দুর্ভোগ-ভোগান্তি-অতিরিক্ত ভাড়া ফিরতেও
করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকারি বিধিনিষেধের কারণে প্রায় দেড় মাস যাবত বন্ধ আন্তঃজেলা বাস, ট্রেন ও লঞ্চ সার্ভিস। কিন্তু বন্ধ নেই মানুষের যাতায়াত। সার্ভিস বন্ধের মধ্যেও এক কোটি মানুষ এবার ঈদে ঢাকা ছেড়েছে এবং ও প্রবেশ করেছেন বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। জেলার অভ্যন্তরে গণপরিবহন চালু থাকায় সহজেই এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যাতায়াত করছে যাত্রীরা। এতে বিভিন্ন জেলার যাত্রাপথে নানা গণপরিবহন ব্যবহারের ফলে করোনা সংক্রমিত হওয়ার যেমন ঝুঁকি রয়েছে তেমন চরম দুর্ভোগ ও পথে পথে কয়েকগুণ বেশি টাকা খরচ হচ্ছে বলে যাত্রীরা জানান। বাস বন্ধ থাকায় মাইক্রোবাস, প্রাইভেটার ও মোটরসাইকেলে যাতায়াত করায় নানা ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে ঘরমুখো মানুষদের। এদিকে আন্তঃজেলা বাস ও লঞ্চ সার্ভিস চালুর দাবি জানিয়েছেন মালিক ও শ্রমিকরা। আন্তঃজেলা বাস চালুসহ ৫ দফা দাবি আদায়ে ২৪ মে সারাদেশে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। এছাড়া আজকের মধ্যে যাত্রীবাহী লঞ্চ সার্ভিস চালু ঘোষণা না দেয়া হলে সারাদেশের পণ্যবাহী নৌযান বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন।
লকডাউনে ঈদে ১ কোটি মানুষ ঢাকা বাইরে গেছেন
ঈদের পর গত পাঁচদিনে রাজধানীতে প্রবেশ করা মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যাই প্রায় ৪৫ লাখ। এর মধ্যে গত ১৭-১৯ মে পর্যন্ত তিন দিনে ৩৩ লাখের বেশি মোবাইল সিম ব্যবহারকারী ঢাকায় প্রবেশ করেছে বলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়। ঢাকা ছেড়ে যাওয়া এবং ফেরত আসা মানুষের মোবাইল অপারেটরের তথ্য ভা-ার ও কল প্রবণতা বিশ্লেষণে এ তথ্য উঠে এসেছে বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন বাইরে থেকে ঢাকা আসা সিম ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে। গত ৪ থেকে ১৫ মে পর্যন্ত ১২ দিনে ১ কোটির বেশি মানুষ ঢাকা ছেড়ে গেছেন। এর মধ্যে ঈদ শেষে গত ছয় দিনে ঢাকায় অর্ধকোটির বেশি মানুষ প্রবেশ করেছেন। গত বৃহস্পতিবার একদিনেই প্রবেশ করেছেন ৮ লাখের বেশি মানুষ। পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে যাওয়া দেশের বিভিন্ন প্রান্তের এসব মানুষ রাজধানীতে ফিরছেন।’
তিনি বলেন, গত ১৫ মে চার লাখ ১২ হাজার ৭৬৩ জন, ১৬ মে ছয় লাখ ৬৪ হাজার ৩১৩ জন, ১৭ মে ১২ লাখ ৫ হাজার ৮৭৮ জন, ১৮ মে ১১ লাখ ২৭ হাজার ৬৪৪ জন, ১৯ মে ১০ লাখ ৬৫ হাজার ২৮৫ জন ও ২০ মে ৮ লাখ ৬৯ হাজার ৯৪৩ জন মোবাইল সিম ব্যবহারকারী ঢাকায় প্রবেশ করেছেন। যার মোট সংখ্যা ৫৩ লাখ ৪৫ হাজার ৮২৬ জন। গত তিনদিনে ধারাবাহিকভাবে সবচেয়ে বেশি মানুষ ঢাকায় প্রবেশ করেছেন। এর আগে গত ৪ মে থেকে ১৫ মে পর্যন্ত ১২ দিনে এক কোটির বেশি মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন। গত চারদিনে ঢাকায় আসা মানুষের মধ্যে গ্রামীণফোনের ২৫ লাখ ৩৭ হাজার ৮৫০, রবির ১০ লাখ ৯ হাজার ৪৮৮, বাংলালিংকের ১৫ লাখ ২০ হাজার ৪৪৩ জন ও টেলিটকের ২ লাখ ৭৮ হাজার ৪৫ জন গ্রাহক রয়েছেন।
পথে পথে দুর্ভোগ-ভোগান্তির শিকার ঘরমুখো মানুষ
স্বাস্থ্যবিধি না মেনে বিভিন্ন গণপরিবহনে গাদাগাদি করে গতকালও ঢাকায় ফিরতে দেখা গেছে ঘরমুখো মানুষদের। সিএনজি অটোরিকশা, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে কয়েকগুণ বেশি ভাড়ায় ভেঙে ভেঙে ঢাকায় ফিরতে দেখা গেছে তাদের। দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এসব গাড়িতে যাতায়াত করছে। তবুও ঠেকানো যায়নি ঘরমুখো মানুষের ¯্রােত। যাত্রাপথে অনেক মুখে ছিল না মাস্ক, মানা হয়নি স্বাস্থ্যবিধি।
ঢাকায় পোশাক কারখানায় কাজ করা কামাল হোসেন নামের এক যাত্রী বলেন, মা-বাবার সঙ্গে ঈদ করতে বাড়িতে যাই। ছুটি শেষ ঢাকায় আসলাম। কিন্তু আসার পথে নানা দুর্ভোগ ও ভোগাšিরÍ শিকার হতে হয়েছে। কারণ বাস না থাকার কারণে ভেঙে ভেঙে ঢাকায় আসতে হয়েছে। ‘লকডাউন’ রয়েছে। সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলাচল করছে। অনেকের মুখে মাস্ক নেই। মানছে না শারীরিক দূরত্ব। তারপর রয়েছে বেশি ভাড়া আদায়ের ভোগান্তি। এভাবে চললে আমরা সাধারণ মানুষ চলাচল করব কিভাবে? গণপরিবহন যদি চালু হয় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কিছুটা কমে যাবে।
দূরপাল্লার বাস-লঞ্চ চালুর দাবিতে বিক্ষোভ-অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা শ্রমিকদের
আন্তঃজেলা বাস ও লঞ্চ সার্ভিস চালুর দাবি জানিয়েছেন মালিক ও শ্রমিকরা। আন্তঃজেলা বাস চালুসহ ৫ দফা দাবি আদায়ে ২৪ মে সারাদেশে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। এছাড়া আজকের মধ্যে যাত্রীবাহী লঞ্চ সার্ভিস চালু ঘোষণা না দেয়া হলে সারাদেশের পণ্যবাহী নৌযান বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন।
দূরপাল্লার বাস চালুসহ ৫ দফা দাবি আদায়ে ২৪ মে সারাদেশে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। তাদের অন্য দাবিগুলো হলো- লকডাউনে কর্মহীন শ্রমিকদের আর্থিক অনুদান ও খাদ্য সমগ্রী প্রদান, বাস-ট্রাক টার্মিনালে ১০ টাকা মূল্যে চাল বিক্রয়ে ব্যবস্থা করা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণের সুদ মওকুফসহ কিস্তি আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করা ও ড্রাইভিং লাইসেন্স ও অন্যান্য ফি মওকুফ করে জরিমানা ব্যতীত কাগজপত্র হালনাগাদের মেয়াদ আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধিও দাবি জানানো হয়। এর আগে ৫ দফা আদায়ে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কাছের স্মরকলিপি প্রদান করেছে সড়ক পরিবহন মালিক ও নেতারা। এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী সংবাদকে বলেন, দূরাপল্লার বাস বন্ধ থাকায় সারাদেশে প্রায় ৫০ লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে গেছে। বাস চালুসহ ইতোমধ্যে আমরা সড়কমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও শ্রম প্রতিমন্ত্রীর কাছে আমাদের পাঁচটি দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি প্রদান করেছি। এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে দূরপাল্লার বাস চালুর কোন ঘোষণা না দেয়ায় ২৪ মে সারাদেশের বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
লঞ্চ চালুর বিষয়ে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মো. শাহ আলম ভূঁইয়া সংবাদকে বলেন, ২২ মে’র মধ্যে যাত্রীবাহী নৌযান চলাচলের ঘোষণা দেয়া না হলে ২৩ মে সকাল ১১টা থেকে বিআইডাব্লিউটিএ কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা করেছে। প্রয়োজনে সারাদেশে পণ্যবাহী নৌযান বন্ধ করে দেয়া হবে। সারাদেশে সবকিছু চলাচল করলেও শুধু যাত্রীবাহী লঞ্চ বন্ধ রাখা হয়েছে। দীর্ঘ দেড় মাস যাবত লঞ্চ বন্ধ থাকায় প্রায় ৫০ হাজার নৌযান শ্রমিক পরিবার নিয়ে অসহায় জীবন-যাপন করছে। সরকারিভাবে কোন সাহায্য-সহযোগিতা না পওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। তাই অবিলম্বে যাত্রীবাহী নৌযান চালুর দাবি জানান তিনি।
গত শুক্রবার নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিগত দেড় মাসেরও অধিককাল ধরে লকডাউনের নামে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে বেতন-বোনাস না পেয়ে চরম অর্থনৈতিক দুরাবস্থায় পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে নৌযান শ্রমিকরা। গণপরিবহন বন্ধের নামে যাত্রী সাধারণকে চরম দুর্ভোগে ফেলে কয়েকগুণ অতিরিক্ত ভাড়া ব্যয়ে সারাদেশে যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল রয়েছে। ঈদের আগে রাজধানী ঢাকা ছেড়ে অর্ধ কোটিরও বেশি মানুষ চরম দুর্ভোগ ও কয়েকগুণ অতিরিক্ত ভাড়া ব্যয় করে পরিবার-পরিজনের কাছে পৌঁছাতে কোন অসুবিধা ও বাধার সম্মুখিন হয়নি। ফেরিঘাটগুলোতে যাত্রীদের প্রচ- ভিরে পদপিষ্ট হয়ে মানুষের মৃত্যুর মতো মর্মান্তিক ঘটনার পরেও কী কারণে যাত্রীবাহী লঞ্চ ও দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে তা আমাদের বোধগম্য নয়। সরকার ঘরে ফেরা যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ প্রত্যক্ষ করার পর যাত্রীবাহী লঞ্চ ও দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিবেন। কিন্তু ঈদের পর আবারও দূরপাল্লার গণপরিবহন ১ সপ্তাহ বন্ধ রাখার ঘোষণা আমাদেরসহ সমগ্র দেশবাসীকে হতাশ করেছে। প্রায় তিন মাস যাবত বেতন-বোনাস না পাওয়া নৌযান শ্রমিকদের চরম দুরাবস্থার কথা বিবেচনা করে এবং দক্ষিণাঞ্চলের দরিদ্র যাত্রী সাধারণকে স্বল্প ব্যয়ে এবং নিরাপদে কর্মস্থলে ফিরে আসার সুযোগ দেয়ার লক্ষ্যে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচলের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে যাত্রীবাহী লঞ্চ চালুর দাবি জানান সংগঠনের নেতারা।
শনিবার, ২২ মে ২০২১ , ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ৯ শাওয়াল ১৪৪২
দুর্ভোগ-ভোগান্তি-অতিরিক্ত ভাড়া ফিরতেও
ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ
করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকারি বিধিনিষেধের কারণে প্রায় দেড় মাস যাবত বন্ধ আন্তঃজেলা বাস, ট্রেন ও লঞ্চ সার্ভিস। কিন্তু বন্ধ নেই মানুষের যাতায়াত। সার্ভিস বন্ধের মধ্যেও এক কোটি মানুষ এবার ঈদে ঢাকা ছেড়েছে এবং ও প্রবেশ করেছেন বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। জেলার অভ্যন্তরে গণপরিবহন চালু থাকায় সহজেই এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যাতায়াত করছে যাত্রীরা। এতে বিভিন্ন জেলার যাত্রাপথে নানা গণপরিবহন ব্যবহারের ফলে করোনা সংক্রমিত হওয়ার যেমন ঝুঁকি রয়েছে তেমন চরম দুর্ভোগ ও পথে পথে কয়েকগুণ বেশি টাকা খরচ হচ্ছে বলে যাত্রীরা জানান। বাস বন্ধ থাকায় মাইক্রোবাস, প্রাইভেটার ও মোটরসাইকেলে যাতায়াত করায় নানা ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে ঘরমুখো মানুষদের। এদিকে আন্তঃজেলা বাস ও লঞ্চ সার্ভিস চালুর দাবি জানিয়েছেন মালিক ও শ্রমিকরা। আন্তঃজেলা বাস চালুসহ ৫ দফা দাবি আদায়ে ২৪ মে সারাদেশে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। এছাড়া আজকের মধ্যে যাত্রীবাহী লঞ্চ সার্ভিস চালু ঘোষণা না দেয়া হলে সারাদেশের পণ্যবাহী নৌযান বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন।
লকডাউনে ঈদে ১ কোটি মানুষ ঢাকা বাইরে গেছেন
ঈদের পর গত পাঁচদিনে রাজধানীতে প্রবেশ করা মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যাই প্রায় ৪৫ লাখ। এর মধ্যে গত ১৭-১৯ মে পর্যন্ত তিন দিনে ৩৩ লাখের বেশি মোবাইল সিম ব্যবহারকারী ঢাকায় প্রবেশ করেছে বলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়। ঢাকা ছেড়ে যাওয়া এবং ফেরত আসা মানুষের মোবাইল অপারেটরের তথ্য ভা-ার ও কল প্রবণতা বিশ্লেষণে এ তথ্য উঠে এসেছে বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন বাইরে থেকে ঢাকা আসা সিম ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে। গত ৪ থেকে ১৫ মে পর্যন্ত ১২ দিনে ১ কোটির বেশি মানুষ ঢাকা ছেড়ে গেছেন। এর মধ্যে ঈদ শেষে গত ছয় দিনে ঢাকায় অর্ধকোটির বেশি মানুষ প্রবেশ করেছেন। গত বৃহস্পতিবার একদিনেই প্রবেশ করেছেন ৮ লাখের বেশি মানুষ। পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে যাওয়া দেশের বিভিন্ন প্রান্তের এসব মানুষ রাজধানীতে ফিরছেন।’
তিনি বলেন, গত ১৫ মে চার লাখ ১২ হাজার ৭৬৩ জন, ১৬ মে ছয় লাখ ৬৪ হাজার ৩১৩ জন, ১৭ মে ১২ লাখ ৫ হাজার ৮৭৮ জন, ১৮ মে ১১ লাখ ২৭ হাজার ৬৪৪ জন, ১৯ মে ১০ লাখ ৬৫ হাজার ২৮৫ জন ও ২০ মে ৮ লাখ ৬৯ হাজার ৯৪৩ জন মোবাইল সিম ব্যবহারকারী ঢাকায় প্রবেশ করেছেন। যার মোট সংখ্যা ৫৩ লাখ ৪৫ হাজার ৮২৬ জন। গত তিনদিনে ধারাবাহিকভাবে সবচেয়ে বেশি মানুষ ঢাকায় প্রবেশ করেছেন। এর আগে গত ৪ মে থেকে ১৫ মে পর্যন্ত ১২ দিনে এক কোটির বেশি মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন। গত চারদিনে ঢাকায় আসা মানুষের মধ্যে গ্রামীণফোনের ২৫ লাখ ৩৭ হাজার ৮৫০, রবির ১০ লাখ ৯ হাজার ৪৮৮, বাংলালিংকের ১৫ লাখ ২০ হাজার ৪৪৩ জন ও টেলিটকের ২ লাখ ৭৮ হাজার ৪৫ জন গ্রাহক রয়েছেন।
পথে পথে দুর্ভোগ-ভোগান্তির শিকার ঘরমুখো মানুষ
স্বাস্থ্যবিধি না মেনে বিভিন্ন গণপরিবহনে গাদাগাদি করে গতকালও ঢাকায় ফিরতে দেখা গেছে ঘরমুখো মানুষদের। সিএনজি অটোরিকশা, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে কয়েকগুণ বেশি ভাড়ায় ভেঙে ভেঙে ঢাকায় ফিরতে দেখা গেছে তাদের। দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এসব গাড়িতে যাতায়াত করছে। তবুও ঠেকানো যায়নি ঘরমুখো মানুষের ¯্রােত। যাত্রাপথে অনেক মুখে ছিল না মাস্ক, মানা হয়নি স্বাস্থ্যবিধি।
ঢাকায় পোশাক কারখানায় কাজ করা কামাল হোসেন নামের এক যাত্রী বলেন, মা-বাবার সঙ্গে ঈদ করতে বাড়িতে যাই। ছুটি শেষ ঢাকায় আসলাম। কিন্তু আসার পথে নানা দুর্ভোগ ও ভোগাšিরÍ শিকার হতে হয়েছে। কারণ বাস না থাকার কারণে ভেঙে ভেঙে ঢাকায় আসতে হয়েছে। ‘লকডাউন’ রয়েছে। সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলাচল করছে। অনেকের মুখে মাস্ক নেই। মানছে না শারীরিক দূরত্ব। তারপর রয়েছে বেশি ভাড়া আদায়ের ভোগান্তি। এভাবে চললে আমরা সাধারণ মানুষ চলাচল করব কিভাবে? গণপরিবহন যদি চালু হয় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কিছুটা কমে যাবে।
দূরপাল্লার বাস-লঞ্চ চালুর দাবিতে বিক্ষোভ-অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা শ্রমিকদের
আন্তঃজেলা বাস ও লঞ্চ সার্ভিস চালুর দাবি জানিয়েছেন মালিক ও শ্রমিকরা। আন্তঃজেলা বাস চালুসহ ৫ দফা দাবি আদায়ে ২৪ মে সারাদেশে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। এছাড়া আজকের মধ্যে যাত্রীবাহী লঞ্চ সার্ভিস চালু ঘোষণা না দেয়া হলে সারাদেশের পণ্যবাহী নৌযান বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন।
দূরপাল্লার বাস চালুসহ ৫ দফা দাবি আদায়ে ২৪ মে সারাদেশে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। তাদের অন্য দাবিগুলো হলো- লকডাউনে কর্মহীন শ্রমিকদের আর্থিক অনুদান ও খাদ্য সমগ্রী প্রদান, বাস-ট্রাক টার্মিনালে ১০ টাকা মূল্যে চাল বিক্রয়ে ব্যবস্থা করা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণের সুদ মওকুফসহ কিস্তি আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করা ও ড্রাইভিং লাইসেন্স ও অন্যান্য ফি মওকুফ করে জরিমানা ব্যতীত কাগজপত্র হালনাগাদের মেয়াদ আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধিও দাবি জানানো হয়। এর আগে ৫ দফা আদায়ে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কাছের স্মরকলিপি প্রদান করেছে সড়ক পরিবহন মালিক ও নেতারা। এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী সংবাদকে বলেন, দূরাপল্লার বাস বন্ধ থাকায় সারাদেশে প্রায় ৫০ লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে গেছে। বাস চালুসহ ইতোমধ্যে আমরা সড়কমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও শ্রম প্রতিমন্ত্রীর কাছে আমাদের পাঁচটি দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি প্রদান করেছি। এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে দূরপাল্লার বাস চালুর কোন ঘোষণা না দেয়ায় ২৪ মে সারাদেশের বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
লঞ্চ চালুর বিষয়ে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মো. শাহ আলম ভূঁইয়া সংবাদকে বলেন, ২২ মে’র মধ্যে যাত্রীবাহী নৌযান চলাচলের ঘোষণা দেয়া না হলে ২৩ মে সকাল ১১টা থেকে বিআইডাব্লিউটিএ কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা করেছে। প্রয়োজনে সারাদেশে পণ্যবাহী নৌযান বন্ধ করে দেয়া হবে। সারাদেশে সবকিছু চলাচল করলেও শুধু যাত্রীবাহী লঞ্চ বন্ধ রাখা হয়েছে। দীর্ঘ দেড় মাস যাবত লঞ্চ বন্ধ থাকায় প্রায় ৫০ হাজার নৌযান শ্রমিক পরিবার নিয়ে অসহায় জীবন-যাপন করছে। সরকারিভাবে কোন সাহায্য-সহযোগিতা না পওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। তাই অবিলম্বে যাত্রীবাহী নৌযান চালুর দাবি জানান তিনি।
গত শুক্রবার নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিগত দেড় মাসেরও অধিককাল ধরে লকডাউনের নামে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে বেতন-বোনাস না পেয়ে চরম অর্থনৈতিক দুরাবস্থায় পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে নৌযান শ্রমিকরা। গণপরিবহন বন্ধের নামে যাত্রী সাধারণকে চরম দুর্ভোগে ফেলে কয়েকগুণ অতিরিক্ত ভাড়া ব্যয়ে সারাদেশে যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল রয়েছে। ঈদের আগে রাজধানী ঢাকা ছেড়ে অর্ধ কোটিরও বেশি মানুষ চরম দুর্ভোগ ও কয়েকগুণ অতিরিক্ত ভাড়া ব্যয় করে পরিবার-পরিজনের কাছে পৌঁছাতে কোন অসুবিধা ও বাধার সম্মুখিন হয়নি। ফেরিঘাটগুলোতে যাত্রীদের প্রচ- ভিরে পদপিষ্ট হয়ে মানুষের মৃত্যুর মতো মর্মান্তিক ঘটনার পরেও কী কারণে যাত্রীবাহী লঞ্চ ও দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে তা আমাদের বোধগম্য নয়। সরকার ঘরে ফেরা যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ প্রত্যক্ষ করার পর যাত্রীবাহী লঞ্চ ও দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিবেন। কিন্তু ঈদের পর আবারও দূরপাল্লার গণপরিবহন ১ সপ্তাহ বন্ধ রাখার ঘোষণা আমাদেরসহ সমগ্র দেশবাসীকে হতাশ করেছে। প্রায় তিন মাস যাবত বেতন-বোনাস না পাওয়া নৌযান শ্রমিকদের চরম দুরাবস্থার কথা বিবেচনা করে এবং দক্ষিণাঞ্চলের দরিদ্র যাত্রী সাধারণকে স্বল্প ব্যয়ে এবং নিরাপদে কর্মস্থলে ফিরে আসার সুযোগ দেয়ার লক্ষ্যে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচলের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে যাত্রীবাহী লঞ্চ চালুর দাবি জানান সংগঠনের নেতারা।