই মানুষকে মেলায়, অন্য কোন বাঁধনে তাকে বাঁধতে পারে না, সে দেশ হতভাগ্য। সে দেশ স্বয়ং ধর্মকে দিয়ে যে বিভেদ সৃষ্টি করে সেইটে সবার চেয়ে সর্বনেশে বিভেদ। মানুষ বলেই মানুষের যে মূল্য সেইটেকেই সহজ প্রীতির সঙ্গে স্বীকার করা প্রকৃত ধর্মবুদ্ধি।’