পল্লবী হত্যার আরেক আসামি কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত

পল্লবীতে ৭ বছরের ছেলের সামনে বাবা সাহিনুদ্দীনকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মনির নামে আরেক আসামি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে। পুলিশের ভাষ্য, গত শনিবার দুপুর সোয়া ২টার দিকে মনিরকে নিয়ে ‘অভিযানে যাওয়ার পর এ বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা ঘটে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর মিরপুরে র?্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মো. মানিক (৩২) নিহত হয়। সাহিনুদ্দীন হত্যা মামলার আসামি মনির এবং মানিক। এরা দুজনই সাবেক এমপি এমএ আউয়ালের ভাড়াটে খুনি ছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে।

একটি ভিডিওতে তাকে দেখা যায়, সাহিনুদ্দীনকে নৃশংসভাবে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে খুন করতে। পল্লবীর সাগুফতা হাউজিং এলাকায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যাওয়া মনির ‘২৩ সেকেন্ডে ৩০টি কোপ’ দিয়ে সাহিনুদ্দীনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছিল বলে বলছে পুলিশ। সে পল্লবী এলাকার যুবলীগ নেতা আলী আড্ডু বাহিনীর সদস্য বলে পরিচিত।

এ হত্যাকা-ের ঘটনায় গতকাল আরও ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ ডিবি। ডিবির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) আহসান খানের নেতৃত্বে ডিবির একটি দল অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো টিটু, ইকবাল ও শরিফ। গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৪ দিনের রিমান্ড হেফাজতের আদেশ দিয়েছে আদালত। এ নিয়ে এই হত্যা মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য এম এ আওয়ালসহ ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি ও র?্যাব। সবাইকে বর্তমানে ডিবি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

উপ-কমিশনার আসহান খান তার কার্যালয়ে সংবাদকে বলেন, ‘গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ইয়াবা সেবন’ করার সময় সাহিনুদ্দীন হত্যা মামলার অন্যতম আসামি মনিরকে মিরপুর ১২ নম্বর সেক্টরের একটি গার্মেন্টসের পেছনে মাঠ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। সাহিনুদ্দীনকে হত্যার পর মনির লক্ষ্মীপুরে পালিয়ে যায়। সেখানে দু’দিন থাকার পর আবার ঢাকায় ফিরে আসে। বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপনের পর শনিবার গ্রেপ্তার হয়। পরে রাতে তাকে নিয়ে অভিযানে যায় ডিবির একটি টিম। তিনি দাবি করছেন, ডিবির কাছে তথ্য ছিল এ হত্যায় সংশ্লিষ্ট অন্য আসামিরা কোন একটি জায়গায় আত্মগোপনে আছে। ‘পরে ডিবি সেখানে অভিযানে গেলে সেখানে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে পুলিশের গোলাগুলি হয়। গোলাগুলির মধ্যে মনির গুলিবিদ্ধ হয়। পরে হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন,’ বলেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।

আহসান খান বলেন, নিহত মনির পল্লবী এলাকায় ভাড়াটে খুনি হিসেবে পরিচিত। ‘সে স্থানীয় সন্ত্রাসী আলী আড্ডুর গ্রুপের সদস্য হিসেবে ভাড়ায় খুন করত। হত্যাকা- ঘটানো ছাড়াও ডাকাতি, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, জমি দখল, বাড়ি দখলসহ হেন অপরাধ নেই যে মনির করেনি। মনিরের বিরুদ্ধে ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগে একাধিক মামলা আছে,’ জানান তিনি।

ডিবির তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, মনিরের পৈতৃক বাড়ি ভোলাতে। পরিবারের সঙ্গে খুব ছোট বেলা থেকেই সে পল্লবী এলাকায় বেড়ে উঠেছে। ডিবি ভাষ্য, গত শনিবার গ্রেপ্তার হওয়ার পর মনির জানিয়েছে, সাহিনুদ্দীন হত্যায় সে ভাড়াটিয়া খুনি হিসেবে কাজ করেছে। সে স্থানীয় যুবলীগ নেতা মুগড়িয়া আড্ডু ওরফে আলী আড্ডুর হয়ে কাজ করত। আড্ডুর বাহিনীতে তার মতো আরও প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ সদস্য আছে। যারা আড্ডুর হয়ে এলাকা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। তবে পুলিশ বলছে সাহিনুদ্দনীকে হত্যার জন্য মনিরকে ভাড়া করেছিল ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সুমন ব্যাপারী, যে এই হত্যাকা-ের নেতৃত্ব দিয়েছে। সুমন ব্যাপারী পল্লবী এলাকায় একটি গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করে। সেই সুবাদে আড্ডুর সঙ্গে তার সখ্য আছে। সেখানে আড্ডু এবং সুমনের বাহিনী ছাড়াও একাধিক বাহিনী রয়েছে। আর এই বাহিনীগুলো সাহিনুদ্দীন হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী সাবেক এমপি এম এ আওয়ালের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে বলেও বলছে পুলিশ।

গত ১৬ মে পল্লবীতে ১২ নম্বর সেকশনে লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক এমপি ও ত্বরিকত ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব এম এ আওয়ালের হ্যাভেলি প্রোপার্টিজের জন্য ১০ একর জমি দখলের জেরে সাহিনুদ্দীনকে তার ৭ বছরের ছেলের সামনে কুপিয়ে খুন করা হয়। দিনের বেলায় প্রকাশ্যে এ হত্যাকা-ের ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। আনুমানিক পাঁচ কোটি টাকা মূল্যের ১০ একর জমি জবর-দখলে বাধা দেয়ায় তাকে খুন করা হয়

সোমবার, ২৪ মে ২০২১ , ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১১ শাওয়াল ১৪৪২

পল্লবী হত্যার আরেক আসামি কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

পল্লবীতে ৭ বছরের ছেলের সামনে বাবা সাহিনুদ্দীনকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মনির নামে আরেক আসামি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে। পুলিশের ভাষ্য, গত শনিবার দুপুর সোয়া ২টার দিকে মনিরকে নিয়ে ‘অভিযানে যাওয়ার পর এ বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা ঘটে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর মিরপুরে র?্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মো. মানিক (৩২) নিহত হয়। সাহিনুদ্দীন হত্যা মামলার আসামি মনির এবং মানিক। এরা দুজনই সাবেক এমপি এমএ আউয়ালের ভাড়াটে খুনি ছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে।

একটি ভিডিওতে তাকে দেখা যায়, সাহিনুদ্দীনকে নৃশংসভাবে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে খুন করতে। পল্লবীর সাগুফতা হাউজিং এলাকায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যাওয়া মনির ‘২৩ সেকেন্ডে ৩০টি কোপ’ দিয়ে সাহিনুদ্দীনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছিল বলে বলছে পুলিশ। সে পল্লবী এলাকার যুবলীগ নেতা আলী আড্ডু বাহিনীর সদস্য বলে পরিচিত।

এ হত্যাকা-ের ঘটনায় গতকাল আরও ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ ডিবি। ডিবির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) আহসান খানের নেতৃত্বে ডিবির একটি দল অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো টিটু, ইকবাল ও শরিফ। গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৪ দিনের রিমান্ড হেফাজতের আদেশ দিয়েছে আদালত। এ নিয়ে এই হত্যা মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য এম এ আওয়ালসহ ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি ও র?্যাব। সবাইকে বর্তমানে ডিবি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

উপ-কমিশনার আসহান খান তার কার্যালয়ে সংবাদকে বলেন, ‘গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ইয়াবা সেবন’ করার সময় সাহিনুদ্দীন হত্যা মামলার অন্যতম আসামি মনিরকে মিরপুর ১২ নম্বর সেক্টরের একটি গার্মেন্টসের পেছনে মাঠ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। সাহিনুদ্দীনকে হত্যার পর মনির লক্ষ্মীপুরে পালিয়ে যায়। সেখানে দু’দিন থাকার পর আবার ঢাকায় ফিরে আসে। বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপনের পর শনিবার গ্রেপ্তার হয়। পরে রাতে তাকে নিয়ে অভিযানে যায় ডিবির একটি টিম। তিনি দাবি করছেন, ডিবির কাছে তথ্য ছিল এ হত্যায় সংশ্লিষ্ট অন্য আসামিরা কোন একটি জায়গায় আত্মগোপনে আছে। ‘পরে ডিবি সেখানে অভিযানে গেলে সেখানে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে পুলিশের গোলাগুলি হয়। গোলাগুলির মধ্যে মনির গুলিবিদ্ধ হয়। পরে হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন,’ বলেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।

আহসান খান বলেন, নিহত মনির পল্লবী এলাকায় ভাড়াটে খুনি হিসেবে পরিচিত। ‘সে স্থানীয় সন্ত্রাসী আলী আড্ডুর গ্রুপের সদস্য হিসেবে ভাড়ায় খুন করত। হত্যাকা- ঘটানো ছাড়াও ডাকাতি, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, জমি দখল, বাড়ি দখলসহ হেন অপরাধ নেই যে মনির করেনি। মনিরের বিরুদ্ধে ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগে একাধিক মামলা আছে,’ জানান তিনি।

ডিবির তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, মনিরের পৈতৃক বাড়ি ভোলাতে। পরিবারের সঙ্গে খুব ছোট বেলা থেকেই সে পল্লবী এলাকায় বেড়ে উঠেছে। ডিবি ভাষ্য, গত শনিবার গ্রেপ্তার হওয়ার পর মনির জানিয়েছে, সাহিনুদ্দীন হত্যায় সে ভাড়াটিয়া খুনি হিসেবে কাজ করেছে। সে স্থানীয় যুবলীগ নেতা মুগড়িয়া আড্ডু ওরফে আলী আড্ডুর হয়ে কাজ করত। আড্ডুর বাহিনীতে তার মতো আরও প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ সদস্য আছে। যারা আড্ডুর হয়ে এলাকা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। তবে পুলিশ বলছে সাহিনুদ্দনীকে হত্যার জন্য মনিরকে ভাড়া করেছিল ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সুমন ব্যাপারী, যে এই হত্যাকা-ের নেতৃত্ব দিয়েছে। সুমন ব্যাপারী পল্লবী এলাকায় একটি গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করে। সেই সুবাদে আড্ডুর সঙ্গে তার সখ্য আছে। সেখানে আড্ডু এবং সুমনের বাহিনী ছাড়াও একাধিক বাহিনী রয়েছে। আর এই বাহিনীগুলো সাহিনুদ্দীন হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী সাবেক এমপি এম এ আওয়ালের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে বলেও বলছে পুলিশ।

গত ১৬ মে পল্লবীতে ১২ নম্বর সেকশনে লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক এমপি ও ত্বরিকত ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব এম এ আওয়ালের হ্যাভেলি প্রোপার্টিজের জন্য ১০ একর জমি দখলের জেরে সাহিনুদ্দীনকে তার ৭ বছরের ছেলের সামনে কুপিয়ে খুন করা হয়। দিনের বেলায় প্রকাশ্যে এ হত্যাকা-ের ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। আনুমানিক পাঁচ কোটি টাকা মূল্যের ১০ একর জমি জবর-দখলে বাধা দেয়ায় তাকে খুন করা হয়