ব্যাংক শেয়ারে চমক, পুঁজিবাজারে ফিরছে বিনিয়োগকারী

করোনা মহামারীর মধ্যেও আকর্ষণীয় ডিভিডেন্ড ঘোষণা এবং চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে আগের বছরের তুলনায় মুনাফা বাড়ায় ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে ব্যাংকিং খাতের শেয়ার দর। টানা উত্থান অব্যাহত থাকায় এখাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ারে ফিরতে শুরু করেছে বিনিয়োগকারীরা। এরই ধারাবাহিকতায় সদ্যসমাপ্ত সপ্তাহে তালিকাভুক্ত ৩১টি ব্যাংকের মধ্যে দর বেড়েছে ৩০টির।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ২০১০ সালের ধস পরবর্তী সময়ে ব্যাংকিং খাতের উদ্যোক্তা-পরিচালকদের স্টক (বোনাস) ডিভিডেন্ড ঘোষণার মানসিকতায় ব্যাংকগুলোর মূলধন বাড়লেও শেয়ার দর অবমূল্যায়িত হয়েছে। কিন্তু করোনা মহামারীর মধ্যে ব্যাংকগুলোর ডিভিডেন্ড ঘোষণার নীতিমালা প্রকাশ করায় কোম্পানিগুলোর কাগুজে শেয়ার বণ্টনের মানসিকতা থেকে বের হতে হয়েছে। ফলে, বিনিয়োগকারীরা ক্যাস বা নগদ ডিভিডেন্ড পেয়ে লাভবান হয়েছে। তাই, এ খাতের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে। এদিকে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিক শেষেও অধিকাংশ ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে। যা বিনিয়োগকারীদের নতুন বিনিয়োগে আগ্রহী করছে।

তারা বলেন, ব্যাংক খাতের প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানই বড় মূলধনী। এখাতের কোম্পানিগুলোকে নিয়ে কারসাজি করার তেমন সুযোগ থাকে না। তবে, এখাতের লেনদেন বৃদ্ধি পেলে তা পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের মানসিকতা চাঙ্গা করে।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, সদ্যসমাপ্ত সপ্তাহে (১৬-২০) পুঁজিবাজারের ব্যাংকিং খাতের সার্বিক লেনদেন আগের সপ্তাহের তুলনায় ৭৮ শতাংশ বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে এখাতের বিনিয়োগকারীদের গড়ে মুনাফা হয়েছে ৭.৫৯ শতাংশ। যা বর্তমানে সঞ্চয়ী ব্যাংক হিসাবে প্রাপ্ত ১ বছরের মুনাফার তুলনায় বেশি। এছাড়া ব্যাংকিং খাতের সপ্তাহ শেষে ব্যাংকিং খাতের মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ছিল ৮.৩। যা বাজারের সার্বিক পিই রেশিওর তুলনায় কম।

তথ্য বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, বিগত সপ্তাহে ব্যাংকিং খাতের ৩১টি ব্যাংকের মধ্যে দর বেড়েছে ৩০টির। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৫৪.৫৯ শতাংশ দর বেড়েছে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের। দর বৃদ্ধির তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল প্রাইম ব্যাংক, ব্যাংকটির দর বেড়েছে ৩৩.৫০ শতাংশ। এছাড়া ১৮.০৪ শতাংশ দর বেড়েছে ঢাকা ব্যাংকের। এছাড়াও ১০ শতাংশের বেশি দর বৃদ্ধির তালিকায় থাকা অন্যান্য ব্যাংকগুলো হলো- ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক ও সাউথ ইস্ট ব্যাংক লিমিটেড। তবে, ১.২ শতাংশ দর কমেছে ব্র্যাক ব্যাংকের।

এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক : চলতি বছরের ২২ মার্চ পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু করে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক। লেনদেন শুরুর দ্বিতীয় কার্যদিবসেই দর পতন হয় ব্যাংকটির। তবে, বিগত ২৭ এপ্রিল থেকে উত্থান অব্যাহত থাকলেও সর্বশেষ ২০ মে কোম্পানিটির দর কমেছে ০.৩৬ শতাংশ। তবে, গত সপ্তাহে কোম্পানিটির দর বেড়েছে ৫৪.৫৯ শতাংশ। সপ্তাহের শুরুতে ব্যাংকটির প্রারম্ভিক শেয়ার দর ছিল ১৯.৬ টাকা। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে কোম্পানিটির সর্বোচ্চ দর ছিল ৩০.৩০ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে কোম্পানিটির দর বেড়েছে ৫৪.৫৯ শতাংশ। যদিও ২০ মে দিনশেষে কোম্পানিটির সমাপনী দর ছিল ২৮ টাকা।

প্রাইম ব্যাংক : ঈদের আগের শেষ কার্যদিবসে প্রাইম ব্যাংকের সমাপনী শেয়ার দর ছিল ১৯.৭ টাকা সপ্তাহের ব্যবধানে গত বৃহস্পতিবার ব্যাংকটির শেয়ার সর্বোচ্চ ২৬.৩০ টাকায় লেনদেন হয়েছে। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ব্যাংকটির শেয়ার দর বেড়েছে ৩৩.৫০ টাকা। যদিও বৃহস্পতিবার (২০ মে) ব্যাংকটির শেয়ার ৭.৩১ শতাংশ কমে সর্বশেষ ২৪.১ টাকায় লেনদেন শেষ হয়েছে।

ঢাকা ব্যাংক : এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ও প্রাইম ব্যাংকের মতো গত সপ্তাহে ঢাকা ব্যাংকের শেয়ারেও বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে ব্যাংকটির শেয়ার দর বেড়েছে ১৮.০৪ শতাংশ। সপ্তাহের শুরুতে ঢাকা ব্যাংকের প্রারম্ভিক দর ছিল ১৩.৩ টাকা। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ব্যাংকটির সর্বোচ্চ শেয়ার দর ছিল ১৫.৭০ টাকা।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, করোনা মহামরীতেও ব্যাংকিং খাতের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের মুনাফা বাড়ায় ব্যাংকগুলোর শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে। যার ফলশ্রুতিতে গত সপ্তাহে এখাতের সিংহভাগ শেয়ারের দর বেড়েছে। তবে, সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বিনিয়োগকারীদের মুনাফা তোলার প্রবণতায় সামান্য কারেকশন হয়েছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও শেয়ারহোল্ডার পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ব্যাংকিং খাত হচ্ছে পুঁজিবাজারের সবচেয়ে বড় খাত। এখাতে বাজারের বড় মূলধনী প্রতিষ্ঠানগুলো তালিকাভুক্ত। ২০২০ সালে ব্যাংকিং খাতের তালিকাভুক্ত ২৬টি ব্যাংক নগদ ডিভিডেন্ড হিসেবে ২ হাজার ৩০৭ কোটি ১৯ লাখ টাকা। আর বোনাস ডিভিডেন্ড হিসাবে প্রায় এক হাজার ১৩৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা বিনিয়োগকারীদের প্রদান করেছে। চলতি অর্থবছরেও ব্যাংকগুলোর মুনাফা ঊর্ধ্বমুখী। তাই ব্যাংকগুলোর শেয়ার দরে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

রবিবার, ২৩ মে ২০২১ , ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১০ শাওয়াল ১৪৪২

ব্যাংক শেয়ারে চমক, পুঁজিবাজারে ফিরছে বিনিয়োগকারী

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

করোনা মহামারীর মধ্যেও আকর্ষণীয় ডিভিডেন্ড ঘোষণা এবং চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে আগের বছরের তুলনায় মুনাফা বাড়ায় ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে ব্যাংকিং খাতের শেয়ার দর। টানা উত্থান অব্যাহত থাকায় এখাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ারে ফিরতে শুরু করেছে বিনিয়োগকারীরা। এরই ধারাবাহিকতায় সদ্যসমাপ্ত সপ্তাহে তালিকাভুক্ত ৩১টি ব্যাংকের মধ্যে দর বেড়েছে ৩০টির।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ২০১০ সালের ধস পরবর্তী সময়ে ব্যাংকিং খাতের উদ্যোক্তা-পরিচালকদের স্টক (বোনাস) ডিভিডেন্ড ঘোষণার মানসিকতায় ব্যাংকগুলোর মূলধন বাড়লেও শেয়ার দর অবমূল্যায়িত হয়েছে। কিন্তু করোনা মহামারীর মধ্যে ব্যাংকগুলোর ডিভিডেন্ড ঘোষণার নীতিমালা প্রকাশ করায় কোম্পানিগুলোর কাগুজে শেয়ার বণ্টনের মানসিকতা থেকে বের হতে হয়েছে। ফলে, বিনিয়োগকারীরা ক্যাস বা নগদ ডিভিডেন্ড পেয়ে লাভবান হয়েছে। তাই, এ খাতের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে। এদিকে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিক শেষেও অধিকাংশ ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে। যা বিনিয়োগকারীদের নতুন বিনিয়োগে আগ্রহী করছে।

তারা বলেন, ব্যাংক খাতের প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানই বড় মূলধনী। এখাতের কোম্পানিগুলোকে নিয়ে কারসাজি করার তেমন সুযোগ থাকে না। তবে, এখাতের লেনদেন বৃদ্ধি পেলে তা পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের মানসিকতা চাঙ্গা করে।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, সদ্যসমাপ্ত সপ্তাহে (১৬-২০) পুঁজিবাজারের ব্যাংকিং খাতের সার্বিক লেনদেন আগের সপ্তাহের তুলনায় ৭৮ শতাংশ বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে এখাতের বিনিয়োগকারীদের গড়ে মুনাফা হয়েছে ৭.৫৯ শতাংশ। যা বর্তমানে সঞ্চয়ী ব্যাংক হিসাবে প্রাপ্ত ১ বছরের মুনাফার তুলনায় বেশি। এছাড়া ব্যাংকিং খাতের সপ্তাহ শেষে ব্যাংকিং খাতের মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ছিল ৮.৩। যা বাজারের সার্বিক পিই রেশিওর তুলনায় কম।

তথ্য বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, বিগত সপ্তাহে ব্যাংকিং খাতের ৩১টি ব্যাংকের মধ্যে দর বেড়েছে ৩০টির। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৫৪.৫৯ শতাংশ দর বেড়েছে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের। দর বৃদ্ধির তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল প্রাইম ব্যাংক, ব্যাংকটির দর বেড়েছে ৩৩.৫০ শতাংশ। এছাড়া ১৮.০৪ শতাংশ দর বেড়েছে ঢাকা ব্যাংকের। এছাড়াও ১০ শতাংশের বেশি দর বৃদ্ধির তালিকায় থাকা অন্যান্য ব্যাংকগুলো হলো- ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক ও সাউথ ইস্ট ব্যাংক লিমিটেড। তবে, ১.২ শতাংশ দর কমেছে ব্র্যাক ব্যাংকের।

এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক : চলতি বছরের ২২ মার্চ পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু করে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক। লেনদেন শুরুর দ্বিতীয় কার্যদিবসেই দর পতন হয় ব্যাংকটির। তবে, বিগত ২৭ এপ্রিল থেকে উত্থান অব্যাহত থাকলেও সর্বশেষ ২০ মে কোম্পানিটির দর কমেছে ০.৩৬ শতাংশ। তবে, গত সপ্তাহে কোম্পানিটির দর বেড়েছে ৫৪.৫৯ শতাংশ। সপ্তাহের শুরুতে ব্যাংকটির প্রারম্ভিক শেয়ার দর ছিল ১৯.৬ টাকা। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে কোম্পানিটির সর্বোচ্চ দর ছিল ৩০.৩০ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে কোম্পানিটির দর বেড়েছে ৫৪.৫৯ শতাংশ। যদিও ২০ মে দিনশেষে কোম্পানিটির সমাপনী দর ছিল ২৮ টাকা।

প্রাইম ব্যাংক : ঈদের আগের শেষ কার্যদিবসে প্রাইম ব্যাংকের সমাপনী শেয়ার দর ছিল ১৯.৭ টাকা সপ্তাহের ব্যবধানে গত বৃহস্পতিবার ব্যাংকটির শেয়ার সর্বোচ্চ ২৬.৩০ টাকায় লেনদেন হয়েছে। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ব্যাংকটির শেয়ার দর বেড়েছে ৩৩.৫০ টাকা। যদিও বৃহস্পতিবার (২০ মে) ব্যাংকটির শেয়ার ৭.৩১ শতাংশ কমে সর্বশেষ ২৪.১ টাকায় লেনদেন শেষ হয়েছে।

ঢাকা ব্যাংক : এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ও প্রাইম ব্যাংকের মতো গত সপ্তাহে ঢাকা ব্যাংকের শেয়ারেও বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে ব্যাংকটির শেয়ার দর বেড়েছে ১৮.০৪ শতাংশ। সপ্তাহের শুরুতে ঢাকা ব্যাংকের প্রারম্ভিক দর ছিল ১৩.৩ টাকা। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ব্যাংকটির সর্বোচ্চ শেয়ার দর ছিল ১৫.৭০ টাকা।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, করোনা মহামরীতেও ব্যাংকিং খাতের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের মুনাফা বাড়ায় ব্যাংকগুলোর শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে। যার ফলশ্রুতিতে গত সপ্তাহে এখাতের সিংহভাগ শেয়ারের দর বেড়েছে। তবে, সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বিনিয়োগকারীদের মুনাফা তোলার প্রবণতায় সামান্য কারেকশন হয়েছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও শেয়ারহোল্ডার পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ব্যাংকিং খাত হচ্ছে পুঁজিবাজারের সবচেয়ে বড় খাত। এখাতে বাজারের বড় মূলধনী প্রতিষ্ঠানগুলো তালিকাভুক্ত। ২০২০ সালে ব্যাংকিং খাতের তালিকাভুক্ত ২৬টি ব্যাংক নগদ ডিভিডেন্ড হিসেবে ২ হাজার ৩০৭ কোটি ১৯ লাখ টাকা। আর বোনাস ডিভিডেন্ড হিসাবে প্রায় এক হাজার ১৩৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা বিনিয়োগকারীদের প্রদান করেছে। চলতি অর্থবছরেও ব্যাংকগুলোর মুনাফা ঊর্ধ্বমুখী। তাই ব্যাংকগুলোর শেয়ার দরে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।