কলিম উল্লাহর মেয়াদ আর ২১ দিন, উপাচার্যের পদ পেতে চলছে জোর লবিং

রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বহুল আলোচিত ও সমালোচিত উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহর মেয়াদ আছে আর মাত্র ২২ দিন। আগামী ১৪ জুন তার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। নতুন করে উপাচার্য পদে তার বহাল থাকার সম্ভাবনা না থাকায় ইতোমধ্যে উপাচার্য পদে নিয়োগ পাওয়ার জন্য ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকও জোর তদবির করছেন।

সেই তালিকায় রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক রয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহর মতো ৪ বছরের মধ্যে সাড়ে তিন বছর ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত থাকা নিয়োগ বাণিজ্য দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার সেশনজটের কবলে ফেলে শিক্ষার্থীদের তিন বছর পিছিয়ে দেয়াসহ নানান অভিযোগে অভিযুক্ত আর কাউকেই উপাচার্য হিসেবে চায় না শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ রংপুরের বিশিষ্টজনরা। সেই সঙ্গে উপাচার্যের বিভিন্ন অপকর্মের সহযোগী যারা কলিম উল্লাহর সহযোগী হিসেবে দুর্নীতি নিয়োগ বাণিজ্যে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করেছে তাদের কোনভাবেই নিয়োগ না দেয়ার দাবি জানানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান বলেছেন, উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে ধংস করে ফেলেছেন। তিনি নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য, কমিশন খাওয়া, ভুয়া ভাউচার তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটি কোটি টাকা তছরুপ করেছেন। তার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয়ে শত কোটি টাকা ব্যয়ে ছাত্রী হল ও তার স্বামীর নামে ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউট ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়ে ১শ’ থেকে দেড়শ’ ভাগ অতিরিক্ত বরাদ্দ নেয়ার জন্য নিজের ভাগিনার প্রতিষ্ঠানকে পরামর্শক বানিয়ে ছিলেন। ইউজিসি তদন্ত কমিটি ইতিমধ্যে এসব অনিয়ম দুর্নীতির তদন্ত করে উপাচার্যকে দায়ী করে প্রতিবেদন দিয়েছে। অন্যদিকে অধিকার সুরক্ষণা পরিষদের দেয়া উপাচার্যের বিরুদ্ধে ১১১টি অভিযোগের তদন্ত শেষ করেছে। সেখানেও অনেক অনিয়ম পেয়েছে। তিনি বলেন, উপাচার্যের সব অনিয়ম ও দুর্নীতির সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক শরীফা সলোয়া ডীনা ও কোষাধাক্ষ্য অধ্যাপক হাসিবুর রশীদ। তারা সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহর সব অবৈধ কর্মকা-কে বৈধতা দিয়েছেন। বিশেষ করে উপ-উপাচার্য শরীফা সলোয়া ডীনা তার স্বামী রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক পরিমল চন্দ্র জাতীয় পতাকা অবমাননা মামলার আসামি। স্বামীকে বাঁচানোর জন্য তিনি হেন কাজ নেই করেননি।

এ ব্যাপারে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক শরীফা সলোয়া ডীনার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কখনই জড়িত ছিলেন না বলে দাবি করেন। সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী কোন দলের সঙ্গে তিনি থাকতে পারেন না বলে জানান। বর্তমান উপাচার্যের সব অপকর্মকে সমর্থন দেয়া বৈধতা দেবার ব্যাপারে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করবেন না বলে জানান। অপরদিকে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক হাসিবুর রশীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এদিকে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ফরিদুল ইসলাম জানান, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়টি ধংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত। কোন নিয়ম-নীতি, আইন মানা হয় নাÑ এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রকৃত বিশ্বাসী সৎ ও মেধাবী কাউকে উপাচার্য হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হলে আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়টি। তবে বর্তমান উপাচার্যের বিভিন্ন কর্মকা-ে সহযোগী ছিলেন তাদের আমলনামা পরীক্ষা করে দেখা দরকার বলে জানান তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয় অধিকার সুরক্ষা পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মতিউর রহমান বলেন, শিক্ষক হিসেবে যোগদান করার পর তিনি প্রথম বঙ্গবন্ধু পরিষদ করেছিলেন, তখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল না। এখন যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে মুখে ফেনা তোলেন তাদের আমলনামা খতিয়ে দেখলেই পরিষ্কার হবে। তবে যারা উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহর দুর্নীতি নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অপকর্মকে নীরবে সমর্থন করেছেন তারা আর যাই হোক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভালো চান না বলেই তার বিশ্বাস।

শনিবার, ২২ মে ২০২১ , ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ৯ শাওয়াল ১৪৪২

রংপুর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়

কলিম উল্লাহর মেয়াদ আর ২১ দিন, উপাচার্যের পদ পেতে চলছে জোর লবিং

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর

রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বহুল আলোচিত ও সমালোচিত উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহর মেয়াদ আছে আর মাত্র ২২ দিন। আগামী ১৪ জুন তার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। নতুন করে উপাচার্য পদে তার বহাল থাকার সম্ভাবনা না থাকায় ইতোমধ্যে উপাচার্য পদে নিয়োগ পাওয়ার জন্য ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকও জোর তদবির করছেন।

সেই তালিকায় রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক রয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহর মতো ৪ বছরের মধ্যে সাড়ে তিন বছর ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত থাকা নিয়োগ বাণিজ্য দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার সেশনজটের কবলে ফেলে শিক্ষার্থীদের তিন বছর পিছিয়ে দেয়াসহ নানান অভিযোগে অভিযুক্ত আর কাউকেই উপাচার্য হিসেবে চায় না শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ রংপুরের বিশিষ্টজনরা। সেই সঙ্গে উপাচার্যের বিভিন্ন অপকর্মের সহযোগী যারা কলিম উল্লাহর সহযোগী হিসেবে দুর্নীতি নিয়োগ বাণিজ্যে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করেছে তাদের কোনভাবেই নিয়োগ না দেয়ার দাবি জানানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান বলেছেন, উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে ধংস করে ফেলেছেন। তিনি নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য, কমিশন খাওয়া, ভুয়া ভাউচার তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটি কোটি টাকা তছরুপ করেছেন। তার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয়ে শত কোটি টাকা ব্যয়ে ছাত্রী হল ও তার স্বামীর নামে ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউট ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়ে ১শ’ থেকে দেড়শ’ ভাগ অতিরিক্ত বরাদ্দ নেয়ার জন্য নিজের ভাগিনার প্রতিষ্ঠানকে পরামর্শক বানিয়ে ছিলেন। ইউজিসি তদন্ত কমিটি ইতিমধ্যে এসব অনিয়ম দুর্নীতির তদন্ত করে উপাচার্যকে দায়ী করে প্রতিবেদন দিয়েছে। অন্যদিকে অধিকার সুরক্ষণা পরিষদের দেয়া উপাচার্যের বিরুদ্ধে ১১১টি অভিযোগের তদন্ত শেষ করেছে। সেখানেও অনেক অনিয়ম পেয়েছে। তিনি বলেন, উপাচার্যের সব অনিয়ম ও দুর্নীতির সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক শরীফা সলোয়া ডীনা ও কোষাধাক্ষ্য অধ্যাপক হাসিবুর রশীদ। তারা সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহর সব অবৈধ কর্মকা-কে বৈধতা দিয়েছেন। বিশেষ করে উপ-উপাচার্য শরীফা সলোয়া ডীনা তার স্বামী রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক পরিমল চন্দ্র জাতীয় পতাকা অবমাননা মামলার আসামি। স্বামীকে বাঁচানোর জন্য তিনি হেন কাজ নেই করেননি।

এ ব্যাপারে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক শরীফা সলোয়া ডীনার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কখনই জড়িত ছিলেন না বলে দাবি করেন। সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী কোন দলের সঙ্গে তিনি থাকতে পারেন না বলে জানান। বর্তমান উপাচার্যের সব অপকর্মকে সমর্থন দেয়া বৈধতা দেবার ব্যাপারে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করবেন না বলে জানান। অপরদিকে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক হাসিবুর রশীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এদিকে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ফরিদুল ইসলাম জানান, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়টি ধংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত। কোন নিয়ম-নীতি, আইন মানা হয় নাÑ এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রকৃত বিশ্বাসী সৎ ও মেধাবী কাউকে উপাচার্য হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হলে আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়টি। তবে বর্তমান উপাচার্যের বিভিন্ন কর্মকা-ে সহযোগী ছিলেন তাদের আমলনামা পরীক্ষা করে দেখা দরকার বলে জানান তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয় অধিকার সুরক্ষা পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মতিউর রহমান বলেন, শিক্ষক হিসেবে যোগদান করার পর তিনি প্রথম বঙ্গবন্ধু পরিষদ করেছিলেন, তখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল না। এখন যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে মুখে ফেনা তোলেন তাদের আমলনামা খতিয়ে দেখলেই পরিষ্কার হবে। তবে যারা উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহর দুর্নীতি নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অপকর্মকে নীরবে সমর্থন করেছেন তারা আর যাই হোক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভালো চান না বলেই তার বিশ্বাস।