সাবেক এমপি আওয়ালের ভাড়াটে খুনি ‘মানিক’ বন্দুকযুদ্ধে নিহত

ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান আওয়াল চারদিনের রিমান্ডে

রাজধানীর মিরপুরে ইস্টার্ন হাউজিং এলাকায় র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মো. মানিক (৩২) নামে এক যুবক নিহত হয়েছে। সে সাবেক এমপি এমএ আউয়ালের ভাড়াটে খুনি ছিল বলে র‌্যাব জানিয়েছে। গত ১৬ মে পল্লবীতে শিশু সন্তানের সামনে সাহিনুদ্দীন নামে এক ব্যবসায়ীকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওই মামলার পাঁচ নম্বর আসামি ছিল মানিক। একটি ভিডিওতে তাকে দেখা যায়, সাহিনুদ্দীনকে নৃশংসভাবে চাপাতি দিয়ে আঘাত করতে।

র‌্যাব বলছে, যে দুইজন সাহিনুদ্দীনকে কুপিয়ে হত্যা করেছিল, তাদেরই একজন মানিক। এমএ আউয়ালের ভাড়া করা অপরাধী সুমনের নেতৃত্বে সাহিনুদ্দীনকে হত্যা করা হয়। এই মামলায় র‌্যাব আউয়ালকে গ্রেপ্তারের পর গতকাল তাকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশের তদন্ত সংস্থা-ডিবি। এই হত্যা মামলায় লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) ও ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান এমএ আউয়ালের চারদিনের রিমান্ড গতকাল মঞ্জুর করেছে আদালত। এর আগে গত বৃহস্পতিবার এমএ আউয়ালকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় র‌্যাব। এ মামলায় একই দিন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বিভিন্ন মেয়াদে তিনজনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ওই তিনজন হলেন মো. সুমন বেপারী, মো. রকি তালুকদার ও মুরাদ।

সিসিটিভি ফুটেজ ও বন্দুকযুদ্ধ

সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, দুই তরুণ দুই পাশ থেকে এক ব্যক্তিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপাচ্ছেন। এক পর্যায়ে ওই ব্যক্তি মাটিতে পড়ে যান। এরপর হামলাকারী একজন চলে যান। অন্যজন ওই ব্যক্তির ঘাড়ে কোপাতে থাকেন মৃত্যু হওয়া পর্যন্ত। ৩১ সেকেন্ডের ভিডিও ফুটেজে যে দুইজন হামলাকারীকে দেখা গেছে, তাদের শনাক্ত করেছে র‌্যাব। এদেরই একজন মানিক ও আরেকজন মনির।

র‌্যাব-৪ অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে আমাদের একটি টহল টিম কাজ করছিল। তাদের কাছে খবর আসে, একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ ইস্টার্ন হাউজিং এলাকায় অবস্থান নিয়েছে। টহল টিম সেখানে গেলে র‌্যাব সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে তারা। আত্মরক্ষার্থে র‌্যাবও পাল্টা গুলি চালায়। কিছুক্ষণ পর সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেলে সেখানে একজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় পাওয়া যায়। তাকে হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, স্থানীয়দের কাছ থেকে তারা জানতে পেরেছেন নিহত ব্যক্তির নাম মানিক। ‘পল্লবীতে সাহিনুদ্দীন নামে এক ব্যবসায়ীকে যে দুইজন কুপিয়ে হত্যা করেছিল তাদের একজন মানিক,’ বলেন ডিআইজি মোজাম্মেল হক।

পরে পুলিশ এসে নিহত মানিককে পল্লবীর হত্যা মামলার আসামি হিসেবে শনাক্ত করে। মানিকের লাশ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য রাখা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে বিদেশি একটি পিস্তল ও দুই রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে বলে র‌্যাব জানিয়েছে। ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলছেন, ঘটনাস্থল থেকে দুইজন পালিয়ে গেছেন, তবে তাদের শনাক্ত করা যায়নি।

হত্যাকা- নিয়ে যা বলছে র‌্যাব

গত ১৬ মে জমির বিরোধের মীমাংসার কথা বলে সাহিনুদ্দীনকে পল্লবী থানার ডি-ব্লকের একটি গ্যারেজের ভেতর নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করা হয়। প্রকাশ্য দিবালোকে এ হত্যাকা-ের ঘটনায় ভুক্তভোগীর মা আকলিমা বেগম সাবেক এমপি আউয়ালসহ ২০ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় এখন পর্যন্ত র‌্যাব এমএ আউয়ালসহ তিনজনকে, থানা পুলিশ দুইজনকে এবং মামলার দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিবি দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

র‌্যাব বলছে, এ খুনের মূল পরিকল্পনাকারী লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এমএ আউয়ালের নির্দেশে স্থানীয় সন্ত্রাসী মনির, মানিক, সুমন ব্যাপারী, হাসানসহ অন্যরা সাহিনুদ্দীনকে হত্যা করে। এরপর সুমন মুঠোফোনে আউয়ালকে জানায়, ‘স্যার, ফিনিশ’। হত্যার জন্য আউয়াল তার কলাবাগানের অফিসে খুনিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। মামলায় নিহতের মা আকলিমা অভিযোগ করেছেন, পল্লবীর সেকশন-১২ বুড়িরটেকের আলীনগর আবাসিক এলাকার হ্যাভেলি প্রোপার্টি ডেভলপমেন্ট লিমিটেডের এমডি এবং লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এমএ আউয়ালের সঙ্গে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ভাড়া করা স্থানীয় সন্ত্রাসীরা সাহিনুদ্দীনকে হত্যা করেছে। আনুমানিক পাঁচ কোটি টাকা মূল্যের ১০ একর জমি দখলে বাধা দেয়ায় তাকে খুন করা হয়। মামলার প্রধান আসামি এমএ আউয়াল। অন্য আসামিরা হলো ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সুমন বেপারী, মো. আবু তাহের, মুরাদ, মানিক, মনির, শফিক, টিটু, কামরুল, কিবরিয়া, দিপু, আবদুর রাজ্জাক, মরন আলী, লিটন, আবুল, বাইট্যা বাবু, বড় শফিক, কালু ওরফে কালা বাবু, নাটা সুমন ও ইয়াবা বাবু।

শনিবার, ২২ মে ২০২১ , ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ৯ শাওয়াল ১৪৪২

সাবেক এমপি আওয়ালের ভাড়াটে খুনি ‘মানিক’ বন্দুকযুদ্ধে নিহত

ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান আওয়াল চারদিনের রিমান্ডে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

রাজধানীর মিরপুরে ইস্টার্ন হাউজিং এলাকায় র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মো. মানিক (৩২) নামে এক যুবক নিহত হয়েছে। সে সাবেক এমপি এমএ আউয়ালের ভাড়াটে খুনি ছিল বলে র‌্যাব জানিয়েছে। গত ১৬ মে পল্লবীতে শিশু সন্তানের সামনে সাহিনুদ্দীন নামে এক ব্যবসায়ীকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওই মামলার পাঁচ নম্বর আসামি ছিল মানিক। একটি ভিডিওতে তাকে দেখা যায়, সাহিনুদ্দীনকে নৃশংসভাবে চাপাতি দিয়ে আঘাত করতে।

র‌্যাব বলছে, যে দুইজন সাহিনুদ্দীনকে কুপিয়ে হত্যা করেছিল, তাদেরই একজন মানিক। এমএ আউয়ালের ভাড়া করা অপরাধী সুমনের নেতৃত্বে সাহিনুদ্দীনকে হত্যা করা হয়। এই মামলায় র‌্যাব আউয়ালকে গ্রেপ্তারের পর গতকাল তাকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশের তদন্ত সংস্থা-ডিবি। এই হত্যা মামলায় লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) ও ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান এমএ আউয়ালের চারদিনের রিমান্ড গতকাল মঞ্জুর করেছে আদালত। এর আগে গত বৃহস্পতিবার এমএ আউয়ালকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় র‌্যাব। এ মামলায় একই দিন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বিভিন্ন মেয়াদে তিনজনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ওই তিনজন হলেন মো. সুমন বেপারী, মো. রকি তালুকদার ও মুরাদ।

সিসিটিভি ফুটেজ ও বন্দুকযুদ্ধ

সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, দুই তরুণ দুই পাশ থেকে এক ব্যক্তিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপাচ্ছেন। এক পর্যায়ে ওই ব্যক্তি মাটিতে পড়ে যান। এরপর হামলাকারী একজন চলে যান। অন্যজন ওই ব্যক্তির ঘাড়ে কোপাতে থাকেন মৃত্যু হওয়া পর্যন্ত। ৩১ সেকেন্ডের ভিডিও ফুটেজে যে দুইজন হামলাকারীকে দেখা গেছে, তাদের শনাক্ত করেছে র‌্যাব। এদেরই একজন মানিক ও আরেকজন মনির।

র‌্যাব-৪ অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে আমাদের একটি টহল টিম কাজ করছিল। তাদের কাছে খবর আসে, একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ ইস্টার্ন হাউজিং এলাকায় অবস্থান নিয়েছে। টহল টিম সেখানে গেলে র‌্যাব সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে তারা। আত্মরক্ষার্থে র‌্যাবও পাল্টা গুলি চালায়। কিছুক্ষণ পর সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেলে সেখানে একজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় পাওয়া যায়। তাকে হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, স্থানীয়দের কাছ থেকে তারা জানতে পেরেছেন নিহত ব্যক্তির নাম মানিক। ‘পল্লবীতে সাহিনুদ্দীন নামে এক ব্যবসায়ীকে যে দুইজন কুপিয়ে হত্যা করেছিল তাদের একজন মানিক,’ বলেন ডিআইজি মোজাম্মেল হক।

পরে পুলিশ এসে নিহত মানিককে পল্লবীর হত্যা মামলার আসামি হিসেবে শনাক্ত করে। মানিকের লাশ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য রাখা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে বিদেশি একটি পিস্তল ও দুই রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে বলে র‌্যাব জানিয়েছে। ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলছেন, ঘটনাস্থল থেকে দুইজন পালিয়ে গেছেন, তবে তাদের শনাক্ত করা যায়নি।

হত্যাকা- নিয়ে যা বলছে র‌্যাব

গত ১৬ মে জমির বিরোধের মীমাংসার কথা বলে সাহিনুদ্দীনকে পল্লবী থানার ডি-ব্লকের একটি গ্যারেজের ভেতর নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করা হয়। প্রকাশ্য দিবালোকে এ হত্যাকা-ের ঘটনায় ভুক্তভোগীর মা আকলিমা বেগম সাবেক এমপি আউয়ালসহ ২০ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় এখন পর্যন্ত র‌্যাব এমএ আউয়ালসহ তিনজনকে, থানা পুলিশ দুইজনকে এবং মামলার দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিবি দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

র‌্যাব বলছে, এ খুনের মূল পরিকল্পনাকারী লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এমএ আউয়ালের নির্দেশে স্থানীয় সন্ত্রাসী মনির, মানিক, সুমন ব্যাপারী, হাসানসহ অন্যরা সাহিনুদ্দীনকে হত্যা করে। এরপর সুমন মুঠোফোনে আউয়ালকে জানায়, ‘স্যার, ফিনিশ’। হত্যার জন্য আউয়াল তার কলাবাগানের অফিসে খুনিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। মামলায় নিহতের মা আকলিমা অভিযোগ করেছেন, পল্লবীর সেকশন-১২ বুড়িরটেকের আলীনগর আবাসিক এলাকার হ্যাভেলি প্রোপার্টি ডেভলপমেন্ট লিমিটেডের এমডি এবং লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এমএ আউয়ালের সঙ্গে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ভাড়া করা স্থানীয় সন্ত্রাসীরা সাহিনুদ্দীনকে হত্যা করেছে। আনুমানিক পাঁচ কোটি টাকা মূল্যের ১০ একর জমি দখলে বাধা দেয়ায় তাকে খুন করা হয়। মামলার প্রধান আসামি এমএ আউয়াল। অন্য আসামিরা হলো ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সুমন বেপারী, মো. আবু তাহের, মুরাদ, মানিক, মনির, শফিক, টিটু, কামরুল, কিবরিয়া, দিপু, আবদুর রাজ্জাক, মরন আলী, লিটন, আবুল, বাইট্যা বাবু, বড় শফিক, কালু ওরফে কালা বাবু, নাটা সুমন ও ইয়াবা বাবু।