রেমিট্যান্স আহরণে বাংলাদেশের স্থান সপ্তম

কোভিডের শুরু থেকেই আশঙ্কা ছিল রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ে ধস নামবে। কিন্তু সব আশঙ্কা দূর করে ২০২০ সালে বাংলাদেশ ২২ বিলিয়ন বা ২ হাজার ২০০ কোটি ডলার বা ১ লাখ ৮৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলার (১ ডলার ?= ৮৪ ডলার) রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় পেয়েছে। তাতে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের মধ্যে প্রবাসী আয় প্রাপ্তিতে বাংলাদেশ এক ধাপ এগিয়েছে। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ ছিল অষ্টম স্থানে, ২০২০ সালে উঠে এলো সপ্তম স্থানে।

গ্লোবাল নলেজ পার্টনারশিপ অন মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (নোমাড) সর্বশেষ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনার মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আসা প্রবাসী আয় কিছুটা কমলেও বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে বেড়েছে। সম্প্রতি এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। দ্য গ্লোবাল নলেজ পার্টনারশিপ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে বিশ্বব্যাংক প্রতিষ্ঠিত একটি বহুপক্ষীয় ট্রাস্ট ফান্ড। এটি মূলত অভিবাসন ও উন্নয়ন সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করে থাকে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২০ সালে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর মধ্যে প্রবাসী আয় প্রাপ্তিতে শীর্ষস্থানে ছিল ভারত। গত বছর দেশটিতে প্রবাসী আয় এসেছে ৮৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি। দ্বিতীয় স্থানে ছিল চীন। তারা পেয়েছে প্রায় ৬০ বিলিয়ন ডলার। তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে মেক্সিকো (৪৩ বিলিয়ন ডলার), চতুর্থ ফিলিপাইন (৩৫ বিলিয়ন ডলার), পঞ্চম মিসর (৩০ বিলিয়ন ডলার) ও ষষ্ঠ পাকিস্তান (২৬ বিলিয়ন ডলার। এরপরই আছে বাংলাদেশ। করোনার মধ্যেও গত বছর বাংলাদেশে প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে, মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির নিরিখে যা ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। এর আগের বছর, অর্থাৎ ২০১৯ সালে বাংলাদেশে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৮ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার।

বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলেন, প্রবাসী আয় বাড়লেও পারিবারিক পর্যায়ে তার বিশেষ প্রভাব নেই। কোভিডের কারণে অনানুষ্ঠানিক চ্যানেল বন্ধ হয়ে যাওয়া, বৈধ পথে পাঠানোয় প্রণোদনা, এসব কারণে সামষ্টিক পর্যায়ে প্রবাসী আয় বৃদ্ধির চিত্র দেখা গেলেও বাস্তবতা তা নয়। ব্যাপারটা হলো, আগে ১০০ টাকার মধ্যে হয়তো ৬০ টাকা বৈধ পথে আসত, বাকি ৪০ টাকা আসত অবৈধ পথে। এখন পুরোটাই বৈধ পথে আসছে। ফলে ব্যক্তিপর্যায়ে প্রবাসী আয় প্রাপ্তি সেই অর্থে বাড়েনি।

দ্য গ্লোবাল নলেজ পার্টনারশিপ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের মধ্যে ২০২০ সালে সারা বিশ্বে প্রবাসী আয়প্রবাহ আগের বছরের তুলনায় দেড় শতাংশের মতো কমেছে। তবে এই পরিস্থিতির মধ্যেও বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে ভালো প্রবাসী আয় এসেছে। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের অবস্থা খুবই ভালো। ২০২০ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ২ শতাংশ পরিমাণগত দিক থেকে যা ১৪৭ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশে ২০১৯ সালের তুলনায় প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২০ সালে হজ না হওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যের অনেক শ্রমিক জমানো টাকা দেশে ফেরত পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের প্রবাসী আয় বৃদ্ধির পেছনে এটি বড় কারণ। এছাড়া গত বছর বন্যার কারণেও অনেক প্রবাসী শ্রমিক অতিরিক্ত টাকা পাঠিয়েছেন।

বুধবার, ১৯ মে ২০২১ , ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ৬ শাওয়াল ১৪৪২

রেমিট্যান্স আহরণে বাংলাদেশের স্থান সপ্তম

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

কোভিডের শুরু থেকেই আশঙ্কা ছিল রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ে ধস নামবে। কিন্তু সব আশঙ্কা দূর করে ২০২০ সালে বাংলাদেশ ২২ বিলিয়ন বা ২ হাজার ২০০ কোটি ডলার বা ১ লাখ ৮৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলার (১ ডলার ?= ৮৪ ডলার) রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় পেয়েছে। তাতে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের মধ্যে প্রবাসী আয় প্রাপ্তিতে বাংলাদেশ এক ধাপ এগিয়েছে। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ ছিল অষ্টম স্থানে, ২০২০ সালে উঠে এলো সপ্তম স্থানে।

গ্লোবাল নলেজ পার্টনারশিপ অন মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (নোমাড) সর্বশেষ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনার মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আসা প্রবাসী আয় কিছুটা কমলেও বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে বেড়েছে। সম্প্রতি এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। দ্য গ্লোবাল নলেজ পার্টনারশিপ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে বিশ্বব্যাংক প্রতিষ্ঠিত একটি বহুপক্ষীয় ট্রাস্ট ফান্ড। এটি মূলত অভিবাসন ও উন্নয়ন সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করে থাকে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২০ সালে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর মধ্যে প্রবাসী আয় প্রাপ্তিতে শীর্ষস্থানে ছিল ভারত। গত বছর দেশটিতে প্রবাসী আয় এসেছে ৮৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি। দ্বিতীয় স্থানে ছিল চীন। তারা পেয়েছে প্রায় ৬০ বিলিয়ন ডলার। তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে মেক্সিকো (৪৩ বিলিয়ন ডলার), চতুর্থ ফিলিপাইন (৩৫ বিলিয়ন ডলার), পঞ্চম মিসর (৩০ বিলিয়ন ডলার) ও ষষ্ঠ পাকিস্তান (২৬ বিলিয়ন ডলার। এরপরই আছে বাংলাদেশ। করোনার মধ্যেও গত বছর বাংলাদেশে প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে, মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির নিরিখে যা ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। এর আগের বছর, অর্থাৎ ২০১৯ সালে বাংলাদেশে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৮ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার।

বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলেন, প্রবাসী আয় বাড়লেও পারিবারিক পর্যায়ে তার বিশেষ প্রভাব নেই। কোভিডের কারণে অনানুষ্ঠানিক চ্যানেল বন্ধ হয়ে যাওয়া, বৈধ পথে পাঠানোয় প্রণোদনা, এসব কারণে সামষ্টিক পর্যায়ে প্রবাসী আয় বৃদ্ধির চিত্র দেখা গেলেও বাস্তবতা তা নয়। ব্যাপারটা হলো, আগে ১০০ টাকার মধ্যে হয়তো ৬০ টাকা বৈধ পথে আসত, বাকি ৪০ টাকা আসত অবৈধ পথে। এখন পুরোটাই বৈধ পথে আসছে। ফলে ব্যক্তিপর্যায়ে প্রবাসী আয় প্রাপ্তি সেই অর্থে বাড়েনি।

দ্য গ্লোবাল নলেজ পার্টনারশিপ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের মধ্যে ২০২০ সালে সারা বিশ্বে প্রবাসী আয়প্রবাহ আগের বছরের তুলনায় দেড় শতাংশের মতো কমেছে। তবে এই পরিস্থিতির মধ্যেও বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে ভালো প্রবাসী আয় এসেছে। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের অবস্থা খুবই ভালো। ২০২০ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ২ শতাংশ পরিমাণগত দিক থেকে যা ১৪৭ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশে ২০১৯ সালের তুলনায় প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২০ সালে হজ না হওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যের অনেক শ্রমিক জমানো টাকা দেশে ফেরত পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের প্রবাসী আয় বৃদ্ধির পেছনে এটি বড় কারণ। এছাড়া গত বছর বন্যার কারণেও অনেক প্রবাসী শ্রমিক অতিরিক্ত টাকা পাঠিয়েছেন।