বন্ধ হয়ে যাচ্ছে টিকা কর্মসূচি

৩০ শতাংশ আপাতত দ্বিতীয় ডোজও পাচ্ছে না

করোনার টিকা সংকটে দেশের বিভিন্ন কেন্দ্রে টিকা কর্মসূচি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। প্রথম ডোজ পাওয়া প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ আপাতত দ্বিতীয় ডোজ পাচ্ছে না। এ হিসেবে প্রায় ১৭ লাখ মানুষকে আপাতত দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে। শুধু চটগ্রাম বিভাগেই প্রায় দেড় লাখ মানুষ আপাতত দ্বিতীয় ডোজ পাচ্ছে না। ঢাকা বিভাগেও তিন লাখের বেশি মানুষের দ্বিতীয় ডোজ পাওয়া আপাতত অনিশ্চিত বলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

ইতোমধ্যে কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা ও রাঙ্গামাটি জেলায় টিকা কর্মসূচি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে। আরও কয়েকটি জেলায় কর্মসূচি বন্ধের উপক্রম হয়েছে। কোন কোন জেলায় বেশিরভাগ কেন্দ্রই বন্ধ হয়ে গেছে। তবে যাদের প্রথম ডোজ নেয়ার পর প্রায় তিনমাসের কাছাকাছি সময় চলে গেছে সেসব টিকাগ্রহীতাকে ‘অগ্রাধিকার’ ভিত্তিতে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন জেলায়।

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) পরিচালক প্রফেসর ডা. সামছুল হক গতকাল সংবাদকে বলেন, ‘যে কোন টিকা কর্মসূচিতেই ৫ শতাংশ ওয়েস্টেজ (অপচয়) আন্তর্জাতিকভাবে অ্যাপ্রুভড। কিন্তু আমাদের যেহেতু টিকার স্বল্পতা ছিল... সীমিত ছিল, এজন্য আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক ছিলাম যাতে ওয়েস্টেজ কম হয়। আমাদের হয়তো ৫ শতাংশের কম হবে।’

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘যেমন একটি ভায়ালে ১০টি টিকা থাকে কিন্তু কোন কোন কেন্দ্রে দেখা গেছে, একটি ভায়াল খোলার পর ৭/৮ জন টিকা নিয়েছেন; এতে ২/৩টি ডোজ থেকে যাচ্ছে, সেক্ষেত্রে ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মীদের যারা দ্বিতীয় ডোজ পাননি তাদের সেগুলো আগাম দিয়ে দেয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে টিকা কার্ডের সঙ্গে তথ্য সমন্বয় করা হচ্ছে আবার যেসব কেন্দ্রে একাধিক বুথ রয়েছে, সেক্ষেত্রে বুথগুলোতে সমন্বয় করে ভায়াল শেষ করা হচ্ছে।’

এরপরও কিছু ওয়েস্টেজ হয়েছে- জানিয়ে ডা. সামছুল হক বলেন, ‘সেই সংখ্যাটা এখনও চূড়ান্ত হয়নি; বিভিন্ন জেলা থেকে আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি। তবে যেসব কেন্দ্রে টিকা শেষ হচ্ছে, সঙ্গে সেঙ্গ সেই কেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে।’

দেশে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি ‘কোভিশিল্ড’ করোনার টিকা দেয়া হচ্ছে। প্রত্যেককে এই টিকার দুটি ডোজ দেয়া হচ্ছে। উদ্ভাবনকারী প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা প্রথম ডোজ নেয়ার দুই থেকে তিনমাসের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ দুই মাসের মাথায় দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ঢাকা ও চট্টগ্রামেই ৫ লাখের বেশি মানুষের দ্বিতীয় ডোজ অনিশ্চিত

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গতকালের তথ্যানুযায়ী, ঢাকা মহানগর ও ঢাকা বিভাগের ১৩টি জেলায় টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন মোট ১৮ লাখ সাত হাজার ৯৭৫ জন। এর মধ্যে গতকাল পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ১৩ লাখ ৪৬ হাজার ৪৩ জন। এ হিসেবে আরও চার লাখ ৬১ হাজার ৯৩১ জন দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায় রয়েছেন।

চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলায় মোট ১১ লাখ ৭৮ হাজার ২০৪ জন করোনা টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন। এর মধ্যে এ পর্যন্ত সাত লাখ ৯১ হাজার ২৪২ জন দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন। এ হিসেবে তিন লাখ ৮৬ হাজার ৯৬২ জন এখনও দ্বিতীয় ডোজ পাননি।

জানতে চাইলে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি গতকাল সংবাদকে বলেন, ‘টিকার সংকট সারাদেশেই। চট্টগ্রামে প্রথম ডোজ যারা নিয়েছেন, তাদের ৭০ শতাংশকে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া সম্ভব হচ্ছে; বাকি ৩০ শতাংশ আপাতত দ্বিতীয় ডোজ পাচ্ছেন না। তবে যাদের প্রথম ডোজ নেয়ার তিনমাস হয়ে যাচ্ছে তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হচ্ছে।’

ঢাকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টিকা কেন্দ্র ‘বিএসএমএমইউ’। এই বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ গতকাল সংবাদকে জানান, তাদের কেন্দ্রে এখনও দ্বিতীয় ডোজের টিকাদান অব্যাহত রয়েছে। এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ টিকার মজুদ রয়েছে তা দিয়ে ২৫ মে পর্যন্ত কর্মসূচি চালানো যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

১৭ লাখ মানুষের দ্বিতীয় ডোজ অনিশ্চিত

গত ৫ মে সংবাদ বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘১৪ লাখ ৪০ হাজার মানুষের দ্বিতীয় ডোজ টিকা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে’ কিন্তু পরিবহন, ব্যবস্থাপনা, সংরক্ষণাগার থেকে টিকাকেন্দ্রে স্থানান্তর ও টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নের সময় কিছু টিকা ‘ওয়েস্টেজ’ বা ‘অপচয়’ হওয়ায় ওই সংখ্যাটা বাড়ছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পরিবহন, ব্যবস্থাপনা, সংরক্ষণাগার থেকে টিকাকেন্দ্রে স্থানান্তর ও টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নের সময় যদি ন্যূনতম ১ শতাংশও যদি নষ্ট বা অপচয় হয়ে থাকে তাহলে মজুদ আরও এক লাখ কমে যাবে; ২ শতাংশ নষ্ট হলে দুই এবং ৩ শতাংশ নষ্ট হলে তিন লাখ ডোজ কমে আসবে।

তবে ইতোমধ্যে কয়েকটি জেলায় টিকা কর্মসূচি বন্ধ হওয়ায় টিকার মজুদ ফুরিয়ে আসছে বলে ধরে নিচ্ছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। পাশর্^বর্তী দেশ ভারতে টিকা কর্মসূচি বাস্তবায়নের সময় ৫ থেকে ৬ শতাংশ টিকা নষ্ট হয়েছে দেশটির সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে।

চুক্তির আওতায় কেনা ৭০ লাখ ডোজ এবং ভারত সরকারের উপহার হিসেবে ৩৩ লাখ ডোজসহ সরকার মোট করোনা টিকা পেয়েছে এক কোটি তিন লাখ ডোজ। এর মধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৯১২ জন। তাদের মধ্যে গতকাল পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ৩৯ লাখ ৩০ হাজার ৭৫১ জন। এ হিসেবে এখনও ১৮ লাখ ৮৯ হাজার ১৬১ জন দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায় রয়েছে। বর্তমানে সারাদেশে যে পরিমাণ টিকার মজুদ রয়েছে তা দিয়ে দুই লাখ মানুষকে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া সম্ভব হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ধারণা করছেন।

গতকাল পর্যন্ত প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলিয়ে মোট টিকা পেয়েছেন ৯৭ লাখ ৫০ হাজার ৬৬৩ জন। এ হিসেবে সরকারের কাছে মজুদ থাকার কথা পাঁচ লাখ ৪৯ হাজার ৩৩৭ ডোজ টিকা। সর্বশেষ গতকাল দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিয়েছেন ৫৩ হাজার ৯১৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৩২ হাজার ৬৯৬ জন এবং মহিলা ২১ হাজার ২১৯ জন।

দেশে গত ৭ ফেব্রুয়ারি করোনা টিকার প্রথম ডোজের গণটিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। এর আট সপ্তাহ পর ৮ এপ্রিল দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেয়া শুরু হয়। টিকার স্বল্পতায় গত ২৭ এপ্রিল থেকে প্রথম ডোজের টিকা দেয়া বন্ধ রাখা হয়।

মাঠ পর্যায়ে ইপিআই কর্মসূচি বাস্তবায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে জানান, টিকা কর্মসূচির সময় কিছু টিকা স্বাভাবিকভাবেই ‘ওয়েস্টেজ’ বা অপচয় হয়। দেশে বিগত সময়ে বিভিন্ন টিকাদান কর্মসূচিতে ১০ শতাংশ অপচয়কে গ্রহণযোগ্য ধরা হয়েছে কিন্তু এবার মহামারী পরিস্থিতিতে করোনা টিকা প্রয়োগের ক্ষেত্রে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। এ কারণে ‘ওয়েস্টেজ’ কিছুটা কম হয়েছে।

তারা বলেন, একটি ভায়ালে ১০ ডোজ টিকা থাকে। স্বাস্থ্যকর্মীরা একটি ভায়ালের ‘লিক্যুইড’ বা তরল টিকা ১০ জনকে ভাগ করে দেন। এতে ‘ন্যূনতম’ বেশি হলেই সংখ্যা কমে আসছে। কেউ ১০ ডোজ দিতে পারেন, কেউ পারেন না আবার কোন কোন ক্ষেত্রে এমনও হয় যে, একটি ভায়াল খোলার পর ৫/৭ জনকে দেয়া হলো। বাকি ডোজগুলো দেয়ার মতো মানুষ টিকাদান কেন্দ্রে উপস্থিত থাকে না। তা হলে সাত ডোজেরই অপচয় হয়। এ ক্ষেত্রে অনেক কেন্দ্রেই অবশিষ্ট ডোজগুলো স্বাস্থ্যকর্মীদের দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এরপরও বেশিরভাগ কেন্দ্রেই ‘ওয়েস্টেজ’ পুরোপুরি ঠেকানো সম্ভব হয়নি বলে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

শুক্রবার, ২১ মে ২০২১ , ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ৮ শাওয়াল ১৪৪২

বন্ধ হয়ে যাচ্ছে টিকা কর্মসূচি

৩০ শতাংশ আপাতত দ্বিতীয় ডোজও পাচ্ছে না

রাকিব উদ্দিন

image

করোনা আক্রান্ত বেড়েই চলেছে, হাসপাতালে প্রতিদিনই নতুন রোগী বাড়ছে, কিন্তু টিকা কবে পাওয়া যাবে তা অনিশ্চিত। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় মানুষ -সংবাদ

করোনার টিকা সংকটে দেশের বিভিন্ন কেন্দ্রে টিকা কর্মসূচি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। প্রথম ডোজ পাওয়া প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ আপাতত দ্বিতীয় ডোজ পাচ্ছে না। এ হিসেবে প্রায় ১৭ লাখ মানুষকে আপাতত দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে। শুধু চটগ্রাম বিভাগেই প্রায় দেড় লাখ মানুষ আপাতত দ্বিতীয় ডোজ পাচ্ছে না। ঢাকা বিভাগেও তিন লাখের বেশি মানুষের দ্বিতীয় ডোজ পাওয়া আপাতত অনিশ্চিত বলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

ইতোমধ্যে কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা ও রাঙ্গামাটি জেলায় টিকা কর্মসূচি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে। আরও কয়েকটি জেলায় কর্মসূচি বন্ধের উপক্রম হয়েছে। কোন কোন জেলায় বেশিরভাগ কেন্দ্রই বন্ধ হয়ে গেছে। তবে যাদের প্রথম ডোজ নেয়ার পর প্রায় তিনমাসের কাছাকাছি সময় চলে গেছে সেসব টিকাগ্রহীতাকে ‘অগ্রাধিকার’ ভিত্তিতে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন জেলায়।

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) পরিচালক প্রফেসর ডা. সামছুল হক গতকাল সংবাদকে বলেন, ‘যে কোন টিকা কর্মসূচিতেই ৫ শতাংশ ওয়েস্টেজ (অপচয়) আন্তর্জাতিকভাবে অ্যাপ্রুভড। কিন্তু আমাদের যেহেতু টিকার স্বল্পতা ছিল... সীমিত ছিল, এজন্য আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক ছিলাম যাতে ওয়েস্টেজ কম হয়। আমাদের হয়তো ৫ শতাংশের কম হবে।’

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘যেমন একটি ভায়ালে ১০টি টিকা থাকে কিন্তু কোন কোন কেন্দ্রে দেখা গেছে, একটি ভায়াল খোলার পর ৭/৮ জন টিকা নিয়েছেন; এতে ২/৩টি ডোজ থেকে যাচ্ছে, সেক্ষেত্রে ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মীদের যারা দ্বিতীয় ডোজ পাননি তাদের সেগুলো আগাম দিয়ে দেয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে টিকা কার্ডের সঙ্গে তথ্য সমন্বয় করা হচ্ছে আবার যেসব কেন্দ্রে একাধিক বুথ রয়েছে, সেক্ষেত্রে বুথগুলোতে সমন্বয় করে ভায়াল শেষ করা হচ্ছে।’

এরপরও কিছু ওয়েস্টেজ হয়েছে- জানিয়ে ডা. সামছুল হক বলেন, ‘সেই সংখ্যাটা এখনও চূড়ান্ত হয়নি; বিভিন্ন জেলা থেকে আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি। তবে যেসব কেন্দ্রে টিকা শেষ হচ্ছে, সঙ্গে সেঙ্গ সেই কেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে।’

দেশে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি ‘কোভিশিল্ড’ করোনার টিকা দেয়া হচ্ছে। প্রত্যেককে এই টিকার দুটি ডোজ দেয়া হচ্ছে। উদ্ভাবনকারী প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা প্রথম ডোজ নেয়ার দুই থেকে তিনমাসের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ দুই মাসের মাথায় দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ঢাকা ও চট্টগ্রামেই ৫ লাখের বেশি মানুষের দ্বিতীয় ডোজ অনিশ্চিত

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গতকালের তথ্যানুযায়ী, ঢাকা মহানগর ও ঢাকা বিভাগের ১৩টি জেলায় টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন মোট ১৮ লাখ সাত হাজার ৯৭৫ জন। এর মধ্যে গতকাল পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ১৩ লাখ ৪৬ হাজার ৪৩ জন। এ হিসেবে আরও চার লাখ ৬১ হাজার ৯৩১ জন দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায় রয়েছেন।

চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলায় মোট ১১ লাখ ৭৮ হাজার ২০৪ জন করোনা টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন। এর মধ্যে এ পর্যন্ত সাত লাখ ৯১ হাজার ২৪২ জন দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন। এ হিসেবে তিন লাখ ৮৬ হাজার ৯৬২ জন এখনও দ্বিতীয় ডোজ পাননি।

জানতে চাইলে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি গতকাল সংবাদকে বলেন, ‘টিকার সংকট সারাদেশেই। চট্টগ্রামে প্রথম ডোজ যারা নিয়েছেন, তাদের ৭০ শতাংশকে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া সম্ভব হচ্ছে; বাকি ৩০ শতাংশ আপাতত দ্বিতীয় ডোজ পাচ্ছেন না। তবে যাদের প্রথম ডোজ নেয়ার তিনমাস হয়ে যাচ্ছে তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হচ্ছে।’

ঢাকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টিকা কেন্দ্র ‘বিএসএমএমইউ’। এই বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ গতকাল সংবাদকে জানান, তাদের কেন্দ্রে এখনও দ্বিতীয় ডোজের টিকাদান অব্যাহত রয়েছে। এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ টিকার মজুদ রয়েছে তা দিয়ে ২৫ মে পর্যন্ত কর্মসূচি চালানো যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

১৭ লাখ মানুষের দ্বিতীয় ডোজ অনিশ্চিত

গত ৫ মে সংবাদ বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘১৪ লাখ ৪০ হাজার মানুষের দ্বিতীয় ডোজ টিকা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে’ কিন্তু পরিবহন, ব্যবস্থাপনা, সংরক্ষণাগার থেকে টিকাকেন্দ্রে স্থানান্তর ও টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নের সময় কিছু টিকা ‘ওয়েস্টেজ’ বা ‘অপচয়’ হওয়ায় ওই সংখ্যাটা বাড়ছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পরিবহন, ব্যবস্থাপনা, সংরক্ষণাগার থেকে টিকাকেন্দ্রে স্থানান্তর ও টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নের সময় যদি ন্যূনতম ১ শতাংশও যদি নষ্ট বা অপচয় হয়ে থাকে তাহলে মজুদ আরও এক লাখ কমে যাবে; ২ শতাংশ নষ্ট হলে দুই এবং ৩ শতাংশ নষ্ট হলে তিন লাখ ডোজ কমে আসবে।

তবে ইতোমধ্যে কয়েকটি জেলায় টিকা কর্মসূচি বন্ধ হওয়ায় টিকার মজুদ ফুরিয়ে আসছে বলে ধরে নিচ্ছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। পাশর্^বর্তী দেশ ভারতে টিকা কর্মসূচি বাস্তবায়নের সময় ৫ থেকে ৬ শতাংশ টিকা নষ্ট হয়েছে দেশটির সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে।

চুক্তির আওতায় কেনা ৭০ লাখ ডোজ এবং ভারত সরকারের উপহার হিসেবে ৩৩ লাখ ডোজসহ সরকার মোট করোনা টিকা পেয়েছে এক কোটি তিন লাখ ডোজ। এর মধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৯১২ জন। তাদের মধ্যে গতকাল পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ৩৯ লাখ ৩০ হাজার ৭৫১ জন। এ হিসেবে এখনও ১৮ লাখ ৮৯ হাজার ১৬১ জন দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায় রয়েছে। বর্তমানে সারাদেশে যে পরিমাণ টিকার মজুদ রয়েছে তা দিয়ে দুই লাখ মানুষকে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া সম্ভব হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ধারণা করছেন।

গতকাল পর্যন্ত প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলিয়ে মোট টিকা পেয়েছেন ৯৭ লাখ ৫০ হাজার ৬৬৩ জন। এ হিসেবে সরকারের কাছে মজুদ থাকার কথা পাঁচ লাখ ৪৯ হাজার ৩৩৭ ডোজ টিকা। সর্বশেষ গতকাল দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিয়েছেন ৫৩ হাজার ৯১৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৩২ হাজার ৬৯৬ জন এবং মহিলা ২১ হাজার ২১৯ জন।

দেশে গত ৭ ফেব্রুয়ারি করোনা টিকার প্রথম ডোজের গণটিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। এর আট সপ্তাহ পর ৮ এপ্রিল দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেয়া শুরু হয়। টিকার স্বল্পতায় গত ২৭ এপ্রিল থেকে প্রথম ডোজের টিকা দেয়া বন্ধ রাখা হয়।

মাঠ পর্যায়ে ইপিআই কর্মসূচি বাস্তবায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে জানান, টিকা কর্মসূচির সময় কিছু টিকা স্বাভাবিকভাবেই ‘ওয়েস্টেজ’ বা অপচয় হয়। দেশে বিগত সময়ে বিভিন্ন টিকাদান কর্মসূচিতে ১০ শতাংশ অপচয়কে গ্রহণযোগ্য ধরা হয়েছে কিন্তু এবার মহামারী পরিস্থিতিতে করোনা টিকা প্রয়োগের ক্ষেত্রে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। এ কারণে ‘ওয়েস্টেজ’ কিছুটা কম হয়েছে।

তারা বলেন, একটি ভায়ালে ১০ ডোজ টিকা থাকে। স্বাস্থ্যকর্মীরা একটি ভায়ালের ‘লিক্যুইড’ বা তরল টিকা ১০ জনকে ভাগ করে দেন। এতে ‘ন্যূনতম’ বেশি হলেই সংখ্যা কমে আসছে। কেউ ১০ ডোজ দিতে পারেন, কেউ পারেন না আবার কোন কোন ক্ষেত্রে এমনও হয় যে, একটি ভায়াল খোলার পর ৫/৭ জনকে দেয়া হলো। বাকি ডোজগুলো দেয়ার মতো মানুষ টিকাদান কেন্দ্রে উপস্থিত থাকে না। তা হলে সাত ডোজেরই অপচয় হয়। এ ক্ষেত্রে অনেক কেন্দ্রেই অবশিষ্ট ডোজগুলো স্বাস্থ্যকর্মীদের দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এরপরও বেশিরভাগ কেন্দ্রেই ‘ওয়েস্টেজ’ পুরোপুরি ঠেকানো সম্ভব হয়নি বলে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।