হকার রাজু আহম্মেদ
আগামী অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তবে বাজেট নিয়ে কোন ভাবনা নেই ফুটপাতের হকার রাজু আহম্মেদের (৩২)। নারায়ণগঞ্জ শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাতে হকারি করা এই যুবক বলেন, ‘আমরা হইছি সাধারণ মানুষ। তার ওপর আমরা গরিব। আমাদের কথার কোন দাম নাই। সরকার বাজেট করে বড়লোকদের জন্য। ওই বাজেটে আমাদের কোন ঠাঁই নাই। তাই বাজেট নিয়া আমাদের কোন ভাবনা নাই। শহরে টিকে থাকাটাই আমাদের চ্যালেঞ্জ। গরিব মানুষ বাইচা আছে এইটাই বেশি, বাজেট নিয়া চিন্তা করব কখন? বাজার থেকে এক কেজি চাল আর আলু কিন্না খাইতে পারলেই গরিবের চিন্তা শ্যাষ।’ রাজু মনে করে দেশে তার মতো গরিব মানুষের অভাব নেই। তবে সরকার তাদের নিয়ে চিন্তা করেন কিনা তা নিয়ে সন্দিহান ফুটপাতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রাজু। তিনি বলেন, ‘লাখো-কোটি টাকা বাজেট হয় প্রতি বছর। অথচ গরিব গরিবই থাকে। বাজেট হইলেই জিনিসপত্রের দাম বাড়ে, ঘরভাড়া বাড়ে কিন্তু ইনকাম তো বাড়ে না। গরিব মানুষ না খাইয়া মরব, এইটাই চলতেছে। আমরা সারাদিন এইগুলা কইতে থাকমু কিন্তু এইগুলো নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই।’
এক সময় গাজীপুর, নরসিংদীসহ আশপাশের জেলাগুলোতে পলিথিন সরবরাহ করতেন। গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানার দক্ষিণবাগ গ্রামে বাড়ি তার। ব্যবসায় চার লাখ টাকা লোকসান হওয়ার পর চলে আসেন নারায়ণগঞ্জে। বর্তমানে দিনভর ফুটপাতে টি-শার্ট বিক্রি করেন। মা, স্ত্রী ও শিশু সন্তান নিয়ে থাকেন শহরের উত্তর চাষাঢ়ার একটি ভাড়াবাড়িতে। ফুটপাতে হকারি করে কোনমতে দিন চলে তার। তবে কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে বেশ সংকটে পড়েছেন। স্ত্রী ও সন্তানকে পাঠিয়ে দিয়েছেন গ্রামের বাড়িতে।
শহরের চাষাঢ়ায় কথা হয় রাজুর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পলিথিনের ব্যবসা ছাইড়া ফুটপাতে নামছি। এইখানেও শান্তি নাই। এই কোভিডের সময় পড়ছি আরও ঝামেলায়। সরকারের পক্ষ থেকে কোন সহযোগিতাও পাই না। সরকারি কোন ব্যাংক বা সংস্থা থেকে ঋণ পাওয়াও দুঃসাধ্য। আসলে আমাদের কথা কেউ চিন্তা করে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাজেট আসলে টেলিভিশনে দেখি নানাজন নানা কথা বলে। কিন্তু আমাদের ভাগ্যের কোন উন্নতি হয় না। সাধারণ মানুষের কথার কোন মূল্যায়নই নাই। সাধারণ মানুষ হইয়া গেছে মূর্তির মতো। অথচ শিল্পপতিদের টাকা দিন দিন বাড়তেই থাকে।’
ফুটপাতে ব্যবসা করতে গিয়েও নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় বলে জানালেন রাজু। পুলিশসহ বিভিন্নজনকে দৈনিক চাঁদা দেয়ার পরও ফুটপাত থেকে তাদের তুলে দেয়া হয়। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের নাগরিক হইয়াই কর্ম করে খাইতে পারতেছি না। অথচ রোহিঙ্গাদের লালন-পালন করতেছে। রোহিঙ্গা পালুক কিন্তু আমাদের কথাও চিন্তা করুক। আমাদের ফুটপাতে বসতে দেয় না। আমরা যারা গরিব মানুষ আছি, সরকার যদি তাদের একটু সুযোগ দেয় তাহলে গরিব আর গরিব থাকে না। সরকার যেন এইটুকু চিন্তা করে। এর চেয়ে বেশি কিছু চাই না।’
রাজুর দাবি, আগামী বাজেটে সারাদেশের ফুটপাতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য সহযোগিতামূলক প্রকল্প রাখা হোক। তার মতে করোনা থেকে আমরা যারা এখনও বেঁচে আছি কিন্তু ব্যবসার পুঁজি হারিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছি তাদের জন্য বিশেষ প্রণোদনা দেয়ার অর্থ বাজেটে রাখা হোক। রাজু বলেন, করোনা মহামারী শুরুর পরই শুনছি সরকার বড় বড় ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের টাকা দিয়ে সাহায্য করবেন, করছেনও। শিল্পপতিরা যাতে তাদের শিল্প-কারখানা বাঁচিয়ে রাখতে পারে তার জন্য নগদ টাকা দেয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে সরকার। কিন্তু আমরা ফুটপাতের হকাররাওতো ব্যবসা করি, করোনায় আমাদেরওতো ব্যবসা না চলায় লোকসানের কারণে পুঁজি হারিয়ে বসে আছি। আমাদের সহযোগিতা করবে কে? কেন সরকার আমাদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে না। এ প্রেক্ষাপটে আমরা চাই আগামী বাজেটে আমাদেরও ব্যবসা আবার অগের অবস্থায় নিতে যেতে নগদ পুঁজি সহায়তা দিক সরকার। এছাড়া সহজ সুদে আমাদের ব্যাংক লোন দেয়া হোক। এসব বিষয় এবারের বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করলে আমরা মনে করব এ সরকার আমাদের কথাও ভাবে।
রবিবার, ২৩ মে ২০২১ , ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১০ শাওয়াল ১৪৪২
হকার রাজু আহম্মেদ
সৌরভ হোসেন সিয়াম, নারায়ণগঞ্জ
আগামী অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তবে বাজেট নিয়ে কোন ভাবনা নেই ফুটপাতের হকার রাজু আহম্মেদের (৩২)। নারায়ণগঞ্জ শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাতে হকারি করা এই যুবক বলেন, ‘আমরা হইছি সাধারণ মানুষ। তার ওপর আমরা গরিব। আমাদের কথার কোন দাম নাই। সরকার বাজেট করে বড়লোকদের জন্য। ওই বাজেটে আমাদের কোন ঠাঁই নাই। তাই বাজেট নিয়া আমাদের কোন ভাবনা নাই। শহরে টিকে থাকাটাই আমাদের চ্যালেঞ্জ। গরিব মানুষ বাইচা আছে এইটাই বেশি, বাজেট নিয়া চিন্তা করব কখন? বাজার থেকে এক কেজি চাল আর আলু কিন্না খাইতে পারলেই গরিবের চিন্তা শ্যাষ।’ রাজু মনে করে দেশে তার মতো গরিব মানুষের অভাব নেই। তবে সরকার তাদের নিয়ে চিন্তা করেন কিনা তা নিয়ে সন্দিহান ফুটপাতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রাজু। তিনি বলেন, ‘লাখো-কোটি টাকা বাজেট হয় প্রতি বছর। অথচ গরিব গরিবই থাকে। বাজেট হইলেই জিনিসপত্রের দাম বাড়ে, ঘরভাড়া বাড়ে কিন্তু ইনকাম তো বাড়ে না। গরিব মানুষ না খাইয়া মরব, এইটাই চলতেছে। আমরা সারাদিন এইগুলা কইতে থাকমু কিন্তু এইগুলো নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই।’
এক সময় গাজীপুর, নরসিংদীসহ আশপাশের জেলাগুলোতে পলিথিন সরবরাহ করতেন। গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানার দক্ষিণবাগ গ্রামে বাড়ি তার। ব্যবসায় চার লাখ টাকা লোকসান হওয়ার পর চলে আসেন নারায়ণগঞ্জে। বর্তমানে দিনভর ফুটপাতে টি-শার্ট বিক্রি করেন। মা, স্ত্রী ও শিশু সন্তান নিয়ে থাকেন শহরের উত্তর চাষাঢ়ার একটি ভাড়াবাড়িতে। ফুটপাতে হকারি করে কোনমতে দিন চলে তার। তবে কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে বেশ সংকটে পড়েছেন। স্ত্রী ও সন্তানকে পাঠিয়ে দিয়েছেন গ্রামের বাড়িতে।
শহরের চাষাঢ়ায় কথা হয় রাজুর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পলিথিনের ব্যবসা ছাইড়া ফুটপাতে নামছি। এইখানেও শান্তি নাই। এই কোভিডের সময় পড়ছি আরও ঝামেলায়। সরকারের পক্ষ থেকে কোন সহযোগিতাও পাই না। সরকারি কোন ব্যাংক বা সংস্থা থেকে ঋণ পাওয়াও দুঃসাধ্য। আসলে আমাদের কথা কেউ চিন্তা করে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাজেট আসলে টেলিভিশনে দেখি নানাজন নানা কথা বলে। কিন্তু আমাদের ভাগ্যের কোন উন্নতি হয় না। সাধারণ মানুষের কথার কোন মূল্যায়নই নাই। সাধারণ মানুষ হইয়া গেছে মূর্তির মতো। অথচ শিল্পপতিদের টাকা দিন দিন বাড়তেই থাকে।’
ফুটপাতে ব্যবসা করতে গিয়েও নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় বলে জানালেন রাজু। পুলিশসহ বিভিন্নজনকে দৈনিক চাঁদা দেয়ার পরও ফুটপাত থেকে তাদের তুলে দেয়া হয়। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের নাগরিক হইয়াই কর্ম করে খাইতে পারতেছি না। অথচ রোহিঙ্গাদের লালন-পালন করতেছে। রোহিঙ্গা পালুক কিন্তু আমাদের কথাও চিন্তা করুক। আমাদের ফুটপাতে বসতে দেয় না। আমরা যারা গরিব মানুষ আছি, সরকার যদি তাদের একটু সুযোগ দেয় তাহলে গরিব আর গরিব থাকে না। সরকার যেন এইটুকু চিন্তা করে। এর চেয়ে বেশি কিছু চাই না।’
রাজুর দাবি, আগামী বাজেটে সারাদেশের ফুটপাতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য সহযোগিতামূলক প্রকল্প রাখা হোক। তার মতে করোনা থেকে আমরা যারা এখনও বেঁচে আছি কিন্তু ব্যবসার পুঁজি হারিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছি তাদের জন্য বিশেষ প্রণোদনা দেয়ার অর্থ বাজেটে রাখা হোক। রাজু বলেন, করোনা মহামারী শুরুর পরই শুনছি সরকার বড় বড় ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের টাকা দিয়ে সাহায্য করবেন, করছেনও। শিল্পপতিরা যাতে তাদের শিল্প-কারখানা বাঁচিয়ে রাখতে পারে তার জন্য নগদ টাকা দেয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে সরকার। কিন্তু আমরা ফুটপাতের হকাররাওতো ব্যবসা করি, করোনায় আমাদেরওতো ব্যবসা না চলায় লোকসানের কারণে পুঁজি হারিয়ে বসে আছি। আমাদের সহযোগিতা করবে কে? কেন সরকার আমাদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে না। এ প্রেক্ষাপটে আমরা চাই আগামী বাজেটে আমাদেরও ব্যবসা আবার অগের অবস্থায় নিতে যেতে নগদ পুঁজি সহায়তা দিক সরকার। এছাড়া সহজ সুদে আমাদের ব্যাংক লোন দেয়া হোক। এসব বিষয় এবারের বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করলে আমরা মনে করব এ সরকার আমাদের কথাও ভাবে।