এটিইউর অভিযান, গ্রেপ্তার ৪
ডিজিটাল কারেন্সি ব্যবহার করে অর্থ পাচার করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কৌশল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে স্ট্রিমকার নামে একটি বিশেষ অ্যাপ। সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করতে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সুন্দরী তরুণীদের লাইভে এনে পাতা হয় ফাঁদ। অনেকে ওই তরুণীদের খুশি করতে টাকা দিয়ে অনলাইন কারেন্সি কিনে তা উপহার দেন। তরুণীদের দিয়ে পাতা এই ফাঁদের মাধ্যমে স্ট্রিমকার অ্যাডমিনরা হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা। পরে তা পাচার করা হয় বিভিন্ন দেশে। এভাবে চক্রটি বিভিন্ন ব্যাংক, ক্রিপ্টো কারেন্সি ও হুন্ডির মাধ্যমে শতকোটি টাকা পাচার করেছে বলে দাবি পুলিশের। গত মঙ্গলবার নোয়াখালী জেলার সুধারামপুর, ঢাকা জেলার সাভার ও রাজধানীর বনশ্রী এলাকায় অভিযান চালিয়ে এ চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর এ তথ্য জানিয়েছে পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ)। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- জমির উদ্দিন, কামরুল হোসেন ওরফে রুবেল, মনজুরুল ইসলাম হৃদয় ও অনামিকা সরকার।
গতকাল রাজধানীর বারিধারায় এটিইউ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মাহিদুজ্জামান বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি বিশেষ অ্যাপ স্ট্রিমকার। বাংলাদেশে এই অ্যাপ সরকারিভাবে নিষিদ্ধ হলে ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্কে মাধ্যমে এগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে। এই অ্যাপের মাধ্যমে মূলত চ্যাটিং করা হয়। এ ছাড়া অন্যান্য অপশনের মধ্যে জুয়াও রয়েছে। ব্যবহারকারীরা সাধারণত সুন্দরী মেয়ে ও সেলিব্রিটিদের সঙ্গে আড্ডা দেয়ার জন্য এই অ্যাপটি ব্যবহার করেন।
এতে ইউজার আইডি ও হোস্ট আইডি নামে দুই ধরনের আইডি রয়েছে। হোস্টরা একটি হোস্ট এজেন্সির মাধ্যমে এই অ্যাপে হোস্টিং করেন। সুন্দরী মেয়ে এবং সেলিব্রেটিরাই সাধারণত এই এজেন্সির মাধ্যমে হোস্ট আইডি খোলেন। এতে বিন্স এজেন্সি ও হোস্ট এজেন্সি নামে দুই ধরনের এজেন্সিও রয়েছে। বিন্স এজেন্সিসমূহ বিদেশি এই অ্যাপটির অ্যাডমিনদের কাছ থেকে বিন্স ক্রয় করে ব্যবহারকারীদের কাছে বিক্রয় করে। এই অ্যাপের ব্যবহারকারী বিন্স ও হোস্টদের সঙ্গে লাইভ স্ট্রিমিং-এ আড্ডা দেয়ার জন্য গিফট হিসেবে টাকা দিয়ে ডিজিটাল কারেন্সি ক্রয় করে।
এখানেও বিন্স ও জেম্স নামে দুই ধরনের ডিজিটাল কারেন্সি রয়েছে। প্রতি এক লাখ বিন্সের মূল্য ১০৮০ টাকা এবং প্রতি এক লাখ জেম্সের মূল্য ৬০০ টাকা। কিন্তু এক বিন্স সমান এক জেম্স। ব্যবহারকারীরা হোস্টদের গিফট হিসেবে বিন্স দিলেও ওই বিন্স হোস্টদের কাছে এলেই তা জেম্স এ পরিণত হয়। সঞ্চিত জেম্সের পরিমানের উপরই নির্ভর করে হোস্টদের ইনকাম। তবে হোস্টদের মাস শেষে বেতন পাওয়ার জন্য শুধু সঞ্চিত জেম্সই যথেষ্ঠ নয়। তাকে প্রতি দিন এবং প্রতিমাসে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য লাইভ স্ট্রিমিং-এ থাকতে হয়। তবে, লাইভে থাকার জন্য সুন্দরী মেয়েদের প্রতি মাসে দেয়া হয় নির্দিষ্ট পরিমাণ বেতন।
এই বিন্স এবং জেম্স এই দুইটি ডিজিটাল কারেন্সিই স্ট্রিমকারের চালিকা শক্তি। দেশীয় বিন্স এজেন্সিসমূহ সাব-এজেন্সি নিয়োগসহ কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সুন্দরী মেয়েদের বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন ভাবে লোভনীয় অফার দিয়ে লাইভ স্ট্রিমিংয়ে এনে ইউজারদের সঙ্গে প্রতারণাও করে থাকে। বাংলাদেশে যারা বিন্স এজেন্সি পরিচালনা করে তারা হুন্ডি, হাওয়ালা, ক্রিপ্টো কারেন্সি ও ব্যাংকের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে।
এটিইউ’র এসপি মোহাম্মদ আসলাম খান বলেন, বাংলাদেশে এ ধরনের ১২ থেকে ১৫ জন এজেন্ট রয়েছে যারা প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে। দেশের সরকারি, বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক বেশ কয়েকটি ব্যাংকের মাধ্যমে দেশের বাইরে অর্থ পাচার হওয়ার তথ্য তাদের কাছে রয়েছে। তাদের ধারণা অনুযায়ী স্ট্রিমকার অ্যাপ ব্যবহারকারী ওই চক্র প্রায় শতকোটি টাকা দেশের বাইরে পাচার করছে। প্রতারকচক্রের গ্রেপ্তারকৃত চার সদস্য ও তাদের পাঁচ সহযোগীর বিরুদ্ধে সাভার থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলেও জানান এ এটিইউ কর্মকর্তা।
বৃহস্পতিবার, ২০ মে ২০২১ , ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ৭ শাওয়াল ১৪৪২
এটিইউর অভিযান, গ্রেপ্তার ৪
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
ডিজিটাল কারেন্সি ব্যবহার করে অর্থ পাচার করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কৌশল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে স্ট্রিমকার নামে একটি বিশেষ অ্যাপ। সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করতে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সুন্দরী তরুণীদের লাইভে এনে পাতা হয় ফাঁদ। অনেকে ওই তরুণীদের খুশি করতে টাকা দিয়ে অনলাইন কারেন্সি কিনে তা উপহার দেন। তরুণীদের দিয়ে পাতা এই ফাঁদের মাধ্যমে স্ট্রিমকার অ্যাডমিনরা হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা। পরে তা পাচার করা হয় বিভিন্ন দেশে। এভাবে চক্রটি বিভিন্ন ব্যাংক, ক্রিপ্টো কারেন্সি ও হুন্ডির মাধ্যমে শতকোটি টাকা পাচার করেছে বলে দাবি পুলিশের। গত মঙ্গলবার নোয়াখালী জেলার সুধারামপুর, ঢাকা জেলার সাভার ও রাজধানীর বনশ্রী এলাকায় অভিযান চালিয়ে এ চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর এ তথ্য জানিয়েছে পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ)। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- জমির উদ্দিন, কামরুল হোসেন ওরফে রুবেল, মনজুরুল ইসলাম হৃদয় ও অনামিকা সরকার।
গতকাল রাজধানীর বারিধারায় এটিইউ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মাহিদুজ্জামান বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি বিশেষ অ্যাপ স্ট্রিমকার। বাংলাদেশে এই অ্যাপ সরকারিভাবে নিষিদ্ধ হলে ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্কে মাধ্যমে এগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে। এই অ্যাপের মাধ্যমে মূলত চ্যাটিং করা হয়। এ ছাড়া অন্যান্য অপশনের মধ্যে জুয়াও রয়েছে। ব্যবহারকারীরা সাধারণত সুন্দরী মেয়ে ও সেলিব্রিটিদের সঙ্গে আড্ডা দেয়ার জন্য এই অ্যাপটি ব্যবহার করেন।
এতে ইউজার আইডি ও হোস্ট আইডি নামে দুই ধরনের আইডি রয়েছে। হোস্টরা একটি হোস্ট এজেন্সির মাধ্যমে এই অ্যাপে হোস্টিং করেন। সুন্দরী মেয়ে এবং সেলিব্রেটিরাই সাধারণত এই এজেন্সির মাধ্যমে হোস্ট আইডি খোলেন। এতে বিন্স এজেন্সি ও হোস্ট এজেন্সি নামে দুই ধরনের এজেন্সিও রয়েছে। বিন্স এজেন্সিসমূহ বিদেশি এই অ্যাপটির অ্যাডমিনদের কাছ থেকে বিন্স ক্রয় করে ব্যবহারকারীদের কাছে বিক্রয় করে। এই অ্যাপের ব্যবহারকারী বিন্স ও হোস্টদের সঙ্গে লাইভ স্ট্রিমিং-এ আড্ডা দেয়ার জন্য গিফট হিসেবে টাকা দিয়ে ডিজিটাল কারেন্সি ক্রয় করে।
এখানেও বিন্স ও জেম্স নামে দুই ধরনের ডিজিটাল কারেন্সি রয়েছে। প্রতি এক লাখ বিন্সের মূল্য ১০৮০ টাকা এবং প্রতি এক লাখ জেম্সের মূল্য ৬০০ টাকা। কিন্তু এক বিন্স সমান এক জেম্স। ব্যবহারকারীরা হোস্টদের গিফট হিসেবে বিন্স দিলেও ওই বিন্স হোস্টদের কাছে এলেই তা জেম্স এ পরিণত হয়। সঞ্চিত জেম্সের পরিমানের উপরই নির্ভর করে হোস্টদের ইনকাম। তবে হোস্টদের মাস শেষে বেতন পাওয়ার জন্য শুধু সঞ্চিত জেম্সই যথেষ্ঠ নয়। তাকে প্রতি দিন এবং প্রতিমাসে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য লাইভ স্ট্রিমিং-এ থাকতে হয়। তবে, লাইভে থাকার জন্য সুন্দরী মেয়েদের প্রতি মাসে দেয়া হয় নির্দিষ্ট পরিমাণ বেতন।
এই বিন্স এবং জেম্স এই দুইটি ডিজিটাল কারেন্সিই স্ট্রিমকারের চালিকা শক্তি। দেশীয় বিন্স এজেন্সিসমূহ সাব-এজেন্সি নিয়োগসহ কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সুন্দরী মেয়েদের বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন ভাবে লোভনীয় অফার দিয়ে লাইভ স্ট্রিমিংয়ে এনে ইউজারদের সঙ্গে প্রতারণাও করে থাকে। বাংলাদেশে যারা বিন্স এজেন্সি পরিচালনা করে তারা হুন্ডি, হাওয়ালা, ক্রিপ্টো কারেন্সি ও ব্যাংকের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে।
এটিইউ’র এসপি মোহাম্মদ আসলাম খান বলেন, বাংলাদেশে এ ধরনের ১২ থেকে ১৫ জন এজেন্ট রয়েছে যারা প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে। দেশের সরকারি, বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক বেশ কয়েকটি ব্যাংকের মাধ্যমে দেশের বাইরে অর্থ পাচার হওয়ার তথ্য তাদের কাছে রয়েছে। তাদের ধারণা অনুযায়ী স্ট্রিমকার অ্যাপ ব্যবহারকারী ওই চক্র প্রায় শতকোটি টাকা দেশের বাইরে পাচার করছে। প্রতারকচক্রের গ্রেপ্তারকৃত চার সদস্য ও তাদের পাঁচ সহযোগীর বিরুদ্ধে সাভার থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলেও জানান এ এটিইউ কর্মকর্তা।