বছর ঘুরতেই আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে চীন। ভিয়েতনামও সেই পথে আছে। তবে বাজারটিতে বাংলাদেশের রপ্তানি কমেছে ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ। বাংলাদেশ থেকে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ১৫৩ কোটি ডলারের বা ১৩ হাজার ৫ কোটি টাকার তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। গত বছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ১৬৭ কোটি ডলারের পোশাক।
করোনার কারণে গত বছর চীনের তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের ওপর দিয়ে মোটামুটি টর্নেডো বয়ে গিয়েছিল। কেবল যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেই তাদের রপ্তানি কমেছিল ৩৯ শতাংশের মতো। তবে বছর ঘুরতেই আবার কোমর শক্ত করে দাঁড়াচ্ছে চীন। দিন দিন তাদের রপ্তানি বাড়ছে। ভিয়েতনামও সেই পথেই আছে। তবে বাজারটিতে তৃতীয় শীর্ষ রপ্তানিকারক বাংলাদেশ আগের মতোই খাবি খাচ্ছে। মানে রপ্তানি কমছে।
চলতি ২০২১ সালের প্রথম তিন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন দেশ থেকে ১ হাজার ৭৪১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি করেছেন। গত বছর একই সময়ে তারা আমদানি করেছিলেন ১ হাজার ৭৮৪ কোটি ডলারের পোশাক। অর্থাৎ, চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক আমদানি কমেছে আড়াই শতাংশ।
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলস (অটেক্সা) এই পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, শীর্ষ পাঁচ রপ্তানিকারক দেশের প্রথম দুটি ছাড়া বাকিদের রপ্তানি কমছেই।
পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানির ৮০ শতাংশই ওভেন পোশাকের দখলে। করোনাকালে দেশটির ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো দ্রুত পণ্য পেতে ওভেন পোশাকের জন্য চীন ও ভিয়েতনাম এবং নিট পোশাকের জন্য বাংলাদেশকে বেছে নেয়। কারণ, ওভেন পোশাকের পশ্চাৎমুখী সংযোগশিল্প দুর্বল, নিটে সবল। সে কারণে বাজারটিতে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।
বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে ২০১৯ সালে চীনের হারানো ক্রয়াদেশের একটি অংশ বাংলাদেশে এসেছিল। তাতে ওই বছর যুক্তরাষ্ট্রে ৫৯৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়, যা সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত বছরের শুরুটাও হয়েছিল দুর্দান্ত। জানুয়ারিতে ৬২ কোটি ডলার রপ্তানির বিপরীতে প্রবৃদ্ধি হয় ১৭ শতাংশ। পরের মাসেও প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ শতাংশ। তবে করোনার কারণে মার্চ থেকে রপ্তানিতে ধস নামে। শেষ পর্যন্ত গত বছর ৫২৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি সামগ্রিকভাবেও চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি ১ দশমিক ৭০ শতাংশ কমেছে বাংলাদেশের। এই সময়ে ৭৯৪ কোটি ২২ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। গত বছরের জানুয়ারি, মার্চে রপ্তানি হয়েছিল ৮০৭ কোটি ৯৬ লাখ ডলারের পোশাক। যদিও চলতি বছরের চার মাস শেষে রপ্তানি প্রায় ২৩ শতাংশ বেড়েছে। কারণ, গত বছরের এপ্রিলে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কারখানা বন্ধ থাকায় রপ্তানি তলানিতে নামে।
অটেক্সার তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশের পর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চতুর্থ ও পঞ্চম শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ যথাক্রমে ভারত এবং ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি ব্যাপকভাবে কমেছে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ভারত ৯৭ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করে। গত বছরের প্রথম তিন মাসের তুলনায় দেশটির রপ্তানি কমেছে ১৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ। অন্যদিকে ইন্দোনেশিয়া রপ্তানি করেছে ৮৭ কোটি ডলারের পোশাক। তাদের রপ্তানি কমেছে ২২ শতাংশের কাছাকাছি।
নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, বিপুলসংখ্যক মানুষকে টিকা দেয়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। তবে ছয় মাস একই অবস্থা থাকবে, সেটি নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। সে কারণে আরও কিছুদিন ক্রেতারা দ্রুততম সময়ে পণ্য পেতে চাইবেন। তিনি বলেন, দ্রুত চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়িয়ে চীন থেকে কাপড় আমদানির সময় ৮-১০ দিন কমাতে পারলে তাৎক্ষণিকভাবে কিছুটা উপকার হবে। আর ওভেন পোশাকের পশ্চাৎমুখী সংযোগশিল্পকে শক্তিশালী করতে বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ লাগবে।
বৃহস্পতিবার, ২০ মে ২০২১ , ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ৭ শাওয়াল ১৪৪২
অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক
বছর ঘুরতেই আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে চীন। ভিয়েতনামও সেই পথে আছে। তবে বাজারটিতে বাংলাদেশের রপ্তানি কমেছে ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ। বাংলাদেশ থেকে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ১৫৩ কোটি ডলারের বা ১৩ হাজার ৫ কোটি টাকার তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। গত বছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ১৬৭ কোটি ডলারের পোশাক।
করোনার কারণে গত বছর চীনের তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের ওপর দিয়ে মোটামুটি টর্নেডো বয়ে গিয়েছিল। কেবল যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেই তাদের রপ্তানি কমেছিল ৩৯ শতাংশের মতো। তবে বছর ঘুরতেই আবার কোমর শক্ত করে দাঁড়াচ্ছে চীন। দিন দিন তাদের রপ্তানি বাড়ছে। ভিয়েতনামও সেই পথেই আছে। তবে বাজারটিতে তৃতীয় শীর্ষ রপ্তানিকারক বাংলাদেশ আগের মতোই খাবি খাচ্ছে। মানে রপ্তানি কমছে।
চলতি ২০২১ সালের প্রথম তিন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন দেশ থেকে ১ হাজার ৭৪১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি করেছেন। গত বছর একই সময়ে তারা আমদানি করেছিলেন ১ হাজার ৭৮৪ কোটি ডলারের পোশাক। অর্থাৎ, চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক আমদানি কমেছে আড়াই শতাংশ।
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলস (অটেক্সা) এই পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, শীর্ষ পাঁচ রপ্তানিকারক দেশের প্রথম দুটি ছাড়া বাকিদের রপ্তানি কমছেই।
পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানির ৮০ শতাংশই ওভেন পোশাকের দখলে। করোনাকালে দেশটির ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো দ্রুত পণ্য পেতে ওভেন পোশাকের জন্য চীন ও ভিয়েতনাম এবং নিট পোশাকের জন্য বাংলাদেশকে বেছে নেয়। কারণ, ওভেন পোশাকের পশ্চাৎমুখী সংযোগশিল্প দুর্বল, নিটে সবল। সে কারণে বাজারটিতে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।
বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে ২০১৯ সালে চীনের হারানো ক্রয়াদেশের একটি অংশ বাংলাদেশে এসেছিল। তাতে ওই বছর যুক্তরাষ্ট্রে ৫৯৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়, যা সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত বছরের শুরুটাও হয়েছিল দুর্দান্ত। জানুয়ারিতে ৬২ কোটি ডলার রপ্তানির বিপরীতে প্রবৃদ্ধি হয় ১৭ শতাংশ। পরের মাসেও প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ শতাংশ। তবে করোনার কারণে মার্চ থেকে রপ্তানিতে ধস নামে। শেষ পর্যন্ত গত বছর ৫২৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি সামগ্রিকভাবেও চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি ১ দশমিক ৭০ শতাংশ কমেছে বাংলাদেশের। এই সময়ে ৭৯৪ কোটি ২২ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। গত বছরের জানুয়ারি, মার্চে রপ্তানি হয়েছিল ৮০৭ কোটি ৯৬ লাখ ডলারের পোশাক। যদিও চলতি বছরের চার মাস শেষে রপ্তানি প্রায় ২৩ শতাংশ বেড়েছে। কারণ, গত বছরের এপ্রিলে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কারখানা বন্ধ থাকায় রপ্তানি তলানিতে নামে।
অটেক্সার তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশের পর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চতুর্থ ও পঞ্চম শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ যথাক্রমে ভারত এবং ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি ব্যাপকভাবে কমেছে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ভারত ৯৭ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করে। গত বছরের প্রথম তিন মাসের তুলনায় দেশটির রপ্তানি কমেছে ১৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ। অন্যদিকে ইন্দোনেশিয়া রপ্তানি করেছে ৮৭ কোটি ডলারের পোশাক। তাদের রপ্তানি কমেছে ২২ শতাংশের কাছাকাছি।
নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, বিপুলসংখ্যক মানুষকে টিকা দেয়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। তবে ছয় মাস একই অবস্থা থাকবে, সেটি নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। সে কারণে আরও কিছুদিন ক্রেতারা দ্রুততম সময়ে পণ্য পেতে চাইবেন। তিনি বলেন, দ্রুত চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়িয়ে চীন থেকে কাপড় আমদানির সময় ৮-১০ দিন কমাতে পারলে তাৎক্ষণিকভাবে কিছুটা উপকার হবে। আর ওভেন পোশাকের পশ্চাৎমুখী সংযোগশিল্পকে শক্তিশালী করতে বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ লাগবে।