বাড়লো বিধিনিষেধ, খুলল আন্তঃজেলা বাস ট্রেন লঞ্চ

‘হাস্যকর বিধিনিষেধে করোনা নিয়ন্ত্রণে কাজ হবে না’

করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলমান বিধিনিষেধ বৃদ্ধি করা হয়েছে আরও এক সপ্তাহ। তবে খুলে দেয়া হয়েছে দূরপাল্লার বাসসহ সব ধরনের গণপরিবহন। হোটেল-রেস্তোরাঁয় বসে খাবার খাওয়ার অনুমতিও দেয়া হয়েছে। গতকাল এক প্রজ্ঞাপনে এই আদেশ জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায়’ আগের সব বিধিনিষেধের ধারাবাহিকতায় নতুন শর্ত যুক্ত করে এর মেয়াদ ২৩ মে মধ্যরাত থেকে ৩০ মে মধ্যরাত পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। নতুন শর্তে বলা হয়েছে, আন্তঃজেলা বাসসহ সব ধরনের গণপরিবহন আসন সংখ্যার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে পারবে। তবে অবশ্যই যাত্রীসহ সবাইকে মাস্ক পরার পাশাপাশি সব স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। হোটেল-রেস্তোরাঁ ও খাবার দোকানগুলো আসন সংখ্যার অর্ধেক সেবাগ্রহীতাকে সেবা দিতে পারবে। এতদিন খাবারের দোকানে বসে খাওয়ার অনুমতি ছিল না, তবে খাবার বিক্রি বা সরবরাহ (টেকওয়ে বা অনলাইন) করার সুযোগ ছিল।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের জন্য গত ৫ এপ্রিল থেকে সারাদেশে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। যাকে সরকারের মন্ত্রীরা বলছিল লকডাউন। বিধিনিষেধ আরোপের প্রথম থেকেই ছিল ঢিলেঢালা ভাব। বলা হয়েছিল সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালতে উপস্থিতি থাকবে ৫০ শতাংশ। কিন্তু বেশির ভাগ বেসরকারি অফিসে উপস্থিতি ছিল সবার। শুধু বন্ধ ছিল গণপরিবহন-দোকান-মার্কেট। কিন্তু গার্মেন্ট ও কালকারখানা ছিল খোলা। পরবর্তীতে মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে খুলে দেয়া হয় জেলার অভ্যন্তরে গণপরিবহন। ঈদের আগে ব্যবসায়ীদের লোকসানের কথা চিন্তা করে খুলে দেয়া হয় দোকান ও মার্কেট। বিধিনিষেধ বলা হলেও শিথিল করা হয়েছে সবকিছু। তাহলে কিসের ওপর কার্যকর হচ্ছে সরকারের এই বিধিনিষেধ। তাই এটা একটি হাস্যকর বিধিনিষেধ বলে মনে করছেন গণস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এই বিধিনিষেধের মাধ্যমে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে তেমন প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন তারা।

এ বিষয়ে হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের পরিচালক এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী সংবাদকে বলেন, সরকারি এই বিধিনিষেধের মাধ্যমে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে তেমন প্রভাব ফেলবে না। কারণ এই বিধিনিষেধ একটি হাস্যকর বিধিনিষেধ। সবকিছু খুলে দেয়া হলেও বলা হচ্ছে বিধিনিষেধ। করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে সরকার একটি সিদ্ধান্তহীনতায় ছিল এই বিধিনিষেধের মাধ্যমে এটা প্রমাণ হয়। সরকার যদি এটা বলত সবকিছু খোলা থাকবে। কিন্তু কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। যেমন গণপরিবহনে এই নিয়ম, দোকানপাটে এই নিয়ম। তাহলে ছিল ভিন্ন কথা। কিন্তু এখন কোনটাই হয় না। তবে করোনা নিয়ন্ত্রণে আগে থেকেই মাস্ক ও কঠোর স্বাস্থ্যবিধি পালনের ক্ষেত্রে সরকারের গুরুত্ব দেয়া উচিত ছিল বলে জানান তিনি। ৪৯ দিন পর চালু হলো দূরপাল্লার বাস

স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে আজ থেকে চলবে দূরপাল্লার বাস, ট্রেন ও লঞ্চ সার্ভিস। ঈদের আগে জেলার অভ্যন্তরে গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়েছিল। দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিল। ঈদের পর লকডাউনের মেয়াদ এক সপ্তাহ বাড়ানো হলে দূরপাল্লার বাসের বিধিনিষেধও বহাল রাখা হয়েছিল। কিন্তু দূরপাল্লার বাস ও লঞ্চ চালুর দাবিতে আন্দোলনের ঘোষণা দেয় মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বাস-লঞ্চ চালুর ঘোষণা দেয়া হয়েছে বাস-লঞ্চ মালিক-শ্রমিকরা।

দূরপাল্লার বাস ও লঞ্চ সার্ভিস চালুর সরকারের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মো. শাহ আলম ভূঁইয়া সংবাদকে বলেন, আরও আগে কর্তৃপক্ষ সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত প্রদান করলে শ্রমিকদের এই দুঃখ-কষ্ট কিছুটা লাঘব হতো। তারপরও সরকারের এই ঘোষণাকে ইতিবাচক বলে আখ্যা দিয়ে শ্রমিকদেরকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরকারি ঘোষণার আলোকে যাত্রীবাহী নৌযান (লঞ্চ) সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করে যাত্রী সাধারণের সেবা প্রদান করার আহ্বান জানান তিনি।

এর আগে করনো মহামারী বিস্তারের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে গত ৫ এপ্রিল থেকে দেশে জরুরি কাজ ছাড়া ঘরের বাইরে বের হওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। এই বিধিনিষেধের মধ্যে জরুরি সেবা দেয়া প্রতিষ্ঠান ছাড়া সরকারি-বেসরকারি অফিস আগের মতোই বন্ধ আছে। তবে উৎপাদনমুখী শিল্প কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ চালানোর অনুমতি রয়েছে। বিধিনিষেধের কারণে ৪৯ দিন যাবত বন্ধ ছিল আন্তঃজেলা বাস, ট্রেন ও লঞ্চ সার্ভিস।

এর আগে বিধিনিষেধ শিথিল করে দোকানপাট ও শপিংমল সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা রাখার অনুমতি দেয়া হয়েছিল। এখনও সেই নিয়মই বহাল রয়েছে।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে আন্তঃনগর ট্রেন

আজ থেকে অর্ধেক আসনে যাত্রী নিয়ে চলাচল করবে ট্রেন সার্ভিস। তবে প্রাথমিবভাবে সারাদেশে ২৮ জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন, ৯টি মেইল এক্সপ্রেস ও কমিউটার ট্রেন চলাচল করবে। করেনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গত ৫ এপ্রিল হতে রেলওয়ে সব ধরনের যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। তবে অবশ্যই যাত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে মাস্ক পরিধানসহ সব স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। আন্তঃনগর ট্রেনসমূহের টিকেট শুধুমাত্র অনলাইনে কাটা যাবে। কাউন্টারে টিকিট বিক্রয় করা হবে না বলে রেলওয়ে সূত্র জানায়। এ বিষয়ে রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন সাংবাদিকদের বলেন, ‘সোমবার থেকে সারাদেশে ২৮ জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন, ৯টি মেইল এক্সপ্রেস ও কমিউটার ট্রেন চলাচল শুরু হবে। এসব ট্রেনের অর্ধেক আসন ফাঁকা রাখা হবে এবং সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।’

রেলওয়ে সূত্র জানায়, যেসব ট্রেন চলাচল করবে সেগুলো হলো আন্তঃনগর ট্রেনসমূহ : সুবর্ণ এক্সপ্রেস, মহানগর গোধূলি/তূর্ণা, মহানগর প্রভাতী/তূর্ণা, তিস্তা এক্সপ্রেস, যমুনা এক্সপ্রেস, কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস, উপকূল এক্সপ্রেস, পারাবত এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা/উপবন এক্সপ্রেস, মেঘনা এক্সপ্রেস, বিজয় এক্সপ্রেস, পাহাড়িকা/উদয়ন এক্সপ্রেস, একতা এক্সপ্রেস, দ্রুতযান এক্সপ্রেস, বনলতা এক্সপ্রেস, পদ্মা এক্সপ্রেস, সুন্দরবন এক্সপ্রেস, চিত্রা এক্সপ্রেস, রংপুর এক্সপ্রেস, লালমনি এক্সপ্রেস, নীলসাগর এক্সপ্রেস, রূপসা এক্সপ্রেস, মধূমতি এক্সপ্রেস, তিতুমীর এক্সপ্রেস, সাগরদাড়ী এক্সপ্রেস, ঢালারচর এক্সপ্রেস, টুঙ্গীপাড়া এক্সপ্রেস। ৯ জোড়া মেইল ও কমিউটার ট্রেন হলো কর্ণফুলী কমিউটার, সাগরিকা কমিউটার, বলাকা কমিউটার, জামালপুর কমিউটার, ঢাকা কমিউটার, রকেট মেইল, মহানন্দা এক্সপ্রেস, পদ্মরাগ কমিউটার, উত্তরা এক্সপ্রেস। রেলওয়ের ৩৬২টি ট্রেনের মধ্যে স্বাভাবিক সময়ে ১০২টি আন্তঃনগর ট্রেন এবং ২৬০টি লোকাল, কমিউটার ট্রেন ও মালবাহী ট্রেন চলাচল করে বলে রেলওয়ে সূত্র জানায়।

অর্ধেক যাত্রী নিয়ে বর্ধিত ভাড়ায় চলবে লঞ্চ

স্বাস্থ্যবিধি মেনে আজ থেকে চলাচল করবে সব ধরনের যাত্রীবাহী নৌযান। লঞ্চের ডেকের যাত্রীর ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ বর্ধিত ভাড়া দিতে হবে। সদরঘাট থেকে প্রতিদিন দেড় শতাধিক লঞ্চ বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় ছেড়ে যায়। ভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি রোধে গত ৫ এপ্রিল সরকার লকডাউনের বিধিনিষেধ আরোপ করলে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ ছিল বলে বিআইডব্লিউটিএ’র সূত্র জানায়।

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, ‘সোমবার থেকে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করবে। তবে ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিতে হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। এই নিয়ম না মানলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

সোমবার, ২৪ মে ২০২১ , ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১১ শাওয়াল ১৪৪২

বাড়লো বিধিনিষেধ, খুলল আন্তঃজেলা বাস ট্রেন লঞ্চ

‘হাস্যকর বিধিনিষেধে করোনা নিয়ন্ত্রণে কাজ হবে না’

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

image

আজ থেকে চালু হচ্ছে ট্রেন, আন্তঃজেলা বাস ও স্টিমার, তাই পরিষ্কার করা হয় দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় জমে থাকা ধুলাবালি আবর্জনা। গতকাল কমলাপুর স্টেশন থেকে তোলা -সংবাদ

করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলমান বিধিনিষেধ বৃদ্ধি করা হয়েছে আরও এক সপ্তাহ। তবে খুলে দেয়া হয়েছে দূরপাল্লার বাসসহ সব ধরনের গণপরিবহন। হোটেল-রেস্তোরাঁয় বসে খাবার খাওয়ার অনুমতিও দেয়া হয়েছে। গতকাল এক প্রজ্ঞাপনে এই আদেশ জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায়’ আগের সব বিধিনিষেধের ধারাবাহিকতায় নতুন শর্ত যুক্ত করে এর মেয়াদ ২৩ মে মধ্যরাত থেকে ৩০ মে মধ্যরাত পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। নতুন শর্তে বলা হয়েছে, আন্তঃজেলা বাসসহ সব ধরনের গণপরিবহন আসন সংখ্যার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে পারবে। তবে অবশ্যই যাত্রীসহ সবাইকে মাস্ক পরার পাশাপাশি সব স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। হোটেল-রেস্তোরাঁ ও খাবার দোকানগুলো আসন সংখ্যার অর্ধেক সেবাগ্রহীতাকে সেবা দিতে পারবে। এতদিন খাবারের দোকানে বসে খাওয়ার অনুমতি ছিল না, তবে খাবার বিক্রি বা সরবরাহ (টেকওয়ে বা অনলাইন) করার সুযোগ ছিল।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের জন্য গত ৫ এপ্রিল থেকে সারাদেশে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। যাকে সরকারের মন্ত্রীরা বলছিল লকডাউন। বিধিনিষেধ আরোপের প্রথম থেকেই ছিল ঢিলেঢালা ভাব। বলা হয়েছিল সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালতে উপস্থিতি থাকবে ৫০ শতাংশ। কিন্তু বেশির ভাগ বেসরকারি অফিসে উপস্থিতি ছিল সবার। শুধু বন্ধ ছিল গণপরিবহন-দোকান-মার্কেট। কিন্তু গার্মেন্ট ও কালকারখানা ছিল খোলা। পরবর্তীতে মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে খুলে দেয়া হয় জেলার অভ্যন্তরে গণপরিবহন। ঈদের আগে ব্যবসায়ীদের লোকসানের কথা চিন্তা করে খুলে দেয়া হয় দোকান ও মার্কেট। বিধিনিষেধ বলা হলেও শিথিল করা হয়েছে সবকিছু। তাহলে কিসের ওপর কার্যকর হচ্ছে সরকারের এই বিধিনিষেধ। তাই এটা একটি হাস্যকর বিধিনিষেধ বলে মনে করছেন গণস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এই বিধিনিষেধের মাধ্যমে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে তেমন প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন তারা।

এ বিষয়ে হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের পরিচালক এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী সংবাদকে বলেন, সরকারি এই বিধিনিষেধের মাধ্যমে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে তেমন প্রভাব ফেলবে না। কারণ এই বিধিনিষেধ একটি হাস্যকর বিধিনিষেধ। সবকিছু খুলে দেয়া হলেও বলা হচ্ছে বিধিনিষেধ। করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে সরকার একটি সিদ্ধান্তহীনতায় ছিল এই বিধিনিষেধের মাধ্যমে এটা প্রমাণ হয়। সরকার যদি এটা বলত সবকিছু খোলা থাকবে। কিন্তু কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। যেমন গণপরিবহনে এই নিয়ম, দোকানপাটে এই নিয়ম। তাহলে ছিল ভিন্ন কথা। কিন্তু এখন কোনটাই হয় না। তবে করোনা নিয়ন্ত্রণে আগে থেকেই মাস্ক ও কঠোর স্বাস্থ্যবিধি পালনের ক্ষেত্রে সরকারের গুরুত্ব দেয়া উচিত ছিল বলে জানান তিনি। ৪৯ দিন পর চালু হলো দূরপাল্লার বাস

স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে আজ থেকে চলবে দূরপাল্লার বাস, ট্রেন ও লঞ্চ সার্ভিস। ঈদের আগে জেলার অভ্যন্তরে গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়েছিল। দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিল। ঈদের পর লকডাউনের মেয়াদ এক সপ্তাহ বাড়ানো হলে দূরপাল্লার বাসের বিধিনিষেধও বহাল রাখা হয়েছিল। কিন্তু দূরপাল্লার বাস ও লঞ্চ চালুর দাবিতে আন্দোলনের ঘোষণা দেয় মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বাস-লঞ্চ চালুর ঘোষণা দেয়া হয়েছে বাস-লঞ্চ মালিক-শ্রমিকরা।

দূরপাল্লার বাস ও লঞ্চ সার্ভিস চালুর সরকারের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মো. শাহ আলম ভূঁইয়া সংবাদকে বলেন, আরও আগে কর্তৃপক্ষ সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত প্রদান করলে শ্রমিকদের এই দুঃখ-কষ্ট কিছুটা লাঘব হতো। তারপরও সরকারের এই ঘোষণাকে ইতিবাচক বলে আখ্যা দিয়ে শ্রমিকদেরকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরকারি ঘোষণার আলোকে যাত্রীবাহী নৌযান (লঞ্চ) সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করে যাত্রী সাধারণের সেবা প্রদান করার আহ্বান জানান তিনি।

এর আগে করনো মহামারী বিস্তারের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে গত ৫ এপ্রিল থেকে দেশে জরুরি কাজ ছাড়া ঘরের বাইরে বের হওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। এই বিধিনিষেধের মধ্যে জরুরি সেবা দেয়া প্রতিষ্ঠান ছাড়া সরকারি-বেসরকারি অফিস আগের মতোই বন্ধ আছে। তবে উৎপাদনমুখী শিল্প কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ চালানোর অনুমতি রয়েছে। বিধিনিষেধের কারণে ৪৯ দিন যাবত বন্ধ ছিল আন্তঃজেলা বাস, ট্রেন ও লঞ্চ সার্ভিস।

এর আগে বিধিনিষেধ শিথিল করে দোকানপাট ও শপিংমল সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা রাখার অনুমতি দেয়া হয়েছিল। এখনও সেই নিয়মই বহাল রয়েছে।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে আন্তঃনগর ট্রেন

আজ থেকে অর্ধেক আসনে যাত্রী নিয়ে চলাচল করবে ট্রেন সার্ভিস। তবে প্রাথমিবভাবে সারাদেশে ২৮ জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন, ৯টি মেইল এক্সপ্রেস ও কমিউটার ট্রেন চলাচল করবে। করেনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গত ৫ এপ্রিল হতে রেলওয়ে সব ধরনের যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। তবে অবশ্যই যাত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে মাস্ক পরিধানসহ সব স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। আন্তঃনগর ট্রেনসমূহের টিকেট শুধুমাত্র অনলাইনে কাটা যাবে। কাউন্টারে টিকিট বিক্রয় করা হবে না বলে রেলওয়ে সূত্র জানায়। এ বিষয়ে রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন সাংবাদিকদের বলেন, ‘সোমবার থেকে সারাদেশে ২৮ জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন, ৯টি মেইল এক্সপ্রেস ও কমিউটার ট্রেন চলাচল শুরু হবে। এসব ট্রেনের অর্ধেক আসন ফাঁকা রাখা হবে এবং সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।’

রেলওয়ে সূত্র জানায়, যেসব ট্রেন চলাচল করবে সেগুলো হলো আন্তঃনগর ট্রেনসমূহ : সুবর্ণ এক্সপ্রেস, মহানগর গোধূলি/তূর্ণা, মহানগর প্রভাতী/তূর্ণা, তিস্তা এক্সপ্রেস, যমুনা এক্সপ্রেস, কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস, উপকূল এক্সপ্রেস, পারাবত এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা/উপবন এক্সপ্রেস, মেঘনা এক্সপ্রেস, বিজয় এক্সপ্রেস, পাহাড়িকা/উদয়ন এক্সপ্রেস, একতা এক্সপ্রেস, দ্রুতযান এক্সপ্রেস, বনলতা এক্সপ্রেস, পদ্মা এক্সপ্রেস, সুন্দরবন এক্সপ্রেস, চিত্রা এক্সপ্রেস, রংপুর এক্সপ্রেস, লালমনি এক্সপ্রেস, নীলসাগর এক্সপ্রেস, রূপসা এক্সপ্রেস, মধূমতি এক্সপ্রেস, তিতুমীর এক্সপ্রেস, সাগরদাড়ী এক্সপ্রেস, ঢালারচর এক্সপ্রেস, টুঙ্গীপাড়া এক্সপ্রেস। ৯ জোড়া মেইল ও কমিউটার ট্রেন হলো কর্ণফুলী কমিউটার, সাগরিকা কমিউটার, বলাকা কমিউটার, জামালপুর কমিউটার, ঢাকা কমিউটার, রকেট মেইল, মহানন্দা এক্সপ্রেস, পদ্মরাগ কমিউটার, উত্তরা এক্সপ্রেস। রেলওয়ের ৩৬২টি ট্রেনের মধ্যে স্বাভাবিক সময়ে ১০২টি আন্তঃনগর ট্রেন এবং ২৬০টি লোকাল, কমিউটার ট্রেন ও মালবাহী ট্রেন চলাচল করে বলে রেলওয়ে সূত্র জানায়।

অর্ধেক যাত্রী নিয়ে বর্ধিত ভাড়ায় চলবে লঞ্চ

স্বাস্থ্যবিধি মেনে আজ থেকে চলাচল করবে সব ধরনের যাত্রীবাহী নৌযান। লঞ্চের ডেকের যাত্রীর ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ বর্ধিত ভাড়া দিতে হবে। সদরঘাট থেকে প্রতিদিন দেড় শতাধিক লঞ্চ বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় ছেড়ে যায়। ভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি রোধে গত ৫ এপ্রিল সরকার লকডাউনের বিধিনিষেধ আরোপ করলে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ ছিল বলে বিআইডব্লিউটিএ’র সূত্র জানায়।

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, ‘সোমবার থেকে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করবে। তবে ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিতে হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। এই নিয়ম না মানলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’