কালো টাকা সাদা করার সুযোগ আগামী বাজেটেও থাকবে অর্থমন্ত্রী

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ‘কালো টাকা সাদা করার সুযোগ আমরা অব্যাহত (কন্টিনিউ) রাখব। যতদিন দেশের অর্থনীতিতে অপ্রদর্শিত অর্থ থাকবে, ততদিন এ সুযোগ দেয়া হবে।’ দেশের অর্থনীতিতে বিপুল পরিমাণ অপ্রদর্শিত অর্থ (কালো টাকা) রয়েছে। এসব টাকা অর্থনীতির মূল ধারায় আনতে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটেও সাদা করার সুযোগ থাকছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

গতকাল অর্থনৈতিক ও ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা জানান তিনি।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে একে চাঙ্গা করতে চলতি অর্থবছরে (২০২০-২১) জমি, ফ্ল্যাট, ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা, নগদ টাকা ও শেয়ারবাজারসহ বিভিন্ন খাতে ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয় সরকার।

এই সুযোগ দেয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী সংসদে বলেছিলেন, ‘করোনাভাইরাসজনিত চলমান সংকটের কারণে দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হওয়ায় আমাদের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে কার্যকর চাহিদা সৃষ্টি করা আবশ্যক। এ জন্য অর্থনীতির মূল স্রোতে টাকা প্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে পয়লা জুলাই ২০২০ থেকে ৩০ জুন ২০২১ সাল পর্যন্ত উল্লিখিত খাতসমূহে ১০ শতাংশ হারে কর দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ (কালো টাকা) সাদা করা যাবে। এ জন্য কেউই কোন ধরনের প্রশ্ন করবে না। দেশের ভেতরে অনেকের কাছে প্রচুর অপ্রদর্শিত টাকা আছে। প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ টাকা দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এসব অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ দিলে একদিকে বিপুল পরিমাণ টাকা দেশের অর্থনীতির মূল ধারায় আসবে, পাশাপাশি দেশ থেকে টাকা পাচার কমবে।’

মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী করোনার সময় যে সাহসী প্যাকেজগুলো নিয়েছেন সবই কাজে দিয়েছে। সে কারণেই আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির প্রত্যেকটাই এখন উন্নতির দিকে, নেগেটিভ কিছু নেই। আমাদের মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৪৭ যা আগের মতোই আছে। দুর্যোগের মধ্যেও এপ্রিল পর্যন্ত আমাদের পণ্য রপ্তানি ৩২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার, যেটার গ্রোথ ৮ দশমিক ৭ শতাংশ। রেমিট্যান্সের গ্রোথ হলো, ৪০ শতাংশ। ১১ মাসে রেমিট্যান্স হয়েছে ২২ বিলিয়ন ডলার। রিজার্ভে গত জুনে ছিলে ৩৬ বিলিয়ন ডলার, এখন এটি ৪৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। এ মাসেই এটি ৪৫ বিলিয়ন ডলার হবে। আমরা আশা করি, আগামী অর্থবছর নিঃসন্দেহে এটা ৫০ বিলিয়ন ডলার টাচ্ করবে।’

ঋণখেলাপি বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নো পারফরমিং লোন অনেক কমে আসছে, এখন ৭ দশমিক ৬৬ আছে। গত বছরের জুনে ছিল ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ। পুঁজিবাজারে গত বছরের জুনে ৩ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন ছিল। এখন সেটা বেড়ে ৪ লাখ ৯৫ হাজার হয়েছে। আমাদের জাতীয় রাজস্ব নিয়ে সবসময় বিচলিত থাকি, সেই জাতীয় রাজস্ব এপ্রিল পর্যন্ত গ্রোথ ১১ দশমিক ৮ শতাংশ।’

এসএমই খাতের বরাদ্দের টাকা এখনও বিতরণ হয়নিÑ এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা সিস্টেমে নিয়ে দিচ্ছি এটা। কোন মিডলম্যান ব্যবহার করছি না। মিডলম্যান ব্যবহার করলে যাদের টাকা দিচ্ছি তারা পেত না। সেজন্য যাদের অ্যাকাউন্ট নাম্বার নেই তাদের যার যে মাধ্যম আছে সেটি দেখে-শুনে দেয়া হচ্ছে। ১০ টাকা দিয়ে অ্যাকাউন্টের বিষয়টি আনা হয়েছিল, যাতে তারা ব্যাংকমুখী হয়। সেটি করে আমরা তাদের ব্যাংকে অভ্যস্ত করার চেষ্টা করেছি। আমরা সাহায্য ব্যাংকে দেব বলেই তাদের ব্যাংকমুখী করা হয়েছে।’

এনবিআরের সবশেষ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে জমি, ফ্ল্যাট, শেয়ারবাজারসহ যেসব খাতে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে, তাতে ৯ হাজার ৯৩৪ জন এ সুযোগ নিয়েছে। এর বিপরীতে ১২ হাজার কোটি টাকা সাদা হয়েছে। সরকার কর পেয়েছে ১ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা।

এনবিআর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৯০ শতাংশ টাকা সাদা হয়েছে জমি-ফ্ল্যাট, ব্যাংকে গচ্ছিত আমানত ও নগদ টাকায় ঘোষণা দিয়ে। মন্দা শেয়ারবাজার চাঙ্গা করতে শেয়ার কিনে এক বছরে ‘লকইন’ রাখার শর্তে টাকা বৈধ করার সুযোগ দিলেও তেমন সাড়া মেলেনি। মাত্র ৩১১ জন সরকারের দেয়া এ সুযোগ নেয়। চলতি করবর্ষে এনবিআরে জমা দেয়া বার্ষিক আয়কর রিটার্নে কালো টাকা সাদা করার ঘোষণা দেন সুবিধাভোগী করদাতারা। সব সরকারের আমলেই কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়। ১৯৭৫ সালে প্রথমবারের মতো এ সুযোগ দেয়া হয়। স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত ১৭ থেকে ১৮ বার কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়। কিন্তু কালো টাকার মালিকরা তেমন সাড়া দেয়নি। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাড়া মিলেছে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭-০৮ অর্থবছরে। ওই সময় ৩২ হাজার ৫৫৮ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এই সুযোগ নিয়েছিল।

বৃহস্পতিবার, ২০ মে ২০২১ , ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ৭ শাওয়াল ১৪৪২

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ আগামী বাজেটেও থাকবে অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ‘কালো টাকা সাদা করার সুযোগ আমরা অব্যাহত (কন্টিনিউ) রাখব। যতদিন দেশের অর্থনীতিতে অপ্রদর্শিত অর্থ থাকবে, ততদিন এ সুযোগ দেয়া হবে।’ দেশের অর্থনীতিতে বিপুল পরিমাণ অপ্রদর্শিত অর্থ (কালো টাকা) রয়েছে। এসব টাকা অর্থনীতির মূল ধারায় আনতে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটেও সাদা করার সুযোগ থাকছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

গতকাল অর্থনৈতিক ও ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা জানান তিনি।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে একে চাঙ্গা করতে চলতি অর্থবছরে (২০২০-২১) জমি, ফ্ল্যাট, ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা, নগদ টাকা ও শেয়ারবাজারসহ বিভিন্ন খাতে ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয় সরকার।

এই সুযোগ দেয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী সংসদে বলেছিলেন, ‘করোনাভাইরাসজনিত চলমান সংকটের কারণে দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হওয়ায় আমাদের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে কার্যকর চাহিদা সৃষ্টি করা আবশ্যক। এ জন্য অর্থনীতির মূল স্রোতে টাকা প্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে পয়লা জুলাই ২০২০ থেকে ৩০ জুন ২০২১ সাল পর্যন্ত উল্লিখিত খাতসমূহে ১০ শতাংশ হারে কর দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ (কালো টাকা) সাদা করা যাবে। এ জন্য কেউই কোন ধরনের প্রশ্ন করবে না। দেশের ভেতরে অনেকের কাছে প্রচুর অপ্রদর্শিত টাকা আছে। প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ টাকা দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এসব অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ দিলে একদিকে বিপুল পরিমাণ টাকা দেশের অর্থনীতির মূল ধারায় আসবে, পাশাপাশি দেশ থেকে টাকা পাচার কমবে।’

মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী করোনার সময় যে সাহসী প্যাকেজগুলো নিয়েছেন সবই কাজে দিয়েছে। সে কারণেই আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির প্রত্যেকটাই এখন উন্নতির দিকে, নেগেটিভ কিছু নেই। আমাদের মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৪৭ যা আগের মতোই আছে। দুর্যোগের মধ্যেও এপ্রিল পর্যন্ত আমাদের পণ্য রপ্তানি ৩২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার, যেটার গ্রোথ ৮ দশমিক ৭ শতাংশ। রেমিট্যান্সের গ্রোথ হলো, ৪০ শতাংশ। ১১ মাসে রেমিট্যান্স হয়েছে ২২ বিলিয়ন ডলার। রিজার্ভে গত জুনে ছিলে ৩৬ বিলিয়ন ডলার, এখন এটি ৪৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। এ মাসেই এটি ৪৫ বিলিয়ন ডলার হবে। আমরা আশা করি, আগামী অর্থবছর নিঃসন্দেহে এটা ৫০ বিলিয়ন ডলার টাচ্ করবে।’

ঋণখেলাপি বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নো পারফরমিং লোন অনেক কমে আসছে, এখন ৭ দশমিক ৬৬ আছে। গত বছরের জুনে ছিল ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ। পুঁজিবাজারে গত বছরের জুনে ৩ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন ছিল। এখন সেটা বেড়ে ৪ লাখ ৯৫ হাজার হয়েছে। আমাদের জাতীয় রাজস্ব নিয়ে সবসময় বিচলিত থাকি, সেই জাতীয় রাজস্ব এপ্রিল পর্যন্ত গ্রোথ ১১ দশমিক ৮ শতাংশ।’

এসএমই খাতের বরাদ্দের টাকা এখনও বিতরণ হয়নিÑ এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা সিস্টেমে নিয়ে দিচ্ছি এটা। কোন মিডলম্যান ব্যবহার করছি না। মিডলম্যান ব্যবহার করলে যাদের টাকা দিচ্ছি তারা পেত না। সেজন্য যাদের অ্যাকাউন্ট নাম্বার নেই তাদের যার যে মাধ্যম আছে সেটি দেখে-শুনে দেয়া হচ্ছে। ১০ টাকা দিয়ে অ্যাকাউন্টের বিষয়টি আনা হয়েছিল, যাতে তারা ব্যাংকমুখী হয়। সেটি করে আমরা তাদের ব্যাংকে অভ্যস্ত করার চেষ্টা করেছি। আমরা সাহায্য ব্যাংকে দেব বলেই তাদের ব্যাংকমুখী করা হয়েছে।’

এনবিআরের সবশেষ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে জমি, ফ্ল্যাট, শেয়ারবাজারসহ যেসব খাতে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে, তাতে ৯ হাজার ৯৩৪ জন এ সুযোগ নিয়েছে। এর বিপরীতে ১২ হাজার কোটি টাকা সাদা হয়েছে। সরকার কর পেয়েছে ১ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা।

এনবিআর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৯০ শতাংশ টাকা সাদা হয়েছে জমি-ফ্ল্যাট, ব্যাংকে গচ্ছিত আমানত ও নগদ টাকায় ঘোষণা দিয়ে। মন্দা শেয়ারবাজার চাঙ্গা করতে শেয়ার কিনে এক বছরে ‘লকইন’ রাখার শর্তে টাকা বৈধ করার সুযোগ দিলেও তেমন সাড়া মেলেনি। মাত্র ৩১১ জন সরকারের দেয়া এ সুযোগ নেয়। চলতি করবর্ষে এনবিআরে জমা দেয়া বার্ষিক আয়কর রিটার্নে কালো টাকা সাদা করার ঘোষণা দেন সুবিধাভোগী করদাতারা। সব সরকারের আমলেই কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়। ১৯৭৫ সালে প্রথমবারের মতো এ সুযোগ দেয়া হয়। স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত ১৭ থেকে ১৮ বার কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়। কিন্তু কালো টাকার মালিকরা তেমন সাড়া দেয়নি। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাড়া মিলেছে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭-০৮ অর্থবছরে। ওই সময় ৩২ হাজার ৫৫৮ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এই সুযোগ নিয়েছিল।