সীতাকুণ্ডে ত্রিপুরা পল্লী উচ্ছেদ বন্ধে স্মারকলিপি

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ত্রিপুরা পল্লীতে বসবাসকারী আদিবাসীদের উচ্ছেদ চেষ্টা চলছে। আবুল খায়ের গ্রুপ কর্তৃক এই উচ্ছেদ চেষ্টা বন্ধে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। মঙ্গলবার বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদের পক্ষ থেকে একটি দল জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দেন। বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অনন্ত কুমার ত্রিপুরা স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিতে জানা যায়, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে ত্রিপুরা অন্যতম জনগোষ্ঠী। বাংলাদেশের পাবর্ত্য চট্টগ্রাম ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে তারা বসবাস করে আসছে।

যার মধ্যে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ৭০টি পরিবার প্রায় দেড়শো বছর ধরে বসবাস করে আসছে। কিন্তু ত্রিপুরা পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ করার জন্য আবুল খায়ের গ্রুপ বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে উক্ত পাড়ার হতদরিদ্র ১০টি পরিবারের জন্য বরাদ্দকৃত ঘর নির্মাণের সময় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। হুমকি-ধমকিতে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী চরম আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিনাতিপাত করছে।

স্থানীয় ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী উক্ত জায়গা থেকে উচ্ছেদ হলে অন্যকোন জায়গায় যাওয়ার সুযোগ নেই বিধায় বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গী থেকে বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করা হয়। ত্রিপুরা পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ হওয়া থেকে বাঁচানোর জন্য তিনটি দাবি জানানো হয়।

তাহলো সোনাইছড়িতে বসবাসরত ৭০টি ত্রিপুরা পরিবারের উচ্ছেদ বন্ধ করতে হবে, আবুল খায়ের গ্রুপের হুমকি থেকে পাড়াবাসীদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং পাড়াবাসীদের নামে তাদের বসতভিটা রেকর্ডভুক্ত করে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম সীতাকুণ্ড ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক রবীন্দ্র ত্রিপুরা বলেন, আমরা যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসছি। আমাদের শিশুদের শিক্ষার কথা চিন্তা করে সরকার সেখানে একটি স্কুল তৈরি করে দেয়। তার পাশে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘর তৈরি করার জন্য জায়গা প্রস্তুত করতে গেলে আবুল খায়ের গ্রুপের আনসার সদস্যরা আমাদের রাইফেল ঠেকিয়ে রেখে গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। কিন্তু আমরা শান্তি চাই বলে কোন কিছু অপ্রিতিকর ঘটনা ঘটেনি। তবে আমরা উচ্ছেদ আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি। তিনি সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করেন।

সোনাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনির আহমেদ বলেন, ত্রিপুরা পল্লীতে আমরা একটা স্কুল তৈরি করি। আমরা জানতাম এটি খাস জায়গা। কিন্তু এখন আবুল খায়ের বলতেছে যে, এটি তাদের বিএসভুক্ত জায়গা। সাধারণত পাহাড় খাস খতিয়ান, ব্যক্তি মালিকানাধীন কিংবা বনবিভাগের থাকে। আমরা কিছু দিনের মধ্যে জায়গাটি পরিমাপ করব। পরিমাপ করলে বুঝা যাবে জায়গাটির মালিককে।

সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন রায় সাংবাদিকদের জানান, সোনাইছড়ি ত্রিপুরা পল্লীতে বসবাসকারীদের জন্য প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ১০টি ঘর নির্মাণের কথা ছিল। যে জায়গায় ঘর তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছিল, সেই জায়গা আবুল খায়ের গ্রুপ নিজেদের দাবি করে বসবাসকারীদের বাধা দেয়। দুই পক্ষের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি।

তারা আলোচনায় বসতে রাজি। কিছু দিনের মধ্যে বৈঠক হবে। জায়গার মালিক যদি আবুল খায়ের গ্রুপ হয় তাহলে সেখানে ঘর হবে না। জায়গার মালিক সরকার হলে সেখানে ত্রিপুরারা ঘর করবে।

এ বিষয়ে একেএস মিলের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক ইমরুল কাদের ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, ত্রিপুরারাই আমাদের জায়গা দখল করেছে। জায়গার সব ডকুমেন্ট আমাদের কাছে আছে।

আরও খবর
খুলে দেয়া হয়েছে ভারতের সীমান্ত বন্দর ফিরছে বাংলাদেশিরা
এমবিবিএস ভর্তির সময় বাড়ল ৭ জুন পর্যন্ত
সাংবাদিকের প্রতি অবিচার হলে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা কাদের
রোজিনার বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত ডিবিতে হস্তান্তর
রোজিনার নিঃশর্ত মুক্তি হেনস্তাকারীর বিচার দাবি সাংবাদিকদের মানববন্ধন
নোয়াবের উদ্বেগ
মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল বাতিল চেয়ে রিট
চার সংসদীয় আসনে উপনির্বাচন জুলাইয়ে
বাছাইকরণ বাতিল, আগের নিয়মে জাবি ভর্তি পরীক্ষা
কুমিল্লায় গৃহবধূ গণধর্ষণের শিকার
লালমনিরহাটে ইজিপির পরিবর্তে ম্যানুয়েল দরপত্র আহ্বান, উত্তেজনা
ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেনি উপকূলের মানুষ
সিলেটে হেফাজত নেতা মুফতি ফারুক গ্রেপ্তার

বৃহস্পতিবার, ২০ মে ২০২১ , ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ৭ শাওয়াল ১৪৪২

সীতাকুণ্ডে ত্রিপুরা পল্লী উচ্ছেদ বন্ধে স্মারকলিপি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ত্রিপুরা পল্লীতে বসবাসকারী আদিবাসীদের উচ্ছেদ চেষ্টা চলছে। আবুল খায়ের গ্রুপ কর্তৃক এই উচ্ছেদ চেষ্টা বন্ধে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। মঙ্গলবার বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদের পক্ষ থেকে একটি দল জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দেন। বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অনন্ত কুমার ত্রিপুরা স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিতে জানা যায়, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে ত্রিপুরা অন্যতম জনগোষ্ঠী। বাংলাদেশের পাবর্ত্য চট্টগ্রাম ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে তারা বসবাস করে আসছে।

যার মধ্যে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ৭০টি পরিবার প্রায় দেড়শো বছর ধরে বসবাস করে আসছে। কিন্তু ত্রিপুরা পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ করার জন্য আবুল খায়ের গ্রুপ বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে উক্ত পাড়ার হতদরিদ্র ১০টি পরিবারের জন্য বরাদ্দকৃত ঘর নির্মাণের সময় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। হুমকি-ধমকিতে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী চরম আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিনাতিপাত করছে।

স্থানীয় ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী উক্ত জায়গা থেকে উচ্ছেদ হলে অন্যকোন জায়গায় যাওয়ার সুযোগ নেই বিধায় বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গী থেকে বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করা হয়। ত্রিপুরা পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ হওয়া থেকে বাঁচানোর জন্য তিনটি দাবি জানানো হয়।

তাহলো সোনাইছড়িতে বসবাসরত ৭০টি ত্রিপুরা পরিবারের উচ্ছেদ বন্ধ করতে হবে, আবুল খায়ের গ্রুপের হুমকি থেকে পাড়াবাসীদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং পাড়াবাসীদের নামে তাদের বসতভিটা রেকর্ডভুক্ত করে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম সীতাকুণ্ড ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক রবীন্দ্র ত্রিপুরা বলেন, আমরা যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসছি। আমাদের শিশুদের শিক্ষার কথা চিন্তা করে সরকার সেখানে একটি স্কুল তৈরি করে দেয়। তার পাশে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘর তৈরি করার জন্য জায়গা প্রস্তুত করতে গেলে আবুল খায়ের গ্রুপের আনসার সদস্যরা আমাদের রাইফেল ঠেকিয়ে রেখে গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। কিন্তু আমরা শান্তি চাই বলে কোন কিছু অপ্রিতিকর ঘটনা ঘটেনি। তবে আমরা উচ্ছেদ আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি। তিনি সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করেন।

সোনাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনির আহমেদ বলেন, ত্রিপুরা পল্লীতে আমরা একটা স্কুল তৈরি করি। আমরা জানতাম এটি খাস জায়গা। কিন্তু এখন আবুল খায়ের বলতেছে যে, এটি তাদের বিএসভুক্ত জায়গা। সাধারণত পাহাড় খাস খতিয়ান, ব্যক্তি মালিকানাধীন কিংবা বনবিভাগের থাকে। আমরা কিছু দিনের মধ্যে জায়গাটি পরিমাপ করব। পরিমাপ করলে বুঝা যাবে জায়গাটির মালিককে।

সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন রায় সাংবাদিকদের জানান, সোনাইছড়ি ত্রিপুরা পল্লীতে বসবাসকারীদের জন্য প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ১০টি ঘর নির্মাণের কথা ছিল। যে জায়গায় ঘর তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছিল, সেই জায়গা আবুল খায়ের গ্রুপ নিজেদের দাবি করে বসবাসকারীদের বাধা দেয়। দুই পক্ষের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি।

তারা আলোচনায় বসতে রাজি। কিছু দিনের মধ্যে বৈঠক হবে। জায়গার মালিক যদি আবুল খায়ের গ্রুপ হয় তাহলে সেখানে ঘর হবে না। জায়গার মালিক সরকার হলে সেখানে ত্রিপুরারা ঘর করবে।

এ বিষয়ে একেএস মিলের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক ইমরুল কাদের ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, ত্রিপুরারাই আমাদের জায়গা দখল করেছে। জায়গার সব ডকুমেন্ট আমাদের কাছে আছে।