অর্ধেক শ্রমিক দিয়ে চলছে হতদরিদ্রদের কর্মসৃজন প্রকল্পের কাজ!

হতদরিদ্রদের জন্য ইউজিপিপি প্রকল্পের আওতায় চল্লিশ দিনের কাজে চলতি অর্থ বছরে দ্বিতীয় ধাপে কলারোয়া উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নে ১৮৪ জন শ্রমিক বরাদ্দ থাকলেও অর্ধেক শ্রমিকও কাজ করেনা বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা গেছে, দ্বিতীয় ধাপের শুরু হয় ২ মে থেকে। জয়নগর ইউনিয়নে ওই প্রকল্পের কাজ শুরু থেকেই প্রতি ওয়ার্ডে ২জন করে ৯টি ওয়ার্ডে মোট ১৮ জন শ্রমিক নিয়মিতভাবে অনুপস্থিত ছিল। প্রকল্পের আব্বাস আলি,অমল,ছকিনা,সাবিনা, রউপ,রাজ্জাকসহ একাধিক শ্রমিকের সঙ্গে কথাবলে জানা গেছে, এমনিতে এ কাজে পারিশ্রমিক মাত্র ২০০ টাকা। তারপর চল্লিশ দিনের কাজ শেষ হলেও প্রথম ধাপের টাকা পেতে সময় লেগেছে প্রায় ৩ মাস। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কাজ করে পাওয়া যায় ২০০ টাকা। আর আদৌও কাজ না করে অনেকের নামে টাকা ওঠে। দ্বিতীয় ধাপের চলমান কাজে অভিযোগ আছে, জয়নগর ইউনিয়নের ২,৭,৮,৯নং ওয়ার্ডে কাজ শুরুর তিনদিন পর কাজ শুরু হয়। গত ১৮ মে কলারোয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টু ৬,৭ও ৯নং ওয়ার্ডে সরেজমিন পরিদর্শনে আসেন। তিনি ৬নং ওয়ার্ডে ২৫ জন শ্রমিকের জায়গায় ১৩ জন,৭নং ওয়ার্ডে ২০ জন শ্রমিকের জায়গায় ৯ জন ও ৯নং ওয়ার্ডে ২০ জন শ্রমিকের জায়গায় ৯ জন শ্রমিককে কাজ করতে দেখেন। ইউজিপিপি প্রকল্পের চল্লিশ দিনের প্রথম ধাপের কাজের টাকা শ্রমিকরা কাজ শেষের প্রায় ৩ মাসর মাথায় টাকা পেয়েছে। শ্রমিকরা সময়মতো তাদের পাওনা টাকা না পাওয়ায় ওই প্রকল্পে শ্রমিক সঙ্কটের বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া এবারের বোরো মৌসুমে ধান কাটার জন্যও শ্রমিক সঙ্কটের আর একটি কারণ। তবে জয়নগর ইউনিয়নসহ আশপাশ এলাকায় ধানকাটা শেষ হলেও ইউজিপিপি প্রকল্পের কাজে এখনও যোগ দেয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই প্রকল্পের একাধিক সভাপতি জানান, প্রকল্পের প্রথম ধাপের মোট শ্রমিকের বিল তারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে উপজেলা পিআইও অফিসে জমা দেন। প্রকল্পের অনেক সভাপতি জানান, বিশেষ কারনে প্রথম ধাপের শ্রমিকদের বিল অফিসে জমা দিতে একটু দেরি হয়ে গিয়েছিল। তবে বিশেষ কারণটা কি ? এমন প্রশ্নের উত্তর জানাননি তারা। সূত্র জানায়, জয়নগর ইউনিয়নে চল্লিশ দিনের কাজে অনেক শ্রমিকরা কাজ না করলেও তাদের বিল এবং চল্লিশ দিনের পরিবর্তে বত্রিশ দিন কাজ হলেও প্রথম পর্যায়ের কাজের সমুদয় টাকার বিল সংশ্লিষ্ট ট্যাগ অফিসারের স্বাক্ষর করে পিআইও অফিসে দাখিল হলে জনৈক আব্দুর রহমান গত ১১/৪/২১ তারিখে ওই প্রকল্পে সরকারি টাকা আত্মসাত করার পায়তারার অভিযোগে কলারোয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন। সে প্রেক্ষিতে ট্যাগ অফিসার মহিতোষ কর্মকার তদন্ত করে বত্রিশ দিনের কাজের বিল ছাড় করার জন্য সুপারিশ করেন। তাতে জয়নগর ইউনিয়নে ওই প্রকল্পে প্রায় ৩ লাখ টাকা সরকারি টাকা তছনছ হতে পারেনি। অভিযোগ আছে ২০১৯ সালেও চল্লিশ দিনের কাজের প্রকল্প থেকে প্রকল্প সভাপতিরা সরকারি টাকা আত্মসাত করার লক্ষ্যে জয়নগর ইউনিয়নের সমুদয় শ্রমিকদের বিল ছাড় করার জন্য সে সময়কার দায়িত্বে থাকা ট্যাগ অফিসারের স্বাক্ষর করে পিআইও অফিসে জমা দিলে জনৈক হুমায়ুন সানা বাদী হয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর দরখাস্ত দেয়ার পর সে বারও সরকারি টাকা তছনছ বন্ধ হয়। তবে জয়নগর ইউনিয়নের ট্যাগ অফিসার মহিতোষ কর্মকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তিনি প্রকল্পগুলো পরিদর্শন না করেই বিলে স্বাক্ষর করে দেন। তার বিরুদ্ধে সরকারি টাকা তছনছের সহযোগিতা করার সুষ্পষ্ট অভিযোগ উঠেছে। ব্যাংক থেকে শ্রমিকরা সরাসরি তাদের হিসাব থেকে টাকা না নিতে পারায় সরকারি টাকা তছনছ বন্ধ করা দূরহ হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে ট্যাগ আফিসার মহিতোস কর্মকারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা তিনি জানান আমার একার পক্ষে ওয়ার্ড পর্যায়ে গিয়ে কাজ দেখা অনেক সময় সম্ভব হয়ে উঠে না। সেজন্য হয়ত : কিছু ত্রুটি হতে পারে। প্রকল্প পরির্দশন না করে বিলে স্বাক্ষর করার বিষয়ে তিনি বলেন চেয়ারম্যানের কথা বিশ্বাস করে বিলে স্বাক্ষর করা হয়।

সোমবার, ২৪ মে ২০২১ , ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১১ শাওয়াল ১৪৪২

অর্ধেক শ্রমিক দিয়ে চলছে হতদরিদ্রদের কর্মসৃজন প্রকল্পের কাজ!

প্রতিনিধি, কলারোয়া (সাতক্ষীরা)

হতদরিদ্রদের জন্য ইউজিপিপি প্রকল্পের আওতায় চল্লিশ দিনের কাজে চলতি অর্থ বছরে দ্বিতীয় ধাপে কলারোয়া উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নে ১৮৪ জন শ্রমিক বরাদ্দ থাকলেও অর্ধেক শ্রমিকও কাজ করেনা বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা গেছে, দ্বিতীয় ধাপের শুরু হয় ২ মে থেকে। জয়নগর ইউনিয়নে ওই প্রকল্পের কাজ শুরু থেকেই প্রতি ওয়ার্ডে ২জন করে ৯টি ওয়ার্ডে মোট ১৮ জন শ্রমিক নিয়মিতভাবে অনুপস্থিত ছিল। প্রকল্পের আব্বাস আলি,অমল,ছকিনা,সাবিনা, রউপ,রাজ্জাকসহ একাধিক শ্রমিকের সঙ্গে কথাবলে জানা গেছে, এমনিতে এ কাজে পারিশ্রমিক মাত্র ২০০ টাকা। তারপর চল্লিশ দিনের কাজ শেষ হলেও প্রথম ধাপের টাকা পেতে সময় লেগেছে প্রায় ৩ মাস। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কাজ করে পাওয়া যায় ২০০ টাকা। আর আদৌও কাজ না করে অনেকের নামে টাকা ওঠে। দ্বিতীয় ধাপের চলমান কাজে অভিযোগ আছে, জয়নগর ইউনিয়নের ২,৭,৮,৯নং ওয়ার্ডে কাজ শুরুর তিনদিন পর কাজ শুরু হয়। গত ১৮ মে কলারোয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টু ৬,৭ও ৯নং ওয়ার্ডে সরেজমিন পরিদর্শনে আসেন। তিনি ৬নং ওয়ার্ডে ২৫ জন শ্রমিকের জায়গায় ১৩ জন,৭নং ওয়ার্ডে ২০ জন শ্রমিকের জায়গায় ৯ জন ও ৯নং ওয়ার্ডে ২০ জন শ্রমিকের জায়গায় ৯ জন শ্রমিককে কাজ করতে দেখেন। ইউজিপিপি প্রকল্পের চল্লিশ দিনের প্রথম ধাপের কাজের টাকা শ্রমিকরা কাজ শেষের প্রায় ৩ মাসর মাথায় টাকা পেয়েছে। শ্রমিকরা সময়মতো তাদের পাওনা টাকা না পাওয়ায় ওই প্রকল্পে শ্রমিক সঙ্কটের বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া এবারের বোরো মৌসুমে ধান কাটার জন্যও শ্রমিক সঙ্কটের আর একটি কারণ। তবে জয়নগর ইউনিয়নসহ আশপাশ এলাকায় ধানকাটা শেষ হলেও ইউজিপিপি প্রকল্পের কাজে এখনও যোগ দেয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই প্রকল্পের একাধিক সভাপতি জানান, প্রকল্পের প্রথম ধাপের মোট শ্রমিকের বিল তারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে উপজেলা পিআইও অফিসে জমা দেন। প্রকল্পের অনেক সভাপতি জানান, বিশেষ কারনে প্রথম ধাপের শ্রমিকদের বিল অফিসে জমা দিতে একটু দেরি হয়ে গিয়েছিল। তবে বিশেষ কারণটা কি ? এমন প্রশ্নের উত্তর জানাননি তারা। সূত্র জানায়, জয়নগর ইউনিয়নে চল্লিশ দিনের কাজে অনেক শ্রমিকরা কাজ না করলেও তাদের বিল এবং চল্লিশ দিনের পরিবর্তে বত্রিশ দিন কাজ হলেও প্রথম পর্যায়ের কাজের সমুদয় টাকার বিল সংশ্লিষ্ট ট্যাগ অফিসারের স্বাক্ষর করে পিআইও অফিসে দাখিল হলে জনৈক আব্দুর রহমান গত ১১/৪/২১ তারিখে ওই প্রকল্পে সরকারি টাকা আত্মসাত করার পায়তারার অভিযোগে কলারোয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন। সে প্রেক্ষিতে ট্যাগ অফিসার মহিতোষ কর্মকার তদন্ত করে বত্রিশ দিনের কাজের বিল ছাড় করার জন্য সুপারিশ করেন। তাতে জয়নগর ইউনিয়নে ওই প্রকল্পে প্রায় ৩ লাখ টাকা সরকারি টাকা তছনছ হতে পারেনি। অভিযোগ আছে ২০১৯ সালেও চল্লিশ দিনের কাজের প্রকল্প থেকে প্রকল্প সভাপতিরা সরকারি টাকা আত্মসাত করার লক্ষ্যে জয়নগর ইউনিয়নের সমুদয় শ্রমিকদের বিল ছাড় করার জন্য সে সময়কার দায়িত্বে থাকা ট্যাগ অফিসারের স্বাক্ষর করে পিআইও অফিসে জমা দিলে জনৈক হুমায়ুন সানা বাদী হয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর দরখাস্ত দেয়ার পর সে বারও সরকারি টাকা তছনছ বন্ধ হয়। তবে জয়নগর ইউনিয়নের ট্যাগ অফিসার মহিতোষ কর্মকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তিনি প্রকল্পগুলো পরিদর্শন না করেই বিলে স্বাক্ষর করে দেন। তার বিরুদ্ধে সরকারি টাকা তছনছের সহযোগিতা করার সুষ্পষ্ট অভিযোগ উঠেছে। ব্যাংক থেকে শ্রমিকরা সরাসরি তাদের হিসাব থেকে টাকা না নিতে পারায় সরকারি টাকা তছনছ বন্ধ করা দূরহ হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে ট্যাগ আফিসার মহিতোস কর্মকারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা তিনি জানান আমার একার পক্ষে ওয়ার্ড পর্যায়ে গিয়ে কাজ দেখা অনেক সময় সম্ভব হয়ে উঠে না। সেজন্য হয়ত : কিছু ত্রুটি হতে পারে। প্রকল্প পরির্দশন না করে বিলে স্বাক্ষর করার বিষয়ে তিনি বলেন চেয়ারম্যানের কথা বিশ্বাস করে বিলে স্বাক্ষর করা হয়।