যোগাযোগ পর্যটন ও নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বরাদ্দ চান ব্যবসায়ী নেতারা

আসন্ন বাজেটে সিলেটে যোগাযোগ, পর্যটন ও নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বরাদ্দ চান ব্যবসায়ী নেতারা। তারা বলছেন, বর্তমানে কারোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা চরম ক্ষতির সম্মুখীন। এ থেকে উত্তোরণের জন্য সরকার থেকে প্রণোদনা, ভ্যাটমুক্ত ও সুদমুক্ত দীর্ঘমেয়াদি ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে।

সম্প্রতি বাজেটকে সামনে রেখে সিলেটের ব্যবসায়ী নেতারা সংবাদ-এর সঙ্গে সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রয়া ব্যক্ত করেন।

দি সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু তাহের মো. শোয়েব যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। বলেছেন, বাজেটে সিলেটের সড়ক ব্যবস্থার উন্নয়ন দরকার। যেমন সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক ফোরলেন, সিলেট-আখাউড়া-চট্টগ্রাম রেললাইন, সিলেট-কুমিল্লা সড়ক সংস্কার, সিলেট বাদাঘাট সড়ক ফোরলেন করা জরুরি। এছাড়া হাইটেক পার্ক নিয়ে একটি ফাইল সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দেয়া আছে।

জানতে চাইলে সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি খন্দকার শিপার আহমদ বলেন, সিলেটের পর্যটন খাতে ব্যবসায়ীরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বেশিরভাগ প্রবাসী পর্যটনে বিনিয়োগ করেছেন। বাজেটে তাদের জন্য বরাদ্দ না থাকলে ঘুরে দাঁড়ানো মুশকিল। এছাড়া বিদেশি বিনিয়োগ থেকে আয়ের একটি অংশও প্রবাসীর ব্যয়ের মধ্যে রাখলে ভালো হয়।

বাজেটে নারীদের জন্য বরাদ্দের দাবি জানিয়ে সিলেট উইমেন্স চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট স্বর্ণলতা রায় বলেন, সিলেটে অনেক নারী উদ্যোক্তা রয়েছে। সরকার তাদের সহজ শর্তে প্রণোদনা দিয়েছেন। সেগুলো সঠিকভাবে তদারকি করা দরকার। এছাড়া তাদের জন্য স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি বলেন, নারীরা আউটলেট ব্যবসায় ক্ষতির সম্মুখীন। এক্ষেত্রে বাজেটে তাদের অন্তত দুটি বছর ভ্যাটের আওতামুক্ত রেখে করমুক্ত আয়ের সীমা পাঁচ লাখ টাকা করলে ভালো হয়। স্বর্ণলতা রায় বলেন, অনেকে বাসায় বসে অনলাইনে ব্যবসা করছেন, কিন্তু আবাসিক এলাকায় ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স দেয়া হয় না। এতে তারা ব্যবসায়িক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে না পারায় বিদেশে আমদানি-রপ্তানির ব্যাঘাত হচ্ছে। তাদের কিভাবে এ ধরনের একটা সুযোগ করে দেয়া যায় তা বিবেচনায় রাখা উচিত। তিনি এও বলেন, নারীরা অনলাইনে ব্যবসা করলেও তেমন দক্ষতা নেই। তাদের সরকারের এ টু আই’র মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিলে তারা দক্ষ হয়ে উঠবেন। এছাড়া নারীরা স্বাস্থ্যক্ষেত্রে খুবই অবহেলিত। তাদের জন্য স্বাস্থ্য বীমা চালু করা যায়। তিনি বলেন, মেয়েরা পর্যটন ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে বিসিক শিল্প নগরীতে প্লট দেয়ার কথা থাকলেও তা পাওয়া যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে তাদের সরকার থেকে সহায়তা করতে হবে।

সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক হুমায়ুন আহমদ বলেন, সিলেটে পর্যটন খাতে বরাদ্দ দিলে ভালো হয়। যেমন পর্যটনগুলোতে একজন বিদেশি গেলে দেখা যায় সেখানে ভালো কোন ওয়াশরুম নেই বা যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো নেই। এমনকি ছোট ছেলে-মেয়েদের বিনোদনের ব্যবস্থাও নেই। সেগুলোতে সরকার নজর দিলে পর্যটন খাত আরও উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বাজেট বুঝি না, দ্রব্যমূল্য কমলেই আমরা খুশি : ফখর আলম

বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারীর প্রভাব পড়েছে দেশেও। এরই মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষের জীবন-যাত্রার ব্যয়ও বেড়েছে। তেল, চাল, ডাল থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি পণ্যের দামই বেড়েছে করোনাকে পুঁজি করে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়লেও করোনা মহামারীর কারণে সংকুচিত হয়েছে আয়ের উৎস, চাকরি হারিয়েছে অনেকেই। তাই আসন্ন ২০২১-২২ বাজেটে দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানবে সরকার এমন প্রত্যাশা সাধারণের।

আগামী ৩ জুন জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সরকার নতুন বাজেটের আকার ৬ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা ধরে এগুচ্ছে, যা শেষ মুহূর্তে কিছু বাড়তে-কমতে পারে। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। স্বাধীনতার পর সরকারের সবচেয়ে বড় আকারের বাজেটে কী প্রত্যাশা সাধারণ মানুষের? এমন প্রশ্ন ছিল ষাটোর্ধ্ব ফখর আলমের কাছে। তিনি বলেন, সরকার সংসদে বাজেট ঘোষণা করবে। তা দিয়ে রাস্তা-ঘাটও হবে। কিন্তু এতে কী আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সংসারের খরচ জোগার করাই এখন কঠিন।

তিনি বলেন, যখন থেকে বুঝতে শিখেছি তার পর থেকে প্রত্যেক বছরই নতুন বাজেটের খবর শুনি। বাস্তবিক অর্থে সরকারের ঘোষিত বাজেট সাধারণ মানুষের জীবন-যাত্রার কোন উপকরণ থাকে না। প্রত্যেক বছরেই চাল-ডালের দাম বাড়ে। কখন বাড়ে বৃষ্টির অজুহাতে, কখনও বাড়ে রোদের অজুহাতে আবার কখনও বাড়ে বন্যার অজুহাতে। আমরা বাজেট বুঝি না, দ্রব্যমূল্য কমলেই খুশি।

চা বিক্রেতা ফখর আলম বলেন, করোনার কারণে অনেকেরই চাকরি নাই। ফলে আমাদের ব্যবসাও খারাপ। তার মধ্যে লকডাউন। দোকানও ঠিকমতো খোলা যায় না। পরিবার নিয়ে ঢাকায় বেচে থাকাই কষ্ট। তিনি বলেন, সবাই বলে-গরিব মানুষকে সরকার অর্থ দিচ্ছে, কিন্তু সবাই কী সে সুবিধা পাচ্ছে? অনেকই পাচ্ছে না। যার কারণে নি¤œ ও মধ্যবিত্তদের অনেকেই সঞ্চয়ের টাকা দিয়ে সংসার চালাচ্ছে। তিনি বলেন, জনমানুষের বাজেট চাই। যার মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থান হবে, দ্রব্যমূল্য কমবে।

সোমবার, ২৪ মে ২০২১ , ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১১ শাওয়াল ১৪৪২

যোগাযোগ পর্যটন ও নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বরাদ্দ চান ব্যবসায়ী নেতারা

বিশেষ প্রতিনিধি, সিলেট

আসন্ন বাজেটে সিলেটে যোগাযোগ, পর্যটন ও নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বরাদ্দ চান ব্যবসায়ী নেতারা। তারা বলছেন, বর্তমানে কারোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা চরম ক্ষতির সম্মুখীন। এ থেকে উত্তোরণের জন্য সরকার থেকে প্রণোদনা, ভ্যাটমুক্ত ও সুদমুক্ত দীর্ঘমেয়াদি ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে।

সম্প্রতি বাজেটকে সামনে রেখে সিলেটের ব্যবসায়ী নেতারা সংবাদ-এর সঙ্গে সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রয়া ব্যক্ত করেন।

দি সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু তাহের মো. শোয়েব যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। বলেছেন, বাজেটে সিলেটের সড়ক ব্যবস্থার উন্নয়ন দরকার। যেমন সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক ফোরলেন, সিলেট-আখাউড়া-চট্টগ্রাম রেললাইন, সিলেট-কুমিল্লা সড়ক সংস্কার, সিলেট বাদাঘাট সড়ক ফোরলেন করা জরুরি। এছাড়া হাইটেক পার্ক নিয়ে একটি ফাইল সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দেয়া আছে।

জানতে চাইলে সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি খন্দকার শিপার আহমদ বলেন, সিলেটের পর্যটন খাতে ব্যবসায়ীরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বেশিরভাগ প্রবাসী পর্যটনে বিনিয়োগ করেছেন। বাজেটে তাদের জন্য বরাদ্দ না থাকলে ঘুরে দাঁড়ানো মুশকিল। এছাড়া বিদেশি বিনিয়োগ থেকে আয়ের একটি অংশও প্রবাসীর ব্যয়ের মধ্যে রাখলে ভালো হয়।

বাজেটে নারীদের জন্য বরাদ্দের দাবি জানিয়ে সিলেট উইমেন্স চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট স্বর্ণলতা রায় বলেন, সিলেটে অনেক নারী উদ্যোক্তা রয়েছে। সরকার তাদের সহজ শর্তে প্রণোদনা দিয়েছেন। সেগুলো সঠিকভাবে তদারকি করা দরকার। এছাড়া তাদের জন্য স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি বলেন, নারীরা আউটলেট ব্যবসায় ক্ষতির সম্মুখীন। এক্ষেত্রে বাজেটে তাদের অন্তত দুটি বছর ভ্যাটের আওতামুক্ত রেখে করমুক্ত আয়ের সীমা পাঁচ লাখ টাকা করলে ভালো হয়। স্বর্ণলতা রায় বলেন, অনেকে বাসায় বসে অনলাইনে ব্যবসা করছেন, কিন্তু আবাসিক এলাকায় ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স দেয়া হয় না। এতে তারা ব্যবসায়িক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে না পারায় বিদেশে আমদানি-রপ্তানির ব্যাঘাত হচ্ছে। তাদের কিভাবে এ ধরনের একটা সুযোগ করে দেয়া যায় তা বিবেচনায় রাখা উচিত। তিনি এও বলেন, নারীরা অনলাইনে ব্যবসা করলেও তেমন দক্ষতা নেই। তাদের সরকারের এ টু আই’র মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিলে তারা দক্ষ হয়ে উঠবেন। এছাড়া নারীরা স্বাস্থ্যক্ষেত্রে খুবই অবহেলিত। তাদের জন্য স্বাস্থ্য বীমা চালু করা যায়। তিনি বলেন, মেয়েরা পর্যটন ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে বিসিক শিল্প নগরীতে প্লট দেয়ার কথা থাকলেও তা পাওয়া যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে তাদের সরকার থেকে সহায়তা করতে হবে।

সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক হুমায়ুন আহমদ বলেন, সিলেটে পর্যটন খাতে বরাদ্দ দিলে ভালো হয়। যেমন পর্যটনগুলোতে একজন বিদেশি গেলে দেখা যায় সেখানে ভালো কোন ওয়াশরুম নেই বা যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো নেই। এমনকি ছোট ছেলে-মেয়েদের বিনোদনের ব্যবস্থাও নেই। সেগুলোতে সরকার নজর দিলে পর্যটন খাত আরও উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বাজেট বুঝি না, দ্রব্যমূল্য কমলেই আমরা খুশি : ফখর আলম

বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারীর প্রভাব পড়েছে দেশেও। এরই মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষের জীবন-যাত্রার ব্যয়ও বেড়েছে। তেল, চাল, ডাল থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি পণ্যের দামই বেড়েছে করোনাকে পুঁজি করে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়লেও করোনা মহামারীর কারণে সংকুচিত হয়েছে আয়ের উৎস, চাকরি হারিয়েছে অনেকেই। তাই আসন্ন ২০২১-২২ বাজেটে দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানবে সরকার এমন প্রত্যাশা সাধারণের।

আগামী ৩ জুন জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সরকার নতুন বাজেটের আকার ৬ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা ধরে এগুচ্ছে, যা শেষ মুহূর্তে কিছু বাড়তে-কমতে পারে। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। স্বাধীনতার পর সরকারের সবচেয়ে বড় আকারের বাজেটে কী প্রত্যাশা সাধারণ মানুষের? এমন প্রশ্ন ছিল ষাটোর্ধ্ব ফখর আলমের কাছে। তিনি বলেন, সরকার সংসদে বাজেট ঘোষণা করবে। তা দিয়ে রাস্তা-ঘাটও হবে। কিন্তু এতে কী আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সংসারের খরচ জোগার করাই এখন কঠিন।

তিনি বলেন, যখন থেকে বুঝতে শিখেছি তার পর থেকে প্রত্যেক বছরই নতুন বাজেটের খবর শুনি। বাস্তবিক অর্থে সরকারের ঘোষিত বাজেট সাধারণ মানুষের জীবন-যাত্রার কোন উপকরণ থাকে না। প্রত্যেক বছরেই চাল-ডালের দাম বাড়ে। কখন বাড়ে বৃষ্টির অজুহাতে, কখনও বাড়ে রোদের অজুহাতে আবার কখনও বাড়ে বন্যার অজুহাতে। আমরা বাজেট বুঝি না, দ্রব্যমূল্য কমলেই খুশি।

চা বিক্রেতা ফখর আলম বলেন, করোনার কারণে অনেকেরই চাকরি নাই। ফলে আমাদের ব্যবসাও খারাপ। তার মধ্যে লকডাউন। দোকানও ঠিকমতো খোলা যায় না। পরিবার নিয়ে ঢাকায় বেচে থাকাই কষ্ট। তিনি বলেন, সবাই বলে-গরিব মানুষকে সরকার অর্থ দিচ্ছে, কিন্তু সবাই কী সে সুবিধা পাচ্ছে? অনেকই পাচ্ছে না। যার কারণে নি¤œ ও মধ্যবিত্তদের অনেকেই সঞ্চয়ের টাকা দিয়ে সংসার চালাচ্ছে। তিনি বলেন, জনমানুষের বাজেট চাই। যার মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থান হবে, দ্রব্যমূল্য কমবে।