পাবনার সাঁথিয়ায় সড়ক নির্মাণে অনিয়ম ও কৃষি জমি থেকে জোরপূর্বক মাটি কেটে নেয়ার অভিযোগ ওঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, স্থানীয় সরকার বিভাগকে লিখিতভাবে জানিয়েও ফল মেলেনি। প্রতিকার চেয়ে ও নিয়ম অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন করার দাবিতে বুধবার বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত চাষীরা।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্র জানায়, ২০২০-২১ অর্থ বছরে আরটিআইপি প্রকল্পের অধীনে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার জোড়গাছা থেকে সেলন্দা পর্যন্ত ১১.৭৭ কিলোমিটার আঞ্চলিক সড়ক মেরামতে দরপত্র আহ্বান করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দে কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জিন্নাত আলী জিন্নাহ। স্থানীয়দের অভিযোগ, সড়ক সংস্কারে বাইরে থেকে মাটি এনে কাজ করার কথা থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আশপাশের কৃষি জমি ও খাল থেকে মাটি কেটে নিচ্ছে। চাষিরা বাধা দিলে, মারপিট ও মামলার হুমকি দিচ্ছে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা।
বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর অভিযোগ, শিডিউলের তোয়াক্কা না করে ইচ্ছেমতো কাজ করছেন ঠিকাদার। সোলিংয়ে ইট, খোয়ার পরিবর্তে রাতের আঁধারে ব্যবহার করা হচ্ছে পোড়ামাটি। মানা হয়নি প্রশস্ততা ও পুরুত্বের নির্ধারিত পরিমাপ। সড়ক বাঁধাইয়ে নি¤œ মানের ব্লক ব্যবহার করায় তা বসানোর আগেই ভেঙে যাচ্ছে। সামান্য বৃষ্টিতেই ধুয়ে যাচ্ছে মাটি। স্থানীয়দের অভিযোগ অনিয়মের বিষয়ে স্থানীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মৌখিক বা লিখিত কোন অভিযোগেই কাজ হয়নি। বাধ্য হয়ে প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নেমেছেন তারা।
চক মধুপুর গ্রামের কলেজ শিক্ষক আলাউদ্দিন মাস্টার বলেন, রাস্তা সংস্কারের শুরু থেকেই ঠিকাদার গায়ের জোরে ইচ্ছামত নি¤œমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করছে। শিডিউলে রাস্তার এইজিং ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি করার কথা থাকলেও তা করছেন না, পুরুত্ব ৪ ইঞ্চির স্থলে ২-৩ ইঞ্চি দিচ্ছেন। ইট-খোয়ার পরিবর্তে পোড়া মাটি দিয়ে রাতের আঁধারে রোলার করে দিচ্ছেন। স্থানীয় সরকার বিভাগের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের বার বার বলেও কোন লাভ হয়নি।
একই গ্রামের কৃষক আবদুর রহিম অভিযোগ করেন, ঠিকাদার শিডিউল অনুযায়ী বাইরে থেকে ট্রাকে মাটি কিনে না এনে, ভয় দেখিয়ে গ্রামের কৃষকদের জমি ও রাস্তার পাশের খাল থেকে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে নিচ্ছে। এতে কৃষকের ক্ষতির পাশাপাশি যে কোন মুহূর্তে এ সড়ক ধসে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সংস্কার কাজের নামে লুটপাটের খেলায় মেতেছে। যেভাবে সড়ক নির্মাণ করছে তাতে আগামী বর্ষায় এ সড়ক তো টিকবেই না বরং বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। আমরা এ বিষয়ে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
কৃষক আবদুল লতিফ বলেন, ঠিকাদারের লোকজন জোর করে আমার জমি থেকে মাটি কেটে নিচ্ছে। আমি বাধা দিলে বলেছে, সরকারি কাজে বাধা দিলে জেলের ভাত খাওয়ানো হবে। তারা ইচ্ছামতো আমার জমি নষ্ট করছে।
তবে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দাবি, সড়ক নির্মাণে অনিয়ম হয়নি, কর্মকর্তাদের ঘুষ না দেয়ায় ষড়যন্ত্র হচ্ছে। ঠিকাদার জিন্নাত আলী জিন্নাহ বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণœ হয় এমন কাজ আমি কখনোই করি না। এটি বিশ^ব্যাংকের অর্থায়নের কাজ, অনিয়ম হলে তো আমি বিলই পাবো না। স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমানকে চাঁদা না দেয়ায় উনি এলাকাবাসীকে দিয়ে ঝামেলা সৃষ্টি করছেন। স্থানীয় সরকার বিভাগের সাঁথিয়া উপজেলা প্রকৌশলী আবুল হাশেম বলেন, ঠিকাদার ভিত্তিহীন অভিযোগ করেছেন। উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিজানের বিরুদ্ধে ঠিকাদার আমাকেও অভিযোগ করেছিলেন, আমি তদন্ত করে এর কোন সত্যতা পাইনি।
স্থানীয় সরকার বিভাগ, পাবনার নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেসুর রহমান বলেন, জিন্নাত আলী জিন্নাহর প্রতিষ্ঠানের অতীত কাজের রেকর্ড ভালো। সংস্কার কাজে আশপাশের মাটি না কেটে বাইরে থেকে মাটি এনে কাজ করতে ঠিকাদারকে চিঠি দেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোন বিল দেয়া হয়নি। কাজটি চলমান, কাজের গুণগত মান যাচাই করেই বিল প্রদান করা হবে।
শনিবার, ২২ মে ২০২১ , ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ৯ শাওয়াল ১৪৪২
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, পাবনা
পাবনার সাঁথিয়ায় সড়ক নির্মাণে অনিয়ম ও কৃষি জমি থেকে জোরপূর্বক মাটি কেটে নেয়ার অভিযোগ ওঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, স্থানীয় সরকার বিভাগকে লিখিতভাবে জানিয়েও ফল মেলেনি। প্রতিকার চেয়ে ও নিয়ম অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন করার দাবিতে বুধবার বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত চাষীরা।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্র জানায়, ২০২০-২১ অর্থ বছরে আরটিআইপি প্রকল্পের অধীনে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার জোড়গাছা থেকে সেলন্দা পর্যন্ত ১১.৭৭ কিলোমিটার আঞ্চলিক সড়ক মেরামতে দরপত্র আহ্বান করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দে কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জিন্নাত আলী জিন্নাহ। স্থানীয়দের অভিযোগ, সড়ক সংস্কারে বাইরে থেকে মাটি এনে কাজ করার কথা থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আশপাশের কৃষি জমি ও খাল থেকে মাটি কেটে নিচ্ছে। চাষিরা বাধা দিলে, মারপিট ও মামলার হুমকি দিচ্ছে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা।
বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর অভিযোগ, শিডিউলের তোয়াক্কা না করে ইচ্ছেমতো কাজ করছেন ঠিকাদার। সোলিংয়ে ইট, খোয়ার পরিবর্তে রাতের আঁধারে ব্যবহার করা হচ্ছে পোড়ামাটি। মানা হয়নি প্রশস্ততা ও পুরুত্বের নির্ধারিত পরিমাপ। সড়ক বাঁধাইয়ে নি¤œ মানের ব্লক ব্যবহার করায় তা বসানোর আগেই ভেঙে যাচ্ছে। সামান্য বৃষ্টিতেই ধুয়ে যাচ্ছে মাটি। স্থানীয়দের অভিযোগ অনিয়মের বিষয়ে স্থানীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মৌখিক বা লিখিত কোন অভিযোগেই কাজ হয়নি। বাধ্য হয়ে প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নেমেছেন তারা।
চক মধুপুর গ্রামের কলেজ শিক্ষক আলাউদ্দিন মাস্টার বলেন, রাস্তা সংস্কারের শুরু থেকেই ঠিকাদার গায়ের জোরে ইচ্ছামত নি¤œমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করছে। শিডিউলে রাস্তার এইজিং ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি করার কথা থাকলেও তা করছেন না, পুরুত্ব ৪ ইঞ্চির স্থলে ২-৩ ইঞ্চি দিচ্ছেন। ইট-খোয়ার পরিবর্তে পোড়া মাটি দিয়ে রাতের আঁধারে রোলার করে দিচ্ছেন। স্থানীয় সরকার বিভাগের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের বার বার বলেও কোন লাভ হয়নি।
একই গ্রামের কৃষক আবদুর রহিম অভিযোগ করেন, ঠিকাদার শিডিউল অনুযায়ী বাইরে থেকে ট্রাকে মাটি কিনে না এনে, ভয় দেখিয়ে গ্রামের কৃষকদের জমি ও রাস্তার পাশের খাল থেকে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে নিচ্ছে। এতে কৃষকের ক্ষতির পাশাপাশি যে কোন মুহূর্তে এ সড়ক ধসে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সংস্কার কাজের নামে লুটপাটের খেলায় মেতেছে। যেভাবে সড়ক নির্মাণ করছে তাতে আগামী বর্ষায় এ সড়ক তো টিকবেই না বরং বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। আমরা এ বিষয়ে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
কৃষক আবদুল লতিফ বলেন, ঠিকাদারের লোকজন জোর করে আমার জমি থেকে মাটি কেটে নিচ্ছে। আমি বাধা দিলে বলেছে, সরকারি কাজে বাধা দিলে জেলের ভাত খাওয়ানো হবে। তারা ইচ্ছামতো আমার জমি নষ্ট করছে।
তবে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দাবি, সড়ক নির্মাণে অনিয়ম হয়নি, কর্মকর্তাদের ঘুষ না দেয়ায় ষড়যন্ত্র হচ্ছে। ঠিকাদার জিন্নাত আলী জিন্নাহ বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণœ হয় এমন কাজ আমি কখনোই করি না। এটি বিশ^ব্যাংকের অর্থায়নের কাজ, অনিয়ম হলে তো আমি বিলই পাবো না। স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমানকে চাঁদা না দেয়ায় উনি এলাকাবাসীকে দিয়ে ঝামেলা সৃষ্টি করছেন। স্থানীয় সরকার বিভাগের সাঁথিয়া উপজেলা প্রকৌশলী আবুল হাশেম বলেন, ঠিকাদার ভিত্তিহীন অভিযোগ করেছেন। উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিজানের বিরুদ্ধে ঠিকাদার আমাকেও অভিযোগ করেছিলেন, আমি তদন্ত করে এর কোন সত্যতা পাইনি।
স্থানীয় সরকার বিভাগ, পাবনার নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেসুর রহমান বলেন, জিন্নাত আলী জিন্নাহর প্রতিষ্ঠানের অতীত কাজের রেকর্ড ভালো। সংস্কার কাজে আশপাশের মাটি না কেটে বাইরে থেকে মাটি এনে কাজ করতে ঠিকাদারকে চিঠি দেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোন বিল দেয়া হয়নি। কাজটি চলমান, কাজের গুণগত মান যাচাই করেই বিল প্রদান করা হবে।