ঈদযাত্রায় সড়কে দুর্ঘটনা ২৩৯টি, প্রাণ ঝরে ৩১৪

লকডাউনের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে এবার ঈদযাত্রায় সারাদেশে ২৩৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩১৪ জন নিহত ও ২৯১ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১২১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ১৩৪ জন, যা মোট নিহতের ৪২ দশমিক ৬৭ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৫০ দশমিক ৬২ শতাংশ। এছাড়া ৪টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৩ জন নিহত এবং ৭ জন আহত হয়েছে। ১টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। গতকাল এক প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করেছে সংগঠনটি।

২০২০ সালের ঈদুল ফিতরের আগে-পরে ১২ দিনে ১২৮টি দুর্ঘটনায় ১৪৭ জন নিহত হয়েছিল। গড়ে প্রতিদিন নিহত হয়েছিল ১২ দশমিক ২৫ জন। এবারের ঈদুল ফিতরের আগে-পরে ১৪ দিনে নিহত হয়েছে ৩১৪ জন। প্রতিদিন গড়ে নিহত হয়েছে ২২ দশমিক ৪২ জন। এই হিসাবে প্রাণহানি বেড়েছে ৮৩ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়সী কর্মক্ষম মানুষ নিহত হয়েছেন ২৬৭ জন, অর্থাৎ ৮৫ শতাংশ। বিষয়টি চরম উদ্বেগজনক বলে দাবি করেছেন সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান।

তিনি বলেন, ট্রাক, পিকআপ, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। ট্রাক এবং মোটরসাইকেল সড়ক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে চরম হুমকি হয়ে উঠেছে। অপ্রাপ্তবয়স্ক এবং যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানোর কারণে তারা নিজেরা দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে এবং অন্য যানবাহনকে আক্রান্ত করছে। পথচারী নিহতের অধিকাংশ ঘটনা ঘটছে ট্রাক, পিকআপ, কাভার্ডভ্যান ও মোটরসাইকেলের চাপায়-ধাক্কায়। পথচারীরা যেমন সড়কে নিয়ম মেনে চলে না, তেমনি যানবাহনগুলোও বেপরোয়া গতিতে চলে। ফলে অহরহ পথচারী নিহতের ঘটনা ঘটছে। সাইদুর রহমান বলেন, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধের লক্ষ্যে সরকার মানুষের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করতে ঈদের আগে থেকেই দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ রেখেছে। কিন্তু কোনভাবেই ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। মানুষ হেঁটে, ছোট ছোট যানবহনে অবর্ণনীয় কষ্ট করে গন্তব্যে পৌঁছেছে। এ সময় ঢাকার বহির্মুখী পথসহ সারাদেশের নৌ ও সড়কযানে চরম নৈরাজ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এই অবস্থা ঈদ পরবর্তী কর্মস্থলে ফেরার যাত্রায়ও বিদ্যমান রয়েছে। এ কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে। অধিকাংশ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে সড়ক পরিবহন খাতের নৈরাজ্য ও অব্যবস্থাপনার কারণে। এই অবস্থার কোন অগ্রগতি নেই। তাই সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় বলে জানান তিনি।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ৯৪টি জাতীয় মহাসড়কে, ৮৯টি আঞ্চলিক সড়কে, ৩৪টি গ্রামীণ সড়কে, ১৮টি শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ৪টি সংঘটিত হয়েছে। দুর্ঘটনাসমূহের ৪৪টি মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৯৫টি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ৭৬টি পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেয়া, ১৯টি যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ৫টি অন্য কারণে ঘটেছে। দুর্ঘটনায় আক্রান্ত যানবাহনের সংখ্যা ৪৩১টি। এর মধ্যে ট্রাক ৬২, বাস ২১, কাভার্ডভ্যান ১২, পিকআপ ২৩, ট্রলি ৭, ট্রাক্টর ৯, মাইক্রোবাস ২৪, প্রাইভেটকার ১৬, অ্যাম্বুলেন্স ১ জিপ ১, র‌্যাবের পিকআপ ১, মোটরসাইকেল ১২৬, ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-লেগুনা-টেম্পু ৮৮, নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-মাহিন্দ্র-চান্দের গাড়ি ২৯ এবং প্যাডেল রিকশা, রিকশাভ্যান, বাইসাইকেল ১১টি।

রবিবার, ২৩ মে ২০২১ , ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১০ শাওয়াল ১৪৪২

নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই

ঈদযাত্রায় সড়কে দুর্ঘটনা ২৩৯টি, প্রাণ ঝরে ৩১৪

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

লকডাউনের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে এবার ঈদযাত্রায় সারাদেশে ২৩৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩১৪ জন নিহত ও ২৯১ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১২১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ১৩৪ জন, যা মোট নিহতের ৪২ দশমিক ৬৭ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৫০ দশমিক ৬২ শতাংশ। এছাড়া ৪টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৩ জন নিহত এবং ৭ জন আহত হয়েছে। ১টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। গতকাল এক প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করেছে সংগঠনটি।

২০২০ সালের ঈদুল ফিতরের আগে-পরে ১২ দিনে ১২৮টি দুর্ঘটনায় ১৪৭ জন নিহত হয়েছিল। গড়ে প্রতিদিন নিহত হয়েছিল ১২ দশমিক ২৫ জন। এবারের ঈদুল ফিতরের আগে-পরে ১৪ দিনে নিহত হয়েছে ৩১৪ জন। প্রতিদিন গড়ে নিহত হয়েছে ২২ দশমিক ৪২ জন। এই হিসাবে প্রাণহানি বেড়েছে ৮৩ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়সী কর্মক্ষম মানুষ নিহত হয়েছেন ২৬৭ জন, অর্থাৎ ৮৫ শতাংশ। বিষয়টি চরম উদ্বেগজনক বলে দাবি করেছেন সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান।

তিনি বলেন, ট্রাক, পিকআপ, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। ট্রাক এবং মোটরসাইকেল সড়ক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে চরম হুমকি হয়ে উঠেছে। অপ্রাপ্তবয়স্ক এবং যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানোর কারণে তারা নিজেরা দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে এবং অন্য যানবাহনকে আক্রান্ত করছে। পথচারী নিহতের অধিকাংশ ঘটনা ঘটছে ট্রাক, পিকআপ, কাভার্ডভ্যান ও মোটরসাইকেলের চাপায়-ধাক্কায়। পথচারীরা যেমন সড়কে নিয়ম মেনে চলে না, তেমনি যানবাহনগুলোও বেপরোয়া গতিতে চলে। ফলে অহরহ পথচারী নিহতের ঘটনা ঘটছে। সাইদুর রহমান বলেন, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধের লক্ষ্যে সরকার মানুষের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করতে ঈদের আগে থেকেই দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ রেখেছে। কিন্তু কোনভাবেই ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। মানুষ হেঁটে, ছোট ছোট যানবহনে অবর্ণনীয় কষ্ট করে গন্তব্যে পৌঁছেছে। এ সময় ঢাকার বহির্মুখী পথসহ সারাদেশের নৌ ও সড়কযানে চরম নৈরাজ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এই অবস্থা ঈদ পরবর্তী কর্মস্থলে ফেরার যাত্রায়ও বিদ্যমান রয়েছে। এ কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে। অধিকাংশ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে সড়ক পরিবহন খাতের নৈরাজ্য ও অব্যবস্থাপনার কারণে। এই অবস্থার কোন অগ্রগতি নেই। তাই সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় বলে জানান তিনি।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ৯৪টি জাতীয় মহাসড়কে, ৮৯টি আঞ্চলিক সড়কে, ৩৪টি গ্রামীণ সড়কে, ১৮টি শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ৪টি সংঘটিত হয়েছে। দুর্ঘটনাসমূহের ৪৪টি মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৯৫টি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ৭৬টি পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেয়া, ১৯টি যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ৫টি অন্য কারণে ঘটেছে। দুর্ঘটনায় আক্রান্ত যানবাহনের সংখ্যা ৪৩১টি। এর মধ্যে ট্রাক ৬২, বাস ২১, কাভার্ডভ্যান ১২, পিকআপ ২৩, ট্রলি ৭, ট্রাক্টর ৯, মাইক্রোবাস ২৪, প্রাইভেটকার ১৬, অ্যাম্বুলেন্স ১ জিপ ১, র‌্যাবের পিকআপ ১, মোটরসাইকেল ১২৬, ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-লেগুনা-টেম্পু ৮৮, নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-মাহিন্দ্র-চান্দের গাড়ি ২৯ এবং প্যাডেল রিকশা, রিকশাভ্যান, বাইসাইকেল ১১টি।