অবৈধ গ্যাস সংযোগ : জ্বালানি সচিবকে ভুল তথ্য দিচ্ছে তিতাস

অবৈধ গ্যাস সংযোগ উচ্ছেদের বিষয়ে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিবকে ভুল তথ্য দিচ্ছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (টিজিটিডিসিএল)।

গত ২০ জানুয়ারি দৈনিক সংবাদে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় একটি বেইলি ব্রিজের ওপর দিয়ে অবৈধ গ্যাস সংযোগ লাইনের একটি ছবিসহ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান মন্ত্রণালয়ের মাসিক সমন্বয় সভায় তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের কাছে এ বিষয়ে জানতে চান।

‘এ প্রতিবেদনটি ভুয়া, কয়েক বছর আগের ছবি দিয়ে করা। এই অবৈধ লাইন এখন নেই’- সচিবকে এমন তথ্য জানান তিতাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

অথচ এ প্রতিবেদক গত ১৭ জানুয়ারি সরেজমিন গজারিয়ার জামালদি বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন টেঙ্গাচর সড়কের ওই বেইলি ব্রিজের মাঝামাঝি পৌঁছে সেতুর একপাশে নেমে অবৈধ সংযোগের ছবিটি তোলেন, যা ২০ জানুয়ারি সংবাদে প্রতিবেদনের সঙ্গে ছাপা হয়।

গত ১৫ মে পুনরায় সরেজিমন উপস্থিত হয়ে এ অবৈধ লাইন এখনও যে বহাল আছে, তা নিশ্চিত করা হয়। গতকাল বিকেলে গজারিয়ার সংশ্লিষ্ট এলাকার একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে সবাই জানান, এই অবৈধ লাইনটি এখনও আছে।

অবৈধ গ্যাস সংযোগের বিষয়ে গতকাল বিকেলে সিনিয়র সচিব মো. আনিসুর রহমানের সঙ্গে কথা হয় সংবাদের।

সিনিয়র সচিব বলেন, যেসব এলাকায় অবৈধ সংযোগ বেশি সেখানে এখন মূল লাইন কেটে দেয়া হচ্ছে। ঈদের পরের দিন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ অঞ্চল থেকে স্থায়ীভাবে একটি গ্যাসলাইনের ভাল্ব অপসারণ করেছে তিতাস। যে ভাল্বটি অপসারণ করা হয়েছে তাতে দুটি ডিআরএস সংযোগ ছিল। এ ভাল্বে প্রায় ১০ কিলোমিটার অবৈধ গ্যাস সংযোগ এবং প্রায় সাত হাজার আবাসিক অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এ ভাল্বের আওতায় ৫০টি রেস্টুরেস্ট, কয়েকটি ওয়াশিং প্লান্টের অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। স্থায়ীভাবে এ ভাল্বটি অপসারণের কারণে অবৈধ গ্যাস বন্ধ হয়ে যাবে।

সিনিয়র সচিব বলেন, অন্য যেসব এলাকায় অবৈধ সংযোগ বেশি, সেখানে একই ধরনের উচ্ছেদ অভিযান চলবে। ফলে কোথাও অবৈধ সংযোগ থাকবে না।

গজারিয়ায় একটি বেইলি ব্রিজের ওপর দিয়ে ওইপারে দীর্ঘদিন ধরে একটি অবৈধ গ্যাস লাইন চলমান আছে। সংবাদে ছবিসহ একাধিক রিপোর্ট হওয়ার পরও এই লাইনটি কাটা হচ্ছে না কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে মো. আনিছুর রহমান বলেন, ‘আমাকে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ‘এটি ভুয়া রিপোর্ট! কয়েক বছর আগের ছবি দিয়ে এই রিপোর্ট করা হয়েছে। এই অবৈধ লাইন এখন নেই।’

তবে এ লাইনটি এখন বহাল আছে, এমন তথ্য নিশ্চিত করা হলে সিনিয়র সচিব বলেন, ‘এ বিষয়ে তিতাসের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

মো. আনিছুর রহমান বলেন, ‘অবৈধ সংযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে তিতাসের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত। একই এলাকায় অনেকদিন ধরে যারা কাজ করছেন তাদের তাৎক্ষণিকভাবে অন্যত্র বদলি করার নির্দেশ দিয়েছি, যা ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন করা হয়েছে।’

গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জসহ আরও কয়েকটি জেলায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ গ্যাস সংযোগ চলছে। তিতাস গ্যাস অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ সংযোগ লাইন কেটে দিলেও কিছুদিন পর এসব লাইন পুনরায় চালু হয়ে যাচ্ছে। ফলে অবৈধ গ্যাস সংযোগ উচ্ছেদে দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি।

তিতাস গ্যাস সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর আশপাশে যেসব এলাকায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ বেশি সেখানে মূল লাইন কেটে দেয়া শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। অভিযানে বৈধ-অবৈধ সব লাইন বন্ধ হয়ে গেলে পরে বৈধ গ্রাহকদের সংযোগ চালু করে দেয়া হবে।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান গত ২৭ এপ্রিল মন্ত্রণালয়ের মাসিক সমন্বয় সভায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (তিতাস গ্যাস) আওতাধীন এলাকায় অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে বড় ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ করার নির্দেশ দেন।

এর আগে গত ২৫ মার্চ অনুষ্ঠিত মাসিক সমন্বয় সভায় সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান সভায় উপস্থিত সংশ্লিষ্টদের জানান, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির আওতাধীন চাঁদপুরেও প্রচুর অবৈধ গ্যাস সংযোগ রয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এ বিষয়েও ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন তিনি।

নাগরিক চাহিদা উপেক্ষা করে আবাসিক খাতে নতুন গ্যাস সংযোগ প্রদান বন্ধ রেখেছে সরকার। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আবাসিক খাতে নতুন গ্যাস সংযোগ আর দেয়া হবে না। তবে বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ চলছে। এদিকে রাজধানীর বেশকিছু এলাকায় পাইপ লাইনের বৈধ গ্রাহকদের চুলায় গ্যাসের চাপ কম থাকার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। কম গ্যাস ব্যবহার করেও মাস শেষে তাদের পুরো বিল দিতে হচ্ছে। সব গ্রাহককে সবাইকে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনার পরিকল্পনা থাকলেও তা চলছে ধীরগতিতে। সরকার আবাসিকে রান্নায় বিকল্প জ্বালানি হিসেবে এলপি গ্যাস জনপ্রিয় করতে চাইছে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) এলপি গ্যাসের সিলিন্ডারের মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। তবে নজরদারির অভাবে তা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।

শুক্রবার, ২১ মে ২০২১ , ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ৮ শাওয়াল ১৪৪২

অবৈধ গ্যাস সংযোগ : জ্বালানি সচিবকে ভুল তথ্য দিচ্ছে তিতাস

ফয়েজ আহমেদ তুষার

image

অবৈধ গ্যাস সংযোগ উচ্ছেদের বিষয়ে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিবকে ভুল তথ্য দিচ্ছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (টিজিটিডিসিএল)।

গত ২০ জানুয়ারি দৈনিক সংবাদে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় একটি বেইলি ব্রিজের ওপর দিয়ে অবৈধ গ্যাস সংযোগ লাইনের একটি ছবিসহ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান মন্ত্রণালয়ের মাসিক সমন্বয় সভায় তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের কাছে এ বিষয়ে জানতে চান।

‘এ প্রতিবেদনটি ভুয়া, কয়েক বছর আগের ছবি দিয়ে করা। এই অবৈধ লাইন এখন নেই’- সচিবকে এমন তথ্য জানান তিতাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

অথচ এ প্রতিবেদক গত ১৭ জানুয়ারি সরেজমিন গজারিয়ার জামালদি বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন টেঙ্গাচর সড়কের ওই বেইলি ব্রিজের মাঝামাঝি পৌঁছে সেতুর একপাশে নেমে অবৈধ সংযোগের ছবিটি তোলেন, যা ২০ জানুয়ারি সংবাদে প্রতিবেদনের সঙ্গে ছাপা হয়।

গত ১৫ মে পুনরায় সরেজিমন উপস্থিত হয়ে এ অবৈধ লাইন এখনও যে বহাল আছে, তা নিশ্চিত করা হয়। গতকাল বিকেলে গজারিয়ার সংশ্লিষ্ট এলাকার একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে সবাই জানান, এই অবৈধ লাইনটি এখনও আছে।

অবৈধ গ্যাস সংযোগের বিষয়ে গতকাল বিকেলে সিনিয়র সচিব মো. আনিসুর রহমানের সঙ্গে কথা হয় সংবাদের।

সিনিয়র সচিব বলেন, যেসব এলাকায় অবৈধ সংযোগ বেশি সেখানে এখন মূল লাইন কেটে দেয়া হচ্ছে। ঈদের পরের দিন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ অঞ্চল থেকে স্থায়ীভাবে একটি গ্যাসলাইনের ভাল্ব অপসারণ করেছে তিতাস। যে ভাল্বটি অপসারণ করা হয়েছে তাতে দুটি ডিআরএস সংযোগ ছিল। এ ভাল্বে প্রায় ১০ কিলোমিটার অবৈধ গ্যাস সংযোগ এবং প্রায় সাত হাজার আবাসিক অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এ ভাল্বের আওতায় ৫০টি রেস্টুরেস্ট, কয়েকটি ওয়াশিং প্লান্টের অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। স্থায়ীভাবে এ ভাল্বটি অপসারণের কারণে অবৈধ গ্যাস বন্ধ হয়ে যাবে।

সিনিয়র সচিব বলেন, অন্য যেসব এলাকায় অবৈধ সংযোগ বেশি, সেখানে একই ধরনের উচ্ছেদ অভিযান চলবে। ফলে কোথাও অবৈধ সংযোগ থাকবে না।

গজারিয়ায় একটি বেইলি ব্রিজের ওপর দিয়ে ওইপারে দীর্ঘদিন ধরে একটি অবৈধ গ্যাস লাইন চলমান আছে। সংবাদে ছবিসহ একাধিক রিপোর্ট হওয়ার পরও এই লাইনটি কাটা হচ্ছে না কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে মো. আনিছুর রহমান বলেন, ‘আমাকে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ‘এটি ভুয়া রিপোর্ট! কয়েক বছর আগের ছবি দিয়ে এই রিপোর্ট করা হয়েছে। এই অবৈধ লাইন এখন নেই।’

তবে এ লাইনটি এখন বহাল আছে, এমন তথ্য নিশ্চিত করা হলে সিনিয়র সচিব বলেন, ‘এ বিষয়ে তিতাসের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

মো. আনিছুর রহমান বলেন, ‘অবৈধ সংযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে তিতাসের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত। একই এলাকায় অনেকদিন ধরে যারা কাজ করছেন তাদের তাৎক্ষণিকভাবে অন্যত্র বদলি করার নির্দেশ দিয়েছি, যা ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন করা হয়েছে।’

গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জসহ আরও কয়েকটি জেলায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ গ্যাস সংযোগ চলছে। তিতাস গ্যাস অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ সংযোগ লাইন কেটে দিলেও কিছুদিন পর এসব লাইন পুনরায় চালু হয়ে যাচ্ছে। ফলে অবৈধ গ্যাস সংযোগ উচ্ছেদে দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি।

তিতাস গ্যাস সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর আশপাশে যেসব এলাকায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ বেশি সেখানে মূল লাইন কেটে দেয়া শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। অভিযানে বৈধ-অবৈধ সব লাইন বন্ধ হয়ে গেলে পরে বৈধ গ্রাহকদের সংযোগ চালু করে দেয়া হবে।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান গত ২৭ এপ্রিল মন্ত্রণালয়ের মাসিক সমন্বয় সভায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (তিতাস গ্যাস) আওতাধীন এলাকায় অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে বড় ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ করার নির্দেশ দেন।

এর আগে গত ২৫ মার্চ অনুষ্ঠিত মাসিক সমন্বয় সভায় সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান সভায় উপস্থিত সংশ্লিষ্টদের জানান, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির আওতাধীন চাঁদপুরেও প্রচুর অবৈধ গ্যাস সংযোগ রয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এ বিষয়েও ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন তিনি।

নাগরিক চাহিদা উপেক্ষা করে আবাসিক খাতে নতুন গ্যাস সংযোগ প্রদান বন্ধ রেখেছে সরকার। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আবাসিক খাতে নতুন গ্যাস সংযোগ আর দেয়া হবে না। তবে বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ চলছে। এদিকে রাজধানীর বেশকিছু এলাকায় পাইপ লাইনের বৈধ গ্রাহকদের চুলায় গ্যাসের চাপ কম থাকার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। কম গ্যাস ব্যবহার করেও মাস শেষে তাদের পুরো বিল দিতে হচ্ছে। সব গ্রাহককে সবাইকে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনার পরিকল্পনা থাকলেও তা চলছে ধীরগতিতে। সরকার আবাসিকে রান্নায় বিকল্প জ্বালানি হিসেবে এলপি গ্যাস জনপ্রিয় করতে চাইছে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) এলপি গ্যাসের সিলিন্ডারের মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। তবে নজরদারির অভাবে তা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।