নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’-এ রূপ নিচ্ছে

উপকূল অঞ্চলে আশ্রয়কেন্দ্র ও ত্রাণ শিবিরগুলো প্রস্তুত

পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি ঘণীভূত হয়ে নিম্নচাপে রূপ নিয়েছে। এরপর এটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে ঘূণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। নিম্নচাপটি গতকাল রাত পর্যন্ত চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৭০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭১০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে ২৬ মে সন্ধ্যায় ভারতের উড়িষ্যা, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের খুলনা উপকূলে আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই নিম্নচাপের প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এছাড়া উত্তর বঙ্গোসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতা বিষয়ে গতকাল গণভবন থেকে ভার্চুয়াল এক অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমি সতর্ক করছি, আরেকটা ঘূর্ণিঝড় কিন্তু আসছে। সেটা কেবল তৈরি হচ্ছে, কতদূর যাবে এখন আধুনিক প্রযুক্তির কারণে আমরা অনেক আগে থেকে জানতে পারি। সেই বিষয়ে যথেষ্ট সতর্কতা আমরা নিতে শুরু করেছি। যে কোন দুর্যোগ মোকাবিলায় সবাই সতর্ক থাকবেন, সচেতন থাকবেন।’

ঘূর্ণিঝড় বিষয়ে আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান সংবাদকে বলেন, রোববার বেলা ১২টার দিকে সুস্পষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হয়। বিকেলে দিকেও সেটি একই এলাকায় অবস্থান করছে। নিম্নচাপটি আরও ঘণীভূত হয়ে আজ ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিতে পারে, তখন এর নাম হবে ‘ইয়াস’। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে গভীর নিম্নচাপে এবং পরে ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিয়ে উত্তর পশ্চিমে অগ্রসর হতে পারে। বর্তমান গতিধারা অব্যাহত থাকলে ঘূর্ণিঝড়টি বুধবার নাগাদ ভারতের উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের খুলনা উপকূলে আঘাত হানতে পারে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ এখন ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৫০ কিলোকিমটার পর্যন্ত বাড়ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের কাছে সাগর উত্তাল রয়েছে।

আসন্ন ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ মোকাবিলার নির্দেশনা দিয়ে গতকাল অনলাইনে এক জরুরি সভা করেছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। অনলাইনে যুক্ত হয়ে দুর্যোগ মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতির আহ্বান জানিয়ে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক বলেন, ‘বন্যা, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা আমাদের জন্য নতুন নয়। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বাঁধ মনিটরিংসহ জরুরি কাজের জন্য পর্যাপ্ত জিও ব্যাগ প্রস্তুত রয়েছে। সেই সঙ্গে প্রকৌশলীদের কাছে আক্রান্তদের জন্য মাস্ক, স্যালাইনের ব্যবস্থা রাখা হবে।’

ঘূর্ণিঝড়ের আগে দেশের সব বিভাগে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। টানা কয়েক দিন ধরে অহসনীয় গরমে অস্বস্তিকর অবস্থা জনজীবনে। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা খুলনায় ৩৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের সব বিভাগে টানা তাপপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রাতে ঢাকা, চটগ্রাম বরিশাল খুলনাসহ অনেক জায়গায় বৃষ্টির সম্ভবনা রয়েছে। বৃষ্টিপাত হলে মঙ্গলবার থেকে ধীরে ধীরে তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং খুলনা, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, উত্তর আন্দামান সাগরে তৈরি হচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’। তবে এটি স্থলভাগে আঘাত করার আগে দেশজুড়ে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। কোথাও কোথাও ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনাও রয়েছে। বিশেষ করে খুলনা বিভাগে হতে পারে তুমুল বৃষ্টি। আর সেটি শুরু হবে কাল থেকেই।

আবহাওয়া অধিদপ্তর এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি একই এলাকায় ঘণীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। এটি পরবর্তীতে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে, যা ২৬ মে নাগাদ ভারতের উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের খুলনা উপকূলে পৌঁছতে পারে। যার ফলে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এ ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।

প্রতিনিধি সাতক্ষীরা জানায়, সাতক্ষীরায় ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ মোকাবিলায় প্রস্তুতি চলছে। উপকূলীয় এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্রগুলো ব্যবহার উপযোগী করা হচ্ছে। মেডিকেল টিম প্রস্তুত করা হচ্ছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বেচ্ছাসেবকদের দল গঠন করা হচ্ছে। তবে জলোচ্ছ্বাসের প্রভাবে ভঙ্গুর বেড়িবাঁধ ভাঙনের আতঙ্কে রয়েছেন উপকূলবাসী। এদিকে বিকেল থেকে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি পড়তে দেখা গেছে।

গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জিএম মাসুদ হোসেন জানান, তার ইউনিয়নে যে ১৫টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে, তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। তবে ইউনিয়নে আশ্রয়কেন্দ্রের সংকট রয়েছে। ৪০ হাজার জনসংখ্যার জন্য ন্যূনতম ৪০টি আশ্রয়কেন্দ্র দরকার। দীর্ঘদিন এই সমস্যা থাকলেও তার সমাধান নেই বলে অভিযোগ করেন তিনি।

আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন, তার ইউনিয়নে মাত্র ২টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। এই বিপুল জনগোষ্ঠীর চাপ মোকাবিলায় যা একেবারে নগন্য।

তবে এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল বলেন, উপকূলীয় এলাকায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে ১৪৫টি। তাদের সবাইকে আশ্রয়কেন্দ্রে সংকুলান সম্ভব নয় বিধায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থাকার ব্যবস্থা করা হয়।

তিনি আরও জানান, জেলায় ১৮৩ টন খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে। যা দিয়ে দুর্যোগকালে মানুষকে খাদ্য সহায়তা দেয়া যাবে। এছাড়া নগদ টাকা এসেছে ২ কোটি ১৫ লাখ। জেলার ২২ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত করা হচ্ছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।

পটুয়াখালী : পটুয়াখালীতে ২টি মুজিব কিল্লা, ১৩টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ও ২টি ত্রাণ গুদামের শুভ উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সকাল ১০টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি এসব স্থাপনার উদ্বোধন করেন। এসব স্থাপনার মধ্যে কলাপাড়া উপজেলার নেওয়াপাড়ায় ও পূর্ব টিয়াখালীতে ২টি মুজিব কিল্লা রয়েছে। এছাড়া পটুয়াখালী জেলায় ৭টি স্থানে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রসহ ২টি ত্রাণ গুদাম কাম দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্য কেন্দ্র তিনি উদ্বোধন করেন।

রোববার সকাল ১০টায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় আয়োজিত নবনির্মিত পটুয়াখালী ত্রাণ গুদাম কাম দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্যকেন্দ্রে এক সভায় পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী জানান, ওই প্রকল্পের আওতায় জেলায় বিদ্যমান ৫২টি মুজিব কিল্লার মধ্যে ২৬টির সংস্কার ও উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। যার মধ্যে ২টি কিল্লার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। যার মধ্যে ১০টি মুজিব কিল্লার ভিত্তিপ্রস্তর ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।

বরিশাল : পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত নিম্নচাপের সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবিলায় সমগ্র উপকূলজুড়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন। উপকূলের ১৩টি জেলার ৪১টি উপজেলায় রেড ক্রিসেন্টের ‘ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি-সিপিপি’র প্রায় ৭৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

সম্ভব স্বল্পতম সময়ে উপকূলের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষকে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রসহ নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনতে এসব স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছে বলে সিপিপির দায়িত্বশীল সূত্রে বলা হয়েছে। এছাড়া আবহাওয়া বিভাগের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী সরকারি নির্দেশনার আলোকে দ্রুততম সময়ে উপকূলে ঝড়ের সতর্কতা পৌঁছে দিতেও প্রস্তত রয়েছে স্বেচ্ছাসেবকরা। গত বছর ২১ মে ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’ বরিশালসহ দক্ষিণ উপকূলে প্রবল বর্ষণ আর জলোচ্ছ্বাস আঘাত হেনেছিল। তার ঠিক ৬ মাস আগে ২০১৯ সালের নভেম্বর আরেক ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ একইভাবে দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত হানে।

এদিকে বরিশালসহ দক্ষিণ উপকূলের সবগুলো জেলা প্রশাসন ইতোমধ্যে যে কোন দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু করেছে। বিদ্যুৎ, টেলিফোনসহ অত্যাবশ্যকীয় সেবা খাতগুলো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখার নির্র্দেশনা প্রদান করা হয়েছে প্রশাসন থেকে।

কলকাতা প্রতিনিধি জানায়, আম্ফান আছড়ে পড়ার বর্ষপূর্তি হয়েছে তিনদিন আগেই। আর ঠিক তিনদিন পরই ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আছড়ে পড়ার প্রবল সম্ভাবনায় রাজ্যবাসী আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া এই নিম্নচাপটি আরও গভীর হয়ে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে পরিণত হতে চলেছে। আলিপুর হাওয়া অফিস জানিয়েছে, গতি ভেদে দেখা যাচ্ছে ইয়াস সিভিয়ার সইক্লোনের রূপ নিয়ে বাংলা-ওড়িষ্যা উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। ‘ইয়াস’ বাংলার ওপরই আছড়ে পড়বে না বাংলার পাশ দিয়ে ওড়িষ্যার দিকে চলে যাবে, তা নিয়েই চর্চা চালাচ্ছেন আবহবিদরা।

তবে একটা বাঁকেই লুকিয়ে রয়েছে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’-র গতিবিধি। যদিও কোন উপকূলে আছড়ে পড়বে তারপর কোন দিকে অভিমুখ হবে, তা এখনও সুস্পষ্ট করতে পারেনি আলিপুর আবহাওয়া অফিস। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, গতিপথের একটা বাঁকই নিশ্চিত করে দেবে বাংলার ভবিষ্যৎ। তারা আরও জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের ল্যান্ডফল এমনই মোক্ষম সময়ে হবে তা আচমকা মারাত্মক রূপ নিতে পারে। এখন চলছে পূর্ণিমার ভরা কাটাল। আর এই ভড়া কাটালেই ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ার কথা। তখন সমুদ্র-নদী টইটম্বুর থাকবে। ফলে যে পরিমাণ জলোচ্ছ্বাস হবে, তাতে প্লাবিত হতে পারে উপকূলবর্তী ব্যাপক এলাকা।

আশঙ্কা আরও বাড়লো। গত শনিবার বঙ্গোপসাগরে যে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে ইতোমধ্যে তা শক্তি বাড়াতে শুরু করেছে, অচিরেই সেটি গভীর থেকে অতি গভীর নিম্নচাপ এবং তারপর ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হবে ‘ইয়াস’। গত শনিবার পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ তৈরি হয়। রোববার সকালে সেটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। দিঘা থেকে দক্ষিণ-দক্ষিণ পূর্বে ৬৭০ কিমি দূরে অবস্থান করছে এই ঝড়। ২৫ মে অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে ইয়াস।

বুধবার সন্ধ্যাবেলা পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আছড়ে পড়বে ‘ইয়াস’। মঙ্গলবার ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা। মঙ্গলবার সন্ধ্যাবেলা ৫০-৬০ কিমি প্রতি ঘণ্টা বেগে বইবে ঝোড়ো হাওয়া। বুধবার সন্ধ্যায় ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ হবে ১৫৫-১৬৫ কিমি প্রতি ঘণ্টা। কোন কোন ক্ষেত্রে তা বৃদ্ধি পেয়ে পারাদ্বীপ ও সাগরের মধ্যবর্তী এলাকায় আছড়ে পড়বে। আর এই আছড়ে পড়া মানেই ইয়াস বাংলার ওপর দিয়েই আঘাত হানার আশঙ্কা করছেন দিল্লির আবাহাওয়া বিষেষজ্ঞ ড. মহাপাত্র। আগামী ২৬ মে দুপুরের পর পূর্ব মেদিনীপুরের দিঘা-শঙ্করপুর উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’, এমনটাই মনে করছে আবহবিদরা। স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করলে বোঝা যাবে, যে কিছুটা অভিমুখ পরিবর্তন করেছে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’।

সোমবার, ২৪ মে ২০২১ , ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১১ শাওয়াল ১৪৪২

নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’-এ রূপ নিচ্ছে

উপকূল অঞ্চলে আশ্রয়কেন্দ্র ও ত্রাণ শিবিরগুলো প্রস্তুত

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি ঘণীভূত হয়ে নিম্নচাপে রূপ নিয়েছে। এরপর এটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে ঘূণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। নিম্নচাপটি গতকাল রাত পর্যন্ত চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৭০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭১০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে ২৬ মে সন্ধ্যায় ভারতের উড়িষ্যা, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের খুলনা উপকূলে আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই নিম্নচাপের প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এছাড়া উত্তর বঙ্গোসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতা বিষয়ে গতকাল গণভবন থেকে ভার্চুয়াল এক অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমি সতর্ক করছি, আরেকটা ঘূর্ণিঝড় কিন্তু আসছে। সেটা কেবল তৈরি হচ্ছে, কতদূর যাবে এখন আধুনিক প্রযুক্তির কারণে আমরা অনেক আগে থেকে জানতে পারি। সেই বিষয়ে যথেষ্ট সতর্কতা আমরা নিতে শুরু করেছি। যে কোন দুর্যোগ মোকাবিলায় সবাই সতর্ক থাকবেন, সচেতন থাকবেন।’

ঘূর্ণিঝড় বিষয়ে আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান সংবাদকে বলেন, রোববার বেলা ১২টার দিকে সুস্পষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হয়। বিকেলে দিকেও সেটি একই এলাকায় অবস্থান করছে। নিম্নচাপটি আরও ঘণীভূত হয়ে আজ ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিতে পারে, তখন এর নাম হবে ‘ইয়াস’। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে গভীর নিম্নচাপে এবং পরে ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিয়ে উত্তর পশ্চিমে অগ্রসর হতে পারে। বর্তমান গতিধারা অব্যাহত থাকলে ঘূর্ণিঝড়টি বুধবার নাগাদ ভারতের উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের খুলনা উপকূলে আঘাত হানতে পারে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ এখন ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৫০ কিলোকিমটার পর্যন্ত বাড়ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের কাছে সাগর উত্তাল রয়েছে।

আসন্ন ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ মোকাবিলার নির্দেশনা দিয়ে গতকাল অনলাইনে এক জরুরি সভা করেছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। অনলাইনে যুক্ত হয়ে দুর্যোগ মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতির আহ্বান জানিয়ে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক বলেন, ‘বন্যা, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা আমাদের জন্য নতুন নয়। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বাঁধ মনিটরিংসহ জরুরি কাজের জন্য পর্যাপ্ত জিও ব্যাগ প্রস্তুত রয়েছে। সেই সঙ্গে প্রকৌশলীদের কাছে আক্রান্তদের জন্য মাস্ক, স্যালাইনের ব্যবস্থা রাখা হবে।’

ঘূর্ণিঝড়ের আগে দেশের সব বিভাগে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। টানা কয়েক দিন ধরে অহসনীয় গরমে অস্বস্তিকর অবস্থা জনজীবনে। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা খুলনায় ৩৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের সব বিভাগে টানা তাপপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রাতে ঢাকা, চটগ্রাম বরিশাল খুলনাসহ অনেক জায়গায় বৃষ্টির সম্ভবনা রয়েছে। বৃষ্টিপাত হলে মঙ্গলবার থেকে ধীরে ধীরে তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং খুলনা, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, উত্তর আন্দামান সাগরে তৈরি হচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’। তবে এটি স্থলভাগে আঘাত করার আগে দেশজুড়ে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। কোথাও কোথাও ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনাও রয়েছে। বিশেষ করে খুলনা বিভাগে হতে পারে তুমুল বৃষ্টি। আর সেটি শুরু হবে কাল থেকেই।

আবহাওয়া অধিদপ্তর এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি একই এলাকায় ঘণীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। এটি পরবর্তীতে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে, যা ২৬ মে নাগাদ ভারতের উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের খুলনা উপকূলে পৌঁছতে পারে। যার ফলে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এ ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।

প্রতিনিধি সাতক্ষীরা জানায়, সাতক্ষীরায় ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ মোকাবিলায় প্রস্তুতি চলছে। উপকূলীয় এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্রগুলো ব্যবহার উপযোগী করা হচ্ছে। মেডিকেল টিম প্রস্তুত করা হচ্ছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বেচ্ছাসেবকদের দল গঠন করা হচ্ছে। তবে জলোচ্ছ্বাসের প্রভাবে ভঙ্গুর বেড়িবাঁধ ভাঙনের আতঙ্কে রয়েছেন উপকূলবাসী। এদিকে বিকেল থেকে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি পড়তে দেখা গেছে।

গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জিএম মাসুদ হোসেন জানান, তার ইউনিয়নে যে ১৫টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে, তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। তবে ইউনিয়নে আশ্রয়কেন্দ্রের সংকট রয়েছে। ৪০ হাজার জনসংখ্যার জন্য ন্যূনতম ৪০টি আশ্রয়কেন্দ্র দরকার। দীর্ঘদিন এই সমস্যা থাকলেও তার সমাধান নেই বলে অভিযোগ করেন তিনি।

আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন, তার ইউনিয়নে মাত্র ২টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। এই বিপুল জনগোষ্ঠীর চাপ মোকাবিলায় যা একেবারে নগন্য।

তবে এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল বলেন, উপকূলীয় এলাকায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে ১৪৫টি। তাদের সবাইকে আশ্রয়কেন্দ্রে সংকুলান সম্ভব নয় বিধায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থাকার ব্যবস্থা করা হয়।

তিনি আরও জানান, জেলায় ১৮৩ টন খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে। যা দিয়ে দুর্যোগকালে মানুষকে খাদ্য সহায়তা দেয়া যাবে। এছাড়া নগদ টাকা এসেছে ২ কোটি ১৫ লাখ। জেলার ২২ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত করা হচ্ছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।

পটুয়াখালী : পটুয়াখালীতে ২টি মুজিব কিল্লা, ১৩টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ও ২টি ত্রাণ গুদামের শুভ উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সকাল ১০টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি এসব স্থাপনার উদ্বোধন করেন। এসব স্থাপনার মধ্যে কলাপাড়া উপজেলার নেওয়াপাড়ায় ও পূর্ব টিয়াখালীতে ২টি মুজিব কিল্লা রয়েছে। এছাড়া পটুয়াখালী জেলায় ৭টি স্থানে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রসহ ২টি ত্রাণ গুদাম কাম দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্য কেন্দ্র তিনি উদ্বোধন করেন।

রোববার সকাল ১০টায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় আয়োজিত নবনির্মিত পটুয়াখালী ত্রাণ গুদাম কাম দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্যকেন্দ্রে এক সভায় পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী জানান, ওই প্রকল্পের আওতায় জেলায় বিদ্যমান ৫২টি মুজিব কিল্লার মধ্যে ২৬টির সংস্কার ও উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। যার মধ্যে ২টি কিল্লার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। যার মধ্যে ১০টি মুজিব কিল্লার ভিত্তিপ্রস্তর ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।

বরিশাল : পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত নিম্নচাপের সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবিলায় সমগ্র উপকূলজুড়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন। উপকূলের ১৩টি জেলার ৪১টি উপজেলায় রেড ক্রিসেন্টের ‘ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি-সিপিপি’র প্রায় ৭৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

সম্ভব স্বল্পতম সময়ে উপকূলের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষকে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রসহ নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনতে এসব স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছে বলে সিপিপির দায়িত্বশীল সূত্রে বলা হয়েছে। এছাড়া আবহাওয়া বিভাগের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী সরকারি নির্দেশনার আলোকে দ্রুততম সময়ে উপকূলে ঝড়ের সতর্কতা পৌঁছে দিতেও প্রস্তত রয়েছে স্বেচ্ছাসেবকরা। গত বছর ২১ মে ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’ বরিশালসহ দক্ষিণ উপকূলে প্রবল বর্ষণ আর জলোচ্ছ্বাস আঘাত হেনেছিল। তার ঠিক ৬ মাস আগে ২০১৯ সালের নভেম্বর আরেক ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ একইভাবে দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত হানে।

এদিকে বরিশালসহ দক্ষিণ উপকূলের সবগুলো জেলা প্রশাসন ইতোমধ্যে যে কোন দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু করেছে। বিদ্যুৎ, টেলিফোনসহ অত্যাবশ্যকীয় সেবা খাতগুলো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখার নির্র্দেশনা প্রদান করা হয়েছে প্রশাসন থেকে।

কলকাতা প্রতিনিধি জানায়, আম্ফান আছড়ে পড়ার বর্ষপূর্তি হয়েছে তিনদিন আগেই। আর ঠিক তিনদিন পরই ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আছড়ে পড়ার প্রবল সম্ভাবনায় রাজ্যবাসী আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া এই নিম্নচাপটি আরও গভীর হয়ে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে পরিণত হতে চলেছে। আলিপুর হাওয়া অফিস জানিয়েছে, গতি ভেদে দেখা যাচ্ছে ইয়াস সিভিয়ার সইক্লোনের রূপ নিয়ে বাংলা-ওড়িষ্যা উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। ‘ইয়াস’ বাংলার ওপরই আছড়ে পড়বে না বাংলার পাশ দিয়ে ওড়িষ্যার দিকে চলে যাবে, তা নিয়েই চর্চা চালাচ্ছেন আবহবিদরা।

তবে একটা বাঁকেই লুকিয়ে রয়েছে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’-র গতিবিধি। যদিও কোন উপকূলে আছড়ে পড়বে তারপর কোন দিকে অভিমুখ হবে, তা এখনও সুস্পষ্ট করতে পারেনি আলিপুর আবহাওয়া অফিস। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, গতিপথের একটা বাঁকই নিশ্চিত করে দেবে বাংলার ভবিষ্যৎ। তারা আরও জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের ল্যান্ডফল এমনই মোক্ষম সময়ে হবে তা আচমকা মারাত্মক রূপ নিতে পারে। এখন চলছে পূর্ণিমার ভরা কাটাল। আর এই ভড়া কাটালেই ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ার কথা। তখন সমুদ্র-নদী টইটম্বুর থাকবে। ফলে যে পরিমাণ জলোচ্ছ্বাস হবে, তাতে প্লাবিত হতে পারে উপকূলবর্তী ব্যাপক এলাকা।

আশঙ্কা আরও বাড়লো। গত শনিবার বঙ্গোপসাগরে যে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে ইতোমধ্যে তা শক্তি বাড়াতে শুরু করেছে, অচিরেই সেটি গভীর থেকে অতি গভীর নিম্নচাপ এবং তারপর ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হবে ‘ইয়াস’। গত শনিবার পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ তৈরি হয়। রোববার সকালে সেটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। দিঘা থেকে দক্ষিণ-দক্ষিণ পূর্বে ৬৭০ কিমি দূরে অবস্থান করছে এই ঝড়। ২৫ মে অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে ইয়াস।

বুধবার সন্ধ্যাবেলা পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আছড়ে পড়বে ‘ইয়াস’। মঙ্গলবার ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা। মঙ্গলবার সন্ধ্যাবেলা ৫০-৬০ কিমি প্রতি ঘণ্টা বেগে বইবে ঝোড়ো হাওয়া। বুধবার সন্ধ্যায় ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ হবে ১৫৫-১৬৫ কিমি প্রতি ঘণ্টা। কোন কোন ক্ষেত্রে তা বৃদ্ধি পেয়ে পারাদ্বীপ ও সাগরের মধ্যবর্তী এলাকায় আছড়ে পড়বে। আর এই আছড়ে পড়া মানেই ইয়াস বাংলার ওপর দিয়েই আঘাত হানার আশঙ্কা করছেন দিল্লির আবাহাওয়া বিষেষজ্ঞ ড. মহাপাত্র। আগামী ২৬ মে দুপুরের পর পূর্ব মেদিনীপুরের দিঘা-শঙ্করপুর উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’, এমনটাই মনে করছে আবহবিদরা। স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করলে বোঝা যাবে, যে কিছুটা অভিমুখ পরিবর্তন করেছে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’।